somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন সে

১৬ ই মে, ২০১২ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেদিন আকাশে চাঁদ ছিল না। শীতকালও নয়, তবু সাগরে গা শীত শীত করা হাওয়া ছিল। সে কাঁপছিল একটু একটু....না শীত বা ভয়ে নয়.....উত্তেজনায় তার সারা গা কাঁপছিল। দাঁত কপাটি লাগা জাতীয় কাঁপন। আমরা সবুজ ঘাসের উপর পা ফেলে সাদা সাদা বালু পেরিয়ে হেটে গেলাম একদম পানির কাছে বড় বড় পাথর গুলেতে বসবার জন্য। একটু ছুঁয়ে দেবার ইচ্ছে তখন দুজনের মনেই প্রবল। তবু কেউই পারছে না। তাকে সহজ করবার জন্য বলি "আমি তো কাঁচের নই, ছুয়ে দিলেই কিন্তু ঝনঝন করে ভেঙ্গে যাবো না" সে হেসে আমার হাত ধরেছিল। তাকিয়ে দেখি তখনও তার ঠোট থর থর করে কাঁপছে.....গায়ে কাঁটা দিয়ে দিয়ে কাঁপছে। মায়া লাগল দেখে। বললাম, "শীত করছে? তোমার শীত করেছে?" আমি দু হাতের তালু দিয়ে তার দুহাত ঘসে ঘসে গরম গা গরম করে দেবার চেস্টা করি। সে বোঝে, ধীরে, খুব ধীরে ধীরে সে বোঝে যে আমি কাঁচের তৈরি নই........। আমারা কথা বলেছিলাম চাঁদ নিয়ে। ধরে নিয়েছিলাম যেদিন চাঁদ উঠবে, পূর্ণিমা হবে, সেদিন এখানে পানির উপর এমন এক লম্বা ছড়ানো রুপালী ছায়া পরবে! আর আমরা বসে বসে পানির উপর সেই চকচকে রুপালি ছায়া দেখব। চাঁদটা আস্তে আস্তে নিচে নেমে বিশাল থালার মত ঝুলে থাকবে আকাশ থেকে, আমাদের আলো দেবে অন্ধকারের আলো ছায়ায় একজন আরেকজনকে একটু একটু করে দেখবার জন্য....

প্লেন গুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে যেন আমাদেরই দিকে ধেয়ে আসছিল একটার পর একটা। সবগুলো প্লেন আমারদের মুখের উপর আলো ফেলে ফেলে আকাশে উরাল দিল। যেন উড়াল দেবার আগে দেখে গেল একঝলক আমাদেরও, বলে গেল "কেরে ওখানে বসে??"


খুব বাতাসে যখন সত্যিকারের শীত শীত করল, আমার উঠে এসে সবুঝ ঘন ঘাসের উপর পিঠ মেলে আকাশের দিকে তাকাই। আকাশে চাঁদ না থাকবার ঘাটতিটা তারারা পুশিয়ে দিয়েছিল সে রাতে। আকাশ জুরে এত এত তারারা কালো আকাশটাতে নীলচে জোনাকি আগুন জ্বালিয়েছিল.........! অসাধারন ছিল সেই আকাশ। অনেক বছর তেমন আকাশ দেখিনি আমরা কেউই, বা তেমন হয়ত আকাশ ছিল অনেকবারই....শুধু আমাদেরই সময়, মন বা সঙ্গি ছিলনা দেখবার জন্য.......।

দুজেনেই ভাবি মনে মনে?? উমম প্রথমে মনে মনেই বটে.......। তবে এমন সৌন্দর্য বেশিক্ষন মনে রাখা যায় না। দুজনে কি একসাথেই বলেছিলাম.........."পৃথিবীটা খুব সুন্দর তাই না? উমম অনেক সুন্দর"

এমন কত বার হয়েছে.........ঠিক একই কথা, একই সাথে ভেবে, একই সাথে বলেছি আমরা। নিজেরাই অবাক হয়েছি ভেবেছি এমন coincidence হয় কি করে। একই সময় একই কথা দুটো ভিন্ন মনে আসে কেমন করে? এটা কি টেলিপ্যথি জাতীয় কোন ব্যপার? হা হা হা নিজেরাই হেসে কুঠিপাটি। দুজনেই বলি "তুই বললি কেন আমার আগে?" এই নিয়ে দুজনেই বানানো ঝগড়া করি .....।

অনেকবার দিনের আলোয় নীল আকাশ দেখেছি দু'জন। অবাক হয়ে পৃথিবীকে দেখেছি একই ভাবনা ভেবে। সহজ পথ ছেড়ে জ্যামের পথে চলেছি যেন পথটা আরেকটু লম্বা হয়ে যায়। কেউ কাউকে বলিনি তবু দু'জনেই জানি.....! ছল করে পাশ কাটিয়ে চলতে গিয়ে ছুয়ে দিয়ে বলেছি "তোকে ছুয়ে দিলাম ;) "

তার অবাক কস্ট পাওয়া চোখ ঠিক আমার চোখের সামনে ছিল সেদিন। সে কস্টে ভরা অবাক চোখে বলেছিল, "এখনও ভালবাসতে পারো নাই, কেমন করে এখনও না ভালবাসতে পারো?" ...........আমার নিজেকে খুব পাথুরে মনে হয়েছিল সেই মুহুর্তটাতে.....মনে হয়েছিল আমি এমন কেন? আমার সমস্যাটা কোথায়? তবু তাকে খুশি করবার জন্য মিথ্যে করেও কথাটা বলতে পারিনি.....আমি আসলেই পারিনা.....নিজেকে মনে হয় আমি পাথরের খোদাই করা একটা স্ট্যাচু মাত্র। কস্ট হয় তার কস্টে ভড়া চোখ দেখতে.......আমি তবু পারিনা।

আমার চলে যাবার দিনটাতে ঠিক শেষ মুহুর্তে আমি যেন আমার পাথুরে ঘুম ভেঙ্গে উঠলাম। বুকের ভেতর নাড়া দিয়ে যেন পাথর ভেঙ্গে পড়ল। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার চোখের সামনে বোর্ডিং এর গেটের সাইন ঝুলছে, পেছন ফেরার উপায় নেই। তবু তাকে একবার জানিয়ে দেবার জন্য মন তখন ব্যকুল হয়েছে। কিন্তু সে তখন আমার ধরা ছোয়ার বাইরে, তাকে কোথাও পাই না আর....পাবো না আর। আর সে তখন হন্যে হয়ে পাগলের মত দৌড়ে দৌড়ে নেটওয়ার্ক খুজছে আমাকে শেষবারটা শোনার জন্য, বলার জন্য......যে সে কতটা ভালবাসে, আর আমিও আরেক প্রান্তে তাকে না পেয়ে অসহায় ভাবে বোর্ডিং এর গেটের দিকে তাকিয়ে ভাবি যাবার আগে কথাটা বলা তো হলো না। আর যদি কখনও দেখা না হয়, আর যদি কখনও কথা না হয়, সে তো কখনও জানবে না....জানবে না যে আমি পাথুরে মানুষ হলেও সে সেই পাথরে প্রান দিয়েছে। সামনে তাকিয়ে আবছা চোখে দেখি মানুষ গুলো লাইন দিয়ে বোর্ড করছে। একে একে সবাই ভেতরে চলে যাচ্ছে। আমার পালা আসতে আর দেরি নেই....

নেটওয়ার্কের সেদিন বরই টানাটানি সবদিকে। পাগলের মত ফোনের বাটন চাপছে দুপ্রান্তের দুজন মানুষ......সময় চলে যাচ্ছে যেন চোখের পলকে। আর মাত্র ১০ মিনিট আছে........আকাশে উড়ল দেবার। আমার পেটের ভেতর কেমন যেন গুলিয়ে ওঠে। হঠাৎ নেটওয়ার্ক আসে, কানেক্ট হয়.....ভেসে আসে তার কথা...."তুমি কোথায়? চলে গেছো?" পাগলের মত সব গুলো কথা যেন একবারে এসে হুমড়ি খেয়ে পরেছে সামনে তখন। সে একটু শান্ত হলে বলি - "ভাল থেকো কিন্তু.....আর জেনো আমিও তোমাকে ভালবাসি। " সে বিশ্বাস করতে পারেনি যেন নিজের কানকেই। থেমে গেছিল কি বুকের স্পন্দন একটু'খনের জন্য শোনার জন্য স্পস্ট করে আবারও? কিছুক্ষন থেমে সে বলেছিল ছিল "সত্যি ভালবাস? আবার বলতো শুনি!" আবারও বলেছিলাম। তখন আমি শেষ যাত্রী বোর্ড করবার জন্য। বললাম, "ভাল থেকো, তুমি একা নও আমিও ভালবাসি, অনেকটাই"........





ছবি দুটো Vincent Van Gogh এর।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১২ রাত ৯:১৪
৪১টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমার ড্রোন ছবি।

লিখেছেন হাশেম, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩

বৃহত্তর প্যারিস তুষারপাত।

ফ্রান্সের তুলুজ শহরে বাংলাদেশের প্রথম স্থায়ী শহীদ মিনার।

হ্যাসল্ট, বেলজিয়াম।

ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী ফ্রান্সের ফ্রিওল আইল্যান্ড।


রোডেসিয়াম এম রেইন, জার্মানি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×