somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দিনলিপি: কতোদিন মাসিমার সঙ্গে আমার দেখা নেই!

২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ 22 ডিসেম্বর 2006 শুক্রবার সন্ধ্যায় আমার বন্ধু স্বপ্না দেবনাথের কুমিল্লার পদুয়ারবাজারের দৈয়ারার বাসায় গিয়েছিলাম। স্বপ্না এখন বিবাহিতা। তাঁর স্বামী সুমন দা’ও বাসায় ছিলেন।
স্বপ্না রাতে তাঁদের বাসায় থাকতে খুব অনুরোধ করেছিলেন । থাকিনি। তবে রাতের খাবার হিসেবে খিচুড়ি খেয়ে এসেছি । খাওয়ার পর পাকা পেঁপেও কেটে খাওয়ায় স্বপ্না।
হায়! এই স্বপ্নাকেও একদা পেতে চেয়েছিলাম আমি। বলেছিলাম, ‘‘তুমি কোনো রেলগাড়ি নও যে, তোমার জন্য ওয়েটিংরুমে বসে থাকতে হবে। তুমি জীবন। তোমাকে সর্বদাই প্রয়োজন।’’
স্বপ্নার মা জ্যোৎস্না মাসিমা এসব কথা জানেন। কিন্তু আমি চিরকালই আত্মঘাতী মানুষ। তাই হয়তো একই সময়ে স্নিগ্ধা রায়কেও সমান্তরালে ভালোবাসতে থাকি। সে কথা পরে আমি নিজেই বলেছি স্বপ্না দেবনাথকে।
স্নিগ্ধা অথবা স্বপ্না...ওরা কখনো একই সঙ্গে কখনো বা আলাদাভাবেও আসতো আমার কাছে। ফলে আমি সিদ্ধান্তহীন হই। এই সিদ্ধান্তহীনতা আমার পুরো জীবনকেই পন্ড করে দিয়েছে। এমনকি আমি আমার সাংবাদিকতার চাকুরির বিষয়েও বরাবরই সিদ্ধান্তহীন হয়ে পড়ি এবং কখনো কখনো চাকুরি ছেড়ে বেকার হয়ে হতাশ আর ক্লান্ত হয়ে যাই।
আজ যে স্বপ্নার দৈয়ারার বাড়িতে গিয়েছিলাম, তার পাশ দিয়েই রেললাইন বয়ে গেছে। একটু পর পরই সে লাইন দিয়ে রেলগাড়ি যায়।
এখন যেখানে স্বপ্নার দৈয়ারার এ বাসা, ঠিক এখানে এখন থেকে নয় বছর আগে আমি ছবি তুলতে গিয়েছিলাম। তখন জীবনে দারুণ তারুণ্য আমার। আর এখন? এখন যেন আমি এক এবড়োথেবড়ো মানুষ। একূল ওকূল কোনো কূলেই ‘বন্দেগী’ আমার কোনো কাজেই আসেনি। নিজের জীবন হয়ে গেছে একেবারেই আলুথালু। আমার সঙ্গে সঙ্গেই এমন আরও আলুথালু হয়ে গেছে আরও অনেকের জীবনই।
স্বপ্নার ফোন দিয়েই অনেকক্ষন কথা হলো মাসিমার সঙ্গে। কতোদিন মাসিমার সঙ্গে আমার আর সরাসরি দেখা নেই। হায় মাসিমা! তাঁদের বাড়িতে গেলেই তিনি বলতেন, হাত-মুখ ধুয়ে আসো, আগে খাবার খাও এবং পরে কথা বলো।’
আমি যে একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান, এ কথা যেন মাসিমার মনেই আসেনি কোনোদিন। যতদিন রাতে তাঁদের বাড়িতে থেকেছি, বিছানার পাশে বসে আমার বাবা মায়ের গল্প শুনেছেন। স্বপ্না তখন এম.এ ক্লাসের ছাত্রী। তাঁর একমাত্র দাদা প্রদীপ দেবনাথ তখনও সৌদি আরবে থাকেন। অবশ্য প্রদীপদা’ এখনো প্রবাসেই আছেন। এরই মাঝে তাঁদের জীবনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে অবর্ণনীয় এক ঝড়। ভালো মানুষদের জগতে এভাবেই মাশুল দিতে হয়।
আজ বাসায় ফেরার পরও প্রদীপ দা’ আমাকে ফোন করেন সৌদি আরবে থেকেই। প্রদীপ দেবনাথ দাদা আমাকে খুবই ভালোবাসেন। ‘দৈনিক শিরোনাম’ পত্রিকায় চাকুরি করাকালীন সময়েই তাঁদের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়।
আমি যখন কুমিল্লা শহরের ‘দৈনিক কুমিল্লা বার্তা’ পত্রিকায় চাকুরি করেছি, তখন স্বপ্নাও চাকুরি করতেন ওই পত্রিকায়। একসময় ওই চাকুরিও ছেড়ে দিয়েছি আমি। পরে স্বপ্নাও আর যায়নি সেই পত্রিকায়।

‘‘বাংলাভিশন টেলিভিশন’’ চ্যানেলে প্রচারিত আমার সাক্ষাৎকারটি প্রদীপদা’ সৌদি আরবে বসেই একাধিকবার দেখেছেন এবং আমাকে ফোন করেই সে কথা জানিয়েছেন। গত কয়েকদিন ধরেই সে সাক্ষাৎকার বারবার প্রচার হচ্ছে।
সর্বশেষ কথা হলো স্বপ্নার বাসায় এখনো আমি কেনো যাই? না গিয়ে কি কোনোই মুক্তি নেই আমার? কেনো তাঁর বিয়ের পরও আমার সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো না? যোগাযোগ আসলে খুব সহজে বিচ্ছিন্নও হয়ে যায় না। আসলে নাড়ি কাটার পরও মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক থেকেই যায় সন্তানের। স্বপ্নাদের পরিবারে যখন নানামাত্রিক ঝড় নেমে এলো, তখন প্রদীপদা’ ছিলেন সৌদি আরবে। মাসিমা প্রথমেই আমার কাছে এলেন। নিজের সন্তানের মতোই আমাকে পুরোই বিশ্বাস করলেন। কাঁদলেনও। সব শুনে আমি বুঝলাম, এই পরিবার আর বাংলাদেশেই থাকবে না। স্বপ্নাকেও তখন ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রদীপদা’ও ধৈর্যশীল। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ আর ছাড়লেন না।
তবে... স্বপ্না আমাকে বলেছেন, প্রদীপদা’ যে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ ছাড়বেন না, ঠিক এই নিশ্চয়তাটুকু একেবারেই দেওয়া যায় না।
===========
22 ডিসেম্বর 2006 শুক্রবার
রাত 2 টা 42
‘মিলন্তিকা’
(ষষ্ঠ তলা)
ঠাকুরপাড়া, কুমিল্লা।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:০৯
১টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×