somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মের বয়ানে ঘৃণা ঝাড়া বাঙ্গালী ও একজন কিশোর কুমার দাস

১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




অনেক দিন আগের কথা। কিছু ভাই ব্রাদার নিয়ে একটা সংগঠন ক্রিয়েট করি। আমি সংগঠনের নামটা দেই "সেবানন্দ"। অর্থাৎ সেবার মাধ্যমে আনন্দ অর্জন। এই নাম দেখেই অনেকে ক্ষুদ্ধ হয়। চারিদিক হতে মন্তব্য আসতে থাকে, নামটাতে কেমন জানি হিন্দু হিন্দু ভাব আছে।৷ মুসলমানদের সংগঠনের হইয়া এই নাম! নাম বদলাতে হবে এই রকম একটা রব উঠে। আমরা সংগঠনের সেবকরা মন্তব্যকারীদের নামের অর্থ বুঝাতে চেষ্টা করি। মানুষ বুঝল কি বুঝল না তা আমরা বুঝিনি। তবে এই সাম্প্রদায়িক মন্তব্য সেবারের মত থেমেছিল।

সংগঠন খোলার কিছুদিন পরেই ভুল বুঝাবুঝি হয়। আমি সরে আসি দায়িত্ব ছেড়ে। সংগঠনের চ্যাট গ্রুপে মাঝে মাঝে অন্যান্য সেবকদের আলোচনা নিরবে দেখে যেতাম। একদিন দেখি সংগঠনে যিনি সভাপতির দায়িত্বে তিনি সংগঠনের 'সেবানন্দ' নামটা বদলানোর প্রস্তাব রাখলেন। যিনি বলেছিলেন সেবানন্দ নামটি অনেক সুন্দর, নামটির জন্য যিনি নিজে আমাকে একটা উপহার দিয়েছিলেন তিনি কেন নাম বদলানোর প্রস্তাব দিলেন? ব্যাপারটা মাথায় ধরলো না আমার। ওনার সাথে আমার ভুল বুঝাবুঝি ছিল বলে আমার দেয়া নামটা রাখতে চাননি। নাকি সেই পুরনো 'পাছে লোকে কিছু বলে'র কথা ধরে। মানে নামটা তে যে হিন্দু হিন্দু ভাব আছে সেই কারণে?

অতঃপর ভাবতে থাকি বিদ্যানন্দ সংগঠন নিয়ে। এই বিষয়ে সংগঠনটিই ছিল আমাদের আদর্শ। সেবানন্দ নামটির দিকে তাকালেই সেটি বুঝতে পারা যায়। এমনকি লোগোটিও তাঁদেত অনুসরণ করে তৈরি করি আমরা। লোগোর জন্যেও অনেক কথা সইতে হয়েছিল আমাদের। নামাজ হবে না এই অজুহাতে একটা লোক তো টি শার্টের লোগো নখ দিয়ে ঘষে উঠিয়ে ফেলেছিল। ভাবা যায়!

আমার এলাকাতেই এই ধর্মান্ধরা বাস করে না। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সারা দেশ জুড়েই এরা আছে৷ যে নাম অনুসরণ করে যাদের লোগো অনুসরণ করে সেবানন্দ ক্রিয়েট করি, সংগঠনের দিক থেকে যাদের আমরা আদর্শ হিসেবে মানি সেই হিন্দু হিন্দু গন্ধের 'বিদ্যানন্দ' নামক সংগঠনটি কেমনে ঠিকে রইল? তারা কি এহেন মন্তব্য শোনে না? ভাবনাগুলো মাথায় জড়ো হয়।

সেবানন্দের প্রতিটি কাজ ও প্রোজেক্ট নিয়েই বাজে বাজে সমালোচনা ও অপপ্রচার হয়। পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয় চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হয় যা এখনো চলমান। একশ মানুষকে ত্রান-সাহায্য দিয়ে যদি ফেবুতে দুটো ছবি দেই কিংবা কাউকে রক্তদান করে যদি ছবি তাহলেই একদল মানুষ তাদের হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হীনতা ঝাড়ে ইসলামের বয়ানে, ঈমানের বয়ানে। ওসব সেবা লোক দেখানো। এতে ফায়দা নেই। ঈমান থাকবে না হেন থেন......

তখম প্রশ্ন করি নিজেকে, বিদ্যানন্দের একটাও সমালোচনা হয় না কেন?। ভাবি এরা গ্রেট। এদের সুষম বন্ঠন, গঠনতন্ত্র এবং নির্ভুল নিয়মাবলির কারণে ওরা সেবানন্দসহ আর সব সংগঠন থেকেই আলাদা। এজন্য এদের সমালোচনা হয় না। আমরা ভুল বলেই আমাদের সমালোচনা হয়। এই ভেবে নিজেকে দেই সস্তা স্বান্ত্বনা!!

এতকিছু বলার উদ্দেশ্য হল প্রিয় বিদ্যানন্দ সংগঠনটিরও এখন প্রচুর বাজে সমালোচনা হচ্ছে। কাজী নজরুল লিখেছিলেন,

"মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান"

কবির এমন অমর বাণী অমর রয় কিন্ত সবাই মর্মকথা হৃদয়ে ধারণ করতে জানে না। সবাই মানুষ হতে পারে না। মানুষ রুপে কিছু প্রাণী পশুও হয়।

আরো জানতাম না,

ধর্মান্ধরা একদিন না একদিন ফুলের মধ্যেও দুর্গন্ধ খুঁজে বেড়াবে। আজ কিশোর কুমার দাস পদত্যাগ করেছেন? তার দোষ তিনি হিন্দু। 'তিনি হিন্দু' এই একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে আমরা ওনাকে পদচ্যুত করেছি৷ আমরা স্বাধীন হয়েছি কথা সত্য। কিন্তু মুক্ত হইনি। মুক্তচিন্তা করতে জানিনা। হ্যাঁ, চিন্তাগুলো এখনো বন্দী রয়ে গেছে ধর্মীয় বেড়াজালে। (আমার ধর্মের বেড়াজাল নাই, মানুষ কিয়দংশ কথা ধরে বাকি সব ছেড়ে দেয় স্বার্থে পরে। দোষটা মানুষের, ধর্মের নয়) যার ফলে পরম ধর্ম মানবতার চাষ করতে জানি না। জানি ধর্মের দোহাই দিয়ে মানবতাকে গলা টিপে হত্যা করতে, দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে, রক্তপাত ঝরাতে।

খুব সম্ভবত, ২০১৫ সাল থেকে বিদ্যানন্দ সংগঠনটিকে চিনি। অথচ বিদ্যানন্দের প্রতিষ্ঠাতা কিশোর কুমার দাসকে চিনলাম সেদিন মাত্র। তাঁকে না চেনার কারণ, তিনি আত্মপ্রচার করেন না। অথচ এই মানুষটাকেই এদেশের মানুষ সাম্প্রদায়িক প্রশ্নে পদচ্যুত করতে চায়.....

এত সব দেখে আপনিই মনে আসে বিশ্ব কবির সেই অপ্রিয় কথাটি,

",সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো বাঙ্গালী করে, মানুষ করোনি"

কি বলব বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটায় অনেক কষ্ট পেলাম। ।

প্রিয় কিশোর কুমার দাস দাদা আপনি আমাদের ভালবাসা জানবেন। জানবেন, সবাই মীর জাফর হয় না। সবাই বেঈমান হয় না। স্যালুট আপনার প্রতি আগে যেমন ছিল এখনো তেমনিই আছে।

আরো জানবেন,

আপনার দেখানো পথ ধরেই স্বপ্নবাজ তরুণরা মানবতার সেবায় এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। ধর্মের অপব্যাখ্যায় সৃষ্ট দেয়াল ওদের কখনো রুখতে পারবে না।

-------- আকতার আর হোসাইন [০৭ মে ২০]২০
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:৩৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×