somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানোয়ারও কি এত নীচ হতে পারে!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার খুব কুকুর পোষার সখ। ছোটবেলা থেকেই এই সখটা ছিলো এখন বড়বেলায়ও আছে। আগে আমাদের কাচা পিড়ার ঘর ছিলো। যখন স্কুলে পড়তাম তখন কুকুর ছানা এনে ঘরের পিড়া খুড়ে গুহা বানিয়ে রাখতাম। বড় হলে কোনটা রোগে আক্রান্ত হয়ে বা বয়সের কারনে মারা যেত। আবার আনতাম, লালন পালন করতাম। তবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লড়ে যেতাম, পশু হাসপাতালে নিয়ে যেতাম, চিকিৎসা করাতাম, মৃত্যু শেষে মাটি দিয়ে রাখতাম। হৃদয়ে তখন বেশ ব্যথা অনুভব করতাম। কুকুরের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে বাড়ির সবাই অপছন্দ করলেও আমাকে ভালোবাসে বলে সহ্য করতো। সেই পোষা কুকুর যদি কেউ বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তখন কেমন লাগে? সেটা যদি প্রাপ্ত বয়স্ক না হয়ে ছোট্ট বাচ্চা কুকুর হয়, যে কিনা সারাদিন পায়ের কাছে ঘুরঘুর করে, খাবার দেখলে নাচানাচি করে, একটু আদরের আশায় পায়ের কাছে গড়াগড়ি খায়, সেই কুকুর ছানাটা যদি কোন মানুষরূপি পশু বিষ খাইয়ে মেরে ফেলে তখন হৃদয়ের অবস্থাটা কেমন হয় ভাবাযায়? তাদের পশু বা জানোয়ার বলা যায় কিনা আমি জানি না। কারন জানোয়াররা কি এতটা অমানবিক-হিংস্র হয়?
আমার বন্ধু ডাক্তার মাহবুবুল হকের বাড়িতে একটা মেয়ে কুকুরের বাচ্চা আসছিলো অনেকদিন আগে। শত চেষ্টায়ও যখন তাড়াতে পারেনি তখন ওটা ওখানেই বড় হতে থাকলো। আস্তে আস্তে কুকুরটি তার প্রভুভক্তির প্রমান দিলো যাকে ওরা টমি ডাকতো। প্রথমে অবজ্ঞা করলেও টমি সকলের ভালোবাসা আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছে। এবছর টমি পাঁচটি ছানা পোষব করেছে এবং পাঁচটিই পুরুষ। আমি একটা নেয়ার আগ্রহ দেখালে একটু বড় হওয়ার পর নেয়ার জন্য বললো। আমি দেখে লাল একটা ছানা নিয়ে নিলাম। গায়ের রং লাল হওয়ায় বাড়ির সবাই লালু বলেই ডাকে। লালু লালু ডাকায় ও বুঝে গেছে ওর নাম লালু। লালু বলে ডাক দিলেই সে দৌড়ে এসে হাজির হয়। আমি লালুকে এনে যতটা না খুশি হয়েছি তার চেয়ে বেশি খুশি আমার মেয়ে প্রিয়ন্তী, বড় ভাতিজা পাপন আর একদম ছোট ভাতিজা রাফান। ভাবি ও আমার স্ত্রী অপছন্দ করলেও খাবার দাবার দিতে কখনো কার্পন্য করেনি। লালুর জন্য হাড়-কাটাতো আছেই, ভাত মেখে লালুর নির্দিষ্ট প্লেটে ঠিকই দিতো।


কুকুর সর্বদা প্রভু ভক্ত প্রাণী এটা নতুন কিছু নয়। কথিত আছে কুকুর হলো সর্ব প্রথম মানুষের পোষমানা কোন প্রাণী। প্রভুর জন্য কুকুরের মমত্ববোধ নিয়ে অনেক ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করা যাবে না। আমার পোষা লালু অল্প ক’দিনে কতটা প্রভুভক্ত হয়েছিলো তার কিছু ঘটনা বলি। আমি রাতে বা দিনে যখনই বাড়ি ফিরি অন্তত দুশ মিটার দুর থেকে আমার মোটরসাইকেলের আওয়াজ পেয়ে বাড়ি থেকে এক দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে। এর পর রাস্তা থেকে আমার সাথে বাড়ি ঢুকতো। আমি কবুতর পোষতে পছন্দ করি। আমার কবুতরকে কাকে আক্রমন করলে লালু কাকের উপর ঝাপিয়ে পড়তো এবং চিৎকার চেচামেচি করতো যাতে আমরা বুঝতে পারি যে কোন বিপদ ঘটেছে। এমন ঘটনা অনেক যা হয়তো যারা কুকুর পোষেন তাদের ঘটনার সাথে মিলে যাবে।
তিন মাস পূর্বে লালুকে আমি বাড়িতে আনি। প্রথম প্রথম কয়েকদিন খুব কান্নাকাটি করতো। কান্নাকাটির অবশ্য অন্যতম কারন হলো রশি দিয়ে বেধে রাখা! বাড়িটা যখন ওর কাছে পরিচিত হয়ে গেছে তখন ছেড়েই দিয়েছিলাম। দরজার সিড়ির গোড়ায় শুয়ে থাকতো, কখনো পুকুর পাড়ে রোদের মধ্যে শুয়ে শুয়ে ঘুম দিতো। আমাকে দেখা মাত্র দৌড়ে পায়ের কাছে চলে আসতো। লালু একটু নবাবী সভাবের ছিলো। ডাল ভাত তার মুখে রুচতো না। মাংস ছাড়া সে ভাতও খেতে চাইতো না। তাই মাংসের ছাডি (মাংসের চর্বি-উচ্ছিষ্ট) লালুর জন্য রান্না করে দিতো আমার বড় বোন। সেই মাংসের ছাডি বক্সে ভরে ফ্রিজে রেখে দিতাম। ওখান থেকে নিয়ে ভাত মেখে দিতাম। লালু একটু রিষ্টপুষ্ট হয়েছে। গলা ছেড়ে ডাক দিতে শিখেছে। অপরিচিত কেউ বড়িতে ঢুকলে ঘেউ ঘেউ করতে শিখেছে। বাচ্চারা যেহেতু কুকুর ছানা পছন্দ করে, তেমনি কুকুর ছানাও বাচ্চাদের পছন্দ করে। বাড়ির আশে পাশের ছোট বাচ্চারা এসে লালুকে খুব আদর করতো। মাঝে মাঝে বাচ্চাদের সাথে বাড়ির বাইরে চলেও যেত। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ঠিকই চলে আসতো ওর নিজ। কিন্তু আজ যে ঘটনা ঘটে গেলো সেটা আমার ধারনায়ও ছিলো না। এমন একটা ঘটনার জন্য আমি মানসিক ভাবে প্রস্তুতও ছিলাম না।


আজ দুপুরে বাড়ি থেকে আমার বড় বোন ফোন দিলো। বাড়ি থেকে ফোন দিলে প্রথমেই আমার বুকটা একটু কেঁপে উঠে। আমাকে কেউ সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া ফোন দেয় না, আমিও দেই না। আমার মা অসুস্থ থাকতে বাড়ির ফোন পেলে বুক কেপে ওঠা শুরু হয়। মা এখন আর নেই। এখন বাবা অসুস্থ ঘরে। ফোন পেলেই মনে হয় কোন বিপদ নয়তো? বোনের ফোন পেয়ে রিসিভ করেই জানতে চাইলাম কি ব্যাপার আপা। আপা ফোনে জানালো, লালুকে কারা যেন বিষ খাইয়েছে। লালু আপার দরজার কাছে দৌড়ে এসে কিছুক্ষণ দপাদপি করে, কাকুতি মিনতি করে দৌড়ে চলে গেছে, এখন আর তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আপার কাছ থেকে ফোন নিয়ে আমার মেয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে একই কথা বললো। আমি বাড়ি যাওয়ার সাথে সাথে মেয়ে আমার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে অঝরে কান্না করছে আর লালুর কথা বলছে। মেয়ের কান্না দেখে আমিও আবেগতাড়িত হয়ে গেলাম। পোশাক পরিবর্তন করে বেরিয়ে পড়লাম লালুর খোঁজে। আমার পিছু নিলো আমার মেয়ে আর বড় ভাতিজা পাপন। যেদিকে লালু ছুটে গেছে সেদিক দিয়ে খুঁজতে গিয়ে দেখি পাশের বাড়ির বাগানের মধ্যে লালুর নিথর দেহ পড়ে আছে। নাড়া দিয়ে দেখি লালুর শরীরে প্রাণের অস্তিত্ব নেই। লালুর এভাবে শুয়ে থাকা দেখে হৃদয়টা ভেঙ্গে গেলো। আমার মেয়ে ও ভাতিজা দুজনেই কেঁদে ফেললো। আমি লালুকে ওখান থেকে তুলে নিয়ে আসলাম বাড়িতে। নিজেই মাটি খুড়ে লালুর দেহটা মাটিচাপা দিয়ে দিলাম। লালুকে মাটিচাপা দিয়ে আমি দাড়িয়ে থাকতে পারলাম না। পাশের একটা গাছের গুড়ি ছিলো তার উপর বসে পড়লাম। আমার গলা শুকিয়ে আসছে। পাপন এক গ্লাস পানি এনে দিলো। আমার দুই বোন, ভাবি, স্ত্রী, ভাগ্নে দিপ্ত সবাই এসেছে আমার কাছে। সবাই হতবাক! আমাকে সান্তনা দিলো। সবাই আমার মতই হতবাক ও ব্যথিত।


একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। যদি কারো বাড়িতে গিয়ে থাকে, কারো অনিষ্ট করে থাকে তবে কতটাই বা করেছে, কতটাই বা করতে পারে? যদি কারো ক্ষতি করে থাকে তবে সবাইতো জানে যে লালুকে আমি লালন পালন করি, আমাকে বলতে পারতো। আমি উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতাম। যদি দিতে না পারতাম আমি ক্ষমা চেয়ে নিতাম। একটা বোবা প্রাণী। তাও আবার বাচ্চা। ছোট শিশু সে যে প্রাণীরই হোক, মানুষ বা ভয়ংকর কোন প্রাণীর বাচ্চা, তাদের কি দেখতে ক্ষতিকর মনে হয়? লালুকে বিষ খাওয়ানোর আগে একবারও কি তাদের বুক কাপলো না? তারা কি মানুষ? লালুর মত একটা বাচ্চা পশুর মুখে বিষ তুলে দিলো যারা তাদের কি পশু বলা যায়? কি নামে ডাকবো তাদের? একটা পোষা প্রাণীকে বিষ খাইয়ে হত্যার অপরাধে আমি বিচার চাইতে পারতাম। আমি বিচার চেয়েছিও। আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিচার চেয়েছি। আল্লাহ তায়ালা, আপনি ওদের ঈমান দিন যারা এমন কাজটি করেছে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৩৯
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×