আত্মা- হিসাবে মানুষ বাস্তবিকই মুক্ত, কিন্তু মানুষ হিসাবে সে বন্ধ, প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক পরিবেশে সে পরিবর্তিত হচ্ছে । মানুষ হিসাবে তাকে একটা যন্ত্রবিশেষ বলা যায়, শুধু তার ভিতরে একটা মুক্তি বা স্বাধীনতার ভাব আছে – এই পর্যন্ত । কিন্তু জগতের সর্বপ্রকার শরীরের মধ্যে এই মানব শরীরই শ্রেষ্ঠ শরীর , আর মানব মনই শ্রেষ্ঠ মন । যখন মানুষ আত্মউপলব্ধি করে, তখন সে আবশ্যকমত যেকোনো শরীর ধারণ করতে পারে ; তখন সে সব নিয়মের পারে।
এটা প্রথমত একটা উক্তি মাত্র ; একে প্রমান করে দেখাতে হবে। প্রত্যেক বেক্তিকে কাজে এটা নিজে নিজে প্রমান করে দেখাতে হবে ; আমরা নিজের মনকে বুঝাতে পারি, কিন্তু অপরের মনকে বুঝাতে পারি না । ধর্মবিজ্ঞানের মধ্যে একমাত্র রাজযোগেই প্রমান করে দেখান যেতে পারে, আমি নিজে প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করে যা ঠিক বলে জেনেছি , শুধু তাই শিক্ষা দিয়ে থাকি। বিচার – শক্তির সম্পূর্ণ বিকাশ প্রাপ্ত অবস্থাই প্রাতিভ জ্ঞান , কিন্তু তা কখনই যুক্তি বিরোধী হতে পারে না ।
কর্মের দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ হয়, সুতরাং কর্ম – বিদ্যা ও জ্ঞান এর সহায়ক । বৌদ্ধদের মতে মানুষ ও জীব জন্তুর হিতসাধনাই একমাত্র কর্ম ; ব্রাহ্মণদের মতে উপাসনা ও সর্বপ্রকার যাগযজ্ঞাদি – অনুষ্ঠানও ঠিক সেইরূপ কর্ম এবং চিত্তশুদ্ধির সহায়ক । শঙ্করের* মতে – শুভাশুভ সর্বপ্রকার কর্মই জ্ঞান এর প্রতিবন্ধক । সে সকল কর্ম অজ্ঞানের দিকে নিয়ে যায় , সেগুলো পাপ – সাক্ষাৎসম্মন্ধ নয়, কিন্তু কারণ স্বরূপ , যেহেতু সেগুলি দ্বারা রজঃ ও তমঃ বেড়ে যায়। সত্ত্বের দ্বারাই কেবল জ্ঞানলাভ হয় । পুণ্য ও শুভ কর্মের দ্বারা জ্ঞান এর আবরণ দূর হয়, আর কেবল জ্ঞানের দ্বারাই আমাদের ঈশ্বর দর্শন হয় ।
জ্ঞান কখন উৎপন্ন করা যেতে পারে না ; তাকে কেবল অনাবৃত বা আবিষ্কার কারা যেতে পারে; যে কোন ব্যক্তি কোন বড় আবিস্ক্রিয়া করেন , তাঁকেই উদ্বুদ্ধ বা অনুপ্রাণিত (inspired)পুরুষ বলা হয় । কেবল যদি তিনি আধ্যাত্মিক সত্য আবিষ্কার করেন , আমরা তাঁকে ঋষি বা অবতার বলি ; আর যখন সেটা জড় জগতের কোন সত্য হয় , তখন তাঁকে বিজ্ঞানী বলি । যদিও সকল সত্যের মূল সেই এক ব্রহ্ম, তথাপি আমরা প্রথমোক্ত শ্রেণীকে উচ্চতর আসন দিয়ে থাকি ।
- স্বামী বিবেকানন্দ
* Adi_Shankara
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬