somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তার কান্নার পাশে আমার নির্জন, ভায়োলিন-ব্রাত্য চিনে রেখে

১৩ ই মার্চ, ২০১০ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অভিলিপি: তার কান্নার পাশে আমার নির্জন, ভায়োলিন-ব্রাত্য চিনে রেখে


আমাকে সে টোকা দিয়ে বলল, 'কেমন আছো? সময় কেমন কাটছে?'

এই শীত যাচ্ছি যাচ্ছি সকালে কিংবা ভাসুরের চোখ দিয়ে বোরকার আড়ালে থাকা বধুকে দেখার মতো উঁকি দিচ্ছে দিচ্ছে বসন্তে কেমন আছি এইটুকু ভাবার অবসর নেই। হয়তোবা প্রতিদিনের ক্লান্তি-অক্লান্তি শেষে নিজেকে খুব গোপনে ব্যবচ্ছেদ মতো করে সময় কাটা হয় না। তাই চুপ রই। দায়সারা উত্তর দিই। সে মনে করে তাকে উপেক্ষা করছি, পাখিরা যেমন সুবোধ রোদের সন্ধানে সাইবেরিয়া প্রস্থান করলে আমাদের সীমানায় অতিথির মর্যাদা পায় তেমনি তার কাছে আমি এখন অতিথি; অতিথির সাথে দীর্ঘপরিসরে গল্প করা যায়, কবিতাপাঠ করা যায় না।
আমিতুমি তাই জলসন্ধি।


অনেকদিন পর বাইরে বেড়িয়ে এলাম। একা একা। সভ্যতা যত উন্নতি করছে মানুষ বাইরে বাইরে তত সংবদ্ধ হচ্ছে- আর নিজের ভিতরে ভাদ্রমাসের প্রতিথযশা কাশফুলের মতো নিঃস্ব হচ্ছে। তাই নিজেকে নিজের মতো করে একটু চরিয়ে আসার সুযোগটা অবহেলার নয়। নিজেকে একা পেয়ে মনটা বিয়ের প্রস্তাব দেয়! খুব ভালবেসে কারো চোখের পানি, স্বপ্নের লাবণ্য হাতে নিতে দ্বিধা হবে না, তবে কারো পাণিপ্রার্থী হতে মন বাধ সাধে! সম্পর্ক হলো ভালবাসার ভাললাগার প্রণয়তাঁর- সীমান্তের কাঁটাতাঁরের চে' তীক্ষ্ম ধারালো আর সর্বদা জানান দেয় এমন।


এমন রাতে ঘুমাতে ইচ্ছে করে না। গান শুনতে ইচ্ছে করে না। শৌখিন অন্ধকারে আমি তোমাকে গড়ি। তুমি তাতানো মোমের মায়া, পুড়তে পুড়তে মোমশিল্প রেখে যাও। আলো নিভে গেলে টেবিলের উপর পড়ে থাকে- অন্ধকারের মৃত ঈগলগুলো আর আমার কলমের কাছে গত জীবনের যুদ্ধবাজ আমার একটি শিরনাস্ত্র।


খুব মাথা ব্যথা হলে কিংবা জ্বরের ঘোরে পড়লে জীবনানন্দ দাশ পাঠ করতে ইচ্ছে হয়। হয়ে উঠে না। ইচ্ছে জিয়ে রাখার মাঝে সুখ আছে, সুখ জীবনের কাছে শৈশবের মোয়া।
তরকারীতে হালকা ঝাল না থাকলে যেমন বাঙালির মুখে স্বাদ জাগে না, তেমনি জীবনবাবু না পাঠ করলে বাঙালি কবিরা কবি হয়ে উঠে না।

নিজেকে নিজের মতো করে প্রকাশ করতে পারতে পারাই শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য। ধর্ম-ও এক ধরনের সাহিত্য। সাহিত্য মন ভুলিয়ে রাখে।


আমার কোন সহগর্ভজ ছোট বোন নেই। জীবনের অনেক নাপাওয়ার মাঝে এই অপাওয়াটা বিরাট কিছু। ইস্কুল-জীবনে অনেক বন্ধু ছোট বোনের গল্প করত, তাদের কীর্তির তারিফ। আমি চুপচাপ শুনতাম, বরাবরই ভালো শ্রোতা।

কিছু কিছু ত্যাদড় ছেলে-ও ছিল। তারা পিঠাপিঠি বয়েসের ছোট বোনের বান্ধবীদের সাথে প্রেম করত! কিংবা ছোট বোনকে মেঘপিয়ন বানাত। কী সব হাস্যকর ব্যাপার। বয়সসন্ধিতে লুকিয়ে সিগারেট খাওয়ার রোমাঞ্চ কিংবা হঠাৎ চোখের জলসায় কোন মেয়ের নারী হয়ে যাওয়া অবলক্ষণ করার মতো ব্যাপার না হলে-ও ছোট বোন বিশেষ কিছু। না থাকা মানুষকে পোড়ায়, আর বিদ্যমান থাকা জিনিসটা আতশকাঁচের নিচে রাখা ডিজেল- খেয়ালে খেয়ালে রাখতে হয়।

আমার এক ভাই মৃত এসেছিল পৃথিবীতে। আমার ঠিক বড়, বড় ভাই'র ছোট- অর্থাৎ দু'জনের মাঝামাঝি। মাঝে মাঝে মনে হয় হয়ত তার মতো আমি-ও মৃত জন্মগ্রহণ করতে পারতাম! কী কারণে কী পরিবেশে সে মৃত এসেছিল সেইসব প্রশ্ন আমি মাকে অনেকবার করেছি- ইনিয়েবিনিয়ে অসংখ্য পরিস্থিতিতে ও সুযোগে। মা বরাবরই নিশ্চুপ। মাকে দেখে মনে হয় তিনি নিজে অপরাধী ভাবেন।

মানুষ হয়ে বেঁচে থাকাটা চমকপ্রদ। এই যে মাঝে মাঝে মনখারাপের বৃষ্টিতে আমার খুব একা একা ভিজতে ইচ্ছে হলে, ভীড়ের মাঝে নিজেকে বেমানান মনে হলে, কিংবা হেরে গিয়ে জীবনের মানেটা পাল্টে দিতে ইচ্ছে করলে- সেইসব অজস্র সময়ে অসময়ে আমার মৃত অগ্রজ কিংবা না-থাকা-একটি-ছোট-বোন আমার পাশে এসে দাঁড়ায়। আমি অপ্রকৃতিগ্রস্তের মতো তাদের স্পর্শ করি, আমার মননের চর্মে । তাদের জীবনগুলো কখনো কখনো কীবোর্ডের টুকটাকে বা কলমের অক্ষরে গল্প হয়ে যায়।
আমার খুব ইচ্ছে হয় একটা গল্প লিখি তাদের নিয়ে; আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রচনাটি তাদের নিয়ে হোক।

মানুষের জীবনটা আসলে অগণিত মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সমষ্টি। মানুষ অপ্রতুল জীবনে অনেক মরুভূমি পাড়ি দেয়। কখনো কখনো একটির পর একটি, কখনো কখনো সমান্তরালে কয়েকটি। মরীচিকা মানুষ নিজেই তৈরী করে, নিজে সতেজ উদ্দামে রাখার জন্য। অন্য সব মরুভূমির ভিড়ে তাদের না-থাকাটা আমার কাছে একটি সমান্তরাল মরু-অতিক্রম।


মুখোশ পরা দোষের কিছু না, মুখোশ পরে অন্ধকারবাজি করাটাই জঘন্য। আমার নিজের-ও অসংখ্য মুখোশ আছে, সবার থাকে। মানুষ আর ঈশ্বর মাত্রই মুখোশজীবী। দুই হাজার বছরের-ও অধিক আগে প্রচুর মানুষেরা ধুলোর মুজা পরে, প্রকৃতির পোশাক পরে ভুলনদীর কাছে এসে দাঁড়িয়েছিল। বিছিন্নভাবে সমষ্টিগত হয়ে! উদ্দেশ্য ছিল মুখোশগুলো নদীতে ছঁড়ে দিবে, জলে বিলীন হয়ে যাক। নদীসকল হাঁপানি নিয়ে প্রতিবাদ করে, সমুদ্দুরসব হরতাল হরতাল বলে ধর্মঘটের জন্য উঠেপড়ে লাগে। ফলে মানুষেরা মুখোশ ফিরিয়ে নিয়ে ঘরে ফিরে। জন্মের সময় এক পিঠ মৃত্যুর সময় অন্য পিঠ- মাঝে পলাতক স্কুইডের মতো অনেকবার রঙ পাল্টে মুখোশগুলোর।


তার কান্নার পাশে আমার নির্জন,
ভায়োলিন-ব্রাত্য চিনে রেখে।
নখ ও নারী জীবনের খোল।


আমার একটা অদ্ভুত খেয়াল আছে। যেমম- কারো চেহারার দিকে তাকালে আমি তার নাকের দিকে প্রথম তাকাই। নাকটা ভালো লাগলে, মানে সুন্দর লাগলে তবে জমে। তারপর দেখি থুতুনী আর ঠোঁট। এরপর শরীরের অন্যদিকে। তবে পায়ের দিকে তাকানো হয় না সচরাচর।


অনেক কাল আগে মনে হতো জলে ডুবে আমার মৃত্যু হবে। কে কারণে একা একা অনেক কষ্টে সাঁতার শিখে নিয়েছিলাম। মানুষ নাকি সাঁতার আর সাইকেল চালানো কখনো ভুলে না!
ইদানীং মনে হয় আমার মৃত্যু হবে ঘুমের ভিতর কিংবা যানবাহনের নিচে পড়ে বিভৎস রকমের।

৩/৩/২০১০
৩৩টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×