somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাওয়াই-মিঠাইঃ মিঠু ভাই

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১/
নব্বই দশকের একেবারে শুরুর দিকের কথা। ক্লাস টু-তে পড়তাম। সেই সময় পরিচয় হল মিঠু ভাইয়ের সাথে।

আমরা সেই সময় নাখালপাড়া নূরাণী মসজিদের কাছাকাছি থাকতাম। আর মিঠু ভাই থাকতেন কয়েক গলি সামনে সমিতি বাজার এলাকার এক ঘুপচির ভিতরে।

সেই সময় মিঠু ভাই ক্লাস ফাইভে পড়তেন। উনি মাঝে মাঝে আমাদের বাসার সামনের রাস্তায় খেলতে আসতেন। সেই সময় তো এইরকম অনেকেই খেলতে আসত। কিন্তু মিঠু ভাই আসলে ছিলেন চোখে পড়ার মত। একেবারে টকটকে ফর্সা, আপেলের মত লালচে গাল, মাথাতে ঝাঁকড়া চুল আর বয়সের তুলনায় অনেক লম্বা একহারা শরীর। মিঠু ভাই ক্লাস ফাইভেই অনেক স্মার্ট ছিলেন। সেই কারণে বাচ্চা মহলে উনি ছিলেন খুব জনপ্রিয়।

সেই সময় আমার স্কুল ছিল ফার্মগেট এলাকায়, বাসা থেকে বেশ দূরে। আমার আব্বা-আম্মা যেহেতু চাকরি করতেন, তাই আমাকে স্কুলে আনা-নেয়া করানোটা উনাদের জন্য বেশ অসুবিধাজনক ছিল। সেই সময় একদিন স্কুলে মিঠু ভাইকে দেখলাম। দেখে মনে হল দূর দেশে নিজ গাঁয়ের কাউকে খুঁজে পেলাম। বাসাতে এসে খুব উৎসাহের সাথে এই গল্প বললাম।

মিঠু ভাইয়ের বাবা ছিল না। তাই উনাদের পরিবার অবস্থাসম্পন্ন ছিল না। উনার বাবা মারা গিয়েছিল নাকি হারিয়ে গিয়েছিল সেটার কোনটাই আমার জানা ছিল না। সংসার চালানোর জন্য মিঠু ভাইয়ের মা খুব সকালে কাজে যেতেন। যেই যুগে ঢাকা শহরে মহিলারা মাথাতে তেমন হিজাব দিত না। কিন্তু মিঠু ভাইয়ের মায়ের মাথায় সবসময় হিজাব থাকত। মানুষে বলাবলি করত, উনার মাথা একবার ন্যাঁড়া করার পর আর চুল গজায়নি। মাথা ন্যাড়া করার ব্যাপারে কেমন যেন একটা ইঙ্গিত দিয়ে বেশ মজা করেই মানুষে এটা বলত। একটা আট-দশ বছরের বাচ্চা হিসাবে এই তথ্যগুলো বা সন্দেহগুলো আমার কখনোই জানার কথা ছিল না, এবং এসব জানার জন্য আমি আসলে ‘গর্বিত’-ও ছিলাম না। কিন্তু আমাকেও কিভাবে কিভাবে যেন এসব তথ্য জানানো হয়েছিল। আসলে এইসব প্রেক্ষাপট বুঝতে হলে আশি বা নব্বইয়ের দশকের ঢাকা শহরের পাড়া-মহল্লাগুলোর সমাজ-ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। মিঠু ভাইয়ের মা আমাদের বাসার পাশ দিয়ে মাথা নীচু করে প্রতিদিন কাজে যেতেন। উনাকে কোনদিন কারো সাথে কোন কথা বলতে দেখিনি।

আমার আব্বা-আম্মা যেহেতু চাকরি করতেন, তাই আমাকে স্কুলে আনা-নেয়া করানোটার দায়িত্ব পড়ল মিঠু ভাইয়ের উপরে। তাই প্রতিদিন সকালে উনাকে ডাকতে উনাদের বাসাতে যেতাম। নাখালপাড়া সমিতি বাজারের ভিতরে যে কলকারখানাগুলো আছে সেই সেই সব গলিতে সারাবছর কারখানার নোংরা পানিতে সয়লাব হয়ে থাকত। এর ভিতরে একটা জীর্ণ-শীর্ণ তিনতলা বিল্ডিং-এর নীচতলায় মিঠু ভাইরা থাকতেন। সেই বাসার চারিদিকে ওয়ার্কশপ আর কারখানা। সবসময় একটা ঝাঁঝালো দূর্গন্ধ সেখানে। সূর্যের আলো সেই বাসাতে কখনো ঢুকত না। দিনের বেলাতেও লাইট জ্বালিয়ে রাখতে হত সে বাসায়। আর সেই বিল্ডিং-এর বাকি বাসাগুলোতে থাকত আশেপাশের ওয়ার্কশপ আর কারখানাতে কাজ করা লোকেরা। সেই সাত সকালে দেখতাম মিঠু ভাইয়ের বড় ভাই টেবিলে বসে পড়ালেখা করছে। খুব সম্ভবত ক্লাস এইট-নাইনে পড়তেন উনি। আর উনাদের মা কাজে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এর ভিতরেই আমি আর মিঠু ভাই স্কুলের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়তাম। ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া একটা বাচ্চা একটা ক্লাস টু-তে পড়ুয়া ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে – ব্যাপারটা এখন আমার কাছে অনেক অস্বাভাবিক লাগে।


২/
আমাদের স্কুল ড্রেস ছিল সাদা শার্ট আর সাদা প্যান্ট। মিঠু ভাইয়ের সেই সাদা প্যান্টের পকেটে সবসময় একটা টেনিস বল থাকত। সাদা ফুল হাতা শার্টের হাতা গুটিয়ে আর লম্বা চুল একটু পানি দিয়ে ভিজিয়ে মিঠু ভাই যখন ক্রিকেট খেলায় বোলিং করতেন তখন উনি আমার কাছে হয়ে উঠতেন এক বিশাল মহীরূহসম বড় ভাই। আমিও উনাকে নকল করার চেষ্টা করতাম অহরহই।

বাবা ছাড়া ছেলেরা উচ্ছন্নে যায়। কিন্তু মিঠু ভাই উচ্ছন্নে যায় নি। তবে তিনি ছিলেন লেখাপড়ায় বেজায় খারাপ।

আমার ক্লাস মিঠু ভাইয়ের এক ক্লাস আগেই শেষ হত। এই সময়টা আমি স্কুলের মাঠে ফড়িং ধরে বেড়াতাম। ফড়িং ধরার অনেক কলা-কৌশলও সে সময় আয়ত্ব করেছিলাম। যেমন হাতের বুড়ো আংগুল আর তর্যনীর ডগা একে অপরের সাথে ট্যাপ করতে করতে ফড়িং-এর পিছনদিক দিয়ে গেলে ফড়িং সহজে টের পায় না যে কেউ তাকে ধরতে আসছে। সে হয়ত ভাবে আরেক ফড়িং সঙ্গী হিসাবে তার কাছে আসছে। সেই সময় লাল রং-এর বড় সাইজের একটা ফড়িং পাওয়া যেত। এদের লেজটা ছিল অনেক মোটা। এদের ‘রাজা ফড়িং’ বলতাম। ঠিক একই রকমের হলুদ রঙের আরেক রকম ফড়িং পাওয়া যেত। এদের বলতাম ‘রাণী ফড়িং’। তাছাড়া ধূসর খয়েরি রঙের এক প্রকার বেশ বড়সড় একটা ফড়িং ছিল। এদের লেজটা ছিল খুব সরু আর পাখাগুলো ছিল বেশ বড়। এদের সহজে ধরা যেত না। এদের বলতাম ‘সেনাপতি ফড়িং’। এইসব ফড়িং ধরে আবার পোষ মানাতাম। মানে ফড়িং-এর লেজটা উপর দিকে বাঁকিয়ে দুই হাতের তালু দিয়ে একটা খোপ বানিয়ে ফড়িং-টাকে এর ভিতরে রেখে ঝাঁকালে ফড়িং কিছুক্ষণের জন্য বিহবল হয়ে থাকত। এই সময়টাতে সে নড়তে বা উড়তে পারত না। সেই অবস্থায় ফড়িংটিকে শার্টের বুক পকেটের উপর রেখে দিলে সে সেখানেই বসে থাকে কোন নড়াচড়া ছাড়া। এটাকেই বলতাম ‘ফড়িং-কে পোষ মানানো’। এখন বুঝি কাজটা খুব নিষ্ঠুর ছিল। কিন্তু তখন কেউ বলে নি।

সেই সময় ঢাকার আকাশে অনেক শুকুনের আনাগোনা ছিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে সেইসব শুকনের পাখার দৈর্ঘ্য মাপার চেষ্টা করতাম। এসব করতে করতেই স্কুলে আমার সময় চলে যেত। তারপরে আমি মিঠু ভাইদের ক্লাসের বাহিরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। মিঠু ভাইকে প্রতিদিন দেখতাম বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে আছেন।

মিঠু ভাই মাঝে মাঝে স্কুল শেষে ড্রিংকা নামক এক প্রকার বরফের তৈরি আইসক্রিম টাইপ জিনিস কিনতেন। সেই সময় ঢাকা শহরে এটা খুব প্রচলিত ছিল। একটা পলিথিন টাইপ প্লাস্টিকের চিকন আর লম্বা প্যাকেটের ভিতরে রঙ মিশানো মিস্টি পানি বরফ বানিয়ে বিক্রি করা হত। সেই প্লাস্টিকের এক মাথা ছিড়ে চুষে চুষে খেত হত। রিকশাতে করে বাসাতে ফেরার পথে মিঠু ভাই সেটা খেতে খেতে আসতেন। আমি উনার ড্রিংকাতে ভাগ বসাতে চাইলেও উনি আমাকে এক ফোঁটাও দিতেন না। এ কারণে আমার খুব রাগ হত। আমি ভাবতাম, উনার এত বড় ভক্তকেও উনি কিভাবে এভাবে নিরাশ করেন? কিন্তু উনাকে এই ব্যাপারে এতটুকু বিচলিত দেখা যেত না। আর আমিও উনার ভক্ত হয়ে থাকতাম। স্কুলে যেকোন বিপদ আপদে মিঠু ভাইয়ের মত একটা বড় ভাই আছে সেটা আমাকে বেশ আনন্দ দিত।


৩/
আমাদের স্কুলে দুটো শিফট ছিল। ক্লাস ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত ছিল মর্নিং-শিফট। আর সিক্স থেকে ডে-শিফট। ক্লাস সিক্সে উঠলে মিঠু ভাই ডে-শিফটে চলে যাবেন, তখন আমাদের আর স্কুলে একসাথে আসা-যাওয়া হবে না। আমি আবার স্কুলে মিঠু ভাই-হীন হয়ে পড়ব।

দেখতে দেখতে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেল। আমি ক্লাস থ্রি-তে উঠে গেলাম। আমি খুব করে চাচ্ছিলাম, মিঠু ভাই ক্লাস ফাইভে ফেল করুক। আসলে উনি এমন ছাত্র ছিলেন, ফেল করাটা উনার জন্য বিরল কিছু ছিল না।

শকুনের দোয়াতে গরু মরে না। আমার দোয়াতেও কাজ হল না। মিঠু ভাই বহাল তবিয়তেই ক্লাস সিক্সে উঠে গেলেন।


৪/
ক্লাস সিক্সে উঠার পর মিঠু ভাইয়ের সাথে আমার আর তেমন দেখা-সাক্ষাৎ হত না। আমরা একই স্কুলে পড়তাম, একই এলাকায় থাকতাম, তাও কেন যেন অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। ডে-শিফটে গিয়ে মিঠু ভাইয়ের অনেক নতুন বন্ধু-বান্ধব হয়েছিল। উনারা সমিতি বাজার এলাকায় খেলাধূলা সহ অনেক কিছুই করতেন। মিঠু ভাইয়ের ভিতরে একটু একটু পরিবর্তন টের পাচ্ছিলাম। আস্তে আস্তে বালক থেকে উনি কিশোর হয়ে যাচ্ছেন।

এরপরে একদিন সকালে মিঠু ভাইয়ের সাথে দেখা হল। তবে বাস্তবে না, পত্রিকার পাতাতে। পত্রিকার এক কোণায় দুটি কিশোর ছেলের থেতলানো মাথার ছবি – ছেলে দুটোকে খুন করা হয়েছে। দুটি কিশোরের একজন ছিল মিঠু ভাই। নাখালপাড়া সমিতি বাজার এলাকায় কাছাকাছি কোন এক পরিত্যাক্ত বাড়িতে দুটি কিশোর ছেলেকে খুন করা হয়। কারণ খুব সম্ভবত ছিল দশ-বারো টাকা দামের হেডফোন নিয়ে নিজেদের ভিতর কোন্দল। মিঠু ভাই সম্ভবত উনার চেয়ে কয়েক বছরের বড় কারো কাছ থেকে হেডফোন নিয়ে হারিয়ে বা নষ্ট করে ফেলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অপর জন নিজেদের দলবল নিয়ে মিঠু ভাই আর তার বন্ধুকে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে ধরে এনে মাথাতে আঘাত করে মেরে ফেলে।

সেই সময় ঘটনাটা আমার ভিতর কতটুকু প্রভাব ফেলেছিল এখন আর তেমন মনে নেই। মিঠু ভাই আমার কাছে শুধুমাত্র একটা স্মৃতি হয়ে গিয়েছিল। তাছাড়া স্কুলের সেই সময়টুকু ছাড়া উনার সাথে আমার তেমন কোন স্মৃতিও ছিল না।

এভাবে কয়েক দশক মিঠু ভাই আমার মস্তিস্কের নিউরণ আর সিনাস্পের ভিতরে ঘুমিয়ে ছিলেন। জানি না কেন, গত কয়েক বছর ধরে মিঠু ভাই আবার আমার বিনিদ্র রজনীতে মস্তিস্কের ভিতর প্রবলভাবে হানা দেন। যে ড্রিংকা মিঠু ভাই আমাকে দিতেন না, সেই মিঠু ভাইয়ের প্রতি কখনো কোন রাগ বা ক্ষোভ হয় না, তবে উনার সাথের অল্প কিছু স্মৃতি খুব মনে পড়ে।

একটা বারো-চৌদ্দ বছরের বাচ্চা ভুল করতেই পারে। এরা মানুষের ঘড়ি নিয়ে হারিয়ে ফেলে, বাবার চেক বইয়ের পাতা ছিঁড়ে কাগজের নৌকা বানায়। এই কারণে বাচ্চাদের উপর রাগ করা তো দূরের কথা সেই বাচ্চাকে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হলে খুব অমানুষ হতে হয়। মিঠু ভাইয়ের সেই বড় ভাইয়েরা সেই অমানুষই ছিলেন।

আমি রাত জেগে ভাবতে থাকি, মিঠু ভাই আজ বেঁচে থাকলে কেমন হতেন দেখতে? মিঠু ভাই কি বিয়ে করতেন? মিঠু ভাইয়ের বাচ্চাগুলো কেমন হত দেখতে? হয়ত মিঠু ভাইয়ের দুটো বাচ্চা থাকত। হয়ত তারা মিঠু ভাইয়ের মতই হত দেখতে। একজন হত ‘হাওয়াই’ আর আরেকজন হত ‘মিঠাই’।

হাওয়াই হত একটা মিঠু ভাইয়ের মত সুন্দর টুকটুকে ছেলে। ওর চুলগুলো হত মিঠু ভাইয়ের মতই ঝাঁকড়া। আর মিঠাই হত একটা ফুটফুটে মেয়ে। হয়ত ওর চুলগুলো হত কোঁকড়ানো আর পিঠ পর্যন্ত লম্বা। সন্ধ্যাবেলা যখন মিঠু ভাই কাজ থেকে ফিরতেন তখন হাওয়াই-মিঠাই মিঠু ভাইকে হাত ধরে ঘর পর্যন্ত নিয়ে যেত। ভাবি হয়ত রান্নাঘরে কাজ করতেন সে সময়। তাও বাচ্চাদের ডাকাডাকিতে তিনি কাজ ফেলে ঘরে এসে মিঠু ভাইয়ের হাত থেকে ব্যাগটুকু নিয়ে নিতেন। মিঠু ভাই হয়ত আলতো করে ভাবির কপালে একটা চুমু দিতেন।

কিন্তু এর কিছুই হয় নি।

আমি জানি না মিঠু ভাইয়ের মা এখন কোথায় আছেন, কিভাবে আছেন? আমি জানি না মিঠু ভাইয়ের বড় ভাইয়ের খবর। আমি জানি না, মিঠু ভাই আমি ছাড়া আর কারো স্মৃতিতে কি বেঁচে আছেন?

গত কয়েক দশকে আমি দিনে দিনে বড় হয়েছি। কিন্তু মিঠু ভাই আমার কাছে সেই ক্লাস ফাইভ-সিক্সেই রয়ে গেলেন। আর আমি ক্লাস ফাইভ-সিক্স পার করে কয়েক দশক পরে যখন নিজেই বাবা, তখনও মিঠু ভাই আমার কাছে সেই ছোট্ট বাচ্চাটি রয়ে গেলেন। বড় ভাই মিঠু আমার কাছে আর বড় হলেন না, সেই ছোট্ট সুন্দর মিঠু ভাই রয়ে গেলেন।

মাঝরাতে মাঝে মাঝে যখন ঘুম আসে না, আমি স্পস্ট দেখতে পাই একটা বারো-চৌদ্দ বছরের ছেলের রক্তাক্ত মাথা। বাচ্চাটা চোখে তীব্র আতংক নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। মিঠু ভাইয়ের সামনে কয়েকটা ছেলে। এর মধ্য একজনের হাতে একটা লোহার রড। রডটা ইতিমধ্য রক্তাক্ত হয়ে গেছে। মিঠু ভাই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। নিজের ভুলটুকু ঠিক কোথায় মিঠু ভাই নিজেও বুঝতে পারছেন না। রক্ত আর চোখের পানিতে ঝাপসা চোখের কোণা দিয়ে মিঠু ভাই দেখতে পাচ্ছেন সামনের ছেলেটা তার মাথাতে আরেকটা বাড়ি দেবার জন্য ধীরে ধীরে লোহার রডটা উপরে উঠাচ্ছে। মিঠু ভাই কান্না ভেজা চোখে তীব্র অভিমান নিয়ে তার ছোট দুটো হাত দিয়ে মাথাটাকে রক্ষা করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।

মিঠু ভাই হয়ত নিজেও জানতেন না কার প্রতি তার এই তীব্র অভিমাণ? মিঠু ভাই হয়ত নিজেও জানতেন না কি ছিল তার অপরাধ?

আমি আর ঘুমাতে পারি না। অথচ পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে হয়ত রড হাতে মিঠু ভাইকে মেরে ফেলা ছেলেটি তার হাওয়াই-মিঠাই নিয়ে খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।

হাওয়াই-মিঠাই, আহা মিঠু ভাই।
জীবন, আহারে জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৮:৫০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×