somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুকুল প্রতিকুল....

১৩ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন দুরের পৃথিবীতে সাদা তুলো তুলো শীত পরে পাখিগুলো কে কষ্ট দেয়......বিধাতার দেয়া ওদের পশমি শরীরে যখন শীত ঢুকে যায় বেশি বেশি করে.....ওরা পথ খোঁজে উড়াল দেবার জন্য....পরিবেশ যখন পুরো প্রতিকুলে চলে যায় ওরা তখন দল বেধে সময় খোঁজে অনুকুলতার দিকে উড়াল দেবার জন্য। এক সময় শিতের ছোবল আর সইতে না পেরে সত্যি উড়াল দেয় সেই চির পরিচিত পরিবেশ আর যত্নে গড়ে তোলা নিশ্চিত আশ্রয় ছেরে একটু অনুকুল অবহাওয়া আর পরিবেশের খোঁজে। উড়তে উড়তে এক সময় ঠিক পেয়েও যায় অনুকুল পরিবেশ নতুন করে ঘর বাঁধবার জন্য। সবাই তাই পায়.......উষ্ণতায় গা ছড়িয়ে আরাম করে বসে, বাসা বাঁধে, খাবার খোঁজে, প্রেম করে বাচ্চা দেয়......।

শুধু পাখি নয়, এই পৃথিবীতে যারই প্রান আছে সে'ই প্রতিকুলতা খোঁজে বেঁচে থাকবার জন্য। ছোট্ট একটা পোকাও ঠিক এমনি করেই নতুন করে অনুকুলতার ঠিকানা খোঁজে, নতুন করে বাসা বাঁধে, চলতি পথে বাধা পায়, হোচোট খায়, আবার উঠে দাড়ায়....। জীবনের পথে আবার চলতে শুরু করে মাথা সোজা করে। সেদিন ব্লু মাউন্টেন এ বেড়াতে গিয়ে দেখলাম একটা গাছের গোড়া ইংরেজি L এর মত করে বেড়ে উঠেছে। নিশ্চই কোনো কারণে সে বাধা পেয়েছিল সোজা বেড়ে উঠতে তাই ফাঁক ফোকর গলে বেরিয়ে গিয়ে সে বাঁকা হয়েই বেড়ে উঠেছে। ব্যাপারটা যেন এমন - "আমায় তুমি আমার পথে বাড়তে দেবেনা তো? ঠিক আছে আমি ঠিকই পথ খুঁজে আমার মত করে বেড়ে উঠবই"

মানুষও কিন্তু এর বাইরে নয়। মানুষও প্রতিকুলতা খোঁজে বাঁচবার তাগিদে। না তাকে কেউ তাগিদ দেয় না। সে নিজেই বাঁচে নিজের জন্য.....আর বাঁচবার জন্য তারও চাই প্রতিকুল পরিবেশ। আমি অনেক'কেই বলতে শুনেছি "আমি নিজের জন্য বাঁচি না" বা "আমরা নিজের জন্য বাঁচিনা"......হা হা হা আসলেই ভাল করে ভেবে দেখুন ত কথাটা কি ঠিক? কার জন্য কবে কার জীবন থেমে থেকেছে, নাকি থাকবে? আমরা যারা বেঁচে থাকি তারা আসলে কিন্তু সবাই নিজের জন্যই বাঁচি। নিজে বাঁচতে চাই তাই বাঁচি। শুধু মানুষ নয়, প্রতিটা প্রানীই নিজেকে খুব ভালবাসে, ভালবাসে নিজে নিজের প্রিয়জনকে নিয়ে একটু প্রতিকুলতায় বেঁচে থাকতে। কেন প্রিয়জনদের নিয়ে থাকতে ভালবাসে? কারন সেটা তাকে ভাললাগা দেয়.....নিজেকে ভাল লাগাতে মানুষ সব কিছুই করে, এটাই সব প্রানীর জন্মগত ধর্ম।

যতই সোনায় বাঁধানো ঘর বেঁধে দাও না কেন সে ঘরে যদি উষ্ণতা না থাকে তবে মানুষ একটু রোদের আলোর উষ্ণতা পাবার জন্য পথে নেমে আসে, পথেই সে পায় বেঁচে থাকার আনন্দ। আবার এমনও হতে পারে - কেউ যখন কাউকে অনবরত আঘাত করেই যায়......সেই আঘাত সইতে সইতে একদিন আর সইতে না পেরে সে মাথা তুলে দাড়ায়, হয় আঘাত এড়িয়ে যায় অথবা আঘাতের পালটা আঘাত দেয়। এক এক জন এক এক ভাবে রিএ্যাক্ট করে। যেমন আমি এরিয়ে যাবার মানুষ। আমাকে আঘাত করলে আমি সইব....সইব.....সইব.....সইব.........একদিন যখন আর পারব না তখন এরিয়ে যাবো। গিভআপ করব, সরে দাড়াব.....নিজেকে তুলে দাড় করিয়ে আবার এগিয়ে যাবো অনুকুলতার পথে, যেখানে কোন মন খরাপ করা করা থাকবে না, কোনো আঘাত থাকবে না, অবহেলায় ফেলে যাব তাকে যে আঘাত করলো ।

আমি মানুষটা বেশিদিন মন খারাপ করা ব্যাপার নিয়ে থাকতে পছন্দ করিনা। তাব'লে তো বিধাতা তা মানবেন না! উনি তো প্রতুকুলতা দিয়েই যাবেন.....আমিও তেমনি একদিন সেই প্রতিকুলতাকে এড়িয়ে বেরিয়ে পরি অনুকুলতার পথে। এ হলো বিধাতার খেলা আর আমার স্বভাব। আবার অনেকই সেই প্রতুকলতাকে এড়িয়ে অনুকুলতার খোঁজে বেরিয়ে পরতে ভয় পান। সারা জীবন সে ঐ প্রতিকুলতাতেই জীবন কাটিয়ে দেন। তবে তারাও নানান পথ খোঁজেন সেই প্রতিকুলতায় নিজেকে একটু খুশি রাখতে সেটা যেভাবেই হোক......। আমি একে বলি জোড়া তালি দিয়ে চলা ;)। আমার জোড়া তালি দিয়ে চলতে ভাল লাগে না। জীবনতো আমার একটাই.......! একে জোড়াতালি দিয়ে অপমান করতে ভাললাগে না। তুমি আমার মনকে গলা চিপে দেবে? তুমি তা দিতে পারবে একবার, দুই বার, তিনবার, চারবার, পাঁচবার........তুমি কি জানো তুমি তা পারছ কারন আমি তোমাকে পারতে দিচ্ছি তাই......তবে তোমার দৌড় সেই পাঁচবার পর্যন্তই! এর পরে তুমি আর তা করতে পারবে না। কারন আমি তোমাকে আর পারতে দেবনা। সেই শীত পাখিদের মতন আমি ঠিক একদিন উষনতার দিকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য উড়াল দেব। সবাই তাই করে। মানুষ থেকে শুরু করে প্রানী, উদ্ভীদ যা কিছুর প্রান আছে সবই এমনি করেই রিএ্যাক্ট করে, বেঁচে থাকে। এটাই বেঁচে থাকবার ধর্ম।

শাহবাগ আন্দোলনের সময় অনেক বছর পরে মনে হয়েছিল বাঙালী এবার জেগেছে সব প্রতিকুলতাকে ডিঙিয়ে এবার অনুকুলতার দিকে উড়াল দেবার জন্য তৈরী হয়েছে। আমরা যারা সাতসাগর তেরো নদী পারে দেশকে ফেলে আশার কষ্ট বুকে নিয়ে, বেঁচে থাকবার জন্য প্রতিদিন যুদ্ধ করে যাচ্ছি, তারা একসাথে একই মুহুর্তে যে যেখানে আছি সেখান থেকেই শাহাবাগের সাথে হেসেছি, শাহাবাগের সাথে কেঁদেছি, আলো জালিয়েছি, গান করেছি, শ্লোগান দিয়েছি। নতুন দিনের নতুন আশায় স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলাম। স্বপ্ন দেখেছিলাম নিজের দেশে এক প্রতিকুল পরিবেশের।. যে দেশ একদিন আঘাত দিয়ে দিয়ে আমাদের বাধ্য করেছিল অনুকুলতার দিকে উড়াল দিতে সেই দেশে একদিন ফিরে যাবার স্বপ্ন! কত গুলো প্রাণ চলে গেল সেই স্বপ্ন বুনতে গিয়ে লড়াই করতে গিয়ে।

অবশেষে আবার সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হলো। বাঙালী নিজেদের প্রতিকূলতায় বাঁচিয়ে রাখতে আবার অভস্ত হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, ঝিমিয়ে পরেছে শাহবাগ। খুব গ্রাম দেশে যেমন লেখা পড়া না জানা গরিব ঘরের অসহায় মেয়েরা স্বামী বা পরিবেশের অকথ্য অত্যাচার মেনে নিয়ে সেই প্রতিকুল পরিবেশেই একদিন নিজেকে বেঁচে থাকতে অভ্যস্ত করে ফেলে ........... আজ বাঙালী জাতিটাকে সেই মেয়েটার সাথে তুলনা করতে ইচ্ছা করে হতাশায়। অনেকেই হয়তো বলবেন দেশের বাইরে বসে এমন কথা খুব বলা যায়। কোথায় ছিলাম শাহবাগ আন্দোলনের সময় ......... তাই তো! আমরা যখন দেশ ছেড়েছি তখন কিন্তু এই দেশ, দেশের মানুষ আমাদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল। আমাদের পিঠ ঠেকে গেছিল দেয়ালে, আমাদের পেছনে তখন শাহবাগ ছিল না। আমরা লড়াই করেছি একা একা, কেউ আমাদের পাশে দাড়ানোর ছিলনা কাঁদবার জন্য কাঁধ বারিয়ে দিতে...... শাহাবাগের পেছনে ছিল প্রতিটি দেশ প্রেমী বাঙালী, আর ছিলাম আমরা সবাই, যে যার অবস্থানে বসে আমরা এক হয়ে কাধ বাড়িয়েছিলাম, প্রতি মুহুর্তে আমরা ছিলাম সাথে .......তবু শাহবাগ পারল না আমাদের জন্য অনুকুল পরিবেশ আনতে।

খুব মনটা ভেঙ্গে গেছে। আজ আমাকে যদি কেউ দিনের পর দিন মন খারাপ করা মুহূর্ত দিতে থাকে বা একের পরে এক আঘাত করতে থাকে, তাকে আমি একসময় এড়িয়ে যাব, ঠিক খুঁজে বের করব অন্য কোনো পথ অন্য কোনো জায়গা যেখানে আমাকে কেউ মন খারাপ করা অনুভুতি আর দিতে পারবে না, আমি আমাকে ভালবাসি, আমাকে ভালো রাখতে চাই, কারণ আমি নিজেকে ভালো না বাসলে, ভালো না রাখলে কাউকে ভালবাসতে পারব না, ভালো রাখতে পারব না, এই আমার ভাবনা ........ আমি একা একটা মানুষ হয়ে যদি প্রতিকুল পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে একটা সুন্দর দিন খুঁজে বের করতে পারি এত গুলো বাঙালী কেন একসাথে ২/৩ মাসের বেশি এক হয়ে একটা দেশকে বদলে দিতে পারে না, কেউ কি ভেবেছেন কারণ টা ? আমার কেন যেন মনে হয় বাঙালী খুব স্বার্থপর জাতী। আমরা শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবি, নিজে ভাল থাকলে উচ্ছন্নে যাক আর সবাই। বিদেশে দেখেছি অন্য যেকোনো দেশের মানুষ তার নিজের দেশের চেনা অচেনা মানুষকে প্রানটা দিয়ে সাহায্য করে একমাত্র বাঙালী ছাড়া। আমাদের মনে যেন.... "আগে নিজে বাঁচিতো পরে বাপের নাম", আবার কেউ যদি সাহায্য করলো তো তার মাথাতেই কাঁঠাল ভেঙ্গে খাই।

তবু আশায় থাকি একদিন সব বদলাবে, একদিন এখানকার অনুকুলোতাকে লাথি মেরে নিজের দেশের অনুকুলোতে ফিরে যেতে পারব। আর একা লড়াই করতে হবে না পাশে থাকবে শাহবাগ, পাশে থাকবে সারা দেশ, পাশে থাকবে সারা দেশের মানুষ। আমাদের আর এড়িয়ে যেতে হবে না, ফেলে আসতে হবে না খুব খুব প্রিয় মাটিকে, মা'কে, মানুষদেরকে


একটা কথা আছে The Alchemist বইটাতে, যারা বইটা পড়েছেন তারা জানবেন। যারা পড়েন নাই তাদের জন্য -

"When you want something, all the universe conspires to help you achieve it" - The Alchemist
৩৪টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×