somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অকথিত

০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব ১
বেলা ৩ টে। সূর্যটা আস্তে আস্তে পশ্চিমে হেলে পড়ছে। গাছের ছায়া গুলো ও তার সাথে তাল মিলিয়ে বেড়েই চলছে। পার্কের এই কোনাটাতে মানুষের চলা-ফেরা নাই বললেই চলে। এক কোনের বেঞ্চিটাতে মাহফুজ তখন ও হিসাব নিকাশ করেই চলেছে।
মাহফুজ। ‘না এই মাসে যেভাবেই হোক কিছু একটা করতেই হবে।’ মাসের আজ ১৪ তারিখ এখন ও কোন টিউশন থেকে একটি টাকা ও দিল না। হলের ভর্তি, ডাইনিং এর খরচ, শিট ফটোকপি; তার উপর এই মাসে ভর্তি। না এভাবে আর কদিন ??
কিছু একটা উপায় বের করতেই হবে। হোসেন ভাই অবশ্য বলেছিল দেখা করতে। কি একটা করলেই নাকি টাকা পাওয়া যাবে।
খুকুর সামনে পরীক্ষা। বাবা এতো গুলো টাকা কোথা থেকে দিবে। না আমাকেই কিছু করতে হবে।
ছেলে । ভাই চা খাইবেন ?
মাহফুজ । (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) কি বললি?
ছেলে । ভাই চা খাইবেন ?
মাহফুজ । ও তাই বল। নারে ! খাব না ।
ছেলে । ভাইজান কি যে ভাবেন সারাদিন ...
মাহফুজ । ও তুই বুঝবিনা।
ছেলে । ভাইজান আপনারে আমি হেই কবে থেইক্কা ফলো করতাছি। একদিন ও চা খাইলেন না। আর প্রত্যেক দিন দেখি, এই বেঞ্চে শুইয়া শুইয়া কি জানি ভাবতাছেন।
মাহফুজ । তুই আমাকে ফলো করিস ?
ছেলে । ভাইজান, যেদিন থেইকা আমি এই পার্কে চা বেচি, ঐ দিন থেইকাই দেখতাছি।
ভাইজানের মনে কি অনেক দুঃখ ??
মাহফুজ । দুঃখ হতে যাবে কেন? যা চা বিক্রি কর। কাজ কর গিয়ে।
ছেলে । ভাই লুকাইয়া কোন লাভ নাই। আমি বুঝি না দুঃখ কি ?
থাকেন ভাই । যাইগা। আমি আমার কাম করি।
সন্ধ্যা মনে হয় শুরু হল। আর বেশীক্ষন বসে থাকা যাবে না। মশা গুলো একটু পরে মিছিল- মিটিং শুরু করে দিবে।
পার্ক থেকে বের হয়ে দেখি পকেটে মাত্র ২২ টি টাকা। সেই সকালে হলে একটু খিচুড়ি খেয়েছিলাম। ভাগ্যিস রহমত ছিল। নাহলে তো এখন হলে ফেরার ও টাকা থাকত না।
ফোন বেজে উঠল !!!
ছাত্রী (ওপাশ থেকে ) । স্যার আজ কি আসছেন ?
মাহফুজ । ও, রুহি। আজ কি তোমার পড়া আছে?
রুহি । না স্যার । কিন্তু আগামীকাল যে আমার পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা? স্যার আসেন না প্লিজ??
মাহফুজ । আচ্ছা। ঠিক আছে। ৬ টায় আসবো।
রুহি । ওকে স্যার। রাখি। আসসালামু আলাইকুম ।

পর্ব ২
কলিং বেলে শব্দ হচ্ছে।
দরজার ওপাশ থেকে,
রুবিনা দেখতো কে আসলো? তোর আপামনির স্যার মনে হয়...
রুবিনা । আসসালামু আলাইকুম স্যার ।
মাহফুজ । রুহি বাসায় আছে?
রুবিনা । হ স্যার আছে।
রুহি । স্যার, আমি মনে হয় আগামীকাল কিচ্ছু পারব না।
মাহফুজ । কেন ? কি হয়েছে? তোমার তো সিলেবাস অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
রুহি । স্যার এটাই তো সমস্যা । আমি তো আগে পড়লে সব ভুলে যাই।
মাহফুজ । আরে এতো চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে প্রিপারেশন নিয়ে যাও। বাকীটা হয়ে যাবে।
রুহি । জি স্যার।
রুহিদের বাসা থেকে রাতের খাবার না খেয়ে বের হলে, এখন যে কি হত সেটা আর চিন্তা না করি।
হেঁটেই যাওয়া যাক। মাঝ রাস্তায় কুকুর গুলো যেভাবে ঘেউ ঘেউ শুরু করেছে। তাতে মনে হয় যেকোনো মুহূর্তে একটা বড়সড় কুকুরদের মারামারি শুরু হয়ে যাবে । অন্য রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাক।
পর্ব ৩
ক্যাম্পাসের মধ্যে
জুলফি । কিরে !! কোথা থেকে আসলি মামা? টিউশনি নাকি?
মাহফুজ । হরে মামা।
জুলফি । নাফির সাথে দেখা হইছে ? ও তো তোরে খুজছে সন্ধ্যা থেকে ? রুমে যা।
মাহফুজ । দোস্ত , যাচ্ছি। ব্যাপক ক্লান্ত লাগছে আজ।
জুলফি । বিদায় বন্ধু।
রুমে ঢুকতেই...
নাফি । কিরে সারাদিন কই ছিলি ? কোন খোঁজ খবর নাই। মোবাইল বন্ধ। দুপুরে রিং হচ্ছিল। তাও ধরলি না। মিষ্টি আমাকে ফোন করতে করতে শেষ। একটা কল দে তাড়াতাড়ি।
মাহফুজ । পরে দিব। এখন ক্লান্ত লাগতেছে।
নাফি । মিষ্টি আমাকে বলেছে, কি একটা জরুরি কথা আছে। কল দে !!
মাহফুজ । আচ্ছা, দেখতেছি।
হলের জানালা গুলো দিয়ে দূরে মিটিমিটি আলো দেখা যাচ্ছে। হয়তো কোন স্ত্রী খাবার নিয়ে স্বামীর অপেক্ষায় অথবা কোন মা খাবার নিয়ে ছেলের পথপানে চেয়ে আছে। সারাদিন শেষে যখন এই ভালোলাগা গুলো কাজ করে তখন জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়।এই ভালোবাসা গুলো টিকে আছে বলে পৃথিবী এখন ও টিকে আছে ।
মাঝে মাঝে পেঁচার ডাক আর থেকে থেকে শিয়ালের হাক।
দূরের জোনাক পোকা গুলোকে ও আজ দারুন চঞ্চল দেখা যাচ্ছে।
ফোন বেজে উঠল...
ওপাশ থেকে । মাহফুজ , বাবা ভালো আছিস?
মাহফুজ । এইতো মা। ভালো আছি। তুমি ভালো আছো? বাবা কেমন আছে?
মা। আমরা সবাই ভালো আছি। রাতে খেয়েছিস বাবা?
মাহফুজ । খেয়েছি মা। তোমরা খেয়েছ?
মা । আমরা খেয়েছি। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে? কি জানি একটা সমস্যা হয়েছিল শুনলাম। ক্লাস কি নিয়মিত হচ্ছে?
মাহফুজ । না মা। তেমন কিছুই না। আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা সবই ঠিক মত চলছে। খুকু কোথায় মা ? কি করছে ও?
মা । হ্যাঁ। আমার সামনেই আছে তো । কথা বলবি ?
মাহফুজ । দাও মা।
খুকু । ভাইয়া, কেমন আছো ? বাড়ি আসবা কবে?
মাহফুজ । এই যে সামনের ছুটিতেই বাড়ি আসব।
খুকু । ভাইয়া তুমি এরকমই বল। পরে আর আসো না।
মাহফুজ। কথা দিচ্ছি। এবার অবশ্যই আসব। তোর পড়াশুনার কি খবর? এ প্লাস পাবি তো?
খুকু । হ্যাঁ ভাইয়া, ইনশাল্লাহ।
মাহফুজ । ভালো করে পড়াশুনা কর। তোকে অনেক বড় হতে হবে। মার কাছে ফোনটা দে তো ।
খুকু । ঠিক আছে ভাইয়া। দিচ্ছি।
মা । হ্যাঁ রে বাবা। হাঁতে কোন টাকা পয়সা আছে তোর।
মাহফুজ । আছে মা। ঐ সব নিয়ে তোমাকে আর চিন্তা করতে হবে না। আমি কোন এক ভাবে চালিয়ে নিবো। তোমাদের কি খবর ? বাবা কি করছে?

মা । উনি আশে পাশেই আছেন। তোকে আমরা ঠিক মত টাকা পয়সা দিতে পারি না। নিজেদের কেন জানি অপরাধি মনে হয় রে!!
মাহফুজ । মা তোমাকে আমি কতবার বলেছি না এইসব নি চিন্তা করতে না। আমি ভালোই আছি। এইতো আর কটা দিন। তারপর একটা ভালো চাকরি নিয়ে নিবো। তখন তোমাদের আর কোন দুঃখ থাকবে না মা।
মা । খোদা যেন, তোকে সে তৌফিকই দান করে বাবা, সেই দোয়াই করি বাবা।
মাহফুজ । মা, এখন রাখি।
মা। ঠিক আছে বাবা।
গত ছুটিতেও বাড়ি যেতে পারিনি। হাঁতে টাকা ছিল না। এবার যেতে পারব কি না বলতে পারছিনা। জীবনটা এতো জটিল কেন? আমরা তো শুধু সুন্দর ভাবে কয়েকটা দিন বাঁচতে চেয়েছি, প্রিয় মানুষ মুখের হাসি দেখতে চেয়েছি, তিনটে বেলা পেট পুরে খেতে চেয়েছি । কথা গুলো ভাবতেই নিজের অজান্তে মাহফুজ চোখে পানি চলে আসলো। দু এক ফোটা পরতেই মাহফুজ নিজেকে সামলে নিল।
ওপাশ থেকে নাফি দেখে ওর কাছে আসলো।
নাফি । দোস্ত, চিন্তা করিস না। কিছু একটা হয়ে যাবে। মানুষের জীবন কি সব সময় এক ভাবে চলে নাকি?
মাহফুজ । দোস্ত, পৃথিবীতে তো অনেক মানুষ ছিল। আমিই কেন?
নাফি। দোস্ত এইটা একটা টেস্ট বলতে পারিস। তুই আলবৎ পাশ করবি।
মাহফুজ । দোস্ত, আমি মনে হয় পারব না রে!!
নাফি । কি যে বলিস না। এতো গুলো মানুষের স্বপ্ন,ভালোবাসা সব কি একে বারে বৃথা যাবে না কি!! না তুই পারবিই ।
মাহফুজ । তাই যেন হয় রে !
নাফি । দোস্ত,আমি ঘুমুতে যাচ্ছি। রাতে শোয়ার সময় বাতিটা নিভিয়ে দিস ।
মাহফুজ । ঠিক আছে।
তখনও মাহফুজ চিন্তা করে যাচ্ছে। নিজের পড়াশুনার খরচটা মিটাতেই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির ও যা অবস্থা । বাবার কোন কাজ নেই, আজ ৫ বছর হল। কিভাবে যে সংসারটা চলছে মা ই ভালো জানেন। এই ভাবেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল মাহফুজ।

এই ঘুমের মধ্যেই মাহফুজ ভাবে, তার পৃথিবীটা বদলে গেছে।

এই অসমাপ্ত গল্প গুলোর অন্ধকার রাত্রির গুলো কোন এক নতুন ভোরের আলোয় আলোকিত হবে !!!
নাকি সব কিছুই থেকে যাবে অসমাপ্ত।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×