somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈদিক ঈশ্বর এবং ৩৩ কোটি দেবতা ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রশ্নঃ বেদে কতজন ঈশ্বরের উল্লেখ আছে? আমরা শুনেছি বেদে অনেক ঈশ্বরের উল্লেখ আছে।

উত্তরঃ আপনি অবশ্যই ভুল উৎস থেকে শুনে থাকবেন। বেদে সুস্পষ্ট ভাবেই বলা আছে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। এবং বেদে এমন কোন মন্ত্র নেই যা বহু ঈশ্বরবাদকে সমর্থন করে। নিম্নে কিছু উপমা দেয়া হলঃ
বেদে ঈশ্বর= বাইবেলের ঈশ্বর- ট্রিনিটির ধারণা -যীশুর কাছে আত্মসমর্পন করার আবশ্যকতা।
বেদের ঈশ্বর= ইসলামের কুরানের আল্লাহ - মুহাম্মদকে শেষ নবী হিসেবে স্বীকার করার আবশ্যকতা
অন্য ভাবেও বলা যায়, যদি কেউ শাহাদার প্রথম অংশটুকু বলে ("লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই) এবং দ্বিতীয় অংশটুকু (মাহাম্মুদুর রাসুল্লাহ অর্থাৎ মুহাম্মদ হচ্ছেন তারা দূত ) অস্বীকার করে তাহলে সেটা বেদের ঈশ্বরবাদের কাছাকাছি হবে। ইসলামে আল্লাহ ব্যতীত অন্যকিছুকে উপাসনা করা হচ্ছে শিরক অর্থাৎ গুরুতর গুনাহ। তাই কেউ যদি এতটুকু মেনে নেয় এবং মুহাম্মদ অথবা জিবরাইলকে আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ ও দূত হিসেবে আবশ্যিক ভাবে মেনে নিতে অস্বীকৃত জানাই তাহলে বেদ অনুসারে তারা শিরককে এড়িয়ে যেতে পারবে।
বেদ অবতারবাদ কে স্বীকৃত করে নি ।


প্রশ্নঃ তাহলে বেদে উল্লেখিত এই বিভিন্ন ধরনের দেব দেবতা কে? আর ৩৩ কোটি দেবতাগন কি?

উত্তরঃ প্রথমেই বলে নিতে হচ্ছে দেবতা হচ্ছে সত্ত্বা যা আমাদের জন্য উপকারী। কিন্তু বেদে কোথাও এটা উল্লেখ নেই যে আমাদেরকে এই সকল সত্তাকে পূজা করতে হবে। অবশ্যই ঈশ্বরও একজন দেবতা অথবা একাধিক দেবতা এবং সেজন্যই বলা হয় মহাদেবতা। তাই শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে।

বেদে ৩৩ মিলিয়ন দেবতার উল্লেখ করেনি কিন্তু ৩৩ ধরনের দেবতার উল্লেখ রিয়েছে। সংস্কৃততে দেবতা অর্থ হচ্ছে ধরন বা প্রকার।বিষয়টি শতপথ ব্রাক্ষনে খুবই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই ৩৩ ধরনের দেবতাদের মধ্যে রয়েছে
৮ বসু (পৃথিবী, জল, আগুন, বাতাস, আকাশও, চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ/নক্ষত্রাদি ) যা বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের (Universe) অংশীভূত যেখানে আমরা বাস করি।
১০টি দেহের জীবনী শক্তি (প্রান, অপান, বায়ু,উদানা, সামানা, নাগা, কুর্মা, কুকালা এবং দেবাদত্ত)
১টি আত্মা যাকে বলা হয় রুদ্র
১২ টি আদিত্য(বছরের মাস সমুহ)
১ তড়িৎ চুম্বকয়ি শক্তি (Electromagnetic force )
১ যজনা (মানুষ কর্তক স্বার্থহীন পূন্যকর্ম)
এই সকল ৩৩ দেবতার প্রভু হচ্ছে মহাদেবতা অথবা ঈশ্বর যাকে শতপথ ব্রাক্ষনের ১৪ কান্ড অনুযায়ী শুধু মাত্র তাকেই উপাসনা করতে হবে অন্য কাউকে নয়। এই ৩৩ দেবতার ধারণাটি হচ্ছে বিশাল গবেষণার বিষয় এবং বিষয়টিকে যথাযত ভাবে বোঝার জন্য গভীর অধ্যায়ন প্রয়োজন। তা যাই হোক, বিভিন্ন বৈদ্যিক গ্রন্থের আলোকে এই কথাটি সুস্পষ্ট হয়েছে যে এই সকল সত্ত্বগুলো যাদের আমরা দেবতা বলি তারা কেহই ঈশ্বর নয় এবং উপাসনার যোগ্যও নয়।

ঈশ্বরে বহু গুণাবলীর অধিকারী। শুধু মাত্র মূর্খ মানুষেরাই মনে করে ঈশ্বরের ভিন্ন ভিন্ন গুন এক একটি ঈশ্বর।

এই সন্দেহ গুলো দূর করার জন্য বেদে কয়েকটি মন্ত্র আছে যেখানে পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেছে যে ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় এবং তার কোন সহকারী, দূত, নবী, অবতার অথবা অধিনস্ত কোন কর্মচারী নেই যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবো।
উদাহরন স্বরূপঃ
যর্যুরবেদ ৪০.১: এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।কখনই অন্যায় করো না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা করো না।
ঋগবেদ ১০.৪৮.১: ঈশ্বর সর্বত্রই বিদ্যমান এবং বিশ্ব ব্রক্ষান্ডকে পরিচালিত করেন। পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই জয় ও শ্বাশত কারন প্রদান কারী। প্রতিটি আত্মা অবশ্যই তাঁকেই সন্ধান করবে যেমন করে একটি শিশু তারা বাবাকে খোঁজে। শুধুমাত্র তিনি আমাদেরকে খাদ্য ও স্বর্গীয় সুখ প্রদান করেন।
ঋগবেদ ১০.৪৮.৫: ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও। তিনি এই জগত সৃষ্টিকারী। সকল আত্মার উচিত পরম সুখ সন্ধান করা জ্ঞান অন্বেষণ ও কর্মের মধ্য দিয়ে। তারা কখনই ঈশ্বরের বন্ধুত্ব থেকে নিজেকে পরিহার করবে না।

ঋগবেদ ১০.৪৯.১: ঈশ্বরই সত্যের সন্ধানীদের সত্যজ্ঞান দিয়ে থাকেন। তিনিই শুধু জ্ঞানের প্রর্বতক এবং ধার্মিক ব্যাক্তিদের পরম সুখ লাভের জন্য পবিত্র কর্ম করতে উৎসাহী করেন। তিনিই একমাত্র জগতের সৃষ্টিকারী এবং এর পরিচালক। ঙটাই ঈশ্বর ব্যাতীত অন্য কারো উপাসনা করো না।

যর্যুরবেদ ১৩.৪: সমগ্র বিশ্বে শুধু একজনই হর্তাকর্তা রয়েছেন। শুধুমাত্র তিনিই পৃথিবী, আকাশ, এবং অন্যন্যা দৈব সত্ত্বাকে ধারণ করেন। তিনি নিজেই পরম সুখী! তিনিই শুধু মাত্র তিনিই আমাদের দ্বারা উপাসিত হবেন।

অর্থববেদ ১৩.৪.১৬-২১: তিনি না দুই, না তিন, না চার, না পাঁচ, না ছয়, এমনকি না সাত, না আট, না নয়, না দশ। তিনি একজন এবং শুধুই একজন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ঈশ্বর নন। সকল দেবতাগণ তার মাঝেই থাকেন এবং তার দ্বারাই পরিচালিত হন। তাই তিনি ছাড়া অন্য কেউ উপাস্য নাই।
অর্থববেদ ১০.৭.৩৮: শুধু মাত্র ঈশ্বরই হলেন শ্রেষ্ট এবং একমাত্র উপাস্য। তিনিই সকল জ্ঞানের ও কার্যাবলীর উৎস।

যর্যুরবেদ ৩২.১১: বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের সকল স্থানেই তিনি বর্তমান। কোন স্থানই তাকে আড়াল করতে পারে না। তিনি নিজেই নিজের কাজ করেন এবং তাঁর কাজ করার জন্য তাঁর কোন সহায়কের সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। যে আত্মা অনুধাবন করতে পারে যে শুধুমাত্র ঈশ্বরই তাকে জয় করতে পারে এবং উপভোগ করতে পারে শর্তহীন অসীম আনন্দ অথবা মকশা।

বেদে এই রকম আরও অসংখ্য মন্ত্র রয়েছে যেখানে এক মাত্র ঈশ্বরকেই ব্যাখ্যা করেছে এবং উপদেশ দিয়েছে অন্য কোন দৈব সত্ত্বাকে ( অবতার, রাসূল, ফেরেশতা, দূত, দেবদেবী) না ডেকে একেবারে সরাসরি শুধু তাকেই ডাকো এবং তারই বন্দনা ও উপাসনা করো।

প্রশ্নঃ তার মানে কি সকল মন্দির ও রাম, কৃষ্ণ, দূর্গা, লক্ষি এদের পূজা করা ভুল?

উত্তরঃ ধরুন একজন ধার্মিক বা যিনি একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন। একদিন তার ছেলেকে সাপে কেটেছে। সে তার ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য এক ঝাড় ফুঁকওয়ালার কাছে ছুটে গেল। এখন আপনি কি তাকে ভুল বলবেন নাকি সঠিক বলবেন?

আজকাল ঈশ্বরের উপাসনা তা হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন সবাই আসলে একই অবস্থায় আছে। তাদের উদ্দেশ্য, ভক্তি, শ্রদ্ধা কিন্তু একেবারে খাঁটি। কিন্তু অজ্ঞতার দরুন তারা ঈশ্বরের উপাসনার ভুল পথকে গ্রহন করেছে। একটা বিষয় নিশ্চিত যে সকল হিন্দুরা যারা বেদ সম্পর্কে সামান্য কিছুটা জ্ঞান রাখে তারা মানতে বাধ্য যে বেদই হচ্ছে সর্ব শ্রেষ্ট। তাই ইতিহাসের কালজয়ী এ সকল মহৎ পুণ্যবানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সঠিক পন্থা হচ্ছে তাদের সকল গুন গুলো আত্মস্ত করা এবং তাদের ন্যায় মহৎ কর্ম করা। উদাহরণ স্বরূপ, রাবণকে আমরা দেখতে পাই একজন স্বেচ্ছাচারী, পাপাচারী, ধ্বংসকারী, অন্যায়কারী এক রাজা হিসেবে। যদি আমরা এক হয়ে বর্তমানের সকল রাবণের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেটাই হবে শ্রী রাম চন্দ্রের যথার্থ মহিমা প্রকাশ ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন। ঠিক একই ভাবে শ্রী কৃষ্ণা, দূর্গা, হনুমান ইত্যাদি।


আমরা এই ভাবে ঐ সকল পুণ্যবান আত্মাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে পারি এবং আমরা সকল সম্প্রদায়ের ভক্তদের প্রতি আন্তরিক ভাবে প্রণাম জানিয়ে তাদের নিকট প্রার্থণা করবো যেন সকল ভক্তরা সে ভাবেই ঈশ্বর উপাসনা করবেন যেভাবে শ্রী রাম চন্দ্র ও শ্রী কৃষ্ণ করেছিলেন তাদের জীবদ্দশায় ।

চলবে .........।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৪
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×