আজকে যে প্রবাদবাক্যটির উৎপত্তির গল্প নিয়ে হাজির হলাম, সেটি আমাদের সকলের কম বেশী পরিচিত প্রবাদবাক্য “ শিখণ্ডী”। এই শিখণ্ডী কে জানেন ? শিখণ্ডী হলেন রাজা দ্রুপদের সন্তান । এই চরিত্রটি মহাভারতের একটি অন্যতম বিচিত্র চরিত্র। বিচিত্র কেন বলছি তা ক্রমে প্রকাশ পাবে। আসা যাক ঠিক কি কারণে আমরা এই বাক্যটির ব্যাবহার এর মাধ্যমে এটিকে বাংলা প্রবাদের ভাণ্ডারে যুক্ত করেছি। অনেক সময়েই দেখা যায় কিছু মানুষ কাউকে না কাউকে সামনে রেখে , তাঁকে ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করে গুপ্তভাবে নিজ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে থাকে, এই রূপ অবস্থায় যাকে আড়াল করে উদ্দেশ্য সাধন করা হল তাঁকে অনেক সময়ে বাংলা বাক্যে “ শিখণ্ডী” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।।
এবার আসি মূল কাহিনী প্রসঙ্গে , যা থেকে পরবর্তীকালে এই চরিত্রটি বাংলা প্রবাদের স্থলে অন্তরভুক্ত হয়েছে। শিখণ্ডী চরিত্রটির জন্ম এবং জীবনকাহিনী অতি বিচিত্র। পূর্ব জন্মের অতৃপ্ত বাসনা চরিতার্থ করতেই তিনি একজন নপুংশক রুপে রাজা দ্রুপদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে মহারাজ শান্তনুর ছিল তিন পুত্র চিত্রাজ্ঞদ , বিচিত্রবীর্য এবং ভীষ্ম । বড় ছেলে ভীষ্ম ছিলেন আবার চিরকুমার , তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি রাজাও হবেন না আবার বিয়েও করবেন না। এর পিছনেও আছে এক বিরাট কাহিনী ! সে প্রসঙ্গ আর একদিন আলোচনা করা যাবে। আসি মূল প্রসঙ্গে , চিত্রাজ্ঞদ এর মৃত্যুর পর বিচিত্রবীর্য সিংহাসনে বসেন। এদিকে বড়ভাই এবং অভিভাবক হিসাবে ভীষ্ম তাঁর ছোট ভাই এর বিবাহের উপযোগী পাত্রী খুঁজতে লাগলেন। এই ভাবে খুঁজতে খুঁজতে একদা তিনি কাশীর রাজার তিন কন্যার স্বয়ম্ভরে প্রবেশ করেন , সভার সবাইকে হতবাক করে প্রায় মুহূর্তের মধ্যে সকলকে পরাজিত করে তিন কন্যাকে নিয়ে তাঁর রাজ্যে ফিরে এসে তাঁর ভাইএর জন্য মহাসমারোহে বিয়ের আয়োজন করতে লাগলেন, এদিকে বিবাহ সভায় বড় রাজকন্যা অম্বা বেঁকে বসল, সে বলল সয়ম্বর সভায় তিনি মনে মনে রাজা শাল্বকে পতিরুপে গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁর পক্ষে এই বিবাহ সম্ভব নয়। আর কি উপায় ! অম্বাকে ছেড়ে বাকী কন্যাদের সঙ্গে ভীষ্ম ভ্রাতার বিবাহ সম্পন্ন হয় ।
সেই পরিস্থিতিতে বিবেচক ভীষ্ম অম্বাকে রাজা শাল্বের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু ক্ষত্রিয় নিয়ম অনুসারে রাজা শাল্ব তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়াতে তিনি পুনরায় ভীষ্মের কাছে ফিরে এসে তাঁকেই পতি রুপে গ্রহণ করতে চাইলেন, কিন্তু ভীষ্ম তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞায় অনড় থাকাতে অম্বা খুবই রেগে গেলেন , এবং তিনি ভীষ্ম গুরু পরশুরামের কাছেও কোন বিহিত না পেয়ে , ভীষ্ম বধের জন্য যমুনা নদীর তীরে কঠোর তপস্যা করে মহাদেবের বর স্বরূপ পরবর্তী জন্মে শিখণ্ডী রুপে ভীষ্ম বধের কারণ হন । এবং এই জন্মে নিজ দেহ অগ্নিতে আহুত করেন ।
পরবর্তী জন্মে শিখণ্ডী নামে একজন নপুংশক রুপে তিনি পাণ্ডব পক্ষ অবলম্বন করে অর্জুন এবং ভীষ্ম এর প্রবল সংঘর্ষের মাঝে অর্জুন এর রথের সামনে দাঁড়িয়ে যান । যেহেতু শিখণ্ডী না ছিলেন পুরুষ না ছিলেন মহিলা তাই ভীষ্ম তাঁকে মহিলা ভেবে অস্ত্র ত্যাগ করাতে অর্জুন এর হাতে পারাজিত হন , এবং এই ভাবেই মহাভারতের পাণ্ডব এবং কৌরবদের মধ্যের যুদ্ধের অবসান ঘটে । আর একই সঙ্গে রাজকন্যার অভিশাপে শিখণ্ডীই ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠেন।।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮