কাঠের মুখ
বাসায় ফিরে দেখি প্রিয়তমা নাই!
একটি বিবর্ণ শাড়ি
বিধ্বস্ত সুপারিগাছের
এদিকে সেদিকে থাকে শুধু পেঁচিয়ে
দুটি বিষণ্ন ভ্রমরের জানালামুখী উড়াউড়ি...
ঘুমন্ত পানির বোতল, অভিমানী বিছানা-বালিশ
ভুলে গেছে সন্ধ্যারাগ।
চোখের নদী তার ঢেকে গেছে
নির্জীব সময়ের তাবুতে
একটি কাঠের মুখ চোখের সামনে মেলে
খুঁজে পাই শতাব্দীর সভ্যতা ধ্বংসের ইতিবৃত্ত।
দেখি, শীত শেষের মেটেহাঁসগুলো
ভবিষ্যতের পথে দিল উড়াল।
হাত উঠিয়ে মেঘ ছোঁয়ার সামর্থ্য শেষ
আর কথারা তো মানানসই নিরুদ্দেশ।
সরলরেখার শেষ বিন্দুতে থেমে পড়ি
চোখ বাদে সর্বস্ব নিবন্ধন করে দিয়ে দিলাম গো; গৃহপালিত ছারপোকারা তবু হানা দেয় ভোরের দরজায়। আমার চোখ কামড়াতে আসে গাঢ় রাতে। টবের পিছে লুকাই, আলোর ছদ্মবেশে হারাই; পাতি শেয়ালের চোখা মুখগুলি ঘড়ির কাটার বিপরীতে ঘুরে আমার বরাবর সরে সরে আসে; তসবিমালার ইন্দ্রজালে কুটি কুটি করে দেয় কোলের বালিশ।
আমার চোখই বা কেন তার চাই! ছয় প্রকৃতির বসতি এই তারারন্ধ্রে-- রিপুদের দূরে ঠেলে। যন্ত্রণার পাখাদ্বয় আমাকে উড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় মহাশূন্যে চোখ হারানোর ভয়ে।
বায়তুল মুকাররমের সামনে এত আতর বেচি। পোকারা মানুষ হয় না। আবহাওয়া সাদা হয় না। বা হাত যতই মল ছেনুক, তাকে তো শরীরচ্যুত করতে গায়ে লাগে। পারি না। তবু থাকে ডান হাতের ছদ্মবেশে।
উন্মাতাল মেঘচোখ
দুর্লভ গাছের সাথে পিঠ ঠেকাই না, এ অক্ষমতা চিত্তকে কাবুও করে না। গণতান্ত্রিক সূর্যালোকের দিকে এগিয়ে যাই, সমুদ্রগামী উড়ন্ত ফড়িঙের পাখায় পাই সূর্য আর পানির কারুকাজ।
তাই চোখের পানির মতো পৃথিবীকে যুম-আউট করি না। বরং বিখ্যাত পাহাড় আর মৌমাছির আবাস দেখলে উল্টো দৌড় দিই।
সকলে উপদেশ দেয়, আমি যেন আকাশ পথ ছাড়ি, আকাশ নাকি শুধু কুয়াশাময় মাকড়সায় ধু ধু। রাজগদ্যের গলি দিয়েও দেখেছি, বই আর ম্যাগাজিনের পাতা উল্টালে শুধু কুয়াশাময় মাকড়সার রাজত্ব।
আমি ভেসে চলি আমার এই একান্ত অভিমানি আকাশে; কোনো নক্ষত্রের দামি পোশাকে গা ঘেঁষি না।
আমি তো গাছ বেয়ে চলা বিষপিঁপড়ে, শীতের আবির্ভাব টের পেয়ে পিঠে বোঝাই করি হীরের স্বপ্ন। মাস্তানদের মতো জুলফি রাখি না, সেলফি বুঝি না। নিজ করে ক'রে শস্য উৎপাদনে এক উন্মাতাল চোখ খুঁজি।
মাছির দল
মাছিরা দুঃখের মতো দল বেঁধে উড়তে পারে না। তবে সবার উড্ডয়নই নিজস্বতাহীন। দৃশ্যত তারা তৈরি করে উড়াউড়ির কোরিওগ্রাফি।
যতবারই মাছির ছদ্মবেশে উড়ি, ওজনস্তর থেকে ঠিক ঠিক আলাদা হয়ে পড়ি। মাছিরা কি অভিনয় বোঝে না?
মাছির চোখ
কেবল চোখ দেখে মাছির পথের আকৃতি বলে দেয়া যায়। যৌথ উড্ডয়ন ছেড়ে তাই রোদের দিকে মুখ এগিয়ে দিই। স্থির পানির ধৈর্য্য আমাকে জীবন্ত করে।
মাছিরা পেয়ে যাবে কাঁঠালের ঋতু। আমিও কাগজে পাব কেরোসিনের ঘ্রাণ — ফুলের চেয়ে মহান — মাছিদের চোখ চিনে নেয়ার চোখ।
লেজে লাল রঙের অপরাধ
অচেনা মুখশ্রীর সাথে চলতে লাগে না মুখোশ
তিতিরের সাথে আমার জমে―
বনের আবেগই স্মৃতিময় করে
দ্বিতীয় আগুন শরীর সয় না
ঘাস-বান্ধবীরা উপবন হবার যুগেও
ফিরে গেছি কাছিমের দেশে।
পথ পেরোবার দ্বিরুক্তি দ্বিচোখ ঝাপসা করে
সূর্য এখনও একই কালার কোড মেনে ঘুমায়
শৈশবের ভোর থেকে কিছু রাগ
ফিরে আসে নতুন বাজারে
গতরাতের খাবার নবায়ন হয়ে গেছে।
বিড়ালে রূপান্তরিত বাঘের চেয়ে
আর কে বা ক্ষুধা বেশি বোঝে!
কাগজের দশ নৌকো পর পর ডুবে যাবার পর
আমিই হব সওদাগরের ডানপা
তখনও শিশুসহ জলপরীদের খোঁজ তো কেউ নেবে না
আলুর বস্তা পিঠেই অবশেষে অভ্যস্থ হবে পৃথিবীতে
পিঁপড়েয় কামড়ে দেয়া চোখ।
মেঘচোখ
আমাকে গানে বাঁধো গো জোনাকী
পথের বর্ণমালা শিখে কী পেলাম?
কাকের পাখার রঙ আকাশে মেশে না,
তাই পাহাড়ের মুণ্ডুতে নিজের মাথা
খুলে রেখে এসেছি ক্ষোভে।
এ মাসে কাশফুলের দরকারিতা ছিল খুব
সোজা ছেড়া কাঁথার যুগে এবার চলে যাব ভেবে;
পায়ের রগ ফুলুক না ফুলুক
মেঘের পিঠে হাঁটার বয়েস এখনো আছে। হতভাগা গাড়ির গতি প্রিয় গাছগুলির
দূরে সরে যাওয়ার সমানুপাতিক না,
কোন লোভে মন তবে মেঘাতুর হল—
ছুট দিলাম দড়ির গিঁট বরাবর!
দেয়াল ঘেঁষে এই হাঁটি হাঁটি শেষে
কবে কাশের সাদা কিনতে যাব! যথার্থ মৌসুম তো হারালো;
বিরক্তিকর মাছির পিঠে উড্ডীয়মান মন
ফিরে পাবে কি মোমের জগত!
কবিতার ফলি
চড়ুইয়ের আজ গৌতমী জ্বর।
কবিতার বনে পথ হারিয়েছে পাখিপ্রাণ।
যদিও অচেনা পথ আবগারি-গম্ভীর; বিড়ালের চোখ চিনে গেছে সাধ্যমত কবিতাপথ। কবিতার পথচলা ঝুমঝুম অথচ নির্ভয়। অচিন রথই একমাত্র গন্তব্য কবিতামেয়ের।
সময় থামিয়ে চড়ুই কবিতার পিছু ছোটে― দশদিকসহ বাইরের হাজার গলি, নিরেস মিনারের মাথা বরাবর দিয়ে। কবিতা লাফিয়ে চলে, চড়ুই হুবহু এগোয়, দেখাদেখি থামে, দেয় পাখসাট আর ফিঙে-লাফ।
চড়ুইয়ের উন্মাদনাই পরের দিন ইতিহাস হয়। সব পথ মিলে আজ খুঁজতে এসেছে চড়ুইয়ের অভিমান। মূলত, ফলিশিল্পীকে ক’জনাই আর মনে রাখে!
শূন্যের সিংহাসন
পা বাড়াতেই শহর নিভে যেতে চায়
তুই তো মহারাজ ছিলি না কাঠের ঘোড়ায় কোনোকালে
নদীর প্রাণ ঢেউময়
আজ কুয়াশার দিন
তবু তোর চোখপথে কেরোসিন
বলিভিয়ার বন থেকে পথে উঠে আসতে শৈশব মনে এল;
আমাদের রিক্সা কিন্তু জব্বর— দাবার ঘোড়া!
তোর জন্মদিনে নিজ উদ্যোগে আসিস বনে
'আসলা' দেখতে পাবি
চোখের সবুজ চড়কিতে চড়বে মন
গ্যসীয় গ্রহগুলোকে যতই গালি দেই
শেষতক শূন্যই হবে তোর আপনজন।