somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আরফান খান জয়
সবার আকাশ রঙিন হয় না।কারো আকাশ হয় নীল।কারো আকাশ বিষন্নতার মায়াজালে বন্দি।আবার কারো কারো নতুন আকাশের ফন্দি।স্বাগতম আপনাকে আমার ইউনিভার্সে।

গল্পঃ শূন্যস্হান পূরণ

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




"আপনার লজ্জা শরম কিছু নেই? কোন মুখে আপনি আমার সামনে এসেছেন?
.
এলাকার মোড়টায় আমি দাড়িঁয়েছিলাম। দাড়িঁয়ে ছিলাম বলতে ভুল হবে আসলে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। যার জন্য অপেক্ষা করছি সত্য বলতে কি আমি তাকে চিনতাম না এমনকি তার নামও জানতাম না। তবে গতপরশুর ঘটনার পরে মেয়েটার নাম জানলাম। ইশরাত জাহান অধরা। আমার জন্য মেয়েটার এমন একটা বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমি সেটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। একবার ভাবলাম যে করেই হোক মেয়েটার সাথে আমার কথা বলা উচিত স্যরি বলা দরকার। আর বলা দরকার কাজটা আমি ইচ্ছা করেই করিনি। আমি এসবের কিছু জানতামও না। সকাল থেকে অধরার জন্য অপেক্ষা করতে করতে যখন ওকে দেখলাম, তখন আমি দৌড়ে ওর সামনে এসে দাড়াতে না দাড়াতেই আমার দিকে একটু তাকিয়ে ও আমাকে খুব কড়া মুখে কয়েকটা কথা বলল। অবশ্য আমি কিছু মনে করিনি। অন্যান্য মেয়ে হলে হয়ত নির্ঘাত আমার গালে এতক্ষনে কষে কয়েকটা থাপ্পর লাগিয়ে দিত। ও হয়ত ভাবছে আমি ওকে আবার বিরক্ত করছি। আমি বললাম...
.
"দেখুন আপনার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য আমি ভীষন দুঃখিত। বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানি না। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।
.
কথাটা বলেই আমি একটু চুপ করে রইলাম। আসলে কিভাবে যে সব কিছু বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। অধরার কাধে একটা ব্যাগ। শুনেছি এয়ারটেল অফিসে কাজ করে। দেখতে খুব সুদর্শন। আমি কিছু বলতে যাব অমন সময় অধরা বলল...
.
"সাধু সাজার চেষ্টা করছেন তাই না? দেখুন আপনি আমার সামনে থেকে সরেন আর না হলে আমি লোকজন ডাকব।
.
আমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। মেয়েটার সামনে থেকে সরে গেলাম। তারপর অধরা আমার সামনে দিয়ে হেটে গিয়ে একটা রিক্সায় উঠে চলে যায়। এই মেয়েটার কাছে আমি এতটা ছোট হব ভাবতেও পারছি না। আমার কোন দোষ নেই সব দোষ শিহাব হারামজাদার। এলাকায় সবাই বড় ভাই বলে ডাকে। অনেকে ভয় পায়। অনেকে বলতে গেলে সেই অনেকের মধ্যে আমিও আছি। তবে আমাকে দিয়ে এমন একটা কাজ করাবে আমি কিছুই জানতাম না।
.
আমিও একটা অফিসে কাজ করি। ঐদিন অফিসের একটা পার্টি ছিল। পার্টিতে খানিকটা সময় এটেন্ড করে সবার সাথে টুকটাক দেখা শুনা করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। আসলে আমার এইসব পার্টি ভাল লাগে না। এই কারনে যে, কেউ যদি আবদার করে ড্রিংক করতে বলে তখন যদি ফিরিয়ে দেই যে আমি ড্রিংক করি না। হয়ত অনেকে এই ব্যাপারটি নিয়ে হাসাহাসি করবে এমন একটা পার্টিতে ড্রিংক কেন করছি না বা অনেকে আমাকে মনে মনে ক্ষ্যাত বলে আক্ষায়িত করবে। তাই চলে আসলাম। তখন প্রায় রাত ৮টা পেরিয়ে গেছে। এলাকার মোড়ে এসে রিকশা থেকে নেমে গলির দিকে যাচ্ছিলাম। গলির দিকে হাটতে হাটতে দেখলাম শিহাব ও আরো কয়েকটা ছেলে একসাথে দাড়িঁয়ে আছে। আমি ওদের ক্রস করে যেই একটু সামনে গেলাম পিছন থেকে একজনের মুখ থেকে শুনতে পেলাম.. ভাই এই মালটারে দিয়া কাজটা করান। আর ঠিক তখনি ডাক আসলো...
.
"এই দাড়াও।
.
আমি পিছনে না তাকিয়ে কোন সাড়া শব্দ না করে হাটতে লাগলাম। এমন একটা ভাব যেন কিছুই শুনিনি। আরেকটু এগিয়ে যেতে একটা ছেলে এসে আমার কাধে হাত দিয়ে বলল...
.
"চান্দু কানে কম হুনোনি? ভাইজান ডাকে। আহো একটু।
.
সত্য বলতে কি আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম আমাকে ডাকল কেন? আর আমাকে দিয়ে ওদের কাজ কি? চুপচাপ কিছু না বলে ওদের সামনে গেলাম। ওরা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর শিহাব বলল...
.
"ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তোমাকে কিছু করবো না। জাস্ট আমাদের ছোট্ট একটা কাজ করেই দিলেই হবে।
আমি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বললাম..
"দেখুন আমি আপনাদের কোন কাজেই জড়াতে চাই না। আপনারা অন্য কাউকে দেখেন। আর প্লিজ মাফ করবেন।
.
এই টা বলে আমি আমি চলে আসার সময় শিহাব আমার হাতটা ধরে বলল..
.
"আরে আরে কোথায় যাচ্ছো? বলছি তো আমার কাজটা করে দিতে হবে।
.
আমি একটু চুপ করে রইলাম। আমার কেমন জানি লাগল। এইসব ছেলেপেলের কাজই দুই নাম্বার। কিন্তু ওরা আমাকে টানছে কেন? এবার আমি স্বাভাবিক হয়ে বললাম..
.
"আচ্ছা আপনাদের কাজটা বলেন। কি করতে হবে?
"এই তো লাইনে আসছো।
.
এইটা বলেই একটা হাসি দিয়ে পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমাকে বলল...
.
"এই খামটা ঐযে টিয়া রঙ এর তিনতলা বাড়িটা দেখছো ঐটার দুতলায় একটা মেয়ে আছে নাম অধরা। এই খামটা উনাকেই দিয়ে আসবা। ব্যাস এটুকুই কাজ।
.
আমি খামটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললাম..
"এই খামে কি আছে?
.
আমার কথা শুনে শিহাব চোখে চশমা লাগিয়ে একটু হাসি দিল। পাশ থেকে এর চ্যালা একজন বলে উঠল...
.
"এই গুলা তোমার না জানলেও চলবে। এইটাতে শুধু একটা কাগজ আছে।
"ও আচ্ছা এই ব্যাপার। তা এই কাজটা আপনাদের মধ্যে যে কোন একজন দিয়ে আসলেই তো হয়।
.
তারপর শিহাব বলল..
.
"সব কাজ সবাইকে দিয়ে হয় না।
"জ্বি ঠিক বলেছেন সব কাজ যেমন সবাইকে দিয়ে হয় না। তেমনি এই কাজটাও আমাকে দিয়ে হবে না।
.
আমার কথাটা শুনে সবাই একটু চমকে গেল। সাথে সাথে শিহাব চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেলল। সত্য বলতে কি আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম। সামান্যই তো একটা কাজ খামটা দিয়ে চলে আসা। আমি খামটা শিহাবের হাত থেকে নিয়ে বললাম...
.
"ইয়ে মানে খামটা কি অধারার হাতেই দিতে হবে?
.
সবাই একটু হাসল। আমিও একটু হাসলাম ওদের সাথে তাল মিলিয়ে।
.
"হ্যাঁ অধরাকেই। অন্য কারো হাতে দিবে না।
.
আর এই খামটা নিয়ে যখন ওদের বাসার দরজার কলিং বেল দু তিনবার চাপলাম। তখন একটা বারো কি তেরো বছরের ছেলে দরজাটা খুলল। দরজার ভিতরে অনেক লোকজন দেখলাম সম্ভাবত আত্বীয় স্বজন বেড়াতে আসছে পোশাকে আশাকে বুঝতে পারছিলাম। তারপর একটা ছেলে এসে বলেছিল..
.
"কি চাই? চুপ করে আছেন কেন? কিছু বলুন কাকে খুজঁছেন?
"অধরা আছে?
.
ছেলেটা আমার দিকে কেমন করে যেন একটু তাকিয়ে থেকে বলল...
.
"আপনি কি অধরা আপুর বন্ধু?
.
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। ছেলেটা হয়ত অধরার ছোট ভাই।
.
"হ্যাঁ তোমার আপুর বন্ধু। একটু ডেকে দেওয়া যাবে?
"ভিতরে আসুন।
"না না ভিতরে কোন কাজ নেই। তুমি তোমার আপুকে একটু ডেকে দাও আমি কয়েকটা কথা বলে চলে যাব।
.
ভিতর থেকে একজন মহিলা বলল...
.
"কে আসছেরে রায়হান?
"আপুর এক বন্ধু আসছে।
.
আমার অবস্হা খুব করুনের দিকে যাচ্ছিল তখন। তারপর মহিলাটা এসে আমার সামনে দাড়িঁয়ে একবার আমার দিকে তাকায় একবার ভিতরের মানুষ গুলার দিকে তাকায়। তারপর বলল...
.
"হুম যা বলার আমাকে বলো।
"না মানে আন্টি আপনাকে বললে হবে না। অধরাকে বলতে হবে।
.
তারপর মহিলাটা আবার আমার দিকে একবার তাকায় আবার ভিতরের লোকজনের দিকে তাকায়। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। এরপর সোফায় বসে থাকা সেঁজে গুজে থাকা আরেকজন মহিলা আমার সামনে আসল। তারপর অধরার মা একটা হাসি দিল মহিলাটির দিকে তাকিয়ে। আর বলল অধরার বন্ধু। তারপর সেঁজে গুজে থাকা মহিলাটা বলল..
.
"তা বাহিরে কেন? ভিতরে আসো। এসময় বন্ধু বন্ধুর পাশেই থাকতে হয়।
.
আমি কিছুই বুঝলাম না উনি কিসের কথা বলতেছে। আমি বললাম..
.
"দেখুন আমার বেশি সময় লাগবে না। দু তিন মিনিট হলেই চলবে। অধরাকে এই খামটা দিয়েই চলে যাব।
.
আমার কথাটা শুনেই দুজনেই একটু চমকে গিয়েছিল তবে একটু বেশি চমকালো সেজেঁ গুজে থাকা মহিলাটা। আমি কিছু বুঝার আগেই সেঁজে গুজে থাকা ঐ মহিলটা ঝট করে আমার হাত থেকে খামটা নিয়ে ফেলেছিল। কি হচ্ছে না হচ্ছে আমি কিছুই জানি না। অবশ্য আমার না জানলেও চলছিল। সেঁজে গুজে মহিলটা খামটার দিকে একটু দেখে এক টান দিয়ে খামটা ছিড়ে ভিতরের কাগজ টুকু পড়তে শুরু করে। আমি বুঝলাম এখন আমাকে এখান থেকে যেতে হবে। আমি যেই চলে যাওয়ার প্রশ্তুত নিলাম অমনি ঐ মহিলাটা বলে উঠল...
.
"এই ছেলে কোথাও যাবে না। এইখানে দাড়িঁয়ে থাকো।
"জ্বি আমি কোথাও যাচ্ছি না।
.
অবশ্য আমার কোন ভয়ের কারন ছিল না আমি তো কিছু জানতাম না। আমাকে শুধু এটা দিতে বলেছে। ঐ মহিলাটা লেখাটা পড়ে আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। ভিতরের লোকজনও আমাদের দিকে তাক করে তাকিয়ে আছে। তারপর মহিলাটা ভিতরের সবাইকে বলে উঠল...
.
"এই চলো এই বিয়ে হবে না।
.
আমি একটু চমকে গেলাম। আমার বুঝতে একটুও বাকি রইল না এই লোক গুলা অধরাকে দেখতে এসেছে। কথাটা শুনেই ভিতরের লোক গুলো দাড়িয়ে গেল। মহিলাটা ভিতরের কয়েকজনকে কাগজটা দেখায় ওরা ভাবছে আমি অধরার প্রেমিক। কিন্তু আমি তো ওর কেউ না। আসলে ঐ ঘটনার দিন অধরাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসে। আর যেই খামটা পড়ল, ওরা সবাই মনে করল আমি ওকে ভালবাসি আমি ওর প্রেমিক। আর বেক্কল শিহাইব্বাটা লেখার নিচে ওর নাম দেয় নাই। আমি ওদের কাউকে কিছু বুঝাতে পারিনি যে কাজটা আমার করা না। আমার কথাই শুনতে চাইছিল না। কিন্তু কে শুনে আমার কথা যখন দেখলাম পরিস্হিতি খুব খারাপের দিকে আমি কেটে পরেছিলাম। চলে আসার সময় অধরাকে দেখতে পেলাম। একটা পিংক কালারের শাড়ি পড়ে সেজে ছিল। ওর ভাই আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছিল যে আমি সেই ছেলে। বুঝলাম এইটাই অধরা।
.
আমি আর কিছু না ভেবে অফিসে চলে গেলাম। অফিসে ঘন্টা খানেক কাজ করার পর ভাবলাম যে করেই হোক মেয়েটাকে সব খুলে বলতে হবে। আর এই মেয়েটাকে যে ফ্যামিলির কাছে বিয়ে দিতে যাচ্ছিল এ কেমন ফ্যামিলি?, ঠান্ডা মাথায় কিছু না ভেবে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে বিয়ে হবে না, বিয়ে হবে না এই হৈ চৈ শুরু করে দিল। আর অধরার বাবা মাও একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করে নাই। ওদেরকে শান্তনা আর বুঝাতে বুঝাতেই ব্যাস্ত ছিল। ঘন্টাখানেক কাজ করার পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমার কাজ গুলা হেলাল ভাইকে বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
.
আমার অফিস থেকে সোজা এলাকায় গিয়ে অধরার পাশের প্রতিবেশি থেকে ওর অফিসের ঠিকানাটা নিয়ে সোজা ওর অফিসে গিয়ে রিসিপশনিস্ট এর কাছে ওর নামটা বলে দেখা করতে চাইলাম। একটু বসে থাকার পর অধরা আমার সামনে এসে বললো...
"আপনার তো সাহস কম না। আপনি আমার অফিসেও চলে এসেছেন।
বুঝলাম মেয়েটা আমার প্রতি রেগে আছে। আমি ইতস্তত হয়ে বললাম..
.
"দেখুন আপনার সাথে আমার কথা আছে। আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দিন।
"আপনি কি করে ভাবলেন আমি আপনাকে সময় দিব? ফাযলামির একটা সীমা থাকে। আপনি যা করেছেন এরপরও আপনি...
.
অধরা পুরোট কথাটা না বলেই থেমে যায়। কথা গুলা বেশ আস্তে আস্তে বলছিল। যেন কেউ বুঝতে না পারে। কিন্তু কথা গুলোর মাঝে কেমন একটা রাগ ও কষ্টের ছায়া পেলাম।
.
"দেখুন যে খামটা আমি দিয়েছিলাম ওটা আমার না। ওটা শিহা....
"প্লিজ চুপ করুন এই বিষয়ে আমি আর ভাবতে চাইনা আর কিছু জানতেও চাই না। একজনকে আঘাত দিয়ে আবার মায়া দেখতাতে এসেছেন। আপনি আসতে পারেন। এটা অফিস। এখানে আর আসবেন না।
.
আমাকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই অধরা এই বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল।
.
প্রায় দুদিন কেটে গেল। আমিও এই ব্যাপারে আর কিছু ভাবলাম না। কিন্তু এই বিষয়টা আমাকে কোন ভাবেই শান্তি দিচ্ছিল না। এই বিষয়টা মাথায় আসলেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়। কিন্তু আমাকে যে করেই হোক বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার।
.
এরপর প্রতিদিন সকাল বেলা একটু আগে বের হয়ে ঐ রাস্তার মৌড়টায় দাড়িয়ে থাকতাম অধরার জন্য। ও আসলে ওর পিছু পিছু হাটতাম। আমি কিছু বলতে গেলেই ঐ ড্যাবরা ড্যাবরা চোখ দুটো বড় করে আমার দিকে তাকালে আমি আর কিছু কেন যেন বলতে পারি না।
এইভাবে একদিন, দু দিন, তিন দিন চলতে চলতে সতেরো দিন পার হয়ে যায়। এই সতেরোটা দিন আমি কিছুই বলতে পারিনি। বলতে পারিনি এটা বললে ভুল হবে আমাকে বলার সুযোগটাই দেইনি।
আঠারো দিনের মাথায় আমি একই নিয়মে সেই মৌড়ে দাড়িয়ে থাকলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে যে করেই হোক বলব। ও যখন আমার সামনে আসল আমি ওর পিছন হাটতে হাটতে বললাম...
.
"শুনেন আপনার সাথে কথা আছে।
.
ও কিছু না বলেই রিকশা ঠিক করতে লাগল। এমন একটা ভাব যেন কিছুই শুনেনি। আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম...
.
"আজকে আমার কথা শুনতে হবেই আপনাকে।
.
অধরা তারপরো রিকশা ঠিক করতে লাগল। ও যখন রিকশা ঠিক করে রিকশা উঠতে যাবে আমি অমনি ওর হাতটা টেনে ধরে বললাম...
.
"কি বলতেছি কথা কানে যায় না? নিজেকে কি মনে করেন?
.
আমি যখন ওর হাতটা ধরলাম ও খানিকটা অবাক হয়ে গেল। ওর গোলাপি ঠোট দুটো যেন প্রশ্তুত নিচ্ছে আমাকে কিছু বলার জন্য। আমি সেই সুযোগটা না দিয়ে আবার বললাম...
.
"একদম চুপ। আজকে আমি বলব চুপচাপ দাড়িয়ে শুনবেন। ঐদিন আমি শুধু বার্তা বাহক ছিলাম। ঐ কাগজটা না ছিল আমার, না ছিল আমার লেখা। ওটা এলাকার শিহাব আমাকে দিয়ে আপনার কাছে পাঠিয়েছে। আমি এর কিছুই জানি না। আমার উপর রেগে না থেকে আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত্‍ ছিল এই কারনে যে, ঐসব পাগল ফ্যামিলির ঘরে আপনার বিয়ে হয়নি। আশা করি কথা গুলা বুঝতে পেরেছেন। আর হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালবাসতাম না, তবে এই কয়েকদিনে আপনার পিছনে ছুটতে ছুটতে আপনাকে আমার ভাল লেগে গেছে।
.
কথা গুলা বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। আশেপাশের লোকজন কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি এইভাবে কথা গুলা বলতে পারব। কিন্তু শেষে আমি এটা কি বললাম? আমি আর কিছু না বলে অফিসের দিকে রওনা দিলাম। একটা জিনিস বুঝলাম না ওকে এই কথা বলার সহস কি করে হলো? সত্যিই কি অধরাকে আমার ভাল লেগে গেছে? এটা কি করে সম্ভব? হযতবা হ্যাঁ, একটা মানুষের পিছনে ছুটলে, ওর কথা সারাক্ষন মাথায় বিরাজ করলে ওকে নিয়ে এমনিতে ভাবায়। এই ভাবনাটা মনের ভিতর একটা জায়গা দখল করে রাখে। কিন্তু আসলেই কি ওকে আমার ভালো লেগেছে। আমি রিকশায় উঠে যখন অফিসে চলে যেতে লাগলাম আর অধরা ঠিক তখনি দাড়িঁয়ে থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আর নিশ্চয় ভাবছিল এই ছেলেটা কেন এমন কথাটা বললো?
.
এরপর অনেকটা দিন কেটে গেছে। আমি আমার মত চলতে থাকি, অফিসে কাজ করতে থাকি। কিন্তু এই চলার মাঝে বা দিন অতিক্রমের মাঝে এই ভালো লাগার অনুভূতিটা আমাকে ঠিক মত থাকতে দেয় না, ঘুমাতে দেয় না। অফিসে করার এক পর্যায়ে সাখাওয়াত ভাই বলল আমার সাথে কে যেন দেখা করতে এসেছে। ঐদিন অধরার সাথে কথা বলার পয় আর ওর সাথে দেখা হয়নি। ঐদিকে শিহাব আর শিহাবের সাথে থাকা ছেলেগুলোর কোন খোঁজ নেই। আসলে ওরা আজকে এই এলাকায় তো কালকে আরেক এলাকায়। আমি রিসিপশনে গিয়ে দেখি অধরা বসে আছে। ওকে দেখে আমি একটু অবাক হলাম। এই মেয়ে এখানে কি করে? আমার অফিসের ঠিকানা কিভাবে পেল? আসলে আমি যখন ওদের অফিসে গেলাম তখন জিজ্ঞেস করেছিল আমায় কোথা থেকে এসেছি তখন আমার অফিসের নাম আর আমার নাম রেজিষ্টার খাতায় লিখে রেখেছিল। নিশ্চয় ওখান থেকেই আমার অফিসের ঠিকানাটা অধারা পেয়েছে। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম..
.
"আপনি এখানে হঠাত্‍?
.
অধরা একটু চুপ করে রইলো। বাম হাত দিয়ে কিছুটা চুল কানে গুজে নিল। ও হয়ত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বা কি বলবে সেটা বলার জন্য প্রশ্তুত হচ্ছে। আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখন অধরা বললো..
.
"আপনি এই কয়েক দিন আমার জন্য রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করেন নি কেন?
.
আমি বেশ অবাক হলাম। এই মেয়ে বলে কি? আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত হয়ে আবার বলল...
.
"আমি বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। আপনি চাইলে রোজ রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।
.
এই কথাটা বলেই অধরা চলে যায়। ও কিসের ইঙ্গিত করেছে এটা নিয়ে আমি বেশ ভাবলাম।আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাকে আরও অনেক কিছু শুনাতে এসেছে। কিন্তু বিষয়টা এমন হয়ে যাবে আমার মাথায় আসছে না। আসলে একটা মেয়ের পিছনে যখন একটা ছেলে সারাক্ষন ঘুর ঘুর করে তখন মেয়েটা আকাশকে অনুভব করতে থাকে। প্রজাপতির মত উড়ার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ‍ করে যখন ছেলেটা মেয়েটার পিছনে ঘুরা বন্ধ করে দেয় তখন মেয়েটা একটু হলেও অনুভব করে এই আকাশের সাদা মেঘ আর বৃষ্টিকে। আর এই অনুভবটা মনের ভিতর বিষণ্নতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
আমি ভাবি রোজ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন লাগবে আমাকে। নতুন এই এক্সট্রা চাকরিটা নিতে হবে। আর এই জন্য সামনের পথটা না হয় আমিই তৈরি করে নিব। শূন্যস্হান ফিলাপ করেই ছাড়ব যেহেতু উওরটা নিজেই আমার কাছে এসে সাই দিয়ে গেছে..."আপনার লজ্জা শরম কিছু নেই? কোন মুখে আপনি আমার সামনে এসেছেন?
.
এলাকার মোড়টায় আমি দাড়িঁয়েছিলাম। দাড়িঁয়ে ছিলাম বলতে ভুল হবে আসলে একজনের জন্য অপেক্ষা করছি। যার জন্য অপেক্ষা করছি সত্য বলতে কি আমি তাকে চিনতাম না এমনকি তার নামও জানতাম না। তবে গতপরশুর ঘটনার পরে মেয়েটার নাম জানলাম। ইশরাত জাহান অধরা। আমার জন্য মেয়েটার এমন একটা বড় ক্ষতি হয়ে যাবে আমি সেটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না। একবার ভাবলাম যে করেই হোক মেয়েটার সাথে আমার কথা বলা উচিত স্যরি বলা দরকার। আর বলা দরকার কাজটা আমি ইচ্ছা করেই করিনি। আমি এসবের কিছু জানতামও না। সকাল থেকে অধরার জন্য অপেক্ষা করতে করতে যখন ওকে দেখলাম, তখন আমি দৌড়ে ওর সামনে এসে দাড়াতে না দাড়াতেই আমার দিকে একটু তাকিয়ে ও আমাকে খুব কড়া মুখে কয়েকটা কথা বলল। অবশ্য আমি কিছু মনে করিনি। অন্যান্য মেয়ে হলে হয়ত নির্ঘাত আমার গালে এতক্ষনে কষে কয়েকটা থাপ্পর লাগিয়ে দিত। ও হয়ত ভাবছে আমি ওকে আবার বিরক্ত করছি। আমি বললাম...
.
"দেখুন আপনার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য আমি ভীষন দুঃখিত। বিশ্বাস করুন আমি কিছুই জানি না। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।
.
কথাটা বলেই আমি একটু চুপ করে রইলাম। আসলে কিভাবে যে সব কিছু বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। অধরার কাধে একটা ব্যাগ। শুনেছি এয়ারটেল অফিসে কাজ করে। দেখতে খুব সুদর্শন। আমি কিছু বলতে যাব অমন সময় অধরা বলল...
.
"সাধু সাজার চেষ্টা করছেন তাই না? দেখুন আপনি আমার সামনে থেকে সরেন আর না হলে আমি লোকজন ডাকব।
.
আমি আর কিছু বলতে গিয়েও বললাম না। মেয়েটার সামনে থেকে সরে গেলাম। তারপর অধরা আমার সামনে দিয়ে হেটে গিয়ে একটা রিক্সায় উঠে চলে যায়। এই মেয়েটার কাছে আমি এতটা ছোট হব ভাবতেও পারছি না। আমার কোন দোষ নেই সব দোষ শিহাব হারামজাদার। এলাকায় সবাই বড় ভাই বলে ডাকে। অনেকে ভয় পায়। অনেকে বলতে গেলে সেই অনেকের মধ্যে আমিও আছি। তবে আমাকে দিয়ে এমন একটা কাজ করাবে আমি কিছুই জানতাম না।
.
আমিও একটা অফিসে কাজ করি। ঐদিন অফিসের একটা পার্টি ছিল। পার্টিতে খানিকটা সময় এটেন্ড করে সবার সাথে টুকটাক দেখা শুনা করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। আসলে আমার এইসব পার্টি ভাল লাগে না। এই কারনে যে, কেউ যদি আবদার করে ড্রিংক করতে বলে তখন যদি ফিরিয়ে দেই যে আমি ড্রিংক করি না। হয়ত অনেকে এই ব্যাপারটি নিয়ে হাসাহাসি করবে এমন একটা পার্টিতে ড্রিংক কেন করছি না বা অনেকে আমাকে মনে মনে ক্ষ্যাত বলে আক্ষায়িত করবে। তাই চলে আসলাম। তখন প্রায় রাত ৮টা পেরিয়ে গেছে। এলাকার মোড়ে এসে রিকশা থেকে নেমে গলির দিকে যাচ্ছিলাম। গলির দিকে হাটতে হাটতে দেখলাম শিহাব ও আরো কয়েকটা ছেলে একসাথে দাড়িঁয়ে আছে। আমি ওদের ক্রস করে যেই একটু সামনে গেলাম পিছন থেকে একজনের মুখ থেকে শুনতে পেলাম.. ভাই এই মালটারে দিয়া কাজটা করান। আর ঠিক তখনি ডাক আসলো...
.
"এই দাড়াও।
.
আমি পিছনে না তাকিয়ে কোন সাড়া শব্দ না করে হাটতে লাগলাম। এমন একটা ভাব যেন কিছুই শুনিনি। আরেকটু এগিয়ে যেতে একটা ছেলে এসে আমার কাধে হাত দিয়ে বলল...
.
"চান্দু কানে কম হুনোনি? ভাইজান ডাকে। আহো একটু।
.
সত্য বলতে কি আমি খুব অবাক হয়ে গেলাম আমাকে ডাকল কেন? আর আমাকে দিয়ে ওদের কাজ কি? চুপচাপ কিছু না বলে ওদের সামনে গেলাম। ওরা কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। তারপর শিহাব বলল...
.
"ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা তোমাকে কিছু করবো না। জাস্ট আমাদের ছোট্ট একটা কাজ করেই দিলেই হবে।
আমি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বললাম..
"দেখুন আমি আপনাদের কোন কাজেই জড়াতে চাই না। আপনারা অন্য কাউকে দেখেন। আর প্লিজ মাফ করবেন।
.
এই টা বলে আমি আমি চলে আসার সময় শিহাব আমার হাতটা ধরে বলল..
.
"আরে আরে কোথায় যাচ্ছো? বলছি তো আমার কাজটা করে দিতে হবে।
.
আমি একটু চুপ করে রইলাম। আমার কেমন জানি লাগল। এইসব ছেলেপেলের কাজই দুই নাম্বার। কিন্তু ওরা আমাকে টানছে কেন? এবার আমি স্বাভাবিক হয়ে বললাম..
.
"আচ্ছা আপনাদের কাজটা বলেন। কি করতে হবে?
"এই তো লাইনে আসছো।
.
এইটা বলেই একটা হাসি দিয়ে পকেট থেকে একটা খাম বের করে আমাকে বলল...
.
"এই খামটা ঐযে টিয়া রঙ এর তিনতলা বাড়িটা দেখছো ঐটার দুতলায় একটা মেয়ে আছে নাম অধরা। এই খামটা উনাকেই দিয়ে আসবা। ব্যাস এটুকুই কাজ।
.
আমি খামটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বললাম..
"এই খামে কি আছে?
.
আমার কথা শুনে শিহাব চোখে চশমা লাগিয়ে একটু হাসি দিল। পাশ থেকে এর চ্যালা একজন বলে উঠল...
.
"এই গুলা তোমার না জানলেও চলবে। এইটাতে শুধু একটা কাগজ আছে।
"ও আচ্ছা এই ব্যাপার। তা এই কাজটা আপনাদের মধ্যে যে কোন একজন দিয়ে আসলেই তো হয়।
.
তারপর শিহাব বলল..
.
"সব কাজ সবাইকে দিয়ে হয় না।
"জ্বি ঠিক বলেছেন সব কাজ যেমন সবাইকে দিয়ে হয় না। তেমনি এই কাজটাও আমাকে দিয়ে হবে না।
.
আমার কথাটা শুনে সবাই একটু চমকে গেল। সাথে সাথে শিহাব চোখ থেকে চশমাটা খুলে ফেলল। সত্য বলতে কি আমি একটু ভয় পেয়েছিলাম। সামান্যই তো একটা কাজ খামটা দিয়ে চলে আসা। আমি খামটা শিহাবের হাত থেকে নিয়ে বললাম...
.
"ইয়ে মানে খামটা কি অধারার হাতেই দিতে হবে?
.
সবাই একটু হাসল। আমিও একটু হাসলাম ওদের সাথে তাল মিলিয়ে।
.
"হ্যাঁ অধরাকেই। অন্য কারো হাতে দিবে না।
.
আর এই খামটা নিয়ে যখন ওদের বাসার দরজার কলিং বেল দু তিনবার চাপলাম। তখন একটা বারো কি তেরো বছরের ছেলে দরজাটা খুলল। দরজার ভিতরে অনেক লোকজন দেখলাম সম্ভাবত আত্বীয় স্বজন বেড়াতে আসছে পোশাকে আশাকে বুঝতে পারছিলাম। তারপর একটা ছেলে এসে বলেছিল..
.
"কি চাই? চুপ করে আছেন কেন? কিছু বলুন কাকে খুজঁছেন?
"অধরা আছে?
.
ছেলেটা আমার দিকে কেমন করে যেন একটু তাকিয়ে থেকে বলল...
.
"আপনি কি অধরা আপুর বন্ধু?
.
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। ছেলেটা হয়ত অধরার ছোট ভাই।
.
"হ্যাঁ তোমার আপুর বন্ধু। একটু ডেকে দেওয়া যাবে?
"ভিতরে আসুন।
"না না ভিতরে কোন কাজ নেই। তুমি তোমার আপুকে একটু ডেকে দাও আমি কয়েকটা কথা বলে চলে যাব।
.
ভিতর থেকে একজন মহিলা বলল...
.
"কে আসছেরে রায়হান?
"আপুর এক বন্ধু আসছে।
.
আমার অবস্হা খুব করুনের দিকে যাচ্ছিল তখন। তারপর মহিলাটা এসে আমার সামনে দাড়িঁয়ে একবার আমার দিকে তাকায় একবার ভিতরের মানুষ গুলার দিকে তাকায়। তারপর বলল...
.
"হুম যা বলার আমাকে বলো।
"না মানে আন্টি আপনাকে বললে হবে না। অধরাকে বলতে হবে।
.
তারপর মহিলাটা আবার আমার দিকে একবার তাকায় আবার ভিতরের লোকজনের দিকে তাকায়। আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। এরপর সোফায় বসে থাকা সেঁজে গুজে থাকা আরেকজন মহিলা আমার সামনে আসল। তারপর অধরার মা একটা হাসি দিল মহিলাটির দিকে তাকিয়ে। আর বলল অধরার বন্ধু। তারপর সেঁজে গুজে থাকা মহিলাটা বলল..
.
"তা বাহিরে কেন? ভিতরে আসো। এসময় বন্ধু বন্ধুর পাশেই থাকতে হয়।
.
আমি কিছুই বুঝলাম না উনি কিসের কথা বলতেছে। আমি বললাম..
.
"দেখুন আমার বেশি সময় লাগবে না। দু তিন মিনিট হলেই চলবে। অধরাকে এই খামটা দিয়েই চলে যাব।
.
আমার কথাটা শুনেই দুজনেই একটু চমকে গিয়েছিল তবে একটু বেশি চমকালো সেজেঁ গুজে থাকা মহিলাটা। আমি কিছু বুঝার আগেই সেঁজে গুজে থাকা ঐ মহিলটা ঝট করে আমার হাত থেকে খামটা নিয়ে ফেলেছিল। কি হচ্ছে না হচ্ছে আমি কিছুই জানি না। অবশ্য আমার না জানলেও চলছিল। সেঁজে গুজে মহিলটা খামটার দিকে একটু দেখে এক টান দিয়ে খামটা ছিড়ে ভিতরের কাগজ টুকু পড়তে শুরু করে। আমি বুঝলাম এখন আমাকে এখান থেকে যেতে হবে। আমি যেই চলে যাওয়ার প্রশ্তুত নিলাম অমনি ঐ মহিলাটা বলে উঠল...
.
"এই ছেলে কোথাও যাবে না। এইখানে দাড়িঁয়ে থাকো।
"জ্বি আমি কোথাও যাচ্ছি না।
.
অবশ্য আমার কোন ভয়ের কারন ছিল না আমি তো কিছু জানতাম না। আমাকে শুধু এটা দিতে বলেছে। ঐ মহিলাটা লেখাটা পড়ে আমার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। ভিতরের লোকজনও আমাদের দিকে তাক করে তাকিয়ে আছে। তারপর মহিলাটা ভিতরের সবাইকে বলে উঠল...
.
"এই চলো এই বিয়ে হবে না।
.
আমি একটু চমকে গেলাম। আমার বুঝতে একটুও বাকি রইল না এই লোক গুলা অধরাকে দেখতে এসেছে। কথাটা শুনেই ভিতরের লোক গুলো দাড়িয়ে গেল। মহিলাটা ভিতরের কয়েকজনকে কাগজটা দেখায় ওরা ভাবছে আমি অধরার প্রেমিক। কিন্তু আমি তো ওর কেউ না। আসলে ঐ ঘটনার দিন অধরাকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসে। আর যেই খামটা পড়ল, ওরা সবাই মনে করল আমি ওকে ভালবাসি আমি ওর প্রেমিক। আর বেক্কল শিহাইব্বাটা লেখার নিচে ওর নাম দেয় নাই। আমি ওদের কাউকে কিছু বুঝাতে পারিনি যে কাজটা আমার করা না। আমার কথাই শুনতে চাইছিল না। কিন্তু কে শুনে আমার কথা যখন দেখলাম পরিস্হিতি খুব খারাপের দিকে আমি কেটে পরেছিলাম। চলে আসার সময় অধরাকে দেখতে পেলাম। একটা পিংক কালারের শাড়ি পড়ে সেজে ছিল। ওর ভাই আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছিল যে আমি সেই ছেলে। বুঝলাম এইটাই অধরা।
.
আমি আর কিছু না ভেবে অফিসে চলে গেলাম। অফিসে ঘন্টা খানেক কাজ করার পর ভাবলাম যে করেই হোক মেয়েটাকে সব খুলে বলতে হবে। আর এই মেয়েটাকে যে ফ্যামিলির কাছে বিয়ে দিতে যাচ্ছিল এ কেমন ফ্যামিলি?, ঠান্ডা মাথায় কিছু না ভেবে আমাকে কিছু জিজ্ঞেস না করে বিয়ে হবে না, বিয়ে হবে না এই হৈ চৈ শুরু করে দিল। আর অধরার বাবা মাও একবারো আমাকে জিজ্ঞেস করে নাই। ওদেরকে শান্তনা আর বুঝাতে বুঝাতেই ব্যাস্ত ছিল। ঘন্টাখানেক কাজ করার পর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমার কাজ গুলা হেলাল ভাইকে বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম।
.
আমার অফিস থেকে সোজা এলাকায় গিয়ে অধরার পাশের প্রতিবেশি থেকে ওর অফিসের ঠিকানাটা নিয়ে সোজা ওর অফিসে গিয়ে রিসিপশনিস্ট এর কাছে ওর নামটা বলে দেখা করতে চাইলাম। একটু বসে থাকার পর অধরা আমার সামনে এসে বললো...
"আপনার তো সাহস কম না। আপনি আমার অফিসেও চলে এসেছেন।
বুঝলাম মেয়েটা আমার প্রতি রেগে আছে। আমি ইতস্তত হয়ে বললাম..
.
"দেখুন আপনার সাথে আমার কথা আছে। আমাকে পাঁচটা মিনিট সময় দিন।
"আপনি কি করে ভাবলেন আমি আপনাকে সময় দিব? ফাযলামির একটা সীমা থাকে। আপনি যা করেছেন এরপরও আপনি...
.
অধরা পুরোট কথাটা না বলেই থেমে যায়। কথা গুলা বেশ আস্তে আস্তে বলছিল। যেন কেউ বুঝতে না পারে। কিন্তু কথা গুলোর মাঝে কেমন একটা রাগ ও কষ্টের ছায়া পেলাম।
.
"দেখুন যে খামটা আমি দিয়েছিলাম ওটা আমার না। ওটা শিহা....
"প্লিজ চুপ করুন এই বিষয়ে আমি আর ভাবতে চাইনা আর কিছু জানতেও চাই না। একজনকে আঘাত দিয়ে আবার মায়া দেখতাতে এসেছেন। আপনি আসতে পারেন। এটা অফিস। এখানে আর আসবেন না।
.
আমাকে পুরো কথাটা বলতে না দিয়েই অধরা এই বলে আমার সামনে থেকে চলে গেল।
.
প্রায় দুদিন কেটে গেল। আমিও এই ব্যাপারে আর কিছু ভাবলাম না। কিন্তু এই বিষয়টা আমাকে কোন ভাবেই শান্তি দিচ্ছিল না। এই বিষয়টা মাথায় আসলেই নিজেকে অপরাধী মনে হয়। কিন্তু আমাকে যে করেই হোক বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার।
.
এরপর প্রতিদিন সকাল বেলা একটু আগে বের হয়ে ঐ রাস্তার মৌড়টায় দাড়িয়ে থাকতাম অধরার জন্য। ও আসলে ওর পিছু পিছু হাটতাম। আমি কিছু বলতে গেলেই ঐ ড্যাবরা ড্যাবরা চোখ দুটো বড় করে আমার দিকে তাকালে আমি আর কিছু কেন যেন বলতে পারি না।
এইভাবে একদিন, দু দিন, তিন দিন চলতে চলতে সতেরো দিন পার হয়ে যায়। এই সতেরোটা দিন আমি কিছুই বলতে পারিনি। বলতে পারিনি এটা বললে ভুল হবে আমাকে বলার সুযোগটাই দেইনি।
আঠারো দিনের মাথায় আমি একই নিয়মে সেই মৌড়ে দাড়িয়ে থাকলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে যে করেই হোক বলব। ও যখন আমার সামনে আসল আমি ওর পিছন হাটতে হাটতে বললাম...
.
"শুনেন আপনার সাথে কথা আছে।
.
ও কিছু না বলেই রিকশা ঠিক করতে লাগল। এমন একটা ভাব যেন কিছুই শুনেনি। আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম...
.
"আজকে আমার কথা শুনতে হবেই আপনাকে।
.
অধরা তারপরো রিকশা ঠিক করতে লাগল। ও যখন রিকশা ঠিক করে রিকশা উঠতে যাবে আমি অমনি ওর হাতটা টেনে ধরে বললাম...
.
"কি বলতেছি কথা কানে যায় না? নিজেকে কি মনে করেন?
.
আমি যখন ওর হাতটা ধরলাম ও খানিকটা অবাক হয়ে গেল। ওর গোলাপি ঠোট দুটো যেন প্রশ্তুত নিচ্ছে আমাকে কিছু বলার জন্য। আমি সেই সুযোগটা না দিয়ে আবার বললাম...
.
"একদম চুপ। আজকে আমি বলব চুপচাপ দাড়িয়ে শুনবেন। ঐদিন আমি শুধু বার্তা বাহক ছিলাম। ঐ কাগজটা না ছিল আমার, না ছিল আমার লেখা। ওটা এলাকার শিহাব আমাকে দিয়ে আপনার কাছে পাঠিয়েছে। আমি এর কিছুই জানি না। আমার উপর রেগে না থেকে আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত্‍ ছিল এই কারনে যে, ঐসব পাগল ফ্যামিলির ঘরে আপনার বিয়ে হয়নি। আশা করি কথা গুলা বুঝতে পেরেছেন। আর হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালবাসতাম না, তবে এই কয়েকদিনে আপনার পিছনে ছুটতে ছুটতে আপনাকে আমার ভাল লেগে গেছে।
.
কথা গুলা বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম। আশেপাশের লোকজন কেমন করে যেন আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারছি না আমি এইভাবে কথা গুলা বলতে পারব। কিন্তু শেষে আমি এটা কি বললাম? আমি আর কিছু না বলে অফিসের দিকে রওনা দিলাম। একটা জিনিস বুঝলাম না ওকে এই কথা বলার সহস কি করে হলো? সত্যিই কি অধরাকে আমার ভাল লেগে গেছে? এটা কি করে সম্ভব? হযতবা হ্যাঁ, একটা মানুষের পিছনে ছুটলে, ওর কথা সারাক্ষন মাথায় বিরাজ করলে ওকে নিয়ে এমনিতে ভাবায়। এই ভাবনাটা মনের ভিতর একটা জায়গা দখল করে রাখে। কিন্তু আসলেই কি ওকে আমার ভালো লেগেছে। আমি রিকশায় উঠে যখন অফিসে চলে যেতে লাগলাম আর অধরা ঠিক তখনি দাড়িঁয়ে থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল আর নিশ্চয় ভাবছিল এই ছেলেটা কেন এমন কথাটা বললো?
.
এরপর অনেকটা দিন কেটে গেছে। আমি আমার মত চলতে থাকি, অফিসে কাজ করতে থাকি। কিন্তু এই চলার মাঝে বা দিন অতিক্রমের মাঝে এই ভালো লাগার অনুভূতিটা আমাকে ঠিক মত থাকতে দেয় না, ঘুমাতে দেয় না। অফিসে করার এক পর্যায়ে সাখাওয়াত ভাই বলল আমার সাথে কে যেন দেখা করতে এসেছে। ঐদিন অধরার সাথে কথা বলার পয় আর ওর সাথে দেখা হয়নি। ঐদিকে শিহাব আর শিহাবের সাথে থাকা ছেলেগুলোর কোন খোঁজ নেই। আসলে ওরা আজকে এই এলাকায় তো কালকে আরেক এলাকায়। আমি রিসিপশনে গিয়ে দেখি অধরা বসে আছে। ওকে দেখে আমি একটু অবাক হলাম। এই মেয়ে এখানে কি করে? আমার অফিসের ঠিকানা কিভাবে পেল? আসলে আমি যখন ওদের অফিসে গেলাম তখন জিজ্ঞেস করেছিল আমায় কোথা থেকে এসেছি তখন আমার অফিসের নাম আর আমার নাম রেজিষ্টার খাতায় লিখে রেখেছিল। নিশ্চয় ওখান থেকেই আমার অফিসের ঠিকানাটা অধারা পেয়েছে। আমি একটু ইতস্তত করে বললাম..
.
"আপনি এখানে হঠাত্‍?
.
অধরা একটু চুপ করে রইলো। বাম হাত দিয়ে কিছুটা চুল কানে গুজে নিল। ও হয়ত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বা কি বলবে সেটা বলার জন্য প্রশ্তুত হচ্ছে। আমি কিছু বলতে যাব ঠিক তখন অধরা বললো..
.
"আপনি এই কয়েক দিন আমার জন্য রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করেন নি কেন?
.
আমি বেশ অবাক হলাম। এই মেয়ে বলে কি? আমি কি বলব কিছুই বুঝতে পারছি না। অধরা নিচের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত হয়ে আবার বলল...
.
"আমি বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। আপনি চাইলে রোজ রাস্তার মোড়ে অপেক্ষা করতে পারেন।
.
এই কথাটা বলেই অধরা চলে যায়। ও কিসের ইঙ্গিত করেছে এটা নিয়ে আমি বেশ ভাবলাম।আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমাকে আরও অনেক কিছু শুনাতে এসেছে। কিন্তু বিষয়টা এমন হয়ে যাবে আমার মাথায় আসছে না। আসলে একটা মেয়ের পিছনে যখন একটা ছেলে সারাক্ষন ঘুর ঘুর করে তখন মেয়েটা আকাশকে অনুভব করতে থাকে। প্রজাপতির মত উড়ার চেষ্টা করে। মাঝে মাঝে রেগে গিয়ে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামিয়ে দেয়। কিন্তু হঠাৎ‍ করে যখন ছেলেটা মেয়েটার পিছনে ঘুরা বন্ধ করে দেয় তখন মেয়েটা একটু হলেও অনুভব করে এই আকাশের সাদা মেঘ আর বৃষ্টিকে। আর এই অনুভবটা মনের ভিতর বিষণ্নতা তৈরি করতে সাহায্য করে।
আমি ভাবি রোজ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন লাগবে আমাকে। নতুন এই এক্সট্রা চাকরিটা নিতে হবে। আর এই জন্য সামনের পথটা না হয় আমিই তৈরি করে নিব। শূন্যস্হান ফিলাপ করেই ছাড়ব যেহেতু উওরটা নিজেই আমার কাছে এসে সাই দিয়ে গেছে...

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×