আজকাল অনেককেই যজ্ঞ নিয়ে কিছু ভূল ধারনা পোষন করতে দেখা যায়।বিভিন্ন ভূল উত্স থেকে তারা এ ধারনা পেয়ে থাকেন যে যজ্ঞে নাকি পশু বলি হত।তাদের এ তথ্যের ধরন কিছুটা এরকম-
১)গোমেধ যজ্ঞ-এখানে নাকি গরু বলি দেয়া হত।
২)অশ্বমেধ যজ্ঞ-এখানে নাকি ঘোড়া বলি দেয়া হত।
কিন্তু মজার বিষয় এই যে নরমেধ যজ্ঞে মানুষ বলি দেয়া হত এমনটা কিন্তু কাউকে বলতে শোনা যায়না।(আজকাল অবশ্য কেউ কেউ বলে থাকেন) উপনিষদ,ব্রাহ্মনগ্রন্থসমূহের উপর জ্ঞান না থাকায় আমরা গোমেধ,অশ্বমেধ, নরমেধ ইত্যাদি পবিত্র শব্দ গুলির অর্থ না জেনেই শোনা কথার উপর ভিত্তি করেই বলে বেড়াই যে ,বেদে যজ্ঞে গো-অশ্ব বলি দেওয়ার বিধান আছে ! নিম্নে উল্লেখিত শব্দগুলোর প্রকৃত অর্থ কি তারই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হল ।
আগে দেখে নেই 'যজ্ঞ' কে পবিত্র বেদে কি বলা হয়েছে।পবিত্র বেদের প্রথম মন্ডলের প্রথম সুক্তের চার নং মন্ত্রে যজ্ঞকে 'অধ্বরং' বলা হয়েছে।এই অধ্বরং অর্থ কি?দেখে নেই সংস্কৃত ব্যকরন কি বলছে। বৈদিক ব্যকরন গ্রন্থ নিরুক্ত এর ২.৭ এ বলা হয়েছে
"অধ্বরাং ইতি যজ্ঞনাম।
ধ্বরাতিহিংসাকর্ম তত্প্রতিশেধহ।।"
অনুবাদ- ধ্বরা কর্ম হিংসা ও বিদ্বেষযুক্ত,এর বিপরীত হল অধ্বরা যেমন যজ্ঞসমূহ।
মহর্ষি যস্ক এই শ্লোকের ব্যখ্যায় বলেছেন যে যজ্ঞ অধ্বরা অর্থাত্ সম্পূর্ন সাত্ত্বিক যেখানে সকল প্রকারের রক্তপাত,হিংসা বিদ্বেষ অনুপস্থিত।অর্থাৎ যজ্ঞে পশুবলীর কোন প্রশ্নই আসেনা।আর পবিত্র বেদে যেখানে শত শত মন্ত্রে পশুহত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে,পশুদের উপকারী জীব বলে সেবা করতে বলা হয়েছে সেখানে যজ্ঞে পশুবলীর চিন্তা আনাটাও অমূলক!
অশ্বমেধ যজ্ঞ কি?
"রাষ্টং বৈ অশ্ব মেধঃ । অগ্ন হি গৌঃ ।অগ্নির্বা অশ্বঃ আজ্যং মেধঃ ॥ (শতপথ ব্রাহ্মন ১৩.১.৬.৩)
অনুবাদ- অশ্ব হল রাষ্ট্রের প্রতীকি নাম(সুপ্রশাসকের প্রগতিশীল রাষ্ট্র অশ্বের ন্যয় বেগবান এই অর্থে)।এই রাষ্ট্রের মেধ(প্রগতি) কামনায় যে যজ্ঞ রাজা করেন তাই অশ্বমেধ যজ্ঞ।
গোমেধ যজ্ঞ কি?
গো শব্দের ৯টি অর্থের মধ্যে একটি হল পৃথিবী।পৃথিবী ও পরিবেশের নির্মলতা কামনায় যে যজ্ঞ বা উপাসনা তাই গোমেধ যজ্ঞ।
নরমেধ যজ্ঞ কি?
মানুষের মৃত্যুর পর তার আত্মার সদগতি কামনায় যে অগ্নিদাহাদি ভিত্তিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যজ্ঞ করা হয় তাই নরমেধ যজ্ঞ।
অশ্ব,গবাদি পশু ইত্যাদি হত্যা করে ,হোম বা যজ্ঞ করার বিধান কোন প্রামাণ্য শাস্ত্রে নেই ।কেবল পৌরাণিক যুগে ভণ্ডের দল এই সব পাপাচার প্রচার করে সমাজের মহা সর্বনাশ করেছে। দয়া ,প্রেম ,সাম্য ,মানবতা ,অহিংসা মানুষের পরম ধর্ম। এর বিপরীত আচরন পশুহত্যা করে ধর্মাচরণ তো হয় না বরং পাপই হয়।
লেখটির কৃতিত্ব এবং প্রকাশ ঃ অগ্নিবীর
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭