somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণ কেন হয়? একটি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা।

১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছয় বছরের শিশু, আপাদমস্তক বোরকাবৃতা কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধারা ধর্ষিত হওয়ার মেডিকেল ব্যাখ্যাটা অনেক পুরনো।

অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলেও সত্য ১৩৮ বছর আগে রাশিয়ান বিজ্ঞানী পাভলভ এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে গেছেন। বিজ্ঞানী পাভলভের এই কনসেপ্ট প্রত্যেক ডাক্তারকে তার মেডিকেল লাইফের সেকেন্ড ইয়ারে পড়তে হয়। সহজভাবে বলার চেষ্টা করি, নন-মেডিকেলদের জন্য দেখি বলতে পারি কিনা।



বিজ্ঞানী পাভলভ একদল কুকুরকে ল্যাবে বেঁধে রেখে দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন। তিনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে তাদের খাবার দিতেন। কুকুরের সামনে থাকত খাবারের বাটি এবং আয়না। সেখানে পাভলভ কুকুরের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতেন। প্রতিদিন ঠিক একই সময়গুলোতে কুকুরগুলোকে খাবার দেয়া হতো। পাভলভের সঙ্গে থাকতেন তার ল্যাব সহকারী। খাবার গ্রহণের সময় কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটি একটি কন্টেইনারে মাপা হতো।

ব্রেইনের স্বাভাবিক রিফ্লেক্স হলো খাবার গ্রহণের সময় লালা ঝরা। কিন্তু পাভলভ দেখলেন যে, খাবার গ্রহণ নয়, খাবার দেখেও এবার কুকুরের লালা ঝরতে শুরু করেছে। পাভলভ খাবার দেখে কুকুরের কী পরিমাণ লালা ঝরত সেটিও কন্টেইনারে মাপার ব্যবস্থা করলেন।

বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর পাভলভ দেখলেন তিনি ল্যাবে ঢুকলেই কুকুরের লালা বের হচ্ছে। সঙ্গে খাবার থাক আর না থাক।


পাভলভ এবার নিজে ল্যাবে না গিয়ে খাবারবিহীন অবস্থায় তার ল্যাব সহকারীকে ল্যাবে পাঠালেন। ল্যাব সহকারী অবাক হয়ে দেখলেন তাকে দেখেও (ল্যাব সহকারী) কুকুরের লালা ঝরছে। পাভলভ এবার ভিন্ন কিছু করলেন। তিনি কুকুরকে খাবার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে একই সময়ে একটি ঘণ্টি বাজাতে থাকলেন। খাবার দেয়া হচ্ছে এবং ঘণ্টি বাজানো হচ্ছে।

এরপর পাভলভ এবং সহকারী একদিন খাবার ছাড়াই ল্যাবে আসলেন এবং ঘণ্টি বাজাতে শুরু করলেন। দেখলেন খাবার না দেয়া সত্ত্বেও কুকুরগুলোর একই পরিমাণ লালা ক্ষরণ হচ্ছে।

পাভলভ সিদ্ধান্তে আসলেন খাবারের প্যাকেট, ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট, ঘণ্টির শব্দ, এগুলো সব নিউট্রাল স্টিমুলেশন। এগুলোর সঙ্গে লালা ক্ষরণের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কুকুর তার লার্নিং বিহেভিয়ারে খাবারের সঙ্গে খাবারের প্যাকেট, পাভলভ, ল্যাব সহকারী বা ঘণ্টার শব্দকে কো রিলেট করে ফেলেছে এবং খাবারের সঙ্গে যা যা ঘটে সব কিছুকেই লালা ক্ষরণের উপাদান হিসেবে তার ব্রেইন ডিটেক্ট করছে।

ব্রেইনের এই লার্নিং মেথডকে তিনি “কন্ডিশনিং” এবং “কন্ডিশন্ড রিফ্লেক্স” বলেছেন। অর্থাৎ ব্রেইন এমন একটি স্টিমুলেশনের প্রতি সাড়া দিচ্ছে, যেটিতে ব্রেইনের আদৌ রেস্পন্স করা উচিত না, কিন্তু করার কারণ হচ্ছে ব্রেইন এই স্টিমুলেশনকে আরেকটি স্টিমুলেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে ফেলেছে।

মানুষ কুকুর নয় যে, মেয়ে দেখলেই তাকে ধর্ষণ করবে।তবে মানুষের মধ্যে পশুত্ব আছে।



বিখ্যাত নিউরোলোজিস্ট এবং পরবর্তীতে সাইকিয়াট্রিস্ট ফ্রয়েড বলেছিলেন, যাকে আমরা মন বলি সেটি মূলত তিনটি সত্ত্বার সমন্বয়ে গঠিত – ইড, ইগো এবং সুপার ইগো।
অর্থাৎ মানব মন এই তিনটি গাঠনিক উপাদানে তৈরি -

“ইড” মূলত মানুষের জৈবিক সত্ত্বা।

মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পূরণ করে ইড।

এটিকে “মন যা চায় তাই” এর সাথে তুলনা করা যায়।

"ইড" মানুষ এবং পশু সবার মাঝেই সমানভাবে বিরাজমান। এর কোন মানবিক দিক বা বিকাশ নেই। "ইড" এর পুরোটাই লোভ লালসা ও কাম চিন্তায় ভরপুর। "ইড" এমনভাবে মানুষকে প্ররোচিত করে যে, প্ররোচনায় মানুষ যে কোন অসামাজিক অপরাধ থেকে শুরু করে, খুন-ধর্ষণ পর্যন্ত করতে দ্বিধাবোধ করে না। এক কথায়, "ইড" হচ্ছে আমাদের ভিতরের সুপ্ত পশু।

সুপার ইগো হচ্ছে মানুষের বিবেক।

ইড যখন জৈবিক কামনা বাসনা পুরণ করতে উদ্দীপ্ত করে, তখন সুপার ইগো একে বাধা দেয়।

সুপার ইগো মানুষকে সব সময় মানবিক দুর্বলতার উর্ধে উঠে ভাল কাজ করার জন্য মানুষকে উদ্দপ্ত করে।

এই বাধা দেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করে ব্যক্তির নৈতিক, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষা এবং মুল্যবোধের উপর।

অন্যদিকে ইগো হচ্ছে এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য সৃষ্টিকারী একটি অবস্থা।

ইগো এবং সুপার ইগোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই এর কাজ।

ইড বলবে – I need to get it.

সুপার ইগো বলবে – You have no right to get it

ইগো বলবে – I need some plan to get it. অর্থাৎ ইগো ইডের ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করবে একটু ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে।

পশুরা ইড চালিত।

তাই তারা কেবল জৈবিক চাহিদা (খাবার এবং যৌনতা) পূরণেই ব্যস্ত। আবার মানুষের মধ্যে যখন “ইড” ডমিনেন্ট হয়ে যায়, তখন সে উন্মাদ ও অমানুষ হয়ে যায়। আর যখন কেবল সুপার ইগো কাজ করে – তখন সে সাধু সন্যাসী পবিত্র হয়ে যায়।ইগো এই দুই অবস্থার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

যেমন মানুষের মধ্যে যখন সুপার ইগো ডমিনেন্ট হয়, তখন অনেক সময় তাদের মধ্যে ডিপ্রেশন চলে আসে। ইগো তখন ব্যালেন্স করে। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা সুপার ইগোকে মানতে গিয়ে আমরা আমাদের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করতে পারি না। আমাদের এই অপূরণীয় চাহিদায় মন তখন বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। তখন বিক্ষিপ্ত মনকে শান্ত করতে ইগো কাজ করে।

জীব হিসেবে মানুষের সাথে অন্য প্রাণীর তেমন বেশি ডিফারেন্স নেই। উভয়েরই ইড আছে। কিন্তু মানুষের এর সাথে দুইটা জিনিস আছে ইগো এবং সুপার ইগো।

কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি-

পর্ণ মুভি দেখতে চমৎকার, অতএব পর্ণ দেখ (ইড)

পর্ণ মুভি দেখা নৈতিকতা বিরোধী, মানুষ এটাকে খারাপ বলবে, অতএব দেখা যাবে না (সুপার ইগো)

লুকিয়ে পর্ণ মুভি দেখ, অসুবিধা কী? মানুষ তো জানবে না, আর মনের চাহিদা ও মিটল (ইগো, ব্যালেন্স করতেছে দুই দিক)

মেয়েটি সুন্দরী, অতএব ওকে ইভটিজিং বা রেইপ করো (ইড)

রেইপ, ইভটিজিং অপরাধ, অতএব করা যাবে না (সুপার ইগো)

মেয়েটির সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করো, সম্ভব হলে প্রেমের প্রস্তাব দাও, মন পাওয়ার চেষ্টা করো, মন পেলে শরীর কোন এক সময় পাবে (ইগো)

ইড, ইগো এবং সুপার ইগো র আপেক্ষিক তীব্রতা স্থিতিশীল নয়, বরং পারিপার্শিকতার সাথে পরিবর্তনশীল।

যেমন সুপার ইগো তথা বিবেক অসুস্থ হয়ে গেলে তখন সে তার কাজ অর্থাৎ অন্যায় কাজে বাধা দিতে পারে না।

দেহের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – খাবার না খেলে/পেটে খাবার না থাকলে ক্ষিদের অনুভূতি সৃষ্টি করে সেটি জানিয়ে দেওয়া। কিন্তু ক্রমাগত না খেয়ে থাকলে, দেহের দাবী অস্বীকার করলে দেহ অসুস্থ হয়ে যায় তখন সে স্বাভাবিক ক্ষিদের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারে না।

তেমনি সুপার ইগো তথা বিবেকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে – সে খারাপ কাজে আপনাকে বাধা দিবে, কিন্তু যখন আপনি কন্টিনিউয়াসলি সুপার ইগোকে অস্বীকার করবেন, অমান্য করবেন – তখন এটি দুর্বল হয়ে যাবে এবং অন্যায় কাজে কার্যকর বাধা দিতে পারে না।

একজন মাদকাসক্ত প্রথম যে দিন মাদক সেবন করে, তখন “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু ধারাবাহিকভাবে মাদক সেবন তার এই অনুশোচনা র তীব্রতা কমিয়ে দেয়।

প্রথম যে ব্যক্তি পর্ণ দেখে, “সুপার ইগো”র জন্য তার মধ্যে কিন্তু প্রচন্ড অনুশোচনাবোধ হয়। কিন্তু সে যখন আসক্ত হয়ে যায়, তখন ধারাবাহিকভাবে অনুশোচনাবোধ কমে আসে।

সুতরাং মানুষ যদিও ইগো এবং সুপার ইগো দিয়ে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা, কিন্তু সুপার ইগো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে পশুত্ব জেগে উঠে।

একটি নির্দিষ্ট সিচুয়েশনে কোন ব্যক্তির মনের মধ্যে এই তিনটি অবস্থার কোনটি প্রাধান্য বিস্তার করবে – সেটি নির্ভর করে

১। ইড এবং সুপার ইগোর তুলনামূলক তীব্রতা

২। ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব আর

৩। ওই নির্দিষ্ট পরিবেশ – এই তিনটির ওপর।

কিছু ইয়াং উদভ্রান্ত পুলাপাইন বাসের মধ্যে মোবাইলে পর্ণ দেখে (ইড প্রি ডমিনেন্ট)

কেউ কেউ লুকিয়ে একাকীত্বে পর্ণ দেখে (ইগো প্রি ডমিনেন্ট)

আদর্শবান মানুষেরা কোন অবস্থাতেই পর্ণ দেখে না (সুপার ইগো প্রি ডমিনেন্ট)

হজ্বের বিশাল মহাসম্মেলনে নারী পুরুষের বিশাল সমাগমে কোন নারী ধর্ষিত হয় না (পরিবেশ ইফেক্ট)

রমনা বটমূলে বা টিএসসির বৈশাখ উদযাপনে শিক্ষিতদের দ্বারা মেয়েরালাঞ্ছিত হয় (পরিবেশ ইফেক্ট)

ফুড সেক্স এসব বায়োলোজিকপ্রয়োজনে রিফ্লেক্স প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে একইভাবে ডেভেলপ করে। পাভলভ কুকুর নিয়ে যেই গবেষণা করেছিলেন বিহেভিয়ার কন্ডিশনিং এর (আগের পোস্ট) এই বিহেভিয়ার (ইড) কন্ডিশনিং হুবহু মানুষের জন্য প্রযোজ্য এবং নিউরোলজিতে কন্ডিশান্ড রিফ্লেক্স এর জন্য পাভলভের এই কনসেপ্টকে আদর্শ মানা হয়। এটা মানুষের সাথে কুকুরের তুলনা না, মানুষের বায়োলোজিক দিকের সাথে কুকুরের তুলনা। ড্রাগ ডেভেলপম্যান্ট, নিউ বায়োলোজিক রিসার্স সবগুলোই প্রথমে প্রাণীর উপর করে তারপর সেইফটি দেখে মানুষের ওপর করা হয়।

৬ বছরের মেয়ে, বোরখাবৃতা মেয়ে কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবে যৌনানুভুতি সৃষ্টি করে না। কিন্তু লার্নিং মেথডের কন্ডিশানিং এর কারনে একজন ধর্ষকের ব্রেইনে এটি মারাত্মক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। বাড়িয়ে দিচ্ছে ইড এর ডমিনেন্সি। দুর্বল হয়ে যাচ্ছে সুপার ইগো।

৬ বছরের মেয়ে, বোরকাবৃতা মেয়ে কিংবা ৬০ বছরের বৃদ্ধা স্বাভাবিকভাবে যৌনানুভূতি সৃষ্টি করে না। কিন্তু লার্নিং মেথডের কন্ডিশনিংয়ের কারণে একজন ধর্ষকের ব্রেইনে এটি মারাত্মক উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে।



কীভাবে এই কন্ডিশনিং হচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথের ডিরেক্টর ড. আলিয়াস বলেছেন, মানুষের পার্সোনালিটি লার্নিং হয় তিনটি শিক্ষা, সঙ্গ এবং পরিবেশ- এই তিনটি প্রধান ফ্যাক্টর দ্বারা। আসুন আমরা দেখি শিক্ষা, সঙ্গ এবং পরিবেশ থেকে আমরা মেয়েদের ব্যাপারে কী প্রি-কনসেপ্সন পাচ্ছি?

ক্লাস এইটে “নিজেকে জানো” বইতে ইয়াং পোলাপাইনকে কী শিখাচ্ছেন?

-পরস্পরের সম্মতিতে যৌন অনুভূতি প্রকাশ দোষণীয় নয়।

ক্লাস নাইনে “হাজার বছর ধরে” উপন্যাসে ইয়াং পোলাপাইনকে কী শিখিয়েছেন?

-হাজবেন্ডকে ফাঁকি দিয়ে অন্যের সঙ্গে সহীহ পরকীয়ার কলাকৌশল।

তের-চৌদ্দ বছর বয়সে একটা ছেলে যখন হাজার বছর ধরে উপন্যাস পড়ে এবং সেখানে টুনি মন্টুর প্রেমকাহিনী পড়তে পড়তে সে অবচেতনভাবে ছেলেটি নিজেকে মন্টু আর মেয়েকে টুনি ভাবে এবং এই ভাবনা নিউরোলজিক্যাল দৃষ্টিকোণ থেকে শুধু স্বাভাবিকই নয়, বরং না ভাবাটাই অস্বাভাবিক।

ক্লাস ইলেভেনে “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসে ইয়াং পোলাপাইনকে কী শিখিয়েছেন?

-ওয়াইফকে ফাঁকি দিয়ে শালীর সঙ্গে সহীহ পরকীয়ার কলাকৌশল।

কুবের কপিলার সম্পর্ক পোড়ার পর, আপনি আপনার শালীকে কী চোখে দেখেন? বাংলা সাহিত্যের গল্প, নাটক, উপন্যাস, কবিতায় নারীকে কী হিসেবে চিত্রিত করেছেন কবি সাহিত্যিকরা? এই গল্প/সাহিত্য আপনার মস্তিষ্কে কী ধরনের চিত্রকল্প তৈরি করে?

ক্লাস ইলেভেনে “শকুন্তলা নিবন্ধে” ইয়াং পোলাপাইনকে কী শিখিয়েছেন?

"শকুন্তলার অধরে নবপল্লবশোভার সম্পূর্ণ আবির্ভাব; বাহুযুগল কোমল বিটপের বিচিত্র শোভায় বিভূষিত; আর, নব যৌবন, বিকশিত কুসুমরাশির ন্যায়, সর্বাঙ্গ ব্যাপিয়া রহিয়াছে"। গাছের বাকলপড়া শকুন্তলার বর্ণনা আপনার মনের মধ্যে কী ধরনের ছবি উপস্থাপন করে?
-শকুন্তলার নগ্ন দেহের রগরগে বর্ণনা।

শকুন্তলার দেহের বর্ণনার এই লাইনগুলো আপনার কল্পনার চিত্রনাট্যে কী ধরনের ছবি তুলে ধরে?

সাহিত্যগুলোতে নারীকে কী রূপে উপস্থাপন করছেন?
-ভোগ-বিলাসের সামগ্রী।

বিজ্ঞাপনে নারীকে কী হিসেবে উপস্থাপন করছেন?
-ভোগপণ্য।

নাটক, টেলিফিল্ম, ছায়াছবিতে নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
-ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।

ছায়ানট, শিল্পকলা একাডেমি, চারুকলা, ললিতকলায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
-ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।

মিডিয়ায় নারীকে কীভাবে উপস্থাপন করছেন?
-ভোগপণ্য, কামনার প্রতিমা।

এইডসের বিজ্ঞাপনে কী শেখাচ্ছেন?

-বাঁচতে হলে জানতে হবে (মানামানির দরকার নেই, জানলেই হবে। ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডে তো এইডসের জ্ঞান নেই বললেই চলে, তাই তাদের মধ্যে এত এইডস!)

একজন মিথ্যাবাদী, প্রতারক, উচ্চাভিলাষী, অল্প শিক্ষিত, চরিত্রহীন, পতিতা কোয়ালিটির মেয়েকে দেশের সেরা মেয়ে করার নষ্ট প্রতিযোগিতা নিয়ে অনলাইন অফলাইন মিডিয়ার গোষ্ঠী উদ্ধার আর তার পেছনে পতিতার খদ্দের দেশের তামাম বিখ্যাত সব কর্পোরেট হাউজের ছুটে চলার মাধ্যমে কী শেখাচ্ছেন জেনারেশন নেক্সটকে? (মিস বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান নিয়ে কামড়াকামড়ি)।

আমাদের সাহিত্য, নাটক, শিল্পকলা, বিজ্ঞাপন, সংস্কৃতি একটা ছেলের মনে একটা মেয়ে সম্পর্কে কি ধরনের ইমেজ দিচ্ছে? এই একটা বিশেষ ছাঁচেই ছেলেদের চেতনা গড়ে উঠছে, এটাই ব্রেইনের স্মৃতিভাণ্ডারে জমা হচ্ছে। আসলে ব্রেইনের প্রি-কনসেপশনে বা স্মৃতিভাণ্ডারে নারী মানেই এমন একটি সত্তা যাকে দিয়ে দেহের এবং মনের ক্ষুধা মেটানো যায়।

সঙ্গের কথায় আসেন।একটা শিশু প্রথম প্রথম ২৪ ঘন্টায় পরিবারের মধ্যে থাকে, ক্রমান্বয়ে পরিবারের সাথে থাকার সময় কমে যায় আর বাইরে সময় কাটানো বেড়ে যায়।এখন বাইরের জগতে আমরা প্রতিনিয়ত যেসব সার্কেলে মিশি, সেখানে নারী প্রসঙ্গে কী আলাপ করে পুরুষেরা। বন্ধুদের আড্ডায় বান্ধবীদের নিয়ে বা বান্ধবীদের আড্ডায় বন্ধুদের নিয়ে যেই আলাপ হয় সেই আলাপ দিয়ে পুরুষের মস্তিষ্কে কী নারীর ব্যাপারে কী ধরণের চিত্রকল্প তৈরি হয়?

এরপর আসেন পরিবেশ নিয়ে। পরিবেশ দু’প্রকার– ফিজিক্যাল এনভাইরনমেন্ট এন্ড ভার্চুয়াল এনভাইরনমেন্ট (ইন্টারনেট) একটা ছেলে আমাদের পরিবেশ থেকে নারী সম্পর্কে কী ধরণের চিত্রকল্প লাভ করে? রাস্তাঘাটে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীকে কী ভূমিকায় আপনি দেখেন? আর একজন নারীই বা নিজেকে কীভাবে মুল্যায়ণ করেন?

এবার ভার্চুয়াল এনভাইরনমেন্টে আসেন। ভার্চুয়াল এনভাইরনমেন্ট এখন আমাদের হাতের মুটোই। ইন্টারনেট সুদূর গ্রামে গঞ্জে সবার হাতে হাতে চলে গেছে। যৌনতা একটি স্বাভাবিক চাহিদা। ইন্টারনেট সাইটগুলো নারী সম্পর্কে কী কনসেপ্ট দিচ্ছে?

আমাদের শিক্ষা, সঙ্গ এবং পরিবেশ, কোনটি নারীকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করতে শেখাচ্ছে?

বরং ভোগের সামগ্রী হিসেবে চিন্তা করতে শেখায়।

এরপর যখন বলেন, নারীকে সম্মান করতে হবে, মায়ের-বোনের দৃষ্টিতে তাকাতে হবে, সেটা অনেকের ব্রেইন মেনে নেয় না। কারণ পরিবেশ থেকে নারী সম্পর্কে ব্রেইনে একটা কনসেপ্টই এস্টাব্লিশ হয়েছে– ভোগ্যপণ্য!

এই প্রি-কনসেপশন থেকেই ৬ বছর, ৬০ বছরের নারী কিংবা বোরকাবৃতা, যেই হোক ধর্ষণেচ্ছা থেকে কেউই রেহায় পাচ্ছে না।

মেডিকেলীয় টার্মে প্রত্যেক রোগের তিনটি ডায়মেনশন আছে–Agent (রোগের কারণ), Host (যার মধ্যে রোগের কারণ বা জীবাণু আক্রমণ করে) এবং Environment (যে পরিবেশে রোগ হয়)।

উদাহরণস্বরূপ টাইফয়েড রোগের এজেন্ট- হচ্ছে সালমনেলা ব্যাকটেরিয়া। হোস্ট– টাইফয়েড রোগী যিনি ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত পানি/খাবার ভক্ষণ করেছেন। আর পরিবেশ হচ্ছে–দূষিত পানি/খাবার।

আবার সড়ক দুর্ঘটনার জন্য এজেন্ট– অদক্ষ/মাদকাসক্ত ড্রাইভার। হোস্ট– ফিটনেসহীন গাড়ি আর এনভায়রনমেন্ট– আঁকাবাঁকা রাস্তা, রং পার্কিং, অস্পষ্ট রোড সাইন।

এই এজেন্ট, হোস্ট এবং পরিবেশের মিথস্ক্রিয়ায় রোগ হয়।

ধর্ষণ একটি নৈতিক রোগ যার এজেন্ট– বিকৃতকাম নৈতিকতা বিবর্জিত পুরুষ। হোস্ট– নারী আর পরিবেশ– যৌন সুড়সুড়িময় পরিবেশ যেটির কথা আগেই উল্লেখ করেছি।

এখন মেডিকেলীয় পদ্ধতিতে টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে (সালমনেলা ব্যাক্টেরিয়াকে মেরে ফেলার জন্য তথা এজেন্ট কন্ট্রোল করার জন্য) দূষিত খাবার/পানি খাওয়া যাবে না (হোস্ট কন্ট্রোল) এবং পানিদূষণ ও খাবারদূষণ বন্ধ করতে হবে (এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল)।

তেমনি সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে ড্রাইভারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান, তাদের মধ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ (এজেন্ট কন্ট্রোল), ফিটনেসবিহীন গাড়ির রুট পারমিট বাতিল (হোস্ট কন্ট্রোল) আঁকাবাঁকা রাস্তা, রং পার্কিং, অস্পষ্ট রোড সাইন বন্ধ করতে হবে (এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল)।

তেমনি ধর্ষণ বন্ধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক উন্নত শাস্তি, পুরুষদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা জাগ্রত করা (এজেন্ট কন্ট্রোল)। নারীদের সভ্যভাবে চলতে উদ্বুদ্ধকরণ (হোস্ট কন্ট্রোল) এবং নাটক, গান, গল্প সাহিত্য, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্যরূপে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে (এনভায়রনমেন্ট কন্ট্রোল)।

আমার আছে অ্যান্টিবায়োটিক, আমি ইচ্ছামতো বিশুদ্ধ দূষিত সব খাবো কিন্তু টাইফয়েড হবে না– এটা হয় না।

তেমনি নৈতিকতাবোধ জাগ্রত না করে, নারীদের সভ্যভাবে চলতে না বলে, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ না করে, শুধু পুরুষদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে ধর্ষণ বন্ধ হবে না।

কারণ আইনের দৌড় খুব সীমিত। সন্তান মাকে হত্যা করছে, মা সন্তানকে হত্যা করছে, স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করছে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করছে– আইন এখানে কী ই বা করবে? পাহারা দিয়ে, আইন করে অন্যায় বন্ধ করা যায় না; যদি না মূল্যবোধ জাগ্রত হয়। ধর্ষণে প্রথম স্থান (সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী) অধিকার করে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এই শিক্ষাই দিচ্ছে।

লেখক: ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস, রেসিডেন্ট (নিউরোলজি), বিএসএমএমইউ।
দৈনিক যুগান্তর
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×