somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুয়োরের বাচ্চাদের নয়, পরার্থপরতার অর্থনীতি'র গল্প

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন আগের কথা, পূর্ব বঙ্গের কোন এক রাজা ঠিক করলেন রাজ্যের ভবিষ্যত নিয়ে অর্থনিতীবিদদের পরামর্শ নিবেন। অর্থমণ্ত্রীকে দায়িত্ব দিলেন। আলোচনার পর মন্ত্রীমহোদয় রাজদরবারে এলেন। রাজা জিজ্ঞেস করলেন, ”বলুন অর্থনীতিবিদরা কি বললেন?” মন্ত্রী বললেন, ”অর্থনীতিবিদরা দুই ভাগ হয়ে গেছেন এক ভাগ আশাবাদী আরেক ভাগ হতাশাবাদী।” রাজা বললেন, “হতাশাবাদীদের কথা বাদ দেন আশাবাদীদের কথা বলেন “ মন্ত্রী উত্তর দিলেন, ”আগামী দশ বছর রাজ্যের মানুষ ঘাস খেয়ে বাঁচবে।” রাজা হতবাক হয়ে বললেন, ”তাহলে হতাশাবাদীরা কি বললো?” মন্ত্রী বললেন, ”আগামী দশ বছর আমরা খাওয়ার জন্য ঘাসও পাব না ।

অর্থনিতীবিদদের নিযে এমন রঙচটা কৌতুক যদি কোন অর্থনীতিবিদই করেন, তবে তার সমন্ধে কেমন ধারণা করা যায়? তবে আকবর আলী খান তার পরার্থপরতার অর্থনীতি বইয়ে এরকম রসালো গল্প ফেঁদেছেন। অর্থনীতিবিদ কার্লাইল জন্মলগ্ন থেকে অর্থনীতিকে ”হতাশাবাদী বিজ্ঞান” হিসেবে চিহি্ত করেছেন সে তথ্যও বাদ দেন নি।

কানাড়ার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম, এ ও পি এইচ ডি সম্পন্ন করা বাংলাদেশের স্বনামেখ্যাত অর্থনীতিবিদ আকবর আলী খানের ”পরার্থপরতার অর্থনীতি” বইয়ের কথা বলছি। ২০০০ সালের আগস্টে ইউনির্ভাসিটি প্রেস লি: থেকে বইটি প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন সময় লেখকের বিভিন্ন বক্তব্য, প্রবন্ধ, পত্রিকায় (জার্নালে) প্রকাশিত অনুচ্ছেদের সম্পাদিত রুপ বইটি। মোট পনেরটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ এতে সন্নিবেশিত আছে।

অধুনিক অর্থনীতি গণিত নির্ভর । অর্থনৈতিক বিভিন্ন তত্ব ও আদল (মডেল) বেশিরভাগ মানুষের কাছেই দুজ্ঞেয় ও দুবোধ্য। জটিলতর বিষয়বস্তুকে যখন রসালো কৌতুক ও গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় সকলের কাছেই সেটা সহজসাধ্য হয়ে যায়। লেখক এই কাজটি পুরো বইজুড়ে করেছেন। যারা অর্থনীতি নিয়ে জানতে আগ্রহী তাদের আগ্রহ পূর্ণমাত্রায় সফল করেছেন লেখক তার ভিন্ন স্বদের এই বই দিয়ে। বলে রাখা ভাল যে এই বই ভিন্ন স্বাদের হলেও মূলধারার অর্থনীতির প্রতি অনুগত।

বাংলাভাষায় অর্নীতির মৌলিক বই খোঁজা আর ঘাসের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া পয়সা খোঁজা একই ব্যাপার। তাও আবার প্রতিটি জটিলতত্বের সহজ ও রসালো উপস্থাপন তো পাওয়া মুশকিল। সেক্ষেত্রে এই বই পাঠককে মুগ্ধ না করে ছাড়বে না। তাই খুব সহজে বইটি আমার প্রিয় তালিকায় উঠে এসেছে। অর্থনীতির প্রথমিক জ্ঞানের জন্য এই বই হাতে তুলে নিলে সেই হাত গভীর জ্ঞানের দিকে না বাড়িয়ে উপায় থাকবে না।

বইয়ের কয়েকটি প্রবন্ধে নিয়ে সংক্ষেপে কয়েকটা তথ্য না দিলেই নয়। “শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতি” প্রবন্ধে যারা ঘুষ খায় অথচ কাজ করে না তাদের শুয়োর কা বাচ্চা বলেছেন। আমলাদের দুর্ণীতির কারণ এর কুফল এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব লেখক দক্ষতার সাথে তুলে ধরেছেন। সাবেক সরকারী আমলা হিসেবে লেখকের বাস্তব জ্ঞানের প্রমাণ পাতায় পাতায় দিয়েছেন।

স্বাস্থ্যখাতে অর্থনীতির চিত্র এবং একই সাথে করণীয় তুলে ধরেছেন “বাঁচা মরার অর্থনীতি” প্রবন্ধে। বছরের পর বছর বাজেট ঘাটতি সরকারের ব্যর্থতার প্রকাশ। এই ব্যর্থতাকে লেখক দুই ভাগে ভাগ করেছেন করার ও না করার ত্রুটি। এই চিত্র উঠে এসেছে ”সংস্কারের রাজনৈতিক অর্থনীতি” প্রবন্ধে। লেখকের সবচেয়ে পছন্দ মোল্লা নসরুদ্দিনের অর্থনীতি। যিনি তাত্তিক অর্থনীতির সূচনার প্রায় সাতশ বছর আগে অর্থনীতির কিছু কিছু তত্ব তুলে ধরেছেন গল্পচ্ছলে। আজকে আমরা মূলধারার অর্থনীতিতে সেসব গল্পের প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। যদিও মৌলিক অর্থনীতিবিদরা নসরুদ্দিনকে অর্থনীতিবিদ হিসেবে স্বীকার করেন না। এসব নিয়ে একটি প্রবন্ধ আছে “মোল্লা নসরুদ্দিনের অর্থনীীতি” নামে। ”সোনার বাংলাঃ অর্থনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত” প্রবন্ধে সোনায় মোড়ানো বাংলার অর্থনৈতিক ইতিহাসের প্রচলিত গল্পের সত্য মিথ্যা নির্ণয় করেছেন। ”আজি হতে শতবর্ষ পরেঃ অর্থনৈতিক প্রেক্ষিত” প্রবন্ধে ভবিষ্যতের অর্থনীতি বর্তমানের চেয়ে উজ্বজ্বলতর হবে এমন হিসাব কষেছেন। একই সাথে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তার বর্ণনা দিয়েছেন। “শোষণের রাজনৈতিক অর্থনীতি” প্রবন্ধে পূঁজিবাদ ও সমাজতণ্ত্রকে একে অন্যের প্রতিবিম্ভ হিসেবে তুলে ধরেছেন। কাল মার্কসের সমাজতাণ্ত্রিক ব্যাখ্যার অসারতা একটা একটা করে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। ”অর্থনৈতিক মানুষ এবং মানুষ হিসেবে অর্থনীতিবিদ” প্রবন্ধে অর্থনীতিবিদরা নিজেরাই ”অর্থনৈতিক মানুষ” ধারণাটি গড়েছেন এবং নিজেরাই এর পিছনে দৌড়াচ্ছেন এমন মন্তব্য করেছেন।

যে প্রবন্ধ থেকে বইয়ের নামকরণ অথ্যাৎ ”পরার্থপরতার অর্থনীতি” প্রবন্ধে নিঃস্বার্থ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড অর্নৈতিক নিয়ম মেনে সম্পাদান করলে অধিকতর ফলপ্রসু হবে সে তত্বের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

বইয়ের শেষে বাংলা থেকে ইংরেজী ও ইংরেজী থেকে বাংলা দু্ই ধরণের পরিভাষা এবং নির্ঘণ্ট তুলে ধরেছেন। প্রতিটি প্রবন্ধের শেষে রেফারেন্স উল্লেখ করেছেন। যা থেকে লেখকের জ্ঞনের পরিধি সমন্ধে হালকা ধারণা পেতে পাঠকের সমস্যা হবে না। সর্বশেষ “অর্থনীতির দর্শনের সন্ধানে” প্রবন্ধে পরিপূর্ণ ও নিখুঁত জ্ঞান অর্জণের জন্য অর্থনীতিবিদদের সাধনা চলমান রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×