somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ বৈশাখের সেই প্রথম বিকেলটি

০৬ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অফিস থেকে ফিরে প্রতিদিনের মতো আজও পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাতে থাকে রকিব; সকালে সময়টা হয়ে উঠে না তাই। যথারীতি খেলার পাতাটা প্রথমেই। পাকিস্তান জাতীয় দলকে প্র্যাকটিস্ ম্যাচে হারিয়েছে বাংলাদেশ এ দল। মনটা খুশিতে ভরে উঠে তার; এবার যদি পনের বৎসরের খরা আর দুঃখ ঘুচানো যায়। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেলার খবর পড়তে থাকে সে বিস্তারিত। পাশের কলামের খবরটায় একটু মন খারাপ হয় তার, আবার না সুন্দর এ সময়টায় কোচ আর ম্যানেজমেন্ট-এর টানাটানিতে খাবি খেতে শুরু করে দল। ‘কই স্নান করবে না?’ এক গ্লাস টক্ দইয়ের শরবত তার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলে বন্যা। এতোক্ষণে খেয়াল হয়, অফিস থেকে ফিরে এখনো কাপড় পাল্টানো হয়নি তার। ‘হ্যাঁ, যাচ্ছি’ বলে পাতা উল্টিয়ে চলে যায় বিনোদন পাতায়, চোখ বুলাতে থাকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খোঁজে। সিমেস্টার ফাইনাল পরীক্ষা থাকায় এবার বছরের প্রথম দিনটাতে কোথাও বেরোনো হয়নি বন্যাকে নিয়ে। তাই মনে মনে ভাবনা ছিল কাল শুক্রবার তাকে নিয়ে কোথাও বেরুবে, সন্ধ্যায় কোথাও কোন অনুষ্ঠান উপভোগ করবে। চোখ বুলাতে বুলোতে পেয়েও যায় একটা বিজ্ঞাপন, কাল তাহলে লোকনাট্যদলের ‘কঞ্জুস’ দেখা যেতে পারে, ৬৬২ তম প্রদশর্নী হচ্ছে এবার। পত্রিকাটা ভাঁজ করে সে গামছা হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে যায়; ওদিকে বন্যা রান্নাঘরে রাতের খাবারের আয়োজন করতে থাকে।

খেতে বসে সে ভাবে, নাটকের টিকিটের বুকিংটা দিয়ে রাখতে পারলে ভাল হয়, তাহলে আর আগেভাগে গিয়ে বসে থাকতে হবে না। ছুটির দিনগুলোতে একটু ভিড় হয় মাঝে মাঝে; আর টিকিট পাওয়া না গেলে তো সব পরিকল্পনা মাটি। খেয়ে উঠে সে পত্রিকাটা হাতে নিয়ে ‍টিকিট বুকিংয়ের নাম্বারটা মোবাইল ফেোনে সেভ্ করে নেয়; কাল সকালে ফোন দেয়া যাবে। এই ভেবে পত্রিকাটা ভাঁজ করে বিছানায় ছুঁড়ে দিতেই দূর থেকে তার চোখ যায় প্রথম পাতায় বক্স করা একটা ছোট্ট নিউজ-এর দিকে। আবার পত্রিকাটা হাতে তুলে নেয় সে। সংবাদ শিরোনামটা তাকে একটা ধাক্কা দেয় ‘নববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী লাঞ্চিত’। প্রতিটা শব্দ যেন তাকে মরমে মরমে বিঁধতে থাকে। এ কী শুরু হয়েছে আজকাল! বইমেলা, পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি কিছুই বাদ যাচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটেই ঘটেছে এ ঘটনা। বন্যাকে নিয়ে বের হলে নিশ্চিত ঐ জায়গাটায় যাওয়া হত তাদের; দু’জনেরই ‍প্রিয় জায়গা টিএসসি’র খোলা্‌ এ চত্বরটি। ওদিকটায় গেলে কিছুক্ষণ সময় কাটাবেই তারা এ জায়গাটায়। পাতা উল্টিয়ে খবরের বাকী অংশের জন্য সে চতুর্থ পৃষ্টার প্রথম কলামে পৌঁছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে ৩০-৩৫ জনের একদল যুবক বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীততাহানি ঘটিয়েছে। তারা কারও শাড়ি ধরে টান দিচ্ছিল, এমনকি বিবস্ত্রও করে ফেলে কয়েকজনকে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে আহত হয় বেশ কয়েকজন। ...........বাকী খবরগুলো যথারীতি সেই একই, পুলিশ নির্বিকার - সাড়া দেয়নি মানুষের ডাকে, আমজনতা কেউ প্রতিবাদ করতে এগিয়ে আসেনি, প্রক্টর নিশ্চুপ, ভাইস্ চ্যান্সেলর ব্যস্ত..........নতুন উপাদান একটাই, প্রক্টর সেই সময়টিতে কম্পিউটার গেমস্ নিয়ে ব্যস্ত।

একটা তৃপ্তির শ্বাস বেরিয়ে আসে রকিব-এর কন্ঠ থেকে, ‘যাক, বন্যাকে নিয়ে বের হইনি, গেলে যে কী হত’। পরমূহুর্তেই ভাবনা আসে, যদি বের হত তাহলে কী হতে পারত! সে নিজেকে নিশ্চিতভাবে দেখতে পায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেটে; হাতে হাত রেখে হাঁটছে দু’জন। আজ বন্যা তার পছন্দের সেই লাল জামদানি শাড়িটা নামিয়েছে। লাল-সাদা চূড়িতে ভর্তি হাত দু’টো, কপালে লাল বড় একটা গোল টিপ। সাধারণতঃ খুব একটা বেশি সাজগোজ করে না সে। আজ পহেলা বৈশাখ পেয়েছে তাকে; চোখে কাজল টেনেছে; চুলের খোঁপায় একটা লাল গোলাপ, তার উপর দোয়েল চত্বর থেকে কিনে নেয়া ফুলের গোল চাকতি মাথায়। বৈশাখের রঙে মাতোয়ারা বন্যার শাড়ির আঁচলটা ঝিরঝির দুলছে বাতাসে, শেষ বিকেলের সূযর্টাকে পেছনে রেখে। বন্যার হাতে হাত রেখে সে টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে ঢুকে যাচ্ছে, আশেপাশে খোঁয়ার ছেড়ে বেরিয়ে আসা মুরগীর পালের মতো অসংখ্য নারী-পুরুষ, বৈশাখের এ দিনটায় মুক্তি আর আনন্দের ছোঁয়া গায়ে মাখাতে বেরিয়ে পড়েছে দলে দলে। গেটের কাছে পৌঁছতেই সে টের পায় চারপাশে কিছু যুবকের উল্লাস; দল বেঁধে বৃত্তাকারে ঘুরছে তারা; মাঝখানে কয়েকটি নারী-পুরুষ। যুবকেরা উল্লাস করতে করতে তাদের দিকে ধেয়ে আসতে থাকে। বৃত্তের ভেতরে আটকে পড়া নারীগুলো চিৎকার করে উঠে ভয়ে, আতঙ্কে; কিন্তু সে চিৎকার যুবকদের সিটি আর বাঁশির শব্দে চাপা পড়ে যায়। অাশপাশের নারীদের কাপড় ধরে টানতে থাকে তারা; বন্যা রকিবকে বুকে জড়িয়ে ধরে, জোরে খুব দ্রুতলয়ে আতঙ্কের শ্বাস ফেলতে থাকে। পেছন থেকে কয়েকটা হাত বন্যার শাড়ির আঁচল ধরে টান মারে। বন্যাকে বুকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই পেছন থেকে আরো কয়েকজন রকিবকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় আর বন্যার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; ছিঁড়ে ফেলে বন্যার সেই লাল জামদানি; ‍ওর দিকে তাকিয়ে রকিব জোরে চিৎকার করে উঠে ‘নাহ্........।’ ‘কী হয়েছে তোমার, চিৎকার করছ কেন?’ বন্যার শব্দে সম্বিৎ পিরে পায় রকিব।
‘নাহ্, কিছু না........কিছু না.......’ বলে পত্রিকাটা ছুঁড়ে দেয় সে।
‘কী হয়েছে? তোমার চোখ-মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন?’
‘নাহ্, কিছু না, এমনি’ বলে বাথরুমে চলে যায় রকিব।
তার ভেতরটা অস্থির লাগে। দৃশ্যটা মন থেকে কিছুতেই মুছে ফেরতে পারে না। তার চোখ জ্বালা করতে থাকে। কেমন যেন একটা বমি বমি ভাব হতে থাকে তার। কলটা ছেড়ে দিয়ে চোখে পানির ঝাপটা দেয় অনেকক্ষণ ধরে। এ কোনদিকে যাচ্ছি আমরা দিনের পর দিন, এত সব ঘটনা ঘটে, কারোর কোন বিকার নেই, কোন বিচার নেই, প্রতিবাদ করতে আসলে মার খেতে হয়........নিজেকে প্রশ্ন করে নিজের কাছেই জবাব খুঁজে; কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পায় না সে।

শুক্রবারের সকালটায় এতো তাড়াতাড়ি কখনো ঘুম ভাঙে না তার; আজ একটু ব্যতিক্রম। বিছানা ছেড়ে উঠে মুখ-হাত ধুয়ে নিয়ে সে রান্নাঘরে নাস্তার আয়োজন করতে থাকে। অফিসের দিনগুলোতে বন্যাকে একাই সামলাতে হয় সব; ছুটির দিনগুলোতে সে সহযোগিতা করে একটু। নাস্তাটা টেবিলে সাজিয়ে আজকের পত্রিকায় চোখ বুলাতে থাকে রকিব ............ প্রথম পাতা, শেষ পাতা, ভেতরের পাতা। আজ আর প্রথম পাতায় জায়গা পায়নি বিষয়টা; এভাবেই প্রথম পাতা থেকে শেষ পাতায়, ভেতরের পাতায় প্রান্তিক হতে হতে এক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হারিয়ে যায় অন্যকিছুর আড়ালে। খবরের পাশাপাশি আজ একটা দায়সারা গোছের সম্পাদকীয়; বুদ্ধিবেশ্যা আর তাত্ত্বিক ছাড়া আর কেইবা এসবে চোখ বুলায়।

‘কী বানিয়েছো আজ?’ বন্যা এসে হাজির হয় ডাইনিং টেবিলে।
‘খিচুড়ি, তুমি তো পছন্দ কর খু্ব, দুপুরটাও চলে যাবে।’
‘ভালোই হয়েছে, আজ আর রান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে না। দুপুরটা এ দি্য়েই চালিয়ে দেব তাহলে, আর রাতে ফেরার সময় বাহির থেকে কিছু একটা নিয়ে আসলেই হবে। তা, কোথায় যাচ্ছি আমরা আজ?’
‘কোথাও না’ । রকিবের কেমন যেন অস্থির লাগে। গত কালকের পত্রিকার পাতাটা তোর চোখের সামনে নিরালম্ব হয়ে ঝুলতে থাকে। সােহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট, টিএসসি চত্বর সব যেন অদৃশ্য এক বাধার দেয়াল হয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে, এ দেয়াল ভাঙার কোন ইচ্ছা বা শক্তি নিজের মাঝে খুঁজে পায় না সে। ভাবে, এর চাইতে বাসায় বসে থাকাই ভাল!
‘কোথাও না মানে?’
‘কোথাও না মানে কোথাও না, আজ আর বাইরে বেরুব না, সারাদিন ঘুমাব’। কালকের সে দৃশ্যকল্পটা তার চোখের সামনে থেকে সরে না। কেমন যেন গা ঘিনঘিন করতে থাকে। বাইরের কথা ভাবতেই কেমন যেন অস্বস্তি হয় তার। মনে হয় বেরুলেই বিপদ। বাইরে পা দিলেই তাদের দুজনকে ঘিরে ধরবে মূর্তিমান কোন পাপ।
‘কী হয়েছে তোমার বলতো দেখি। সারাদিন ঘুমাবে মানে, তুমি তো কখনো এমন করো না, বরং আমি বেরোতে না চাইলে উল্টা আমার সাথে ঝগড়া করো’ গোঁ ধরে বন্যা।
‘ভালো লাগছে না। বাইরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। কীভাবে বাইরে যাব বল? কোথাও কি কোনো নিরাপত্তা আছে আজকাল?’
‘হঠাৎ কী হল আবার?’
‘কালকের পত্রিকা দেখনি? পড়ে দেখ’। চেয়ার ছেড়ে উঠে পত্রিকাটা এনে বন্যার চোখের সামনে মেলে ধরে রকিব।
বন্যা পত্রিকায় চোখ বুলাতে থাকে।
‘আমি বুঝি না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় এসব ঘটনা কিভাবে ঘটে, কেউ কোনো প্রতিবাদ করে না, কেউ ধরা পড়ে না’ বিস্ময় ঝরে পড়ে বন্যার কন্ঠে। ‘কাউকে ধরেছে পুলিশ? আজকের পত্রিকায় কোনো নিউজ নেই?’ বলে আজকের কাগজটা টেনে নেয় বন্যা।
‘অভিজিৎরা খুন হয়ে যায়, কিছুই হয় না, আর তুমি এ ঘটনার প্রতিবাদ আশা করছ। দু’মাস পার হতে চলল, কোনো খবর আছে ঘটনাটার? তার ওপর ওয়াশিকুর........’ রকিবের কন্ঠে হতাশা। ‘পত্রিকা কোনো খবর দেবে না, তারা সবাই সিটি কর্পোরেশনের ইলেক্শন নিয়ে ব্যস্ত, ব্যবসায়ীরা নিবার্চনে নেমেছে, পত্রিকার পাতা আর টিভি চ্যানেলের খবর হতে ক’টা টাকাই বা আর ইনভেস্ট করতে হয়! টক শো দেখ, শুয়োরের বাচ্চারা নিশ্চয়ই বলবে এই সন্ধ্যায় কেন মেয়েরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে, তাও এত সাজগোজ করে?’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলে পরিচয় দিতে আজকাল ঘেন্না হয় আমার। সমস্ত এলাকায় এখন সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো, চাইলেই তো এটা বের করা যায় কারা করেছে’, বন্যা উত্তজিত হয়ে উঠে।
‘তোমার কি মনে হয়, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা এটা জানে না। তুমি ভাবছ বাহির থেকে উটকো লোকজন এসে এসব ঘটিয়ে চলে যাচ্ছে। যেখানে তোমাদের বড় বড় ছাত্র সংগঠনগুলোর ইশারা ছাড়া একটা গাছের পাতাও নড়ে না, সেখানে নির্যাতিতদের বাঁচাতে গিয়ে মার খেতে হয় কেবল লিটন নন্দীদের’।

রকীবের মনে পড়ে বইমেলার সময়কার একটা ঘটনা। বইমেলার সময় এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে লাইনে দাঁড়িয়েছিল তারা। লাইনের বাইরে থেকে একজন ঢুকতে গেলে পেছন থেকে বাধা দেয় অন্যজন। সাথে সাথে উদয় হয়েছিল আট দশ জনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাহিনী, আর লাইন থেকে মারতে মারতে বের করে দিয়েছিল অসহায় প্রতিবাদকারী সেই ছাত্রটিকে কারণ লাইন ভেঙে ঢুকতে যাওয়া ব্যক্তিটি একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা। ‘তোমার মনে আছে সেই এটিএম বুথের ঘটনাটি? ঘটনাস্থল তো সেই একই। ডাচ-বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে কত দূরত্ব বলবে আমায় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গেটের? কোথায় আজ তোমাদের সেই ছাত্রনেতারা, কোথায় তাদের সেই পেটোয়া বহিনী যারা ক্যাম্পাস লিজ নিয়েছে?’একটু একটু করে রকিবের গলা চড়তে থাকে।
‘ওদিকে দেখ, কী নিবির্কার আমাদের প্রক্টর? আর কারোর কোন সাড়াশব্দ নেই এ ঘটনায়, যেন কারোর কিছু যায় আসে না’ বন্যার কন্ঠে ক্ষোভ আর হতাশা।
‘কেন থাকবে? তারা তো কেউ ভিক্টিম হচ্ছে না, এসবের শিকার তো হচ্ছি তোমার আমার মতো সাধারণ মানুষ’।
নিজের বিপন্নতা রকিবকে কেমন যেন অসহায় করে তোলে। বন্যা আরো কী কী যেন বলতে থাকে। কিন্তু সেসব কিছুই কানে যায় না রকিবের; এর মধ্যেই তাকে কালকের সেই অনুভূতিটা আবার ঘিরে ধরে। এক ঘোর লাগা ভাবনা তাকে টেনে নিয়ে যায় সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের গেটের দিকে। আজ বন্যা নেই সাথে; তবু সে একা নয়। তার সাথে সেই যুবকের দল যারা বৈশাখের প্রথম সন্ধ্যাটায় নারীদের বিবস্ত্র করে বুনো উল্লাসে মেতেছিল, সে এক ফাঁকে এদের ভিড়ে মিশে যায়। মাঝের বৃত্তটায় যথারীতি সেই নারীদল, ফুলেল সজ্জা, বৈশাখের রঙে রাঙা। কিন্তু একি, একটু যেন বিভ্রম লাগে তার; চেহারাগুলো খুব চেনা চেনা লাগে তার, খু্ব পরিচিত! হ্যাঁ, টিভিতে দেখা যায়, পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে। একটু একটু করে যেন চিনতে পারে সে, চোখটা ঠিক যেন ক্ষমতায় সমাসীন মুখগুলোর মতোই দেখায়; কপোল আর গ্রীবা জুড়ে আরো কিছু চেনা মুখ, চেনা ভঙ্গি এসে ভিড় করে বৃত্তের সেই শিকারগুলোর মাঝখানে। সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় একেকটি নারীদেহে। যুবকদের সাথে হাতে হাত রেখে সিটি বাজিয়ে রকিবও এগিয়ে যেতে থাকে বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে। সেই চেনা মুখগুলোর একটি তার হাতের কাছে এসে পড়ে। তার সমস্ত রাগ, ক্ষোভ যেন থাবায় এসে ভিড় করে, মনে মনে বলে, তোদের জন্যই তো দেশের আজ এই অবস্থা, তোদের তো কিছু যায় আসে না, আজ বুঝবি মজা বলে নারীটির শাড়ি ধরে হেঁচকা টান দেয় সে। মুহুর্ই তার চোখের সামনে এসে পড়ে তার বক্ষযুগল, সরু কোমর আর লালচে কালো নাভী। তার সারা শরীর জুড়ে কয়েকটি হাত কিলবিল করতে থাকে। প্রতিশোধের নেশা আর উত্তেজনা ঘিরে ধরে রকিবকে। সুবিধাজনক জায়গা খুঁজে বেড়ায় তার হাত। নীচের কাপড়টি ধরে টান দিতেই উত্তেজনা বেড়ে যায় আরো। উত্তেজিত হাত দুটো সামনে বাড়াতেই হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে আসে রকিবের। নিজের হাত দু’টোকে কোনভাবে সামলে নিতেই নিম্নাঙ্গের উত্তাপ টের পায় সে, যেন ফেটে পড়তে চাইছে লুঙ্গি ছিঁড়ে। বুঝতে পারে সে, তার এখন স্নানঘরে যাওয়া দরকার, তার কিলবিল করা হাত দুটোই কেবল পারে তাকে এ মূহুর্তে শীতল করতে। তবু সে দ্বিধান্বিত হয় আসলে তার কী করা উচিত এই ভেবে। একদিকে মনে হয় তার এখুনি সকল ভয় উপেক্ষা করে বন্যার হাত ধরে গিয়ে দাঁড়ানো উচিত সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের সেই জায়গাটিতে, তার হাতে থাকবে গজারির শক্ত লাটি; চিৎকার করে বলবে ‘আয় শালা নারীলোলুপ কুত্তার বাচ্চারা, কার সাহস, আজ আমার সামনে একবার এসে দাঁড়া’। অন্যমন চাইছে স্নানঘরের ছিটকিনি দিয়ে দরজায় পিঠ রেখে লুঙি ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ুক সে, তার চোখের সামনে একে একে ভিড় করবে সব বিকারহীন সে অবয়বগুলো এতোক্ষণ যেগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল - একের পর এক শরীর তার সামনে এসে দাঁড়াবে, সে হেঁচকা টানে শরীর থেকে কাপড় খুলে নেবে, বুনো উল্লাসে খামচি আর কামড় বসাবে সমান; তার কোমর, পাছা দু’হাতের সাথ তালে তাল মিলিয়ে সামনে পেছনে আসা যাওয়া করতে করতে তাদের বুঝিয়ে দেবে এর যন্ত্রণা কেমন, ক্ষত কত গভীর! এ দ্বিধায় রকীব স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে পড়ে আর ভাবতে থাকে তার আসলে কোনটা করা উচিত!

১৬।০৪।২০১৫
ঢাকা
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×