somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা প্রবাদের আড়ালে রূপকথা ।পর্ব ৮

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আজকে যে প্রবাদবাক্যটির উৎপত্তির গল্প নিয়ে হাজির হলাম, সেটি আমাদের সকলের কম বেশী পরিচিত প্রবাদবাক্য “ শিখণ্ডী”। এই শিখণ্ডী কে জানেন ? শিখণ্ডী হলেন রাজা দ্রুপদের সন্তান । এই চরিত্রটি মহাভারতের একটি অন্যতম বিচিত্র চরিত্র। বিচিত্র কেন বলছি তা ক্রমে প্রকাশ পাবে। আসা যাক ঠিক কি কারণে আমরা এই বাক্যটির ব্যাবহার এর মাধ্যমে এটিকে বাংলা প্রবাদের ভাণ্ডারে যুক্ত করেছি। অনেক সময়েই দেখা যায় কিছু মানুষ কাউকে না কাউকে সামনে রেখে , তাঁকে ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করে গুপ্তভাবে নিজ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করে থাকে, এই রূপ অবস্থায় যাকে আড়াল করে উদ্দেশ্য সাধন করা হল তাঁকে অনেক সময়ে বাংলা বাক্যে “ শিখণ্ডী” হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।।

এবার আসি মূল কাহিনী প্রসঙ্গে , যা থেকে পরবর্তীকালে এই চরিত্রটি বাংলা প্রবাদের স্থলে অন্তরভুক্ত হয়েছে। শিখণ্ডী চরিত্রটির জন্ম এবং জীবনকাহিনী অতি বিচিত্র। পূর্ব জন্মের অতৃপ্ত বাসনা চরিতার্থ করতেই তিনি একজন নপুংশক রুপে রাজা দ্রুপদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। মহাভারতের কাহিনী অনুসারে মহারাজ শান্তনুর ছিল তিন পুত্র চিত্রাজ্ঞদ , বিচিত্রবীর্য এবং ভীষ্ম । বড় ছেলে ভীষ্ম ছিলেন আবার চিরকুমার , তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি রাজাও হবেন না আবার বিয়েও করবেন না। এর পিছনেও আছে এক বিরাট কাহিনী ! সে প্রসঙ্গ আর একদিন আলোচনা করা যাবে। আসি মূল প্রসঙ্গে , চিত্রাজ্ঞদ এর মৃত্যুর পর বিচিত্রবীর্য সিংহাসনে বসেন। এদিকে বড়ভাই এবং অভিভাবক হিসাবে ভীষ্ম তাঁর ছোট ভাই এর বিবাহের উপযোগী পাত্রী খুঁজতে লাগলেন। এই ভাবে খুঁজতে খুঁজতে একদা তিনি কাশীর রাজার তিন কন্যার স্বয়ম্ভরে প্রবেশ করেন , সভার সবাইকে হতবাক করে প্রায় মুহূর্তের মধ্যে সকলকে পরাজিত করে তিন কন্যাকে নিয়ে তাঁর রাজ্যে ফিরে এসে তাঁর ভাইএর জন্য মহাসমারোহে বিয়ের আয়োজন করতে লাগলেন, এদিকে বিবাহ সভায় বড় রাজকন্যা অম্বা বেঁকে বসল, সে বলল সয়ম্বর সভায় তিনি মনে মনে রাজা শাল্বকে পতিরুপে গ্রহণ করেছেন। তাই তাঁর পক্ষে এই বিবাহ সম্ভব নয়। আর কি উপায় ! অম্বাকে ছেড়ে বাকী কন্যাদের সঙ্গে ভীষ্ম ভ্রাতার বিবাহ সম্পন্ন হয় ।

সেই পরিস্থিতিতে বিবেচক ভীষ্ম অম্বাকে রাজা শাল্বের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। কিন্তু ক্ষত্রিয় নিয়ম অনুসারে রাজা শাল্ব তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়াতে তিনি পুনরায় ভীষ্মের কাছে ফিরে এসে তাঁকেই পতি রুপে গ্রহণ করতে চাইলেন, কিন্তু ভীষ্ম তাঁর পূর্ব প্রতিজ্ঞায় অনড় থাকাতে অম্বা খুবই রেগে গেলেন , এবং তিনি ভীষ্ম গুরু পরশুরামের কাছেও কোন বিহিত না পেয়ে , ভীষ্ম বধের জন্য যমুনা নদীর তীরে কঠোর তপস্যা করে মহাদেবের বর স্বরূপ পরবর্তী জন্মে শিখণ্ডী রুপে ভীষ্ম বধের কারণ হন । এবং এই জন্মে নিজ দেহ অগ্নিতে আহুত করেন ।

পরবর্তী জন্মে শিখণ্ডী নামে একজন নপুংশক রুপে তিনি পাণ্ডব পক্ষ অবলম্বন করে অর্জুন এবং ভীষ্ম এর প্রবল সংঘর্ষের মাঝে অর্জুন এর রথের সামনে দাঁড়িয়ে যান । যেহেতু শিখণ্ডী না ছিলেন পুরুষ না ছিলেন মহিলা তাই ভীষ্ম তাঁকে মহিলা ভেবে অস্ত্র ত্যাগ করাতে অর্জুন এর হাতে পারাজিত হন , এবং এই ভাবেই মহাভারতের পাণ্ডব এবং কৌরবদের মধ্যের যুদ্ধের অবসান ঘটে । আর একই সঙ্গে রাজকন্যার অভিশাপে শিখণ্ডীই ভীষ্মের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠেন।।


সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×