অফিসে এসে পত্রিকা পড়া হয়না কখনোই। কিন্তু আজ কোন ব্যস্ততা না থাকায় অনেকটা অনিচ্ছার সাথেই হাতে নিয়েছিলাম প্রথম আলো। না নিলেই বোধ হয় ভালো হত। ফারুক ওয়াসিফ আজ যে লেখাটি প্রথম আলোতে লিখেছেন তা পড়ে এই মধ্য বয়সে এসেও চোখের পানি সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ফারুক ওয়াসিফের লেখাটা আজ আরেকবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো এই দেশ আজ এক বিভীষিকাময় এক দেশ, এই দেশ আজ মৃত্যুপুরী। বাকশালী হায়েনাদের লালিত-পালিত সন্ত্রাসীরা এই দেশকে আজ নরক বানিয়ে দিয়েছে।
ফারুক ওয়াসিফ লেখাটি লিখেছেন নারায়নগঞ্জে খুন হওয়া মেধাবী কিশোর ত্বকীকে নিয়ে। লেখাটা পড়তে পড়তে আতঙ্কে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। কি অমানবিক, কি বর্বর। কোন মানুষ এমন করতে পারে? কোন মানুষ পারে এরকম একটা ছেলেকে মেরে ফেলতে? নিজের কথা মনে পড়ে গেলো। আমি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। যদি এরকম কিশোর বয়সে আমাকে এভাবে মেরে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়া হত , আমার বাবা-মা কি বেঁচে থাকতেন? ত্বকীর বাবা-মা কিভাবে বেঁচে আছেন আমি জানি না। শোকে তাদের স্বাভাবিক বোধ এখন ও আছে কিনা আমি জানি না।
এরকম একটা অসাধারন মেধাবী কিশোরকে যারা হত্যা করলো, তারা আজো নারায়নগঞ্জে সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। হত্যা না বরং বর্বরতার শেষ সীমা যারা অতিক্রম করেছে, সেই পশুরা আওয়ামীলিগের সোজা কথায় আওয়ামীলিগের নেত্রীর ছায়ায় এখনো অন্যদের হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা প্রকাশ্যে নির্যাতন কেন্দ্র খুলে মানুষ মারছে। নূন্যতম বিবেক, নূন্যতম মনুষ্যত্ব যাদের মধ্যে আছে তারা কি কখনো কোনভাবে এই কিশোর ছেলেটার ছবি দেখার পর তার হত্যাকারিদের সাপোর্ট দিতে পারে? মানুষ পারে না, কিন্তু আওয়ামীলিগ পারে। বাকশালী কুকুরেরা পারে। সেই কারনেই ত্বকী হত্যায় কোন বাকশালী কুকুরকে , বুদ্ধিজীবি নামের বেশ্যাজীবিকে মুখ খুলতে দেখি না।
বাকশালীদের আমলে ত্বকী হত্যার কোন বিচার হবে না, তা আমি জানি। কারন এই বাকশালীরাই জয়নাল হাজারী, লক্ষীপুরের তাহের তৈরি করেছে। ত্বকীর মত মানুষ বাকশালীদের দরকার নেই। বাকশালীদের দরকার পশু শামীম ওসমান, তাহের, হাজারীদের। নাহলে ক্ষমতায় থাকার খায়েশ কিভাবে পূরন হবে।
আজ এই দেশে প্রকাশ্যে গুলি চালিয়ে শত শত মানুষ মেরে ফেলা হয়, ফাঁসির আসামিকে মাফ করে দেয়া হয়, খুনের অভিযু্ক্তকে রাজনৈতিক বিবেচনায় ছেড়ে দেয়া হয়, ত্বকীরা লাশ হয়ে নদীতে ভাসে আর সেই লাশের উপর উগ্র উল্লাসে হাসতে থাকে বাকশালী হায়েনারা। ক্ষমতায় থাকার খায়েশ, সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের ইচ্ছা, দুর্নীতির শেষ সীমা অতিক্রমের বাসনায় বাকশালীরা আজ এই দেশকে মৃত্যুপুরী বানিয়েছে। সেই মৃত্যুপুরীতে আমার ভাই ত্বকীর লাশ নদীতে ভাসিয়ে বাকশালীরা উল্লাস করবে, খুনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে এটাই স্বাভাবিক।
আমি নিরীহ সাধারন মানুষ। আমার কোন ক্ষমতা নেই। কিন্তু আজ ত্বকী ছেলেটাকে নিয়ে লেখাটা পড়ে, ওর ছবিটা দেখে অন্তর থেকে অভিশাপ দিলাম- বিধাতা যারা এরকম অন্যায়-জুলুম কায়েম করেছে আমার মত নিরীহ-মির্যাতিতদের উপর , তুমি তাদের উপযুক্ত বিচার করো, তুমি তাদের ক্ষমা করো না। কখনো না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬