somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখানে বসন্ত এখন...

১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকালে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে ঘুম ঘুম চোখে ব্যলকনিতে বসতেই একঝাক কাকাতুয়া এসে সামনের ইলেক্ট্রিক তারে বসল। ঝগড়াঝাটি আর ঝাপটা ঝাপটি করে সকালটাকে জাগিয়ে তুলল, তার সাথে আমাকেও।


রোজ সকালে চা নিয়ে ব্যলকনিতে বসে ঝিমাঝিমি করা আমার একটা অভ্যেস হয়ে গেছে, বসে বসে পাখিদের ঘর সংসার, আদর আহ্লাদ, ঝগড়াঝাটি দেখি। আমার ছোট্ট বাগানের রং দেখি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে.... কেমন যেন নেশা নেশা লাগে.....একদিন ব্যালকনিতে বসে রিয়েলাইজ করলাম সব কিছু ঝাপসা, ঘটনা কি?....মানে চশমা আনতে ভুলে গেছি, আলসেমিতে পেয়ে বসে আমাকে...... কি আর করা চোখ বন্ধ করে চা খেয়ে তবে ঘরে এসে চশমা পড়লাম, আবার পৃথিবী দেখলাম....।

এখন এখানে বসন্ত, সাগরে সব সময় উথাল পাথাল ঢেউ। ঝড় নয় তবু ঝড়ো হাওয়ার দাপট সারাটা দিন। কাক নেই তবু সকাল সকাল কোকিলের ডাক শোনা যায়। আমি বসে ভাবি কাকে ধোকা দেবার জন্য সে ডাকে, কার বাড়িতে তার সঙ্গিনী ডিম পাড়বে বলে, যদি কাক'ই নেই আশেপাশে ........??


পথের পাশে আবারও জ্যাকারান্ডা বেগুনি ফুল ফুটে ভরিয়ে ফেলেছে বছরের এই সময়টা জ্যাকারান্ডা ফোটে এখানে, চারিদিকে বেগুনি রং এর ছরাছরি। যেদিকে তাকাই কোন না কোন রং চোখে পরেই পরে। ভাল লাগে আমার এত রং চারিদিকে দেখতে। কাজে যাবার সময় লম্বা ড্রাইভ গুলোও ভাল লাগে।

দিন গুলো আজকাল তাড়াতাড়ি চলে যায়। কখনও মনে হয়, যায় দিন চলে যাক না.....আবার মনে হয় ইস জীবনের দিন গুলো কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। জীবনটাকে আরেকটু লম্বা করতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে, যা আগে কখনও করেনি।


সেদিন নিউ সাউথ ওয়েলস-এ একদিনের ড্রাইভে গিয়েছিলাম। পাহারি গ্রামের ভেতর দিয়ে আঁকাবাকা চিকন পথে চলতে অসাধারন লাগছিল......! কোথাও কোথাও সমতল আবার কোথাও আবার একেবেকে সরু পথ চলে গেছে পাথুড়ে পাহারের গা কেটে কেটে।


এক পাশে পাথুড়ে দেয়াল আরেক পাশে শ'খানেক ফিট গভির খাদ সোজা নেমে গেছে নীচে....। বাঁকে বাঁকে মোর নিতে ভয়ে গা শিউরে ওঠে। আমার ইচ্ছে করছিল নিজে ড্রাইভ করি। সাথে যত পাকা ড্রাইভারই থাকুক না কেনো এমন পথে কারো উপর ভরসা করতে ইচ্ছে করে না। না পেরে আমি ক্লিফকে বলেই ফেললাম "You want me to drive? Shall I drive?" তেনার ড্রাইভিং এর উপর আমার আস্থার বহর দেখে তিনি আমার দিকে একখানা কটমটানি দৃষ্টি দান করিলেন :P। কি আর করা ভয়ে নিজের প্রান হাতে নিয়ে চুপ চাপ বসে প্রকৃতি দেখতে থাকলাম। ছোট ছোট গ্রাম একটু পর পর, দু'একটা ঘোড়ার খামার আর কৃষকদের ঘরবাড়ি, খেত খামার।




পাহারের গা ঘেসে ছোট ছোট ক্যফে শহরের একমাত্র বড় রাস্তার পাশ দিয়ে, একটা দুটো ঘোড়া বা গরুর খামার। দিগন্তে পাহাড় ছুয়েছে আকাশ........ইচ্ছে করে সেখানেই জীবনটা কাটিয়ে দেই.....শান্তি যেন প্রতি ইঞ্চিতে!




আমার পেটতো আবার খিদের পুকুর......একটু পর পরই খিদে পায় :(। খিদেয় যখন আমার প্রান যায় যায় তখন এমনই একটা ক্যফেতে থামি। ছোট্ট সাজানো গোছানো ক্যফে, এবরো থেবরো কাঠের টেবিল চেয়ার, মাথায় হ্যাট পরা দু'একজন লোকাল কৃষক বা র‌্যাঞ্চের লোকজন কাজের ফাকে সকালের নাস্তা সারতে এসেছে।





ব্যলকনিতে বসলেই চোখে পরে সামনের পাহাড়, দুএকটা ঘোড়া এদিক সেদিক আলসে ভাবে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে, পাহাড়ের গায়ে ছোট্ট কাঠের বাগান ঘেরা বাড়ি, পেছনে একটুখানি সব্জি খেত......এক টুকরো স্বর্গ ছিড়ে পরেছে এখান। "স্বর্গছেড়া" নামটা কোথায় যেন কখনও পড়েছিলাম মনে পড়ছে না.....তবে এই জায়গাটা দেখে আমার ঠিক সেই নামটিই মনে এলো - "স্বর্গছেড়া"।


জীবনটা স্বপ্নের মতন নয়, জীবন খুব কঠিন একটা জায়গা.....এখানে জীবিকার কোন উপায় হলে সত্যি এমন একটা জায়গায় এসে থেকে যেতাম। বা জীবনটা হঠাৎ পালটে দিতে পারতাম যদি......একটা ছোট্ট র‌্যঞ্চ, ছোট্ট একটা কাঠের বাড়ি, পাহারের গা ঘেসে একটুকরো খেতি জমি হা হা হা আমি ভাবতে বসি।


চলতি পথে বাঁশঝাড় পেড়িয়ে, আরো কিছু ছোটখাট গ্রাম পেরিয়ে একসময় উঠে আসি পাহারের উপরে। উপর থেকে মাইলের পর মাইল ভ্যালি দেখতে চোখে শান্তি শান্তি লাগে।





অনেকটা উপরে উঠে এসেছি আমরা। কান পটপটিয়ে ওঠে যেমন উপরে উঠে আসতে তেমনই আবার কান পটপটিয়ে ওঠে নিচে নেমে আসতে, উচ্চতা কানে পটপটিয়ে জানান দিয়ে যায়। পথের মোড়ে চমৎকার একটা বাড়ি দেখে আবারও মনে হলো আহা এমন একটা বাড়িতে যদি আমার বসবাস হতো, এমন একটা পাহাড়ের গা ঘেসে ঘোড়া চাষিয়ে হয়ে!



গ্রাম ছাড়িয়ে আরো উপরে উঠে এলাম ন্যচরাল ব্রিজ নামে একটা জায়গাতে।



গাড়ি পার্ক করে বনের ভেতর হেটে চলা এখান থেকে। বিশাল বিশাল সব গাছ আর তার গায়ে নানান সব অর্কিড বাসা বেধেছে। পাহাড়ের গা বেয়ে বেরে ওঠা বন। পাহাড় কেটে কেটে পথ বানান পাশেই গভীর খাদ।


কাঠের রেলিং দিয়ে পথটা কে সিকিউওর করা হয়েছে ট্যুরিস্টদের জন্য, যেন কেউ নিচে পরে না যায়, পা পিছলে নিচে পরলে পরোকালে গিয়ে জেগে উঠতে হবে একেবারে।


বিশাল বিশাল ঘন ঘন গাছের জন্য দিনের বেলাতেই সাঁঝ সাঁঝ ভাব, রাতে এখানে জোনাকি জ্বলে!। আমার রাতে খুব আশার শখ ছিল জোনাকি দেখার জন্য। হয়ত আবার কখনও যাবো জোনাকি দেখতে!! তবে প্রচুর মশা এখানে তাই রাতে এলে মশা বাবাজিরা যে খুশিই হবেন মনুষ্য রক্তের স্বাদ পেয়ে তাতে কোন ভুল নেই। তবু ভেবেছি রাতে একবার যাবোই যাবো জোনাকির জ্বলে নিভে ওঠা দেখতে।


বনের গহীনে পৌছুতেই পানির কলকল শব্দ পাওয়া যায়, একটা পাহারি ঝর্নার ছোট নদী চলে গেছে এঁকে বেঁকে, তার উপরে ছোট্ট একটা কাঠের ব্রিজ। আরেকটু হাটতেই হঠাৎ পানির শব্দ বেরে যায়, আর ভুস করে চোখের সামনে এক অসাধারন ঝর্না এসে দাঁড়ায়।




সেই পাহাড়ি নদীটাই এঁকেবেঁকে হঠাৎ পাহারের পাথরের ফোকোল গলে গড়িয়ে ছোট্ট একটা গুহার ভেতর পরেছে আর সেখানে ছোট্ট একটা পুকুরের মত হয়ে আছে। সেই পুকুরও পাথরের ফোকোল গলে উপচে পরে আবার নদী হয়ে বয়ে গেছে - পাথুড়ে নদী !! অসাধারন প্রকৃতি!! নীলচে সবুজ পানিতে রোদের আলো পরে সেই আলোর রিফ্লেকশন কেমন একটা মায়া মোহের রেশ তৈরী করেছে এখানে। মনে হলো পানিতে ফসফরাসও থাকতে পারে, হয়ত তাই এমন সব কিছু জ্বল জ্বল করছে।






নীলচে সবুজ পানির ঝির ঝির শব্দ, পাখির ডাক, ঝি ঝি পোকার গান, আলো আঁধারির খেলা, সবুজ....... সব মিলিয়ে আবারও মনে হলে এক টুকরো "স্বর্গ"! ইচ্ছে করে ওখানে বসে থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা। সারাদিন কাটিয়ে দেবার মতন একটা শান্তি ভড়া জায়গা। আবারও কখনও যদি সময় করে যেতে পারি ওখানে তবে নিশ্চই সারাদিন কাটিয়ে দিয়ে সন্ধায় মশার খাদ্য হয়ে জোনাকি দেখে তবে ফিরব।


ফেরার পথে গোল্ড কোস্টে লাঞ্চ এর জন্য থামলাম। আমি নিজেও থাকি সাগর পাড়ে তবু গোল্ড কোস্টের সাগরের পানি কেন যেন বেশি নীল নীল লাগে ......বেশি পরিস্কার বলে হয়তো.......ওটা খোলা সাগর, আর আমি থাকি বে'তে। ওখানে ঢেউ এর তান্ডব অনেক বেশি, ধবধবে সাদা বালি, সাদা সাদা গাংচীল ডানা মেলে উড়ে যায় আর আমার বে'তে টিয়ে, কাকাতুয়া, পেলিক্যান আর সাদা গাংচীলেরা হুটো পুটি করে খেলা করে। আমার ঢেউ গুলো ছোট ছোট ছলাত ছল তান তুলে নাচে আর ওদের ঢেউ গুলো হুঙ্কার দিয়ে আছড়ে পরে তীরে।




এত সুন্দর সাগরের গা ঘেসে দাড়ানো বড় বড় দালান কোঠার খুব বেশি শহুরে শহরটাকে কেন যেন আমার বরই বেমানান লাগে এখানে। মনে হয় এমন চমৎকার জায়গাটা আরো কেনো বেশহুরে হলো না। সব সৌন্দর্য গুলোকে শহুরে করে ফেললে আর সেটা প্রাকৃতিক থাকে না।


দিন কাটিয়ে এবার বাড়ি ফেরার পালা। মেঘের ফাঁকে রোদের লুকোচুরি দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম গারির দুলুনিতে....একবারে বাড়ি পৌছে জেগে উঠলাম। ফিরে আসা আমার ছোট্ট ঘরে, ছোট্ট ব্যলকনিতে.....।




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:৫৫
৯৪টি মন্তব্য ৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×