দুই পাতা ঘুমের বড়ি নিয়ে বসে আছে পুলক । নিজেই এখন নিজের সবচে বড় শত্রু । তাই নিজের উপরই বদলা নেবে আজ । শেষ করে দেবে নিজেকে । সেই সাথে শেষ হয়ে যাবে সবকিছু । মরার আগে ভেবেছিল মিথিলার সাথে শেষ কথা বলবে । কি ভেবে আর কল করেনি ।
খুব অস্বস্তি লাগছে ওর । বড়ির পাতাজোড়া বিছানায় রেখে পায়চারি করছে সারা ঘরে । বেশ গরম । দরদর করে ঘামছে পুলক । দক্ষিণ পাশের জানালা খুলে দিতেই আলো নেভানো ঘরটা ভরে গেল মিষ্টি জেছনায় । শীতল একটা বাতাসও আসছে । এখন আর তেমন গরম লাগছে না । “যাক, শান্তিতে মরা যাবে এবার” হালকা স্বরে বলল পুলক ।
একটা একটা করে বড়ি খুলে নিচ্ছে পাতা থেকে আর ভাবছে পুরোনো দিনগুলোর কথা । মিথিলার কথা । ওদের ভালবাসার কথা । মিথিলার সাথে পুলকের পরিচয় কলেজ লাইফ থেকেই । এক ক্লাসে পড়ায় প্রথমে বন্ধুত্ব । আস্তে আস্তে সেটা ভালবাসায় পরিণত হয় । অনেক ভালবাসত ওরা একে অপরকে ।
সব ঠিক চললেও কিছু একটা ঠিক ছিলনা । মিথিলার আস্তে আস্তে বদলে যাওয়াটা সহ্য করতে না পেরে বলেই দিল পুলক ।
- তোমার সমস্যাটা কি ?
- আমার কোন সমস্যা নেই
- কিছুতো একটা হয়েছে ।
- যেটা জানো না, সেটা নিয়ে কানের কাছে প্যান প্যান করো নাতো । ভাল লাগছেনা ।
পুলক কিছু বলতে যাবে, তার আগেই ‘ধ্যাত্” বলে উঠে চলে গেল মিথিলা । কেমন যেন হয়ে গেছে মেয়েটা । ভালবাসার মানুষের ছোট ছোট পরিবর্তনও চোখ এড়ায়না । খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো, ওর বন্ধু রবিনের সাথে কিছু একটা চলছে মিথিলার । অথচ পুলকই ওদের পরিচয় করিয়ে দেয় । আশাহত হয়ে ফিরে আসে পুলক ।
- - -
সব বড়ি খোলা শেষ । এবার পেটে চালন করাটা বাকি । চারপাশটা অন্তর দিয়ে একটু অনুভব করে নিচ্ছে পুলক । এত পরিচিত সবকিছু ! একটু পরেই সব অচেনা হয়ে যাবে । অচেনা হয়ে যাবে প্রিয় মানুষগুলোও । কেউ আর চিনবেনা তখন । মিথিলার মত । এতদিনের চেনা পুলককে যেভাবে পর করে দিল । ঠিক সেভাবে । ভাবতে ভাবতেই কেঁদে ফেলল পুলক । আর ভাবতে পারছেনা । এবার যাবার পালা ।
উঠে গিয়ে গ্লাস ভর্তি করে পানি নিয়ে এলো ।
এক হাতে গ্লাস । আর এক হাতে বড়ি । চোখ বুজে একটা লম্বা নিশ্বাস নিল । হাতটা উঁচু করে এবার খেতে যাবে । মনে হল, সামনে থেকে কেউ একজন বলছে,
“আমাকে ছেড়ে যাবা ?”
গলাটা মিথিলার ।
চমকে চোখ মেলেই দেখল কেউ নেই । সবই কল্পনা । মিথিলা আর ফিরবেনা । আজ ওর বিয়ে । রবিনের সাথে ।
আর কিছু না ভেবে মুখে পুরে নিল সব বড়িগুলো । পানি দিয়ে পাঠিয়ে দিল পেটের ভিতর । এখন বাকি কাজটুকু ওরাই করবে । পুলকের কাজ শেষ । অনেকটা ফ্রি লাগছে এখন । সব কাজ শেষ । এখন লম্বা একটা ঘুম । শুধু ঘুম । বালিশটা জানালার কাছে রেখে শুয়ে পড়ল পুলক । চাঁদটা আগের জায়গায় নেই । সরে এসেছে খানিকটা । তবে জোছনা বিলাচ্ছে এখনও । শুয়ে শুয়ে চাঁদ দেখছে পুলক । কালো মেঘগুলো বয়ে যাচ্ছে চাঁদটার কিনারা বেয়ে । মনে হচ্ছে ছুটে চলছে চাঁদটা।
চোখজোড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে । তবুও জোর করে মেলে দিয়েছে পুলক । মিষ্টি জোছনা দেখবে বলে । সবকিছু ঝাপসা লাগছে এখন । মাথার ভিতর চিনচিনে একটা ব্যাথা । মিথিলার কথা ভাবছে ও । আজ ওর বিয়ে । স্বামী নিয়ে ভালই আছে । ভালই থাকবে । বিড়বিড় করে বলতে লাগল পুলক,
“তোমার পাগলটা আর নেই । সুখে থেকো কিন্তু” ।
ওর কথা একটু দুর থেকেই হয়ত মিলিয়ে গিয়েছিল । কিন্তু বালিশে পড়া জোছনারা ঠিকই শুনে নিয়েছে ।
চোখজোড়া ভিজে গেছে । কিছুটা কান্না গাল বেয়ে বালিশে পড়ল । ভিজে গিয়েছে জায়গাটা l তক্ষুণি হয়ত দেহ থেকে মুত্তি নিয়েছে পুলক ।
আর কেউ সাক্ষী না থাকলেও সাক্ষী ছিল আকাশের চাঁদটা ।
কালো মেঘগুলো বয়ে যাচ্ছে চাঁদটার কিনারা বেয়ে । হয়তো ছুটে চলছে চাঁদটা । মিথিলার কাছে । ওর কানে কানে গিয়ে বলতে,
“তোমার পাগলটা আর নেই । সুখে থেকো কিন্তু”