মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা। প্রথমেই সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।
"এক সময় থেমে যাবে সমস্ত কোলাহল,
ঘুমিয়ে পড়বে ধরণী।
আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা মিটমিট করলে
বুঝবে আমি তোমায় ডাকছি।
সে-রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না।
আর, হ্যাঁ, ফুলের গন্ধ পেলে,
বুঝে নিয়ো আমি আসছি।
আর যদি কোকিল ডাকে,
ভেবআমি আর বেশী দূরে নেই।
তারপর হঠাৎ ফুরফুরে বাতাস এসে তোমার গায়ে লুটিয়ে পড়লে,
বুঝবে আমি এসেছি।
সে রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না।”
...
মাসুদ রানার জন্মদিনে লুবনা তাঁকে একটি ইংরেজি অনুবাদের কুরআন শরীফ এর পাশাপাশি এই গানটিও উপহার দেয়। মাসুদ রানার আসল পরিচয় লুবনা জানেনা। মাসুদ রানা তার বডিগার্ড। সে মাসুদ রানাকে ইমরুল হাসান নামে জানে। সিআইএ এর হাত থেকে বাঁচার জন্যই জন্যই মাসুদ রানার এই ছদ্মবেশী জীবন যাপন। কিন্তু বডিগার্ড মাসুদ রানা ধীরে ধীরে লুবনার বন্ধু হয়ে যায়।
আর এখান থেকেই এই গল্পের শুরু। গল্পটা বন্ধুত্বের, গল্পটা প্রগাঢ় ভালবাসার। গল্পটা প্রিয়জন হারানোর কষ্টের। গল্পটা ঘৃণা ও নির্মম প্রতিশোধের।
আনন্দ খুশিতেই মাসুদ রানা ও লুবনার দিনকাল কাটছিল। কিন্তু একদিন লুবনাকে কিডন্যাপাররা কিডন্যাপড করতে আসে। মাসুদ রানা প্রাণপণ চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত লুবনাকে বাঁচাতে পারেনি। উল্টো তাঁদের গুলিতে সে গুরুতর আহত হয়।
মাসুদ রানা এতটা আহত হন যে চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা দেখতে পায়নি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে মাসুদ রানা লুবনার মৃত্যুসংবাদ পায়। বারো বছরের কিশোরীকে হত্যা করার আগে কয়েকবার রেপ করা হয়। এ খবর শুনেই প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠে মাসুদ রানা। প্রতিশোধ নিতেই তার বেঁচে থাকার তীব্র আকুতি। ডাক্তারদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে বেঁচে থাকার এ আকুতিতেই যেন তিনি বেঁচে গেলেন।
এবার প্রতিশোধ নেয়ার পালা। নিজেকে আগের ফর্মে ফেরানোর জন্যে মাসুদ রানা তার বন্ধু রেমারিকের শ্বশুর বাড়ি গুজোয় চলে যায়। কিন্তু লুবনার দেয়া উপহার সেই গানটি তাঁকে ঘুমাতে দেয় না। গভীর রাত। ধরণী যখন ঘুমিয়ে তখন একা জেগে তাঁকে মাসুদ রানা। আকাশে একটা তারা যেন অন্যরকম। মিটিমিটি জ্বলে। পাহার গা থেকে ফুরফুরে বাতাস আসে। বাতাসে ফুলের গন্ধ। মাসুদ রানা তখন আপন মনে বলে, "জেগে আছি বন্ধু, আমি জেগে আছি"।
মাসুদ রানা প্রতিশোধ নিতে শুরু করল।
একে একে বেরলিংগার, এলি, ফনটেলাকে খুন করল। । যত খুন করতে থাকল, ততই তার মৃত্যুঝুঁকি বাড়তে থাককে মাফিয়া তাঁকে পাগল হয়ে খুঁজে বেড়ায়।
প্রতিটি দৈনিক পত্রিকায় তার নামে খবর ছাপায় মাফিয়া।
ইতালীর জনগণ তার জন্য গীর্জায় প্রার্থণা করে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিশাল আকৃতির তোরণ নির্মাণ করে। একটা তোরণে পাড়ার ছেলেরা লিখল, "বাঙ্গালী বীর, লহ সালাম"।
এক সময় মাসুদদ রানার প্রতিশোধ পর্ব শেষ হয়। তারপর সে আপন মনে বলে, "এবার আমি ঘুমাব, লুবনা, এবার আমি ঘুমাব।”
একদিন একটি পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হল,
"এদেশের মিষ্টি এক মেয়ে একটা গান উপহার দিয়েছিল বাংলাদেশের দুঃসাহসী এক যুবককে। বলেছিল, একদিন ছাড়াছাড়ি হবে, তখন যেনো আমার কথা ভুলে যেয়ো না। এক সময় থেমে যাবে সমস্ত কোলাহল, ঘুমিয়ে পড়বে ধরণী।
আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা মিটমিট করলে বুঝবে আমি তোমায় ডাকছি। সে-রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘু লুটিয়ে পড়লে, বুঝবে আমি এ মিয়ে পড়ো না। আর, হ্যাঁ, ফুলের গন্ধ পেলে, বুঝে নিয়ো আমি আসছি। আর যদি কোকিল ডাকে, ভেবআমি আর বেশী দূরে নেই। তারপর হঠাৎ ফুরফুরে বাতাস এসে তোমার গায়ে সেছি। সে রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না। ”
এই পবিত্র ভালবাসার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে সেই যুবক।"
পাঠ প্রতিক্রিয়া ও দুটি কথা:
হুমায়ূন আহমেদ এর অমানুষ বইটি পড়েছি তিন চার দিন হল। ফেসবুক গ্রুপ 'বইপোকাদের আড্ডাখানা' গ্রুপে দুই বা তিন লাইনে বইটি পড়ার অনুভূতি প্রকাশ করি। সেখানে অনেকেই আমাকে মাসুদ রানা সিরিজের 'অগ্নিপুরুষ' বইটি পড়ার জন্য বলেন। দুটি বই-ই এ.জে কুইনালের বিখ্যাত 'ম্যান অন ফায়ার' এর ছায়া অবলম্বনে লেখা। ক তারপরই পড়ে ফেলি অগ্নিপুরুষ। উপরের রিভিউটা আসলে অগ্নিপুরুষ বইয়েরই। এর আগে মাসুদ রানা পড়ার ইচ্ছা কোন সময়ই ছিল না। বুঝতেই পারছেন এই প্রথম মাসুদ রানা পড়েছি।
হুমায়ূন আহমেদ এর বইটা এক কথায় অসাধারণ। খুবই টুইস্টেস্ট একটা গল্প। অসম্ভব ভালো লেগেছে। তার বইয়ের শেষ লাইন
এখানে একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাঁকে শান্তিতে ঘুমুতে
দাও' মাথায় একদম ঢুকে গেছে। অনেকদিন, অনেকদিন কথাটা মনে থাকবে।
আগে থেকে মূল কাহিনী জেনেও অগ্নিপুরুষ পড়ে বিরক্ত হয়নি। পার্ট পড়ে মনে হয়েছে হুমায়ূন আহমেদ এরটাই সেরা। কিন্তু দ্বিতীয় পার্ট পড়ে মনে হয়েছে অগ্নিপুরুষ সেরা। আসলে দ্বিতীয় পার্টে অসাধারণ সব টুইস্ট পেয়েছি।
বই দুটির তুলনা করতে চাই না। তুলনা করতে চাই না এই কারণে যে দুটি বই দুই রকমের স্বাদ পেয়েছি। অমানুষ পড়ে কষ্ট খুব বেশি পেয়েছি। জামশেদ চরিত্রটাকে একদম ভালবেসে ফেলেছি। অন্যদিকে অগ্নিপুরুষ পড়ে অনেক বেশি থ্রিল পেয়েছি। যারা বই দুটি পড়তে চান তাঁদের বলব আগে অমানুষ পড়েন। পরে অগ্নিপুরুষ পড়লে সমস্যা নেই। কিন্তু আগে অগ্নিপুরুষ পড়ে পরে অমানুষ পড়লে বেশি মজা পাবেন না।
আমার মাথায় দুটি বইয়ের দুটি লেখা ঘুরছে।
অমানুষ এর
'এখানে একজন মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাঁকে সান্তিতে ঘুমুতে দাও।
অগ্নিপুরুষ এর
এক সময় থেমে যাবে সমস্ত কোলাহল, ঘুমিয়ে পড়বে ধরণী।
আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা মিটমিট করলে বুঝবে আমি তোমায় ডাকছি। সে-রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘু লুটিয়ে পড়লে, বুঝবে আমি এ মিয়ে পড়ো না। আর, হ্যাঁ, ফুলের গন্ধ পেলে, বুঝে নিয়ো আমি আসছি। আর যদি কোকিল ডাকে, ভেবআমি আর বেশী দূরে নেই। তারপর হঠাৎ ফুরফুরে বাতাস এসে তোমার গায়ে সেছি। সে রাতে তুমি জেগে থেকো, বন্ধু, ঘুমিয়ে পড়ো না।
বই সম্পর্কে কিছু তথ্য:
বই: অগ্নিপুরুষ
লেখক: কাজী আনোয়ার হোসেন
প্রচ্ছদ: আলীম আজিজ
প্রকাশন: সেবা প্রকাশনী
মূল্য : ৮৫ টাকা (রকমারি ডট কম]
.
বই : অমানুষ
লেখক : হুমায়ূন আহমেদ
প্রচ্ছদ:
প্রকাশন: অন্বেষা প্রকাশন
মূল্য : ১৭৬ [রকমারি ডট কম]
অগ্নিপুরুষ এর পিডিএফ লিংক (দুই খন্ড একত্রে) - http://www.amarbooks.com/download.php?id=17974
অমানুষ এর পিডিএফ লিংক: http://www.amarbooks.com/download.php?id=19396
এত দিন ছবি আপলোড দিতে পারতাম না। আজ পারলাম। আলহামদুলিল্লাহ।
আজ পহেলা বৈশাখ। সবাই আবারো বৈশাখের লাল গোলাপ শুভেচ্ছা জানবেন
মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১২:১৩