somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শঙ্খচিল- সীমান্ত পারের গল্প এবং কিছু জিজ্ঞাসা-----

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"নদী তুমি কার?কোন দেশে যাও তুমি, কোন গাঁয়ে বাঁধো ঘর?
পাখি তোমার নেই কি কোন দেশ? তুমি কি দেশ হারা সবিশেষ?"
ভারত বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ছবি " শঙ্খচিল"।
গল্পটা মোটামুটি এরকম- মুনতাসির বাদল চৌধুরী (প্রসনজিত), বাংলাদেশের সীমান্ত বর্তি গ্রাম দেব হাটি, সাতক্ষীরার একটি স্কুলের শিক্ষক। তার একমাত্র মেয়ে রূপসা চৌধুরী এবং স্ত্রী লায়লা চৌধুরী ( কুসুম শিকদার)। জন্মগত ভাবেই রূপসা হার্টের মারাত্মক অসুখে ভুগছে।তবুও অসুস্থ শরীর নিয়ে রূপসার দুরন্তপনা কমে না। ও ভালোবাসে ঘুরে বেড়াতে। ভালোবাসে বহমান নদী দেখতে, ভালোবাসে আকাশে উড়ে যাওয়া শঙ্খচিল দেখতে। একদিন কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে পশ্চিমবঙ্গে মেলা বসে। রূপসা ও সেই মেলা দেখতে যায়। কিন্তু কাটা তারের দুর্গ ভেদ করে ভেতরে ঢোকার সুযোগ মেলে না তার।সেখানে রূপসার বি এস এফ এর এক সৈন্যের সাথে পরিচয় হয়। আদর করে সে রূপসা কে 'মিট্টি' বলে ডাকে। ওদের দস্তি হয় দুজনার।
এইদিকে একদিন হটাত করেই রূপসা বেশ অসুস্থ হয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তার রূপসার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে বাদল সাহেবকে পরামর্শ দেয় মেয়েকে উন্নতর চিকিৎসার জন্য খুলনা অথবা সাতক্ষীরা শহরে নিয়ে যাওয়ার জন্য।কিন্তু বাদল সাহেব এখন কি করবে মেয়েকে নিয়ে? দেবহাটি থেকে খুলনা অথবা সাতক্ষীরা শহর যতটা দূরে তার থেকে ও বেশি কাছে পশ্চিমবঙ্গ।শুধুমাত্র ছোট্ট একটা নদী দুই বাংলাকে বিভাজিত করেছে । দিশেহারা বাদলকে তার স্কুলের হেডমাষ্টার হেমন্ত চৌধুরী দেরী না করে মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য অবৈধ পথে অপার বাংলায় যেতে বলে। সেখানে রয়েছে তার বাল্যবন্ধু। শেষমেশ বাদল চৌধুরী ঝুকি নিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে অপার বাংলায় যায়।
সেখানে গিয়ে আশ্রয় নেয় পূর্ব পরিচিত এক দাদার কাছে। এরপর থেকেই বদলাতে থাকে সময়। বদলাতে থাকে দৃশ্যপট। মুনতাসির চৌধুরী বাদল হয়ে যায় বাদল চৌধুরী, লায়লা চৌধুরী হয়ে যায় লীলা চৌধুরী, আর রূপসা চৌধুরী হয়ে যায় রূপসা চৌধুরী, দেশ- ইন্ডিয়া, ধর্ম- হিন্দু। মুসলমান পরিচয় গোপন রেখে হিন্দুস্থানে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় হিন্দু হিসেবে।
এইদিকে ধীরে ধীরে রূপসার শারীরিক অবস্থা আরও বেশি খারাপ হতে থাকে, তাকে কলকাতা শহরে নিয়ে যাওয়া হয় অপারেশন করানোর জন্য। আর সেখানেই অপারেশনের দিনে সকাল বেলায় মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে রূপসা। একটি স্বপ্নের মৃত্যু হয় যে কিনা চেয়েছিল সুস্থ হয়ে তার নিজ দেশে ফিরে যেতে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রূপসার ডেড সার্টিফিকেট রূপসার বাবাকে দেয় তাকে শ্মশানে দাহন করার জন্য। বাদল চৌধুরী আর মিথ্যে বলতে পারে না। যার জন্যই এত মিথ্যে বলা সেই যখন বেঁচে নেই তবে পরিচয় লুকিয়ে কি লাভ। খোলসের আবরণ উন্মুক্ত করে দেয় বাদল চৌধুরী। কিন্তু তাতে ভারতীয় আইন তো আর অন্ধ হয়ে যেতে পারে না? বাদল ও লায়লার স্থান হয় কলকাতার কারাগারে। আর মানবিক আবেদনে সারা দিয়ে লায়লার মরদেহ বি এস এফ তুলে দেয় বি ডি আর বাংলাদেশ এর হাতে।
কি আছে এই মুভিতে?
এই মুভিতে আছে ৪৭ সালের দেশ ভাগের কারণে হিন্দু মুসলিম বিচ্ছেদের কাহিনী, আছে সীমান্তে প্রতিদিনকার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের আর্ত চিতকারের কাহিনী, আছে প্রতীকী রূপে সীমান্তে কাটা তারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলে থাকা লাশের চিত্র। আর ও আছে হিন্দু মুসলমান বন্ধুত্ব, সম্প্রীতি এবং সৌহার্দ্য।আছে ধর্মীয় বিভাজন, অস্তিত্ব সংকট আর মানবিক আবেদনের করুণ কাহিনী।
বিশ্বায়নের এই যুগে বাজার হয়েছে সম্প্রসারিত, Free market economy, neoliberalism ideology, কিংবা advancement of technology ভেঙে দিয়েছে দেশ ও কালের সম্পর্ক। যা আছে চিনার বাজারে, কিংবা ইন্ডিয়া অথবা আমেরিকার বাজারে তা আছে আমাদের বাজারেও। Castells তার " The Rise of the Network Society (1996)" নামক গ্রন্থে বলেছেন,
" Nation states will survive, but not so their sovereignty” (Castells in Nyíri, p. 8). তিনি মূলত বলেছেন due to the rise of informational-ism and technological development Nation State বলে কিছু থাকবে না। Nation State will be border-less. কিন্তু ভারত বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমরা কি দেখি? আমাদের বাজার, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ভারতের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলেও সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া সরে নি, ফেলানিরা লাশ হয়ে প্রতিনিয়ত ঝুলছে কাঁটাতারের বেড়াতে, সরে নি এঁকে অন্যকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখার অভ্যাস। কাঁটাতারের এই মানব দেয়াল ভাই ভাইকে করেছে আলাদা, সন্তানকে আলাদা করেছে তার বাবার কাছ থেকে, প্রিয় কে আলাদা করেছে প্রিয়তম থেকে।অথচ, আমাদের দুই বাংলার হিন্দু , মুসলমান সকলের পরিচয় অভিন্ন, ভাষা অভিন্ন, এমনকি সংস্কৃতি ও অভিন্ন। জাতি হিসেবে আমাদের একটাই পরিচয়- "আমরা বাঙালী"।।
( মুভিটার সংকীর্ণতাগুলো আরেক দিন তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×