somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

|তিল-গপ্পো| জ্বরের ঘোরে দেখেছিলাম কালাজলের পাথার

২০ শে জুলাই, ২০০৯ ভোর ৫:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জ্বর এলে খোকাটে হয়ে যাই, উলট-পালট শুয়ে থাকি সারা বিছানা। আধ খোলা চোখে বিছানায় কাঁথা-কম্বলের রাজ্য বিস্তার দেখি! আমার সিথানে এক ফালি জানালা, খানিক উঁচুতে; পূর্বমুখী বলে বিকালের ঘ্রাণ টানার সময় আমি সাঁঝের কোমরের গন্ধ পাই- আমার সুখ হয়। আজ কেবল জ্বরের সংস্পর্শে ঘোর- নিউরনে ক্রমশ স্থান-দাবীদার একটি শিরীষের পত্র, আমি রেখা টানি তাতে; আমার সুখ হয়।
ঘরের তাপমাত্রা এই কড়াইয়ে-বেগুন-ভাজার মতো অসহনীয় চৈত্রের নয়, কামরার দু'কোণে গামলায় পানি জমানো থাকে, ফলে তাপ বাড়ে বা কমতে সময় নেয়! আজ গামলার জলে বাইরের আকাশের বিম্ব, কাঁপছে। পানি কাঁপছে না আকাশ কাঁপছে?

আমি একটা বটগাছের ছায়া চিনি, যেহেতু কেবল ছায়া চিনতেই কয়েক মুঠো জীবন লাগে তাই এই জীবনে আমি বটগাছকে চিনি নাই। জানি সেই গাছের পাতার গোপন গল্প হাওয়ার পাটিতে করে ঠাঁই নেয় পাশ্ববর্তী নদীর বুকে। উজানে ভাসতে ভাসতে সেই পাতা কতিপয় জল কুড়াতে আসা মাঝিকন্যার ঘুঙুরে ঠেকে, কন্যার ঘুঙুরে তখন ভোরের মাতৃরোদের শরীর মাখায়িত! আমি ভাবতে থাকি, অন্যদিকে মনযোগ দিয়ে যদি মাথাব্যথ্যা নিষ্ক্রিয় করা যায়। আচ্ছা, মাঝিকন্যার গায়ের রঙ কি? কাশবন সাদা? কি জানি! ঝিয়ারির কপালে কি টিপ আছে?

আমি কম্বল টেনে নিলাম আরো, রাঁ-রাঁ করে উত্তাপ জমছে নিচে। মায়ের বুকের কাছে শৈশবে, বুবুর কোমরের কাছের শাড়িতে আমি এমন উত্তাপ পেতাম কৈশোরে; বুবুর সন্তানেরা এখন স্নেহের বর্গাচাষী! আমাকে-ও তেমন মানায় না যুবা বয়সে আহলাদ করা।
আচ্ছা, মনে করে নিই যে মাঝিকন্যার কপালে টিপ নাই। সুজানাকে আমি কখনো টিপ পরা দেখি নি, তবে একবার অনুষ্ঠানে আনন্দ করে সিঁদুর পরতে দেখেছিলাম; বেমানান লাগছিল। সুজানা আমার সহপাঠিনী ছিল, গতবার ফেল করে অনুজ হয়ে গেছে! তবে হৃদয়ের প্রবীণতার কথা না বলি। অথচ সপ্তাহ দুয়েক অভিমানে কথা নেই, সুজানা কি জ্বরের বাড়ির ঠিকানা জানে না!
মনে করি, মাঝিকন্যা লাল লাল ঠোঁটে মেখেছে জিহবার ভাপ; শাড়ি পরে শরীর জমাচ্ছে বয়েসী!
কলস ভর্তি জল দিয়ে কি করবে মাঝি-তনয়া? ওদের ঘরে কি পূজো হয়? কীর্তন হয়? নাকি মাঝি ভোরের জমাট ঘুম ছেড়ে তেলাওয়াত করে এবং এই পানি দিয়ে ওযু করে? নদীর ধারে এসে খালি কলসী কাঁখে নিয়ে ফিরে গেলে ঢের রহস্য, আমি জ্বরের মাঝে-ও আপনাআপনি গল্প জুড়ে দিতে পারতিম; মাঝির বউ কি গাঙ্গে সিনান না করে উঠানে করে? নাকি ওরা পানি পান করে? কন্যার কাঁখে কেবল জল আর জল.....।

আধ বোজা চোখ দিয়ে দেখি গামলার জলের পরিমাণ। পাশের বাড়ির বিড়ালটা ঘরে ঢুকে। শালা, জ্বর না থাকলে এটারে লাথি মারার কাম; গতকাল আমার জুতোর পাটি কামড়ে ধরে দৌড় দিয়েছিল!
হুঁশ....., হুঁশ...। আমি বিড়াল তাড়াতে চেষ্টা দিলাম, ব্যাটা গামলার পানি খাচ্ছে। ধুর, পানি খেয়ে শেষ করলে তো ঘরের তাপমাত্রা আরো বাড়বে! আচ্ছা, মাঝিকন্যাদের কি খড়ের ঘর? খড়ের ঘরে রাত কাটাতে কুসুম কুসুম ওম! আমি জানি, নিতাই সর্দারের ঘরে একরাত্তি কাটিয়েছিলাম; সর্দারের বউ রাতে ঘুমায় তেজপাতা!
বিড়ালটা পানি খাচ্ছে পায়ের থাবার নিচে গামলার কিনারা আটকে রেখে বিপদজনকভাবে; যে কোন মহূর্তে পানির গামলা উল্টে যেতে পারে। এই জ্বর শরীরে কে পানি কাছাবে?
মাঝিকন্যার চুলে কি মেঘের পিজ্ঞরচিহ্ন আছে? রাত হলে জোনাকদের পাশে যেমন জেগে উঠে? জোনাকরা কি কাঁখের কলসের রহস্য জানে? কি জানি বাপু!

বারান্দায় পায়ের আওয়াজ হচ্ছে, কেউ আসছে।

আধ-খোলা দরজাটা পুরোপুরি খুলে গেল, আমার চোখে পড়ল দু'পাটি হিলওয়ালা জুতো। সচকিত শব্দে বিড়ালটা মুখ তুলে তাকাল, ভয়ার্ত চোখে দৃশ্য বুঝে দিল এলোপাতাড়ি দৌড়; ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হলো- মেঝেতে গামলার পানি গড়াগড়ি, স্পর্শ করল হিলওয়ালা জুতোর তলা।
সেদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আমি বুঝে গেলাম মাঝিকন্যার কাঁখে ধরা কলসে জলের রহস্য!

আমার বিছানায় কতিপয় বেলী-খই।
৫০টি মন্তব্য ৫২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×