somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন বিতর্কে শাওন কেন কাঠগড়ায়

২৭ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আকবর হোসেন
বিবিসি বাংলা, ঢাকা
---------------------

বাংলাদেশের সদ্য প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্রভাবে সমালোচিত হচ্ছেন লাশ দাফন বিতর্কে তাঁর কথিত ভূমিকার জন্য।

সাত বছর আগে বিয়ে হলেও তাদের প্রেম, বিয়ে এবং এর পরিণামে হুমায়ূন আহমেদের আগের সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনার ঝড় উঠেছে ফেসবুকে, বিভিন্ন ব্লগে এবং অন্যান্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে।

কিন্তু যেভাবে মেহের আফরোজ শাওন সোশ্যাল মিডিয়ায় কথিত হুমায়ূন ভক্তদের সমালোচনার টার্গেটে পরিণত হয়েছেন, এবং যে ভাষায় তাঁর এই সমালোচনা করা হচ্ছে—সেটা কতোটা ন্যায্য এবং যৌক্তিক সে প্রশ্ন উঠেছে।

“ভাবতে আশ্চর্য লাগছে, যারা নিজেকে হুমায়ূনের বিশাল ভক্ত হিসেবে দাবি করছে, আজ তারাই হুমায়ূনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে কুৎসিততম মন্তব্য করে যাচ্ছে। শাওন মিথ্যা না সত্য বলছে, সে অভিনেত্রী না ভালোমানুষ, তাকে ব্যক্তিগতভাবে না জেনে, না চিনে মন্তব্য করার অধিকার আমাদের কে দিয়েছে”—ফেসবুকে তাঁর স্ট্যাটাসে মুনমুন শারমিন শামস নামের একজন এভাবেই তাঁর ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

পারিবারিক মূল্যবোধ

হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বেশিরভাগ গল্পে মধ্যবিত্তের পারিবারিক মূল্যবোধেরই জয়গান গেয়েছেন

হুমায়ূন আহমেদ মূলত লিখেছেন বাংলাদেশের নাগরিক মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের জীবন নিয়ে। নিজের লেখায় যৌনতার খোলামেলা বর্ণনা তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন, এবং তাঁর অনেক গল্পেই শেষ পর্যন্ত মধ্যবিত্তের পারিবারিক মূল্যবোধেরই জয় দেখানো হয়েছে।

কিন্তু এই জনপ্রিয় লেখক নিজেই যখন প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তিরিশ বছরের সংসার ভেঙ্গে মেয়ের বান্ধবী মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন, তখন স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁর ভক্তরাও।

"মেহের আফরোজ শাওনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এই প্রবণতা খুবই হতাশাজনক। এটা খুবই অবমাননাকর"

ফাহমিদুল হক, শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কিন্তু সেই বিতর্কও এক সময় থিতিয়ে এসেছিল। নিজের লেখালেখি, টেলিভিশন নাটক এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে হুমায়ূন আহমেদ তার ভক্তদের মাতিয়ে রেখেছেন।

কিন্তু মৃত্যুর পর জনপ্রিয় এই লেখকের সাহিত্য কীর্তির মূল্যায়নের চাইতে তাঁর ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক জীবনই গণমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি আলোচিত হচ্ছে।

কোথায় হুমায়ূন আহমেদকে দাফন করা হবে তা নিয়ে যেভাবে পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্য মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন, তা যে এই বিতর্ককে নতুন করে উস্কে দিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

‘নারী সবসময় ভিকটিম’

প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের সংসার ভাঙ্গার জন্য অনেকে দূষছেন মেহের আফরোজ শাওনকে। কোথায় হুমায়ূন আহমেদকে দাফন করা হবে, সেই দ্বন্দ্বে শেষ পর্যন্ত শাওন যেভাবে জয়ী হন—সেটাকেও লেখকের উত্তরাধিকার কব্জা করার প্রয়াস হিসেবে দেখেছেন অনেকে।

"একটা মেয়ে ঘর বাঁধলেও মুশকিল, না বাঁধলেও মুশকিল। ঘর টেকাতে না পারলে তার দায়ও মেয়েদের ওপরই আসে। আমাদের দেশে নারী সবসময়েই ভিকটিম"

সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন

কিন্তু মেহের আফরোজ শাওনের ওপর এই আক্রমণের মধ্যে সমাজের সনাতনী পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীরই প্রকাশ ঘটেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

“ফেসবুকে এবং ব্লগে যে ভাষায় মেহের আফরোজ শাওনের সমালোচনা করা হচ্ছে তাতে হুমায়ূন আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে তাকে অবমাননা করার একটা চেষ্টা খুবই স্পষ্ট”, বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক।

“অনেকে আবেগের জায়গা থেকে এমন কিছু কথা বলছেন, লিখছেন যা খুবই অনভিপ্রেত। বিশেষ করে এখানে শাওনকে ডেমোনাইজ করার একটা চেষ্টা চলছে। এমনকি হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর জন্যও তাকে দায়ী করে নানা ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা হচ্ছে। মেহের আফরোজ শাওনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর এই প্রবণতা খুবই হতাশাজনক। এটা খুবই অবমাননাকর।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিন বলেন, এ ধরণের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সমাজে সবসময় নারীকেই দোষারোপ করার একটা প্রবণতা দেখা যায়।

“একজন পুরুষের সম্পৃক্ততা না থাকলে একজন নারী তার জীবনে জড়িয়ে যায় না। কিন্তু বিষয়টাকে আমরা সেভাবে দেখি না। একটা মেয়ে ঘর বাঁধলেও মুশকিল, না বাঁধলেও মুশকিল। ঘর টেকাতে না পারলে তার দায়ও মেয়েদের ওপরই আসে। আমাদের দেশে নারী সবসময়েই ভিকটিম।”

মাহবুবা নাসরীন বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে যখন বিয়ে হয়, তখন শাওন তো বয়সে অনেক ছোট ছিলেন। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তো অনেক ম্যাচিউরড অবস্থা থেকে এই কাজটা করেছেন। কিন্তু কেউ তো হুমায়ূন আহমেদকে ইঙ্গিত করে কিছু বলছেন না। ইঙ্গিত করা হচ্ছে তাঁর স্ত্রী শাওনের প্রতি।”
১৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৯

তারেক রহমানের হঠাৎ ‘জামায়াত-বিরোধী’ উচ্চারণ: রাজনীতির মাঠে নতুন সংকেত, নাকি পুরোনো সমস্যার মুখোশ?

বিএনপি রাজনীতিতে এক অদ্ভুত মোড়—অনেক বছর পর হঠাৎ করেই তারেক রহমান সরাসরি জামায়াতকে ঘিরে কিছু সমালোচনামূলক কথা বললেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি ২৭৮ আসন পেতে যাচ্ছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১০



একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে বিএনপি ইতিহাসের সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে। জাতীয় সংসদে একদলের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত আসন ২৭৮ টি। এটি বিএনপি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর জাতীয় সংসদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

এডমিন সাহেব আমাকে নিয়ে অনেক বক্তব্য দিতেন এক সময়।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৯



আমার "চাঁদগাজী" নিকটাকে উনি কি জন্য ব্যান করেছিলেন, সেটা উনি জানেন; আসল ব্যাপার কখনো আমি বুঝতে পারিনি; আমার ধারণা, তিনি হয়তো নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকতেন; মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাদের পাকিস্তান প্রেমের কারণ কী?

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৫

খানিকটা কৌতুহল থেকে লিখলাম এই পোস্ট। জানতে চাওয়ার জন্য। আমাদের দেশ পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়েছে অনেক আগে, সেই একাত্তরে। লম্বা একটা সময়। সেই সময়ে যারা বুঝতে শিখেছে তারা আজকে জীবনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×