ধরুণ, আপনার খুব কাছের এক টাকা পয়সা আলা বন্ধুর বোনের বিয়ে।আপনাকে সেখানে যেতেই হবে। না গেলে বন্ধুটি সম্পর্ক ছিন্ন করবে বলে হুমকি ও দিয়েছে। আপনার ছোট খাটো একটা চাকরি। মাস গেলে ২০০০০ টাকা মায়নে।ঢাকা শহরে কোন রকমে মাথা গোজার মত ঠাই হয়েছে আপনার। ঘরে নতুন বউ। মিরপুরের মত কোন একটি জায়গায় বউকে নিয়ে একটা রুম সাব্লেট নিয়ে থাকছেন। মাসের ২০ তারিখেই সংসারে টানাপোড়েন শুরু হয়ে যায়। তার উপর আবার লৌকিকতা ও সামাজিকতা ও মেইন্টেন করতে হয় আপনাকে। এহন অবস্থায় আপনি আপনার সাধ্যের সবটুকু অথবা তার ও থেকে বেশি কিছু দিয়ে চেষ্টা করবেন বন্ধুর বোন টাকে একটা ভাল কিছু উপহার দিতে, যদি ও ওই উপহারটা বন্ধুর আত্মীয় স্বজনদের মনপুত হবে না কখনোই।
আসলে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা কোন বিষয়েই কাউকে কখনোই মুখের উপর না বলতে পারে না। আর তাই বন্ধুর জন্মদিন পালন করা, বিয়ে সংক্রান্ত উৎসব, মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাথে পকেট খালি করে কে এফ ছি , বি এফ ছি তে খেতে যাওয়া , ইত্যাদি রিলেটিভ পোভারটিকে সে ইগ্ণর করতে পারে না কখনোই।
আবার ধরুন, কোন এক অসহায় দুস্থ মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে রাস্তার ধারে।হাজারো মানুষের ভিড় ঠেলে ওই মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিদ্ধকারিরাই ছুটে যাবে অসুস্থ মানুষটাকে সেবা দিতে। এদের মানবিকতাব বোধ একটু বেশিই কিনা তাই।
সামনে আসছে ঈদ। এরা হয়তোবা ঈদের সময় ২০০০ , ৩০০০ টাকা অথবা তার ও বেশি খরচ করে ব্র্যান্ডের দামি শার্ট প্যান্ট কিনতে পারে না, কিন্তু ঠিক ই সাধ্যের মধ্যে পরিবারের সবার জন্য ছোট ছোট উপহার নিতে এদের ভুল হয়না।
ঠিক যেমনটি তারা চেষ্টা করে অবজ্ঞা আর অনাহারে ভোগা পথশিশুদের ঈদের জামা কাপড় কিনে দিয়ে তাদের মুখে এক চিলতে হাঁসি ফুটিয়ে তুলতে।
এই শ্রেণীর মানুষেরা সংবাদপত্র পড়তে খুব ভালোবাসে। আর তাই দিনের বেশিরভাগ সময় সংবাদপত্রের ভেতরটাতে যেয়ে দেশটাকে নিয়ে ভাবতে এদের দারুন লাগে। এরা কখনোই কোন বিষয় নিয়ে ফোকাসে থাকাটা পছন্দ করে না।সমস্যার ভিতরে থেকে সমস্যাটাকে ভাবতে ভালোবাসে। আর তাই কোন স্থায়ী সমাধান এরা কোনদিন ও দিতে পারে না ।
প্রেম করার ক্ষেত্রে এই শ্রেণীর লোকেরা অত্যন্ত সিরিয়াস থাকে, যদি ও এদের প্রেম ছুটে যাওয়ার হার অনেক বেশি।
এরা জীবন নিয়ে খুব বেশি ভাবে। আর তাই কবিতা, জোছনা, চাঁদের আলো, বৃষ্টি এদের প্রিয় বিষয় হয়ে যায়।
এরা অনেক বেশি কনফিউসড থাকে নিজেদের নিয়ে। কি করলে কি হবে, কি করা উচিত তা ভাবতে ভাবতে এরা হিমসিম খেয়ে যায়। একেবারেই
প্রচণ্ড ইমোশনাল হয়ে যায় এরা। আর তাই কাঁদতে ভালোবাসে স্বভাবতই। খুব খুব প্রেসার ও ধকল যায় এদের মস্তিস্কের উপর দিয়ে।সবসময় ক্রাইসিস এদের জীবনের নিত্যসঙ্গী।
তবে, সমাজের সাথে এদের নিবিড় আত্মিক সম্পর্ক। আর তাই সমাজের যত যত ভাল ভাল কাজ তা এদের মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা পেয়ে থাকে।এরা সমাজ কাঠামোয় নিউক্লিয়াসের মত কাজ করে, আর তাই এদের ছাড়া সমাজের উন্নয়ন একেবারেই অসম্ভব।
জয়তু মধ্যবিত্ত শ্রেণী.................................