somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশান্তিতে হৃদয় ছুঁয়ে দেয় নজরুলের গজল

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এই রমজানে আমি আমার মাঝে কোন একটা কিছু মিস করছিলাম। বুকের গহীনে শূন্যতা অনুভব করছিলাম শুধু। তবে কিসের জন্যে বুকের ভেতর হাহাকার হচ্ছিল, কি পেতে হৃদমাঝারে তোলপাড় শুরু হচ্ছিল তা কোনক্রমেই বুঝতে পারছিলাম না।

তবে এই শূণ্যতার কারণে এট মনে হচ্ছিল যে, এইবার সাওম পালন ঠিকঠাকভাবে হচ্ছে না। কোন কিছুর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

নাহ, আগের বারের মতোই তো রোজা রাখছি, নামাজ পড়ছি, মাঝে মাঝে ফজর মিস, মাঝে মাঝে তাহাজ্জুদ পড়া, একটু একটু কোর'আন তিলাওয়াত, ইসলামি এক দুইটা বই পড়া সবই তো আগের মতোই হচ্ছে কিন্তু তবু কেন বুকের ভেতরটা কোন অভাবে খা খা করছিল যেন। কিসের তাড়নায় এমন অনুভূতি।

ভাবতে ভাবতে আচমকা স্মরণ হল প্রতিবারতো আমি নজরুলের গজল শুনতাম। নজরুলের কয়েকটি গজলের লিরিক একটু দেখে

❝ওরে গোলাপ নিরিবিলি -
নবীর কদম ছুঁয়েছিলি
তাঁর কদমে খোশবো আজো তোর আতরে জাগে❞

❝মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেন ঘোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই❞

❝আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ
সেই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত❞

❝হে নামাজী, আমার ঘরে নামাজ পড় আজ
দিলাম তোমার চরণ তলে হৃদয় জায়নামাজ❞

❝হযরতকে ভালবেসে
আল্লাহকে যে পাইতে চায়
আরশ কুরসি লাউহে কালাম
না চাইতেই পেয়েছে সে❞

তাঁর প্রতিটি গজলই ভীষন সুন্দর। আর প্রতিটি গজলেরই আছে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থ। শুধু অর্থ নিয়েই লিখলেই একটি বই লেখা যাবে। গজল লিখতে গেলে প্রায় সময় মানুষ এমন কিছু লিখে যা শরীয়ত সম্মত নয়। কিন্তু নজরুলের গজলে এমনটি কখনোও দেখিনি। এতে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায় তিনি কত পড়তেন। যারা সার্টিফিকেট অর্জনকারী আলেম ছিলেন, নজরুল সার্টিফিকেট অর্জন না করেও তাঁদের চেয়ে বড় আলেম ছিলেন। তা নাহলে তিনি কীভাবে এতো সুন্দর অর্থপূর্ণ গজল লিখেছিলেন?

আহ! কি সেই গজল। কত সুন্দর লিরিক, মায়াময় সুর আর দরদ মাখা কন্ঠের জাদু! ওফ, আর থাকতে পারিনা। সত্যিই আমি আর আমার মাঝে থাকতে পারি না। হারিয়ে যায় অন্য কোন দেশে। অন্য কোন ভূবনে। সেই ভুবনের পাথরের মতো শক্ত হৃদয়টিও গলে নরম হয়ে যায়। অন্তরের প্রশান্তির পরশ লাগে। আল্লাহর নবীর প্রতি নতুন আঙ্গিকে প্রেমানুভূতি সৃষ্টি হয়। মোনাজাতে কান্না করতে চেয়েও যখন দু'ফোঁটা পানি আসে না। অথচ নজরুলের গজলের কি জাদু! কত প্রভাব!

নিরিবিলি তাঁর গজল শুনলে হৃদয়ে কান্নার ঢেউ নেমে আসে । কপোল বেয়ে টপ্টপ করে অশ্রু ঝরতে থাকে । এই জায়গাটিতে একটি কথা না বললেই নয়। কিছু কিছু মৌলানা সাহেব ফতোয়া দেন যে গজল শোনার মাঝে কোন সওয়াবও নাই। গোনাহও নাই। অথচ হাদিসে এসেছে,

"যে দিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দিবে। তন্মধ্যে একজন হলো সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকর করে, ফলে তার দু-চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৬৬০)"

চোখের পানি আল্লাহর কাছে অতীব প্রিয়। যাহোক, সেহরি করার সময় গজল শুনতাম। ঘুমানোর আগে গজল শুনতাম। দুপুরের নামাজের পর মসজিদের ভিতরেই ভলিউম কমিয়ে গজল শুনতাম। এই গজল গুলোই অন্তরে অন্য রকম এক অনুভূতি এনে দিত। এবং এই অনুভুতি এতটাই যে জরুরী এইবার নজরুলের গজল না শোনাতে কিঞ্চিৎ টের পেলাম।

নজরুল আমাদের অন্তরে মিশে আছেন। রমজান মাসে যেমন তাঁর গজল শুনে অন্তরে শীতলতা নেমে আসে। তেমনি ঈদের দিনেও 'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' ছাড়া আমাদের ঈদ জমে ওঠে না।

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের ভালবাসার আরেক নাম। তিনি দোয়া করেছিলেন

❝মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই
যেনো ঘোরে থেকেও মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই❞




আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন নজরুলের দোয়া কবুল করেছেন। সুবাহান আল্লাহ। নজরুলের আরো দোয়া আছে। তিনি মিনতি করেন।আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন নজরুলের দোয়া কবুল করেছেন। সুবাহান আল্লাহ। নজরুলের আরো দোয়া আছে। তিনি মিনতি করেন।

❝ইয়া রাসুলুল্লাহ! মোরে রাহা দেখাও সেই কাবার-
যে কাবা মসজিদে গেলে পাব আল্লার দীদার।।
যে কাবাতে গেলে দেখি কুর্শী লওহ কালাম,
মরণে আর ভয় থাকেনা, হাসিয়া হয় বেড়া পার।।❞

❝আমি হাজারো বার দরিয়াতে ডু’বে যদি মরি
ছাড়বোনা মোর পারের আশা, তোমার চরন –ত্রী,
দেখো সবার শেষে পার যেন হয় এই খিদমতগার।❞

নজরুল কাবায় যাওয়ার, মদীনায় জিয়ারত করতে দিওয়ানা ছিলেন। তার বড় সাধ ছিল, বড় আশা ছিল কিন্তু ছিল না সম্বল। তাই তিনি কাকুতি করে কাবার পথে বয়ে যাওয়া পূবাল হাওয়াকে বলেন সে সালামখানি বয়ে নেওয়ার জন্য।

আবার তিনি মদিনার পথ হতে চান যে পথে হেঁটে যাবেন নূর নবী হযরত। যে পথে, মানে নজরুলের বুকে এসে নাচবেন হাসান হোসাইন। আল্লাহ আল্লাহর রাসূলের প্রেম কত গভীর হলে এই কথা কারো মুখে আসতে পারে। সুবাহান আল্লাহ। এই বরকতময় রমজান মাসে পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর আল্লাহর দোয়া করি মেহেরবানি করে যে নজরুলের এই দোয়াটুকুও যেন তিনি তার দয়ায় কবুল করে নেন। তাঁকে ক্ষমা করে যেন জান্নাতের মর্যাদা দান করেন। আমিন

ফটো ক্রেডিটঃ তাহসিন মাহমুদ
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ৮:১০
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×