somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা প্রবাদের আড়ালে রূপকথা ।পর্ব ১০

১৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আবার ফিরে এলাম নিয়ে একটি মজাদার পৌরাণিক গল্প শুধুমাত্র আপনাদের জন্য । শুধু গল্প বললে কম বলা হবে, এই গল্পটির কাহিনী পরবর্তীতে লোকমুখে বেশ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদবাক্যের সৃষ্টি করেছে। আলোচিত প্রবাদ বাক্যটি হল “ঠুঁটো জগন্নাথ”!তবে গল্পটি শুরু করবার আগে প্রবাদটির সম্পর্কে কিছু কথা বলে নেওয়া ভাল ।
“ঠুঁটো জগন্নাথ”-ঠুঁটো প্রকৃত অর্থে হস্তহীন, অকর্মণ্য বা অক্ষম বেক্তি বিশেষ এবং জগন্নাথ অর্থে পুরীর মন্দিরের বিষ্ণুমূর্তিকে বোঝান হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত প্রবাদ বাক্যটির ব্যাবহারিক অর্থ হল নিজেকে শক্তিমান বলে বিবেচনা করলেও কাজের বেলায় সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় বা কুঁড়েমি করে চলা এমন বেক্তিবিশেষ ।


( এই সেই বিখ্যাত জগন্নাথ মন্দির । পুরী , ভারত )
আর বেশী দেরী না করে জেনে নি কেন বিশ্ব প্রসিদ্ধ পুরীর জগন্নাথ দেবের মূর্তির হাত এবং পা নেই ! প্রাচীন কাল থেকে একটা প্রচলিত কাহিনী আছে এর পেছনে । ঘটনাটি বহু দিন আগের সত্যযুগের ঘটনা যে সময়ে স্বর্গের দেবতারা মানুষ রুপে প্রায়ই মর্তে(পৃথিবী) ভ্রমন করতে আসতেন । আর দেবতারা মর্তে আসা মানেই নানা অলৌকিক ঘটনা ।এই ঘটনাটাও সেই রুপ একটি বলতে পারেন। সেই সত্যযুগে ইন্দ্রদ্যম্নু নামে এক রাজা ছিলেন । রাজা হলেও তিনি ছিলেন খুবই ধার্মিক। একবার তিনি মনে করলেন বিষ্ণুমূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজা করবেন। সেই মত তিনি একটি মন্দির স্থাপন করলেন , কিন্তু ঠিক কি প্রকারের বিগ্রহ তিনি স্থাপন করবেন তা কিছুতেই ঠিক করতে পারলেন না। এখানে বলে রাখা ভাল বিষ্ণু অর্থে ব্যাপক অথবা পৃথিবীর পালনকর্তাকে বোঝান হয়েছে। তা যে প্রসঙ্গে বলছিলাম, রাজা ইন্দ্রদ্যম্নু তো কিছু স্থির করতে না পেরে একাকী সেই মন্দির মধ্যে ধ্যান করতে লাগলেন । এই ভাবে কিছুকাল অতিবাহিত হবার পর তিনি যখন নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়েন তখন স্বপ্নাদেশে দেখলেন যে স্বয়ং বিষ্ণু তাকে দেখা দিয়ে বলছেন , তোমার ভক্তিতে আমি খুশী হয়েছি , তুমি আমার কৃষ্ণ রুপ প্রতিষ্ঠা করেই পূজা কর । আরও বললেন যে আজ ভোরে সুমুদ্রে শঙ্খ আঁকা একটুকরো কাঠ ভেসে আসছে , তুমি সেই কাঠটি তুলে আমার মূর্তি প্রস্তুত কর ।

স্বপ্নাদেশ পেয়ে রাজা সকালে সুমুদ্র তিরে গিয়ে সেই রকমই ভাসমান কাঠ এর সন্ধান পেলেন ।তিনি আনন্দে অভিভূত হয়ে সেই বৃহৎ কাষ্ঠ খণ্ডটিকে তুলে আনলেন । কিন্তু বিড়ম্বনা শুরু হল তার পর , কেউই সেই কাঠটিকে কাটতে পারল না । এমন সময়ে এক ব্রাহ্মনের আগমন ঘটল, তিনি বললেন তোমরা বললে আমি আমার একজন পরিচিত খুব বড় শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে এই কাজটি সম্পূর্ণ করে দিতে পারি , যেমন চাইবে তিনিই তোমাদের পছন্দ মত মূর্তি প্রস্তুত করে দেবেন, রাজা তার কথায় রাজী হয়ে গেলেন । শিল্পী এসে বললেন তিনি মূর্তি বানাবেন কিন্তু এক শর্তে ! রাজা জানতে চাইলে তিনি বললেন , তিনি মন্দিরের দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে একাকী কাজ করবেন , যদি এই সময়ে কেউ মন্দিরের দরজা খোলেন বা কোন প্রকার বিঘ্নের সৃষ্টি করেন তাহলে তক্ষুনি কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। রাজা তার কথায় সম্মত হলেন । এই রুপ মূর্তি তৈ্রী হতে থাকল , কিন্তু বিধি বাঁধা হয়ে দাঁড়াল ! দিনের পর দিন কেটে গেলেও মন্দিরের দরজা খোলে না , শেষে রানি কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে নিজেদের প্রতিজ্ঞার কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে হঠাৎ মন্দিরের দ্বার খুলে ফেললেন । মন্দিরে প্রবেশ করে রানি দেখলেন কোথায় শিল্পি ! অসমাপ্ত মূর্তি পড়ে আছে । হাত ,পা তখন গড়া হয় নি । রাজা তো খুবই কাতর হয়ে পরলেন আর রানিরও অনুশোচনার শেষ থাকল না ।


( জগন্নাথ বিগ্রহ )
সেই রাতেই রাজা ইন্দ্রদ্যম্নুকে বিষ্ণু স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললেন যে , তিনিই সয়ং ব্রাহ্মনের বেশে এবং শিল্পীর বেশে বিশ্বকর্মাকে দিয়ে মূর্তি গড়াছিলেন । এখন আর কোন উপায় নেই ঐ হাত , পা ছাড়া মূর্তিই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করে রাজাকে পূজা করতে হবে । শেষ পর্যন্ত তাই করলেন রাজা ।
তাই পুরীর জগান্নাথ বিগ্রহের হাত , পা নেই ।
এই কাহিনী থেকেই লোক মুখে এই প্রবাদ বাক্যটি বাংলা ভাষাকে আরও পরিপূর্ণ এবং সমাদৃত করেছে । ।



সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×