১ম ও ২য় কিস্তি এখান থেকে পড়ুন
(২য় কিস্তির পর)
চলচিত্র নিয়ে কাজ করতে গিয়ে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।বলতে বাধা নেই,তখন চলচিত্রে আমরা মাঝেমধ্যে কাটপিস ব্যবহার করতাম,যেগুলো একটু হটি নটি টাইপের ছিল।এই কাটপিস সংগ্রহ করতে গিয়ে পরিচিত হই বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট এর সাথে।কিন্তু এই সিন্ডিকেট গুলো শুধুমাত্র কাটপিস ই নয়,গড়ে তুলেছে কোটি কোটি টাকার পর্নো ছবির বাজার।
তখন কম্পিউটার সমিতির নেতা ছিলেন আহম্মেদ হোসেন জুয়েল। তিনি পর্নো সিডির অন্যতম নির্মাতা এবং পরিবেশক। ধানমণ্ডির রায়হান আর্কাইভ ও দি হোম টাইম নামের দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এই জুয়েল। প্রতিষ্ঠান দুটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা শতাধিক।
এ কম্পিউটার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পর্নো সিডি তৈরি ও বাজারজাতকরণের অভিযোগ ছিল। সেটা ২০০৬ সালের কথা।ঢাকা মহানগরীতে পর্নো সিডি তৈরি ও বাজারজাতকরণের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের একটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তিনি। পর্নো সিডি তৈরির জন্য জুয়েল তার ধানমণ্ডির ১৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলা ব্যবহার করতেন,কাটপিস ও একই জায়গা থেকে আনতে হত। পরে জেনেছিলাম ১/১১ এর সময় র্যাব অভিযান চালিয়ে জুয়েলের ৫ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় জুয়েল। র্যাবের অভিযানের পর পর্নো ছবির শূটিং স্পটের পরিবর্তন হয়েছে শুধুমাত্র, তবে বন্ধ হয়নি তার পর্নো ছবি তৈরি ও পরিবেশনের ব্যবসা। এমনকি গ্রেপ্তারকৃত তার ৫ সহযোগীও জামিনে বের হয়ে এসে জুয়েলের ব্যবসায় হাত লাগিয়েছে।
এ তো গেল ঢাকার জুয়েলের কথা। পর্নো ছবির দেশময় রয়েছে সিন্ডিকেট। মাঝে এরা পুলিশের কাছে ধরা পড়ে আবারও রুটিন মাফিক জামিনে ছাড়া পেয়ে চলে যেত পুরনো ব্যবসায়। ঢাকা, যশোর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, বগুড়া, নোয়াখালী, সিরাজগঞ্জ, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, কুমিল্লা, জয়পুরহাট, পঞ্চগড়সহ সারাদেশে ছড়িয়ে ছিল এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। সারা দেশময় এই ব্যবসা চললেও মূলত তা রাজধানী ঢাকা থেকে পরিচালিত হত। মোস্তফা খন্দকার ও দেলোয়ার হোসেন পর্নো ছবির অন্যতম সিন্ডিকেট নেতা।
এছাড়াও তখন আরো কিছু কাটপিস সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কাটপিস কিনতাম।সেই সুবাধেই পরিচিত হই আরো কিছু সিন্ডিকেট এর সাথে।এর কিছু সবার জন্য শেয়ার করব।
♥শিল্পী সিনথিয়া সিন্ডিকেট
ভোলার মেয়ে সিনথিয়া। কয়েকটি মিউজিক ভিডিওতে কাজ তার একমাত্র পুঁজি। এরপরেই নেমে গেছে পর্নো ছবি তৈরির ব্যবসায়। জানা গেছে, নৃত্যের আড়ালে দীর্ঘদিন যাবৎ পর্নো ছবি তৈরি ও বাজারজাতকরণের একটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক এই সিনথিয়া। লন্ডন প্রবাসী সিলেটের জনৈক মুজিব মিয়ার অর্থায়নে এ সিন্ডিকেট দেশব্যাপী সক্রিয় ছিল। এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্যরা হলো তোফায়েল আহম্মেদ জালাল ও স্টার লিংক প্রডাকশনের কর্মকর্তা রাসেল। সিনথিয়া সিন্ডিকেট ঢাকার বাইরে বিশেষত সিলেটের বিভিন্ন শূটিং স্পটে পর্নো ছবির চিত্র ধারণ করত। তবে ব্যতিক্রম শুধু এই সিন্ডিকেট প্রধান সিনথিয়া নিজেই পর্নো ছবির নায়িকা। সিনথিয়ার সহযোগী নায়িকা হিসেবে ছিল সিলেটের কুলাউড়ার সানোর আলীর মেয়ে সুমী। বাজারজাতকরণের দায়িত্বে ছিল পাবনার ঈশ্বরদীর বাড়ইমারীর মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে টিটু। সিলেট শহরের বাগবাড়ীর ২৭১ এ মুক্ত একতার মৃত শীল আচার্যের ছেলে জীবন আচার্য এবং উত্তর কুলাউড়ার সানোর আলীর পুত্র মোস্তফা এ সিন্ডিকেটের সহযোগী ছিল। পর্নো ছবি নির্মাণের সময় এ সিন্ডিকেটের সবাইকে পুলিশ একত্রে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করলেও দুই মাসের মধ্যে জামিনে বের হয়ে আসে তারা।
♥অলিভিয়া-শাহিন সিন্ডিকেট
আলোচিত পর্নো সিডির আরেকটি সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক ছিল নায়ক শাহিন ও নায়িকা অলিভিয়া। উত্তরার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আঃ রশিদের ছেলে নুরদ্দিন মোহাম্মদ ওরফে শাহিন ও এক শিল্পপতির স্ত্রী অলিভিয়া ছিল এই সিন্ডিকেটের প্রধান। পর্নো ছবিতে আবার শাহিন ও অলিভিয়া অভিনয় করেছিল। এতে শাহিন ছাড়াও নায়ক ছিল দুজন। পাঁচ নায়িকার মধ্যে অমি ও বৃষ্টি ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী। মিতু নামের আরেক মেয়ে ছিল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। পর্নো সিডিগুলো বাজারজাত করা হয়েছিল সাইবার জোন নামে নীলক্ষেতের একটি দোকান থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ছিল এই সাইবার জোনের মালিক। কেউ সিডির অর্ডার দিলে কম্পিউটার হার্ডডিস্ক থেকে তা কপি করে দেয়া হতো। পরে ২০০৮ সালে ডিবি নীলক্ষেতের গাউসুল আজমের সাইবার জোন নামক দোকানে অভিযান চালিয়ে কনকুজ্জামান নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের শাহিনের তৃতীয় তলা বাড়িতে অভিযান চালালে বের হয়ে আসে পর্নো সিডি চক্রের সিন্ডিকেটের পরিচয়। পাওয়া যায় পর্নো সিডির স্থিরচিত্র ধারণের শূটিং স্পট। শাহিনদের বাড়ির তৃতীয় তলায় একটি রুমের চারদিকে থাইগ্লাস লাগানো শূটিং রুমটি সাজানো ছিল। উদ্ধার হয় পর্নো তৈরির যাবতীয় সরঞ্জাম এবং পর্নো ছবি। সে সময় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও পরবর্তীতে ধামাচাপা পড়ে যায়। বহাল তবিয়তে পার পেয়ে যায় শাহিন সিন্ডিকেট।
♥মিনা হ্যাভেনের রিয়া হোসেন
ধানমন্ডিতে ছিল মিনা হ্যাভেন রিয়া হোসেন সিন্ডিকেট সক্রিয়। রাজউক-এর ১০ নম্বর রোডের ৬২ নম্বর বাড়ির ষষ্ঠ তলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে পর্নো ছবির চিত্রনির্মাণ চলতে দেখেছি দীর্ঘদিন ধরে। কথিত মডেল রিয়া হোসেনের তত্ত্বাবধানে চলত পর্নো ছবির শূটিং। নিজেকে মডেল ও অভিনেত্রী পরিচয় দিলেও খোঁজ নিয়ে জেনেছি সে কোনো পণ্যের মডেল হয়নি। মডেল হিসেবে নিজের পরিচয় পুঁজি করে সুন্দরীদের ফাঁদে ফেলে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা এক্ষেত্রে বিশেষ টার্গেট। তবে রিয়া হোসেন নিজেও একাধিক পর্নো ছবির নায়িকা।
রাজমণি সিনেমা হলের মালিক আহসান উল্লাহ মনির ভাগ্নে শরীফ ও দিলীপের নিয়ন্ত্রন করত আরেকটি পর্নো সিডি বাজারজাতকরণের সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে ছিল এনামুল হক, পলাশ, শাহিন ও কালাম।
পুরনো ঢাকার পাটুয়াটুলীর বাংলা প্রডাকশনের মালিক শরীফ নিয়ন্ত্রণ করত আরেকটি সিন্ডিকেট। মিউজিক ভিডিও নির্মাণের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই পর্নো ছবি তৈরির ব্যবসা করে থাকে বলে অভিযোগ ছিল। এই বাংলা প্রডাকশন থেকে আমরা অনেক কাটপিস কিনেছি।বিভিন্ন প্রাইভেট ভার্সিটির মেয়েদের ব্যাবহার করে কাটপিস বানানো হত।
সুন্দরীরা সাবধান
মডেল হতে এসে ফেঁসে যেতে পারেন। রূপালি পর্দার নায়িকা কিংবা বিজ্ঞাপনের মডেল হবার বাসনা অনেক সুন্দরী নারীরই রয়েছে। আর এই ইচ্ছেটাকে পুঁজি করে সুন্দরী নারীদের বাধ্য করানো হচ্ছে নানা রকম অনৈতিক কাজ করাতে। পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা শুধু পণ্যের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই নিজেকে বিক্রি করে দিচ্ছে না, উপরন্তু অনেক সময় পতিতাবৃত্তিসহ পুরুষের উৎকট ভোগের উপকরণের বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। সমাজের বিত্ত ও ক্ষমতাবানেরা এই সুযোগে কামিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। মাঝে মধ্যে পাচার হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। এসব দেশ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তারা উচ্চবিত্তের কথিত উন্নত সংস্কৃতি সম্পূর্ণ। তাদেরই একজন সাইফুল্লাহ আল মুনির।
ইনডেক্স নামের একটি মিডিয়া হাউসের কর্ণধার হিসেবে সমাজে তিনি প্রতিষ্ঠিত। একসময় একুশে টেলিভিশনের ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে ছিল নীল ছবির নির্মাতা, ইয়াবা এবং নারী পাচারের। আর এ কারণে বিপুল পরিমাণ পর্নো সিডি, ইয়াবা এবং পর্নো ছবির নায়িকা সন্দেহে কতিপয় মডেলও র্যাব-৩ এর কাছে আটককৃত হয় ২০০৮সালের ৫ সেপ্টেম্বরে ইনডেক্সের ৪২/১/খ সেগুনবাগিচার বকাউল এ্যাপার্টমেন্ট হাউসের ৪র্থ তলা থেকে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৩