গল্পটা আমার এক খালুর। দশ বারো বছর
আগে কোন এক আড্ডায় তিনি গল্পটা
করেছিলেন। ঘটনাটা সেভাবেই তুলে
ধরছি.... তখন খালু মাত্র নতুন গাড়ী
কিনেছেন। সময় সুযোগ পেলেই এদিক
সেদিক বেড়াতে বের হোন। সেইবার
তিনি তার এক পুলিশ বন্ধুকে সাথে নিয়ে
ঢাকার বাইরে কোথায় যেন বেড়াতে
গিয়েছিলেন। সারা দিন বেড়িয়ে বেশ
রাত করেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া
হয়।
ড্রাইভিং করছিলেন খালু নিজেই, আর
পাশে বসা ছিল তার বন্ধু। রাত তখন ৩টা
কি ৪টা বাজে। ঢাকার কাছাকাছি চলে
এসেছেন প্রায়, আশুলিয়া পার হচ্ছেন।
গ্রীষ্মের রাত ছিল বলে চারদিকে
পরিষ্কার মৃদুমন্দ বাতাস বইছিল, হালকা
চাদের আলো ছড়িয়ে ছিল প্রান্তর জুড়ে।
গাড়ী তখন আশুলিয়া ব্রীজের উপরে
উঠেছে। হঠাৎ মনে হল গাড়ীটা যেন
নিকষ কালো এক অন্ধকারে ডুকে গেল।
চারদিকে গাঢ়ো ধূসর কুয়াসা। কিছুই
দেখা যাচ্ছে না।
তারা হতভম্ব হয়ে গেল। বুঝে পেলেন না
গরমের ঋতুতে হঠাৎ এই কুয়াসা এল কোথা
থেকে। এতক্ষনতো চারদিক চাদের
আলোয় ঝলমল করছিল!! সেই আলোয়
দূরদূরান্ত পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। কি হবে
তারা বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ভয়ের
একটা শীতল স্রোত তাদের গা বেয়ে
নেমে গেল। মনে হল এক্ষুনি বুঝি গাড়ীটা
পানিতে পড়তে যাচ্ছে!!!
খালুর বন্ধু খালুকে সাহস দিলেন। বললেন
আপনি যেভাবে গাড়ী চালাচ্ছিলেন
ঠিক সেভাবেই সোজা চালিয়ে যান।
ডানে বামে যাবার কোন দরকার নাই।
সেই সাথে তারা দুজনেই ছোটবেলায়
শেখা সব রকম দোয়া দরুদ অনর্গল পড়তে
থাকলেন। এভাবে বেশ কিছু ক্ষন চলে
গেল। আল্লাহর অশেষ রহমতে এক সময়
দেখলেন তারা কুয়াসা ভেদ করে
আলোকিত জায়গায় চলে এসেছেন।
কোথায় কুয়াসা!!! পিছন ফিরে তাকাবার
আর সাহস হয় নাই। কিন্তু এক বিন্দু
পরিমান কুয়াসা আশে পাশে নেই।
রুদ্ধ শ্বাসে গাড়ী ছুটিয়ে ঢাকা এসে
তবেই হাফ ছেড়ে বাচলেন। সৃষ্টি
কর্তাকে ধন্যবাদ দিলেন যে তারা বেচে
আছেন আর পানিতে পড়ে জীবন্ত সমাধি
হতে হয়নি। ঘটনাটা পরবর্তীতে তিনি দুই
একজনের সাথে আলাপ করেছিলেন।
তারা বলল জায়গাটা নাকি খারাপ!!!
এরপর আর কখনই তিনি রাত বেশী হয়ে
গেলে ঐ পথ দিয়ে ফিরতেন না। অনেক
খানি ঘুরে হলেও বাড়ী ফিরতেন।