অ্যালার্মটা বেজেই চলছে।
১৬ই জুন।
সকাল ৯টা ।
রাহাত আড়মোড়া ভেঙ্গে বলল ‘অ্যা’
আজ তো সকাল সকাল উঠার কথা ছিল। নইলে রিজুকে আর ধরা যাবে না।
রাহাত রিজুর রুমে গিয়ে আমতা আমতা করে বলল ‘দোস্ত, তোর ঐ নীল পাঞ্জাবিটা দেওয়া যাবে ? ঐ যে গত ঈদে কিনেছিলি? ’
কথাটা বলতে একটু আধটু লজ্জা করছিল রাহাতের। কিন্তু কি আর করার !
নীলার তো ঐ নীল রঙই পছন্দ। নইলে টানা চারটি বৈশাখে কি আর এমনি এমনি নীল শাড়ি পরেছিল। তার উপর গত চার বছর ঐ নীল চুড়ি পরেই তো প্রতিদিন ক্যাম্পাসে আসে।
হ্যাঁ, রাহাতে চোখে কিছুটা সমস্যা আছে। তাই বলে তো আর কালার ব্লাইন্ড না !
বিকেল সাড়ে চারটের সময় সার্কেল রোডের পাশের বাঁশের হাফ বেঞ্চিটার পাশে রাহাতের অপেক্ষা করার কথা ছিল।
ঠিক বাইশ মিনিট আগেই রাহাত পৌঁছে গেল। সাথে দুইটি সাদা গোলাপ। অবশ্য খয়েরি রঙের একটি খামের মধ্যে। আশে-পাশের মানুষজনের কথা চিন্তা করে এই অভিনব চিন্তা।
বিকেল পৌনে পাঁচটা বাজে। নীলা কি আদৌ আসবে?
অবশ্য রাহাতের কাছে এর কোন উত্তর নেই।
হঠাৎ করেই মোবাইলটা বেজে উঠলো। এসময় মাহিনের ফোন!
ওপাশ থেকে ‘দোস্ত, তোর বাবা আর নেই’
রাহাত কিছুক্ষণের জন্য সম্মোহিত হয়ে পড়লো। তারপর নিজেকে সামলিয়ে বলল ‘কখন?’
উত্তরের অপেক্ষা না করেই আবার বলল ‘আমি আসছি’ ।
খয়েরি রঙের খামটা ঐ হাফ বেঞ্চিটা উপর রেখেই রাহাত উঠে পড়লো।
রাহাত এখন গাড়ীতে। সূর্য তখনও পুরোপুরি অস্ত যায়নি। তবে আকাশের নীলটা আস্তে আস্তে শেষ বিকেলের সূর্যের রক্তিম আভায় মিলিয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পর তা গাঢ় অন্ধকারের আচ্ছাদনে ঢাকা পড়লো।
‘নীলা কি এসেছিল?’
হঠাৎ অ্যালার্মটা বেজে উঠলো...
রাহাত সম্ভিত খুঁজে পেলো।
ন’বছর আগের ঘটনাগুলো আজ হঠাৎ করে মনে পড়লো।
ও আজ তো ১৬ই জুন!!!
তবে আজ বাহিরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
ইলেক্ট্রিসিটিটাও চলে গেছে।
এরপর নীলার সাথে আর দেখা হয়নি।
হয়তো আর হবে ও না।
ঐ ঘটনার পর যখন রাহাত ক্যাম্পাসে ফিরে আসলো, ততদিনে নীলা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে গিয়েছিলো।
ওদের পুরো পরিবার নাকি অস্ট্রেলিয়া চলে গিয়েছিলো।
রাহাত ও আর খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করে নি।
ইলেক্ট্রিসিটি চলে এসেছে...
বৃষ্টি শেষ।
একটু পরে গাড়ি চলে আসবে।
রাহাত ও ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এক্ষুনি যে বের হতে হবে।
পাড়ি দিতে আরও অনেকটা পথ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:১৩