(ইহা একটি কল্পনাপ্রসূত কাহিনী, কোন বাস্তব ঘটনা বা ব্যক্তির সাথে সাদৃশ্য কাকতাল মাত্র)
রাখাল বাহাদুর উদাস চাহিয়া রহিয়াছেন পথের পানে। বিরহিমনে গাহিতে পারিতেছেন না,
“আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দও......” ।
অবচেতন মনে বারবার আড় চোখে তাকাচ্ছেন দূরালাপনির দিকে। খায়েশ হইতেশে একটি বার কথা বলিতে তাহার সাথে, কর্কশ কণ্ঠে সুর তুলিয়া বলিবেন
“আমার এই পথ তোমার পথের থেকে অনেক দূরে,
গেছে বেঁকে- গেছে বেঁকে......”
“বেঁকে” শব্দটা মনে আসিতেই রাখাল বাহাদুরের চিরতার রসের কথা মনে হইলো। শেষবার যখন কথা হইল তখন কতই না বাসনা লইয়া নিমন্ত্রণ করিয়াছিলেন নৈশভোজের। বালাই ষাঁড়, নিমন্ত্রনের কথা শুনিয়া সুবচনার কণ্ঠে হইতে যে গড়ল নিঃসৃত হইলো তাহা ভুলিবার নহে। আশা ছিল মনে, অর্ধ-বৎসর পূর্বে যেরূপ করিয়া নিজ সন্তানকে “বিরিয়ানি” রন্ধন করিয়া ভোজ দিয়াছিলেন, তেমনি করিয়া প্রানের সখাকে পাশে বসাইয়া আদর যত্ন করিবেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, প্রাণসখা নিজে পুত্রের বিদেশবাসের কথা তুলিয়া, দ্রবণকে আরও ঘনীভূত করিলেন। সেই হইতে রাখাল বাহাদুর ঘৃত আর বক্র (বাঁকা) অনামিকার হিসাবে নামিলেন।
অন্ন পূজা দিবেন বলিয়া তাহার যেই নিমন্ত্রণ, সেই নিমন্ত্রণকে যাহারা আপন করিয়া লইল না, তাহাদের নামের তালিকা লইয়া তিনি নাজিরকে ডাকিয়া পাঠাইলেন। নির্দেশ জারি হইলো রাজপ্রাসাদে আসিতে যাহাদের আপত্তি, যাহাদেরকে নিজে হাতে ভোজ করাইতে পারিলাম না, তাহারা যেন ভুল করিয়াও সরকারি অন্নবঞ্চিত না হয়। প্রাসাদে না হউক অন্তত কারাগারে যেন তাদের আদর আপ্যায়নের এন্তেজাম করা হয়। এমনকি কেহ যদি কোন সরাইখানায় দাওয়াত মঞ্জুর করে, তবে যেন তাহাকে সেইখান হইতে ধরিয়া আনা হয়। আর যাহারা দাপ্তরিক কর্মের হেতু ধরিয়া দপ্তরে দিন কাটাইবে, তাহাদের নিশিকালে লইয়া আসিতে হইবে, (যাহাতে কাহার বিশ্রামের ব্যাঘাত না হয়)।
খেলাধুলার নাম করিয়া কেহ যেন মাঠেঘাটে ঘুরিয়া না বেড়ায়। কোন খেলোয়াড় কোন প্রকার খেলার সূচি দিলেই, তাহাকে নিবৃত করিতে হইবে। রাখাল বাহাদুর একাই মাঠে থাকিবেন আর সরকারি তহবিল হইতে খেলোয়াড়দের ভোজের ফরমায়েশ করিবেন।
এত কিছুর পরও পাঁচশালা ইজারাদার রাখাল বাহাদুরের হৃদয়ে উল্লাসের অভাব। একা একা খেলিতে আর কতই ভালো লাগে।