somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কান্ডারি অথর্ব
আমি আঁধারে তামাশায় ঘেরা জীবন দেখেছি, আমার বুকের ভেতর শূণ্যতা থেকে শূণ্যরা এসে বাসা বেঁধেছে, আমি খুঁজেছি তোমাকে সেই আঁধারে আমার মনের যত রঙ্গলীলা; আজ সাঙ্গ হতেছে এই ভবের বাজারে।

নান্দনিক নিষ্ঠুর ভাস্কর্য শিল্পকর্ম

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





সভ্যতার প্রারম্ভকাল থেকেই মানুষ তার শৈল্পিক মনের বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে। পাহাড়ের গুহায় বসবাস করা মানুষ গুহার দেয়ালে খোদাই করে তাদের যাপিত জীবনকে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে রাখতো। সভ্যতার ক্রমবিকাশে লৌহ, ব্রোঞ্জ, তামা, স্বর্ণ, মাটি, বেলেপাথর, চুনাবালি, কাঠ ইত্যাদির ব্যবহারে মানুষ ঠিক একই ভাবে সভ্যতাকে ধারণ করে রাখতে সচেষ্ট থেকেছে। কালে কালে এই শিল্প রুপ নিয়েছে ভাস্কর্য শিল্পে। গ্রীক সভ্যতা থেকে শুরু করে রোমান, ইনকা, অ্যাজটেক, মিশরীয়, সিন্ধু, হরপ্পা, মহেঞ্জোদাড়ো ইত্যাদি প্রায় সকল সভ্যতার মানুষকেই দেখা গেছে এই ভাস্কর্য শিল্পের চর্চা করতে। কখনও দেব-দেবী, কখনও সমাজের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ কিংবা কখনও প্রকৃতি ও প্রাণী জগত ধারণ করা হয়েছে ভাস্কর্য রুপে। ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ইত্যাদি কোন কিছুই বাদ যায়নি ভাস্কর্য হিসেবে ধারণ করে রাখার প্রয়াস থেকে। কালে কালে ভাস্কর্য মানুষ গৃহস্থলির সৌখিন শিল্প সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। হোক সেটা বিমূর্ত অথবা হোক কোন মনুষ্য মূর্তি কিংবা মৎস্যকন্যা মানুষের শৈল্পিক মন জুড়ে রয়েছে ভাস্কর্য শিল্প।



মানুষ যতই নানারকম ভাস্কর্য গড়ে তুলুক না কেন; আজ পর্যন্ত কারও পক্ষেই সম্ভব হয়নি এসব প্রাণহীন শিল্পকে প্রাণ দেয়ার। কিন্তু যদি প্রাণনাশ করে ভাস্কর্য গড়ে তোলা যায় তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয় ? মানুষের অদম্য শৈল্পিক মনের তাগিদ এই অদ্ভুত কর্মটিও সাধন করেছে। রুপকথার গল্পে দেখা যেত শয়তান যাদুকর তার যাদুবলে মানুষকে পাথরের মূর্তি বানিয়ে ফেলতো। কিন্তু বাস্তবে মানুষকে পাথরের মূর্তি না বানালেও প্রাণীর অস্তিত্ব ধ্বংস করে মানুষ ভাস্কর্য নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছে। চমৎকার দৃষ্টিনন্দন অদ্ভুত এইসব বিমূর্ত শৈল্পিক ভাস্কর্য মানুষ ব্যবহার করছে সৌখিন সামগ্রী হিসেবে।



ভয়ানক নিষ্ঠুর এই ভাস্কর্য শিল্পের নাম অ্যালুমিনিয়াম ফায়ার অ্যান্ট কলোনি কাস্টিং। মূলত পিঁপড়ার জীবনের বিনিময়ে প্রস্তুত করা হয় এসব ধাতব ভাস্কর্য। এসব অদ্ভুত বিমূর্ত ভাস্কর্য তৈরি করা হয় মূলতঅ্যালুমিনিয়াম গলিয়ে। প্রথমে ধাতব অ্যালুমিনিয়াম খন্ড অত্যন্ত উচ্চতাপে গলানো হয়। এরপর তা ঢালা হয় মাটিতে গড়ে তোলা পিঁপড়ার ঢিবিতে যেখানে পিঁপড়ার বসবাস। গর্ত পূর্ণ হয়ে গেলে গলিত অ্যালুমিনিয়াম ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বাঁধা পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। পিঁপড়ার গর্তের প্রত্যেকটা অলিগলিতে উত্তপ্ত গলিত অ্যালুমিনিয়াম ঢুকে তৈরি হয় অদ্ভূত এক কোরালের মতো আকৃতি। যথেষ্ট শক্ত হয়ে গেলে চার পাশের মাটি খুঁড়ে পাওয়া বস্তুটি তুলে আনা হয়। এরপর এতে পানির ঝাপটা দিয়ে ধুয়ে ফেললেই বেরিয়ে আসে অসাধারণ ভাস্কর্য। পিঁপড়ার উপকারিতার দিকের চেয়ে ক্ষতিকারক হিসেবেই ধারনা করে মূলত এই ভাস্কর্য শিল্পের প্রচলন হয়। দেখা যায় পিঁপড়ার বসত ধ্বংসের জন্য জমিতে ক্ষতিকার রাসায়নিক কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। অনেক সময়ই যা জমির উর্বরতা নষ্ট করে। কিন্তু প্রকৃতিতে যে কোন কিছুই অকারণে নয়। জীব বৈচিত্রের অংশ হিসেবে প্রকৃতিতে যে; সব কিছুই প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে চলে, এই ক্ষেত্রে এই জ্ঞান আর প্রযোজ্য হয়নি। পিঁপড়ারও প্রাণ থাকা স্বত্বেও মানুষের শিল্প সাধনার কাছে তাদের প্রাণও তুচ্ছ হয়ে ধরা দিয়েছে। যার বাজার মূল্য সর্বোচ্চ প্রায় ৩৭৫ ডলার।

সচিত্র অ্যালুমিনিয়াম ফায়ার অ্যান্ট কলোনি কাস্টিং প্রক্রিয়া

প্রথমে মাটিতে গড়ে তোলা একটি পিঁপড়ার ঢিবিতে উত্তপ্ত গলিত অ্যালুমিনিয়াম ঢেলে দেয়া হচ্ছে।







ঠাণ্ডা হয়ে জমাট বেঁধে যথেষ্ট শক্ত হয়ে যাওয়ার পর শুরু হলো মাটি খোঁড়া।











মাটির অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত পিঁপড়ার বসতের অ্যালুমিনিয়ামের ভাস্কর্যে রুপ লাভ।







এবার মাটির ভেতর থেকে তুলে এনে পানি দিয়ে মাটি পরিষ্কারের পালা।





পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পর বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত ভাস্কর্য।



পিঁপড়ার প্রাণের মূল্য যাই হোক না কেন, মানুষের শৈল্পিক মন ঠিক একই প্রক্রিয়ায় এই অ্যালুমিনিয়ামের শিল্প কর্ম বিকশিত হয়েছে আরও নানা ভাবেই। এই শিল্প কর্ম দেখলে অবশ্য এটা মেনে নেয়া সম্ভব হয়না কিছুতেই যে, শুধুমাত্র পিঁপড়ার ক্ষতিকর দিকের কথা ভেবেই এমন ভাস্কর্যের সৃষ্টি। তরমুজ একটি সুস্বাদু খাবার হলেও তরমুজের বীচি দিয়েও তৈরি করা হচ্ছে এমন অদ্ভুত ভাস্কর্য। যার নামঅ্যালুমিনিয়াম ফায়ার ওয়াটারমেলন বা তরমুজ কাস্টিং। হয়তবা তরমুজের বীচি যেহেতু মানুষের খাদ্য নয়, তাই এর অপ্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে এমন অদ্ভুত চমৎকার দৃষ্টিনন্দন বিমূর্ত শৈল্পিক সব ভাস্কর্য।

সচিত্র অ্যালুমিনিয়াম ফায়ার ওয়াটারমেলন বা তরমুজ কাস্টিং প্রক্রিয়া

প্রথমে একটি তরমুজের উপরাংশে শক্ত পাইপ দিয়ে গর্ত করে নেয়া হচ্ছে।



পোষা কুকুরকে দিয়ে তরমুজের স্বাদ পরীক্ষা করিয়ে নেয়া হচ্ছে।



এবার ধাতব অ্যালুমিনিয়াম উচ্চতাপে গলিয়ে তরমুজের ভেতর ঢালার পালা।









ঠাণ্ডা হয়ে এলে এবার তরমুজ কাটাকাটির পালা। তরমুজতো নয় যেন লোহার কোন বল কাটার কসরৎ চলছে।















তরমুজের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা তরমুজের বীচির অ্যালুমিনিয়ামের ভাস্কর্যে রুপ লাভ।





এমনকি এই শিল্প সাধন থেকে বাদ যায়নি পেঁপেও





কতিপয় নান্দনিক নিষ্ঠুর ভাস্কর্য













রহস্যাবৃত এই পৃথিবীতে কত বিচিত্র মানুষ আর কতইনা বিচিত্র মানুষের শিল্প সাধন !!



তথ্যসূত্রঃ

www.anthillart.com

www.isciencetimes.com

www.buzzfeed.com

www.ebay.com
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৭
৫২টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×