somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি নুপূড় ও কিছু ফিরে পাওয়া অনুভূতি......... অনুগল্প

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালোবাসা কি??? এটা কি মেঘ?? না গৌধুলী লাল আকাশ । না মনের ক্যানভাসে একটু একটু করে সপ্নের রঙে আকাঁ সুখের প্রতিচ্ছবি ।হয়ত বা শীতের সকালের গা ভেজানো শিশির…..
কেউেই বলতে পারে নি। কত কবিতা, কাব্য, মহাকাব্য, ট্রাজেডি,সুর, ছন্দ, তারপরেও কেউই বলতে পারে নি ভালোবাসা কি??? সেক্সপিয়রের ট্রাজেডি, হোমারের ইলিয়ড, রবি ঠাকুড়ের গীতাঞ্জলী, ফ্রয়েডের মনোবিজ্ঞান, কেউেই বলতে পারেনি ভালোবাসা কি? হয়ত ভালোবাসাটা অতিপ্রাকৃতীক কিছু যা সংজ্ঞায়িত করা যায় না…… এটা মানবজীবনের সবচাইতে রহস্যময় একটা কিছু…….প্রত্যেকটা সম্পর্কিই ভালোলাগা থেকে তৈরি হয় । আমরা তাকেই পছন্দ করি যার মধ্যে নিজের ছায়া বা পরিপূ্র্নতা দেখতে পাই । মুগ্ধতা বা ফ্যান্টাসি থেকেই ভালোবাসার সৃষ্টি। একটা অপরিচিত মানুষ একসময় খুব কাছের হয়ে যায়,মনের অজান্তেই নিজের সবচাইতে স্পর্শক বস্ত টা অন্যজনকে দিয়ে দেই । নিজের কাছে নিজের বলতে কিছুই থাকে না…..

(১)
একদিন বাসে করে উত্তরা যাচ্ছিলাম। মহাখালী ষ্ট্যান্ড থেকে একজন মেয়ে যাত্রী আমার পাশের সিটে বসল । মেয়েটার শরীর থেকে শিহরন জাগানো ঘ্রান আসছিল । নারীরর প্রতি পুরুষের আকর্ষন চীরন্তন তাই অনিচ্ছা সত্তেও চোখ বাকিয়ে অনেকবার তাকালাম ।বনানী আসলে মেয়েটা নেমে গেল । মেয়েটা নামার পরই পায়ের নিচে ধাতব কিছু টের পেলাম । হাতে নিয় দেখলাম একটা নুপূড় । ততক্ষনে বাস অনেকদুর এগিয়ে গেছে।অপরিচিত মানবীর নুপূরটা নিজের কাছেই রেখে দিলাম। কেন জানি না আস্তে আস্তে আমি নুপূড়ের মানুষ টা কে অনুভব করা শুরু করলাম । ভালোবাসার তো কোন ব্যখ্যা নেই । অবচেতন মনের উপর তো আমাদের কোন নিয়ন্ত্রন থাকেনা । সিদ্ধান্ত নিলাম যে করেই হোক মেয়েটা কে খুজে বার করব । এর পর থেকে সময় হলেই মেয়েটার নেমে যাওয়া বাস ষ্ট্যান্ডে দড়িয়ে থাকতাম । তির্থের কাকের মত খুজে বেড়াতাম । কত মেয়ে কে যে পেছন থেকে ডেকে সরি বলেছি এর কোন শেষ নেই । এক সময় আশা ছেড়ে দিলাম।
(২)
মাঝখানে কেটে গেছে ১ বছর । ভালোবাসা মনে হয় আমার সাথে লোকোচুরি খেলছিল।
একদিন নীলক্ষেতে বই কিনছিলাম । হঠাৎ কে যেন পিছন থেকে ধাক্কা দিল । পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে তাই কিছু না বলে বই এর দিকে মনোযোগ দিলাম । হঠাৎ কি যেন মনে হলো একটা পরিচিত গন্ধ, আবছা পরিচিত একটা মুখ । দৌড় দিলাম। মনে হচ্ছিল হারানো মানুষটাকে পেয়ে গেছি।মনে হচ্ছিল আবার হয়ত হারিয়ে ফেলেছি । এত ভীরের মধ্যে একটা মানুষ খুজে পাওয়া কঠিন । ভাগ্য সহায় ছিল তাই পেয়ে গেলাম । মেয়েটা অলরেডি রিক্সায় উঠে গেছে। আমি সামনে গিয়ে দাড়ীয়ে বললাম..
আাপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি???
আপনি কে?? আমি অপরিচিতদের সাথে কথা বলি না ।
না মানে খুব দরকারি…. একটু প্লিজ????
মেয়েটা মুখ বিরক্ত করে বলল আপনি কিন্তু ভদ্রতার সীমা ছারিয়ে যাচ্ছন….
আমি তখন পকেট থেকে নুপূরটা বের করে মেয়েটাকে দিলাম.. এটা মনে হয় আপনার….
মেয়েটা অবাক ভরা চোখে নুপুর টা হাতে নিল । উল্টিয়ে পাল্টিয়ে নুপুরটা দেখছিল ।
হ্যা এটা তো আমার ই । আপনি কোথায় পেলেন?? আমি তখন সবকিছু খুলে বললাম ।
মেয়েটি মুগ্ধতার চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । আমি বাচ্চার মত তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ।
পরক্ষনেই মেয়েটি কেন জানিনা রেগে গিয়ে বলল এটা নিয়ে আমি কি করব… হারিয়ে যাওয়া জিনিস সময়ের মতই অতীত হয়ে যায় । রাস্তার মোড়ের কোন এক ডাষ্টবিনে ফেলে দিবেন । । আমি স্তব্দ হয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম ।নাম টাও জানা হলো না । একটা রিক্সা নিয়ে পিছু নিলাম। এর পর থেকে কারনে অকারনে ওর ভার্সিটি যাওয়ার পথে দাড়িয়ে থাকতাম। একদিন রিক্সা থামিয়ে আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে ।এর পর আর কখনো সেই রাস্তার মোড়ে দাড়াই নি। ভেবেছি কিছু সম্পর্ক তো কখনো পরিপূর্নতা পায় না । সব পাখীর কি নীড় থাকে?? । আলো অন্ধকারের মাঝে এক সময় নিজেকে আবার নতুন করে গড়ে নিলাম ।এর মধ্যেই একটা চাকরি পেয়ে গেলাম । অফিসের ব্যস্ততার মধ্যেই ছিলাম । আমার বস রাকিব সাহেব খুব ভালোমানুষ ছিলেন তাই অল্পদিনে তার সাথে একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেল । সেই সুবাদে উনি আমাকে উনার বিবাহ বার্ষিকে তে আমাকে ওনার বাসায় দাওয়াত দিলেন।
যথানিয়মে আমি তার বাসায় গেলাম ।একবারে ঘরোয়া আয়োজন । উনি আমাকে দেখে হালকা হাসি দিয়ে বললেন
এসেছো তাহলে??
একটু হেসে বললেন, তুমি তো সাজানো গোছানো ভালোই পার, ব্যাস্ততার কারনে একদম সাজাতে পারি নি ।
একটু সাহায্য কর
কি করতে হবে বলেন……
বেশি না, কিছু প্রদীপ আছে এগুলি বারান্দায় আর ছাদে সাজাতে হবে ।
আমি বাড়ান্দায় প্রদীপ জ্বালাতে ব্যস্ত ।
আরিফ পরিচয় হও…. আমার ছোট বোন সাথী আর এ হচ্ছে আরিফ, আমার কলিগ।
আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । এ দেখি আমার সেই চীরপরিচিত মুখ । আমার শরীর হীম হয়ে আসছিল ।নিজেকে সামলে নিয়ে প্রদীপ জ্বালাতে বারান্দায় ফিরে গেলাম ।
অন্ধকার ছাদটা আমার জ্বলানো প্রদীপের আলোতে আলোকিত হতে লাগল । চারপাশে সোনালী আলো ।
হঠাৎ পেছনে কারো নিরব উপস্থিাত অনুভব করলাম ।তাকিয়ে দেখি সাথী দাড়িয়ে ।
সেদিনে খারাপ ব্যবহারের জন্য আমি দুঃখ্যিত, আমাকে ক্ষমা করবেন ।
এখানে দুঃখ্যিত হওয়ার কি আছে । আপনার দিক থেকে আপনি ঠিক আছেন। এভাবে বিরক্ত করা আমার ঠিক হয় নি, তার জন্য আমি সরি ।
আমি প্রসঙ্গ এড়াতে আমার কাজে মন দিলাম । সাডেনলি ও আগুন বলে চিৎকার দিযে আমাকে জরিয়ে ধরল । দেখলাম ওর ওরনায় ভুলবসত প্রদীপের আগুন লেগে গেছে । টান দিয়ে ওরনা টা ফেলে দিলাম । সম্পুর্ন ছাদটা ওরনার আগুনে আলোকিত । এই প্রথম ওকে সম্পুর্ন ভাবে দেখলাম । ভয় আর লজ্জায় ওকে অনেক মায়াবী লাগছিল । নিজের ব্লেজার টা পরিয়ে দিয়ে বললাম নিচে গিয়ে রেষ্ট নেন । ও বাধ্য মেয়ের মতো চলে গেল ।
আমি কোন রকম খেয়ে বাসায় চলে আসলাম । মনের ভিতর রাজ্যের শুন্যতা ভর করে ছিল ।

৩ দিন পর

সন্ধায় শুয়ে শুয়ে বই পরছিলাম। রাকিব ভাই এর ফোন আসল
আরিফ তুমি কই?? একট আমার বাসায় আস ।
আমি রাজ্যের ভয় নিয়ে উনার বাসায় গেলাম ।
তোমাকে তো আমি অনেক ভালো ছেলে ভেবে ছিলাম কিন্তু তুমি তো খুব বিপজ্জনক ।তুমি আমার বোনকে রাস্তা ঘাটে বিরক্ত কর । তোমাকে তো পুলিশে দেওয়া উচিত। ছি!! ছি!!
আমি মাথা নিচু করে বসে আছি ।
গতকাল ওর এঙ্গেজমেন্ট ছিল । বিয়ের টা প্রত্যেক মেয়ের জন্যই সুখের কিন্তু ওর ভেজা চোখ আমাকে ফাকি দিতে পারে নি । আমি জোর করলে ও সবকিছু খুলে বলে ।
তুমি কি সাথী কে ভালোবাস???
আমি শুধু করুন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম । কথা বলতে পারছিলাম না ।

সাথী ওর ব্লেজার টা নিয়ে আয়, তোমার বাবা মা কে সামনের সপ্তাহে আমাদের বাসায় নিয়ে আসবা বলেই অন্য রুমে চলে গেলেন ।
স্তব্দ হয়ে পাথরের মত বসে ছিলাম ।

এত ভুলোমনা হলে কিভাবে চলবে । সবকিছু কি আমাকেই মনে করিয়ে দিতে হবে?
আমার নূপুর টা কই??? হারাইয়া ফেলছো??
না মানে, ইয়ে সাথেই আছে
এটা তো ভালোই মনে থাকে বলেই সোফায় বসে পা টা বাড়িয়ে দিল ।
আমি মানিব্যাগ থেকে নুপুরটা বের করে ওর পায়ে পড়িয়ে দিলাম…………………..

সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×