হাসি এক ধরনের মুখমণ্ডলীয় প্রতিক্রিয়া, যা আপনার ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশও বটে। আমরা সবাই কম বেশি হাসি। হাসতে বা হাসিমুখ দেখতে আমরা সবাই পছন্দ করি। হাসিমুখের জয় সবখানে। কারো মুখের এক চিলতে হাসি নিমেষে দূর করে দেয় সব কষ্ট। অনেকসময় মান অভিমানের অবসান ঘটায় এই হাসি। গোমড়া মুখে না বলে হাসি মুখে কোনো কথা বললে অনেক কঠিন কথাও সহজভাবে নেয়া যায়।
এসব ছাড়াও হাসির শরীরবৃত্তীয় উপকারিতা সম্বন্ধে আমরা কতটুকু জানি? হাসি স্বাস্থের জন্যও খুব উপকারি। গবেষকরা তা-ই বলছেন।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডা. উইলিয়াম ফ্রাই স্বাস্থ্যের ওপর হাসির প্রভাব নিয়ে প্রথম গবেষণা করেন। তার মতে, হাসি এক ধরনের ব্যায়াম। প্রাণবন্ত হাসিতে কেঁপে ওঠে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পেট ও মুখের পেশী। ফলে চমৎকার ব্যায়াম হয় এবং রক্তসঞ্চালন ঘটে। পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছে যায় হৃদপিণ্ড, ফুসফুস ও পেশীতে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পাশাপাশি পাকস্থলীতেও রক্তসঞ্চালন বাড়ে। ফলে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়। তাই হাসি হলো- ‘ইন্টারনাল জগিং’।
ক্যালিফোর্নিয়ার লোমা লিন্ডা ইউনিভার্সিটির মেডিসিনের প্রফেসর ডা. লি ব্রেক বলেন, হাসি কখনো কখনো ওষুধের মতোই কাজ করে। হাসিতে শিরা ও ধমনী-পথে রক্ত চলাচল সুষম হয়, ফলে দেহকোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। তাই শুধু নয়, ধমনীর অযাচিত সংকোচন রোধেও হাসি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।
২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রিভেন্টিভ কার্ডিওলজি পরিচালিত গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, হাসিখুশি মানুষদের হৃদস্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে গোমড়ামুখোদের চেয়ে বেশি ভালো থাকে।
হাসি আপনার আবেগীয় স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মনের বোঝা কমায়। হাসলে আপনি কিছুটা হলেও ভারমুক্ত হবেন। তাতে সাইকো-সোমাটিক ডিজিজ বা মনোদৈহিক রোগে ভোগার আশঙ্কা কমে। এছাড়াও দুশ্চিন্তাজনিত মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন নিরাময়ে হাসির ভূমিকা বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত।
মানসিক স্বাস্থের সাথে শারীরিক স্বাস্থের সর্ম্পক ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। হাসি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হাসি আপনার মনকে ভালো রাখে। আপনাকে রাখে সতেজ। যখন আপনার মন ভালো থাকবে স্বাভাবিকভাবে আপনার শরীরও ভালো থাকবে। তাই আপনার হাসি আপনার আয়ু বাড়াতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
হাসি শরীরের পেশীগুলোকে রিল্যাক্স করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, হাসলে শরীরের ভেতরে একপ্রকার রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে যা শরীরের ব্যথা বেদনা দূর করতে সাহায্য করে। আনন্দময় প্রাণখোলা হাসিতে মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত হয় এন্ডোরফিন, যা ব্যথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়। তাই হাসিকে বলা হয় মহৌষধ।
হাসি কিন্তু ছোঁয়াচেও! আপনার হাসি মুখ অন্যকে যেমন হাসাতে পারে, তেমনি অন্যের হাসি আপনাকে হাসাতে পারে। তাই অন্যকে হাসাতে চাইলে আপনাকেও হাসতে হবে। আর সুস্থ থাকতে চাইলেতো হাসির কোনো বিকল্প নেই।
সুস্থ থাকতে তাই প্রাণখুলে হাসুন। সুস্থ থাকুন আপনি, আর সুস্থ রাখুন আপনার পাশের মানুষগুলোকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮