somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনা সাক্ষী হয়েছিল যে ভালবাসার

২৩ শে মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দুই পাতা ঘুমের বড়ি নিয়ে বসে আছে পুলক । নিজেই এখন নিজের সবচে বড় শত্রু । তাই নিজের উপরই বদলা নেবে আজ । শেষ করে দেবে নিজেকে । সেই সাথে শেষ হয়ে যাবে সবকিছু । মরার আগে ভেবেছিল মিথিলার সাথে শেষ কথা বলবে । কি ভেবে আর কল করেনি ।
খুব অস্বস্তি লাগছে ওর । বড়ির পাতাজোড়া বিছানায় রেখে পায়চারি করছে সারা ঘরে । বেশ গরম । দরদর করে ঘামছে পুলক । দক্ষিণ পাশের জানালা খুলে দিতেই আলো নেভানো ঘরটা ভরে গেল মিষ্টি জেছনায় । শীতল একটা বাতাসও আসছে । এখন আর তেমন গরম লাগছে না । “যাক, শান্তিতে মরা যাবে এবার” হালকা স্বরে বলল পুলক ।

একটা একটা করে বড়ি খুলে নিচ্ছে পাতা থেকে আর ভাবছে পুরোনো দিনগুলোর কথা । মিথিলার কথা । ওদের ভালবাসার কথা । মিথিলার সাথে পুলকের পরিচয় কলেজ লাইফ থেকেই । এক ক্লাসে পড়ায় প্রথমে বন্ধুত্ব । আস্তে আস্তে সেটা ভালবাসায় পরিণত হয় । অনেক ভালবাসত ওরা একে অপরকে ।
সব ঠিক চললেও কিছু একটা ঠিক ছিলনা । মিথিলার আস্তে আস্তে বদলে যাওয়াটা সহ্য করতে না পেরে বলেই দিল পুলক ।

- তোমার সমস্যাটা কি ?
- আমার কোন সমস্যা নেই
- কিছুতো একটা হয়েছে ।
- যেটা জানো না, সেটা নিয়ে কানের কাছে প্যান প্যান করো নাতো । ভাল লাগছেনা ।

পুলক কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ‘ধ্যাত্” বলে উঠে চলে গেল মিথিলা । কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা । ভালবাসার মানুষের ছোট ছোট পরিবর্তনও চোখ এড়ায়না । খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো, ওর বন্ধু রবিনের সাথে কিছু একটা চলছে মিথিলার । অথচ পুলকই ওদের পরিচয় করিয়ে দেয় । আশাহত হয়ে ফিরে আসে পুলক ।

- - -

সব বড়ি খোলা শেষ । এবার পেটে চালন করাটা বাকি । চারপাশটা অন্তর দিয়ে একটু অনুভব করে নিচ্ছে পুলক । এত পরিচিত সবকিছু ! একটু পরেই সব অচেনা হয়ে যাবে । অচেনা হয়ে যাবে প্রিয় মানুষগুলোও । কেউ আর চিনবেনা তখন । মিথিলার মত । এতদিনের চেনা পুলককে যেভাবে পর করে দিল । ঠিক সেভাবে । ভাবতে ভাবতেই কেঁদে ফেলল পুলক । আর ভাবতে পারছেনা । এবার যাবার পালা ।

উঠে গিয়ে গ্লাস ভর্তি করে পানি নিয়ে এলো ।
এক হাতে গ্লাস । আর এক হাতে বড়ি । চোখ বুজে একটা লম্বা নিশ্বাস নিল । হাতটা উঁচু করে এবার খেতে যাবে । মনে হল, সামনে থেকে কেউ একজন বলছে,
“আমাকে ছেড়ে যাবা ?”
গলাটা মিথিলার ।
চমকে চোখ মেলেই দেখল কেউ নেই । সবই কল্পনা । মিথিলা আর ফিরবেনা । আজ ওর বিয়ে । রবিনের সাথে ।

আর কিছু না ভেবে মুখে পুরে নিল সব বড়িগুলো । পানি দিয়ে পাঠিয়ে দিল পেটের ভিতর । এখন বাকি কাজটুকু ওরাই করবে । পুলকের কাজ শেষ । অনেকটা ফ্রি লাগছে এখন । সব কাজ শেষ । এখন লম্বা একটা ঘুম । শুধু ঘুম । বালিশটা জানালার কাছে রেখে শুয়ে পড়ল পুলক । চাঁদটা আগের জায়গায় নেই । সরে এসেছে খানিকটা । তবে জোছনা বিলাচ্ছে এখনও । শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখছে পুলক । কালো মেঘগুলো বয়ে যাচ্ছে চাঁদটার কিনারা বেয়ে । মনে হচ্ছে ছুটে চলছে চাঁদটা।
চোখজোড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । তবুও জোর করে মেলে দিয়েছে পুলক । মিষ্টি জোছনা দেখবে বলে । সবকিছু ঝাপসা লাগছে এখন । মাথার ভিতর চিনচিনে একটা ব্যাথা । মিথিলার কথা ভাবছে ও । আজ ওর বিয়ে । স্বামী নিয়ে ভালই আছে । ভালই থাকবে । বিড়বিড় করে বলতে লাগল পুলক,
“তোমার পাগলটা আর নেই । সুখে থেকো কিন্তু” ।
ওর কথা একটু দুর থেকেই হয়ত মিলিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু বালিশে পড়া জোছনারা ঠিকই শুনে নিয়েছে ।

চোখজোড়া ভিজে গেছে । কিছুটা কান্না গাল বেয়ে বালিশে পড়ল । ভিজে গিয়েছে জায়গাটা l তক্ষুণি হয়ত দেহ থেকে মুত্তি নিয়েছে পুলক ।

আর কেউ সাক্ষী না থাকলেও সাক্ষী ছিল আকাশের চাঁদটা ।

কালো মেঘগুলো বয়ে যাচ্ছে চাঁদটার কিনারা বেয়ে । হয়তো ছুটে চলছে চাঁদটা । মিথিলার কাছে । ওর কানে কানে গিয়ে বলতে,

“তোমার পাগলটা আর নেই । সুখে থেকো কিন্তু”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×