বাবা মায়ের পছন্দেই আমার আর লীলার (আমার স্ত্রী ) বিয়ে হয়েছিল , আলহামদুলিল্লাহ আমরা দুজনেই খুব সুখী , দুই বছরের মাথায় আমাদের ঘর আলো করে প্রথম সন্তান আবির এলো। তার পরের বছর আমাদের কাঙ্খিত মেয়ে নীলার জন্ম । আমি একটা বেসরকারি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার , তিনজনের সংসার নিয়ে সচ্ছল আর সুখেই কেটে যাচ্ছে আমাদের জীবন। খবরের কাগজে পড়লাম একজন মায়ের পিতৃত্বের দাবি প্রমানে সন্তান ও কথিত বাবার ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে ।
বুদ্ধিটা হটাৎ করেই এলো আচ্ছা গোপনে আমার সন্তানদের ডিএনএ টেস্ট করলে কেমন হয় ? অফিসে যেয়ে এক ডাক্তার বন্ধুকে কল দিলাম বললাম দোস্ত হেল্প করতে পারবি নাকি ? সে বললো হটাৎ এইসব কি বলছিস আমি তাকে বুঝলাম আসলে মজা করার জন্য এটা করছি কোনো সন্দেহ থেকে না, তাছাড়া সত্যি বলতে কি আমার বৌ লীলার প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই শুধু কৌতূহল আর মজা করার জন্য আর ওকে একটু সার প্রাইজ দিতে বুদ্ধিটা ।পেপার পড়ার পর থেকে বুদ্ধিটা সারাক্ষণ মাথার মধ্যে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিলো ।
বাবার সাথে আমার সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মত ।আলাদা বাসায় থাকলেও আমরা খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখি ।ই বাবাকে ফোন করলাম বাবা শুনে হেসে খুন বললেন তোর পাগলামো আর গেলো না । বাবা আমাকে মজা করে বললেন তাহলে আয় তোর ডিএনএ টা টেস্ট করি ? আমি আমার বাবার একমাত্র ছেলে আমিও কম যাবো কেন বললাম ওকে বাবা এসো দুই পুরুষ একসাথে ডিএনএ টেস্ট করবো ।বাবা হাঁসতে হাঁসতে রাজি হয়ে গেলেন , বললেন তোর মা আর লীলাকে কিছু না বলাই ভালো মহিলা মানুষ আবার কি মনে করে বসে ঠিক নেই ।আমিও ভাবলাম কথাটা বাবা কথাটা খারাপ বলেন নাই ।
এখানে একটা কথা বলে রাখি আমার বাবা আর আমি দেখতে অনেকটাই একরকম আর আমার সন্তানদের চেহারার সাথে আমার চেহারার খুব মিল এই কথা অনেকেই বলেছেন তাই টেস্ট নিয়ে আমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই ।
বাংলাদেশের টেস্ট এর রেজাল্ট নিয়ে নানান রকম কথা শোনা যায় তাই যেহেতু ডাক্তার বন্ধুর সহযোগিতায় অর্ধেক খরচে ডিএনএ টেস্ট করতে পারবো তাই সিদ্ধান্ত নিলাম দুইটা ভালো ক্লিনিকে টেস্ট করবো এক খরচে দুই টেস্ট ।
শুক্রবারে লীলাকে সত্য গোপন করে বললাম বাবা আবির আর নীলাকে দেখতে চায় আমি একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি ,লীলা কোনো আপত্তি করলো না । বাসার বাইরে যেয়ে একটা সিএনজি নিলাম বাবাকে বললাম ক্লিনিকে চলে আসতে । পরপর দুইটা ক্লিনিকে আমি বাবা ও আমার সন্তানদের টেস্ট স্যাম্পল দিলাম, ক্লিনিক থেকে রিপোর্ট দুই সপ্তাহ পরে দেবে বললো , বাবা বিষয়টা বেশ মজা পাচ্ছেন ছেলের পাগলামোর সাথে তার পাগলামো করতে মনে হয় ভালোই লাগছে ।তাছাড়া আমাদের সম্পর্ক গভীর আত্ম বিস্বাসে গড়ে ওঠা টেস্ট যে সেই সত্য প্রমান করবে এতে আমার বা বাবার মনে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই । আমি আর বাবা কেউ বাসায় কিছু বলি নাই।
দুই সপ্তাহ পরে আজ শুক্র বার লীলাকে বললাম আমি একটু বাবার সাথে কথা বলতে যাচ্ছি ।লীলা বললো বাবার জন্য কিছু ফল নিয়ে যেও। আমি বাসা থেকে বের হয়ে সি এন জি নিয়ে ক্লিনিকে রওয়ানা দেয়ার সময় বাবাকে আসতে বললাম । বাবা বললেন উনি এখুনি রওয়ানা দিচ্ছেন । বাবা আসার পর খামে বন্ধ রিপোর্ট নিলাম বাবা বললেন দুই ক্লিনিকের রিপোর্ট আমরা একসাথে খুলবো এবং দেখার জন্য নির্জন একটা জায়গায় দুজন একসাথে বসবো ।দুজন রমনা পার্ক কেই বেছে নিলাম , আমি অনেক টা হাসতে হাসতে প্রথম ক্লিনিকের দেয়া আমার ছেলের ডিএনএ রিপোর্ট বের করলাম , ইয়া আল্লাহ এসব কি দেখছি ওটা আমার সাথে ম্যাচ করে নাই , বাবার মুখেও বিস্ময়ের ছাপ রিপোর্ট ভুল হাতে পারে ভেবে দ্বিতীয় ক্লিনিকের রিপোর্ট টা দেখলাম না এখানেও একই রিপোর্ট আবির আর আমার ডিএনএ ম্যাচ করে নাই তার মানে আবির আমার ছেলে না ।
বাবা বললেন নীলার রিপোর্ট টা বের কর তো বাবা ,আমি কাঁপা কাঁপা হাতে আমার মেয়ে নীলার ডিএনএ রিপোর্টের প্রথম ক্লিনিকের দেয়া খাম খুললাম । আমি আমার নিজের চোখকে বিস্বাস করতে পারছি না ওটাও নেগেটিভ মানে নীলার সাথে আমার ডিএনএ মেলেনি ও আমার মেয়ে নয়।এইবার শেষ আশা নিয়ে দ্বিতীয় ক্লিনিকের খাম খুললাম একই রিপোর্ট আমার মাথা বন বন করে ঘুরছে এটা কিভাবে সম্ভব । বাবা আমার অবস্থা বুঝতে পেরে আমাকে সান্তনা দেয়ার জন্য আমার কাঁধে হাত রাখলেন বললেন তোর আর আমার রিপোর্ট টা বের কর তো বাবা । আমি হতাশ মনে খামটা বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম বাবা তুমি খোলো আমার খুব খ্রারাপ লাগছে ।
বাবা আমাদের দুজনের মানে আমার আর বাবার ডিএনএ টেস্ট এর রিপোর্ট এর প্রথম খাম খুললেন ।
আমরা দুজনে ঝুকে পরে রিপোর্ট দেখতে যেয়ে মাথায় ঠোকর খেলাম । বাবার হাত কাঁপছে রিপোর্ট ম্যাচ করে নাই অর্থাৎ বাবা আর আমার সম্পর্ক মেলে নাই , বাবার চেহারায় একগাদা বিস্ময় ফুটে উঠলো বাবা কাঁপা হাতে দ্বিতীয় ক্লিনিকের রিপোর্ট টা খুললেন একই রেজাল্ট নেগেটিভ । আমি আর বাবা দুজন অসহায় ভাবে একে অন্যের মুখোমুখি বসে আছি চারপাশে শূন্যতার নিঃশব্দ অনুভূতি বাবা অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন ।দুজনের চোখ দিয়েই ফোটা ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২০