somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনমভর - মানুষের কথা, জীবনের কথা, বেঁচে থাকার কথা

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





একুশে বইমেলার আর বেশি বাকি নেই। বইমেলা উপলক্ষে লেখক ও প্রকাশক আটঘাট বেঁধে নেমেছেন বই প্রচারে। কথায় আছে না, প্রচারেই প্রসার। কিন্তু একদল আছে যারা এই প্রচারণা টা মানতে পারে না। বই নাকি প্রচারণার জিনিষ নয়।

এমন ধারণা আসলেই কি ঠিক?

এই প্রসঙ্গে ফেসবুকে গোলাম রাব্বানি নামের একজন সুন্দর একটা পোস্ট লিখেছেন, তার অংশবিশেষ নীচে দিলাম।


টেলিভিশনে সুন্দর নাটক কিংবা মুভি দেখলে আমরা তো ঠিকই রিভিউ দিয়ে অন্যকে তা দেখতে বলি। শ্রুতিমধুর কোন
গান শুনলে অন্যকে তা শুনতে বলি। কোন রেস্টুরেন্টের খাবার ভালো লাগলে তা নিয়ে হইচই ফেলে দেই। দর্শনীয় কোথাও
ঘুরতে গেলে সাথে সাথে চেক ইন দিয়ে নিজের অস্তিত্বের কথা জানান দেই। এসব কি প্রচারনা নয়? এতসব জিনিস নিয়ে
প্রচারনা করলে তো কারো কোন মাথাব্যথা দেখা যায় না। তাহলে বই নিয়ে প্রচারনা করলেই কেন তা মানুষের
মাথাব্যথার কারণ হয়ে দেখা দেয়? এটা কি আমাদের হীনমন্যতা নয়?


আসলে আমাদের বইয়ের প্রচারণা করতে হবে। বইয়ের রিভিউ বেশি বেশি লিখতে হবে যাতে করে পাঠক তার পছন্দানুযায়ী বই কিনে, যাতে পাঠক বই কিনে আফসোস না করে।

বই রিভিউ বা বই প্রচারণা মানে চোখ বুঝে লেখক বা বইটির প্রশংসা করা নয়। রিভিউতে বইয়ের সম্পর্কে পাঠকের পাঠ প্রতিক্রিয়া থাকবে, পাঠকের ভাল লাগা থাকবে, মন্দ লাগা থাকবে।

আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বই মেলায় আসছে এমন কিছু বইয়ের রিভিউ পর্যায়ক্রমে সামু ব্লগে শেয়ার করব। যে বইয়ের রিভিউ পড়ে বা যে বইয়ের কিছু অংশ পড়ে আমার ভালো লেগেছে বা আমি বইগুলো কিনব বলে মনস্থির করেছি সেরকম কিছু বইয়ের প্রচারণা করব।

তো প্রথম শুরু করছি তরুণ জনপ্রিয় লেখক আরিফ খন্দকারের 'জনমভর' উপন্যাস দিয়ে।

বইয়ের একটি ক্ষুদ্র অংশ:

খাল থেকে উঠে তিনি নদীর পাশে এসে দাঁড়ালেন। হিম বাতাসে পানিতে কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। কম্পনের কারণে ছোটোখাটো ঢেউ উঠছে, ঠিক যেমন করে মানুষের শরীরের স্পর্শে মানুষের শরীরে সুড়সুড়ি উঠে। পালতোলা একটা নৌকা ভাসছে। নৌকায় মাঝি ছাড়া তেমন কেউই নেই। মাঝির চোখ হোসেন আরার চোখে পড়তে না পড়তেই নৌকা তার দিকে ভিড়িয়ে নিয়ে আসছে। মাঝিরও বোধহয় মনে হলো, হোসেন আরা যাবে কোথাও! তাই নৌকার জন্য অপেক্ষা করছে। হোসেন আরা তো যাবে ঠিকই কিন্তু নৌকায় করে নয়, পায়ে হেঁটে। মাঝি নৌকা নিয়ে পাড়ের খানিক কাছে এসে বেশ মোটা গলায় বললেন, 'ও আফা, যাইবেন কই?'

হোসেন আরা মুখে কিছু না বলে হাত ইশারা করে মাঝিকে দেখিয়ে দিলেন যে তিনি কোথাও যাবেন না। তবু মাঝি নৌকা নিয়ে তার দিকে ভিড়ছে। তিনি আবার ভাবতে লাগলেন তার ইশারা মাঝি বুঝেন নি। তাই তিনি মুখে শব্দ করে বললেন, 'আমি নৌকা দিইয়া যামু না কোনোখানে। আফনে নৌকা ভিড়াইয়েন না।'

তিনি মুখে বললেন কিন্তু তার মন বললো নৌকায় উঠতে। বহুদিন ধরে নৌকায় উঠেন না তিনি। বিয়ের দেড় বছরের মধ্যে একবারও নৌকায় উঠেন নি। উঠবেনই বা কেমন করে! মেছের আলী যে তাঁকে নিয়ে খুব দূরে কোথাও ঘুরতে যান নি। এখন হয়তো মেছের আলী সাথে থাকলে নৌকায় উঠার আবদার করতেন তিনি। তারপর উঠা হতো। কিন্তু এখন ইচ্ছে হলেও উঠতে পারছেন না। উঠতেন তবুও। মাঝিটাকে তাঁর কাছে খুব সুবিধার মনে হচ্ছে না।

মাঝি হোসেন আরার কথা শুনেও তাঁর দিকেই নৌকা ভিড়াচ্ছে। ভিড়াতে ভিড়াতে মাঝি কিছুটা চিকন গলায় বললেন, 'ওই আফা কন না, কই যাইবেন? আসেন নৌকায় উঠেন। সোন্দর কইরা নামাইয়া দিইয়া আসমু। কোনো সমস্যা অইবো না, আফনের ট্যাকাও দিতে অইবো না।' মাঝি কথাগুলো খুব দ্রুত বলে শেষ করলেন। কথা বলতে গিয়ে খানিক নিঃশ্বাসও ফেললেন না।

হোসেন আরার বুঝতে কিঞ্চিৎ সমস্যাও হলো না। হওয়ার কথাও না। কেননা তিনি নৌকায় উঠতে চাচ্ছেন না অথচ মাঝি উঠাতে চাচ্ছে, তাও আবার টাকা ছাড়া। চেনা নাই, জানা নাই কিন্তু মাঝি তাঁকে বিনা টাকায় তাঁর গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বললেন। এতে করে হোসেন আরা খুব সহজেই বুঝে ফেললেন যে মাঝি হোসেন আরাকে তাঁর নৌকায় উঠানোর ছলে তাঁকে হাতের নাগালে পেতে চাইছেন। মাঝির শরীরের খাঁচায় হোসেন আঁরার শরীর পাখির মতো বন্দী করার চেষ্টা করছেন। মাঝি যখন নৌকা পাড়ে ভিড়াচ্ছেন হোসেন আরা তখন ভুরু কুঁচকে খানিকটা রাগের গলায় বললেন, 'আরে ভাই আমি দ কইছি, যামু না। তারপরেও কেরে আফনে নৌকা পাড়ে ভিড়াইতাছেন?'

হঠাৎ করেই মাঝির চেহারা ক্ষুধায় অন্ধকার হয়ে গেলো। পেটের ক্ষুধা নয়, শরীরের ক্ষুধা। একটা সময় আসে যখন এই ক্ষুধাটা পুরুষদের কাবু করে ফেলে। তখন তারা জগতের সবকিছু ভুলে গিয়ে শুধুমাত্র একটা নারীকে কাছে পেতে চায়। শকুনের মতো করে নারীর ভেতরটা খুলে দেখতে চায়, খেতে চায়। মাঝিও এমন করে হোসেন আরাকে চাইছে। কন্ঠ ভরা তৃষ্ণা নিয়ে মাঝি বললেন, 'নৌকা পাড়ে না ভিড়াইলে আফনে উডবেন কেমনে...?'





বইটির কয়েকটি কাব্যিক কথামালা -


'আমার সাথে থাকবে কি তুমি জনমভর?
তবে এসো দু'জনে মিলে বাঁধি একটা ঘর।'

"যদি বাঁধি একটা ঘর,
যদি সাজাই রঙের বাসর।
থাকবে কি জনমভর।'

'শুধু চাই একটা ঘর,
যে ঘরে কেটে যাবে তোমার আমার জনমভর।'


উপন্যাস: জনমভর
লেখক- আরিফ খন্দকার
একুশে বইমেলা ২০১৯ এ অন্যধারার ১৯৭ ও ১৯৮ নং স্টলে বইটি পাবেন।

আজকের মতো বিদায়। সবাই ভালো থাকবেন। আগামীকাল কাল আসবো অন্যকোন বই নিয়ে ইনশাআল্লাহ।

আপনাদেরকেও অনুরোধ করব আপনাদের প্রিয় লেখক, আপনাদের ভালো লাগা বইয়ের রিভিউ দেয়ার জন্য।

বই হোক পৃথিবীর, পৃথিবী হোক বইয়ের।



সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৩:০৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×