somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রদ্ধেয় জাফর স্যারঃ নিজেকে প্রশ্ন করুন

১২ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গতকাল যুগান্তরে জাফর ইকবাল স্যারের কলাম প্রকাশ হয়েছে "আমি রাজাকারঃ একটি আলকচিত্র" নামে ,সেখানে কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের রাজাকার প্রিতি সম্পর্কে লিখেছেন ।সবাই পড়ে নিতে পারেন লেখাটা ।
আমি প্রথমে বলব ,আমাদের ইতিহাস জানা উচিত ,বেশি থেকে বেশি মুক্তিযুদ্ধের বই পড়া উচিত । যেহেতু আমরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম তাই আমাদের নিজ উদ্যোগেই বেশি থেকে বেশি মুক্তিযুদ্ধের চর্চা করা উচিত । আমাদের যেমন ৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ভুমিকা,আত্মউৎসর্গ থেকে অনুপ্রেরনা নেওয়া উচিত ,তেমনি ঘৃণিত রাজাকার সম্পর্কেও বিস্তর জানা উচিত । সেক্ষেত্রে ,কলামে জাফর ইকবাল স্যার ৭১ এ রাজাকারদের যেভাবে চিত্রায়িত করেছেন তা অনেকটা প্রসংসার দাবীদার ।

প্রসঙ্গ কথায় আসি ,জাফর স্যার কলামে "আমি রাজাকার!!!" কিংবা "চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার " এমন স্লোগান নিয়ে কথা বলেছে । আমার মতে স্যার এখানে একটু বুঝতে ভুল করেছেন ,কারন আমি শতভাগ বিশ্বাস করি ঐ আন্দোলনে কেউ "আমি রাজাকার ।" বলনি ,বলেছে "আমি রাজাকার!!!" । দাঁড়ি আর বিস্ময়সূচক শব্দে অর্থের যে বিশাল হেরফের তা আমার চে উনি ভালো বুঝেন । তবু ,আমার মতে উনি জেনে বুঝেই বাক্য টাকে উল্টিয়ে দিয়ে উল্টো বুঝেছেন ।

এখন কথা হল ,ছাত্র সমাজ কেন "আমি রাজাকার!!!" বাক্যটা উচ্চারন করলেন ,কেন এমন ক্ষোভের স্লোগান দিলেন । তার সহজ উত্তর হল অভিমান থেকে । কোটা আন্দোলনে যতই অনুপ্রবেশকারী ঢুকুক তবু শতকরা ৯৫ জন ছিলেন সাধারন ছাত্র ,মুক্তি চিন্তার ধারক বাহক ,মুক্তি চেতনায় বিশ্বাসী । এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কাওকে যখন হঠাৎ করে রাজাকার বানিয়ে দেওয়া হবে তখন গায়ে লাগা স্বাভাবিক ,এমন রুঢ় আচরন করা স্বাভাবিক । ভেবে দেখুন ,১৩ সালে যে মানুষ গুলো রাজাকারের ফাসির দাবীতে রাস্তায় নেমেছিল ,গলা ফাটিয়ে চিৎকার করেছে তাদের কে আপনি হঠাৎ করে রাজাকার ,জামাত শিবির বললে মাথায় আগুন লাগা স্বাভাবিক । আমি এখানে শুধুমাত্র মতিয়া চৌধুরীর বক্তব্য কে টানছি না ,কোটা আন্দোলনের বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছিল তারা এই আন্দোলন টাকে জামাত ,শিবির বা রাজাকারের বাচ্চা দের দৌড়আত্ম ছাড়া কিছুই ভাবতে পারেনি । সে কারনেই তাদের প্রতিক্রিয়া বা আন্দোলন বন্ধের প্রক্রিয়া ছিল জামাত শিবির দমন মূলক ,যদিও এই আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের ,মুজিব আদর্শের আন্দোলন ।

দ্বিতীয়ত এখানে সবচে বড় যে বিষয়টা কাজ করেছে ,তাহল আত্ম অভিমান ও আবেগ । কিন্ত স্যার ছাত্রদের সেই বিষয়টা পুরুপুরি এড়িয়ে গেছেন । আমি জানি যৌক্তিক আন্দলনে আবেগের ঠাই নেই ,কিন্ত আবেগ ছাড়া কোন প্রকার আন্দোলনও সফল হয়না । মানুষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়েছিল কারন তার প্রতি মানুষের আলাদা একটা টান ছিল ,আবেগ কাজ করত । গ্রামের মূর্খ চাষা ভূষারা ৭১এ যুদ্ধে গিয়েছিলেন নিছক দেশকে ভালোবেসে ,দেশের প্রতি আবেগ থেকেই । যে আবেগ ,যে দেশপ্রেম হয়তো তখন শিক্ষিত ,তাগড়া জোয়ান জাফর ইকবাল স্যার এর ছিল না । কিছুদিন আগে যখন জাফর ইকবাল স্যার এর উপর হামলা হল ,তখন পুরু বাংলার ছাত্র সমাজ জেগে উঠেছিল ,ধিক্কার এর ঝড় বইছিল স্যার প্রতি ছাত্রের অন্ধ আবেগ থেকে । কিন্ত স্যার কোটা আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্রদের সেই আবেগ কিংবা অভিমান কোনটারই মূল্য দেননি ।কিন্ত ৬৯ এ ছাত্রদের আবেগের মূল্য দিতেই শহীদ হন রাবি প্রভেষক সামসুজ্জহা স্যার ।

আর সবচে বড় যে কারন টা প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে তা আপনি অনেক ভালো ভাবেই বুজেছেন । আপনি যখন পত্রিকায় কিংবা বইতে বিভিন্ন ব্যঙ্গ লেখা লিখেন ,তখন পাঠক ধরেই নেয় আপনি বিষয়টা সম্পর্কে অবগত হয়েই এবং সরাসরি কোন প্রকার স্টেপ গ্রহন করতে না পেরেই এমন বিদ্রুপ করেছেন । কিন্ত স্যার রাজাকার শব্দ নিয়ে ছাত্ররা যে ব্যঙ্গ করেছে ,কোন স্টেপ গ্রহন করতে না পেরে নিজেদের কেই বিদ্রুপ করেছে তা আপনি বুঝেও অনেক যত্ন করে লেখা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন বিষয়টা । কিন্ত কেন ? স্বীকারোক্তি আর ব্যাঙ্গ দুটা আলাদা বিষয় ,কিন্ত আপনি এক করে ফেলেছেন । ছাত্রদের ব্যঙ্গাত্মক মূলক বাক্য নিয়ে কলাম না লিখে আপনার উচিত ছিল যারা মুক্তি চেতনা মুখে বলে রাজাকারের কাজ করে ,প্রতিটা রাত কে ৭১ এর কালো রাত বানায় তাদের বিরুদ্ধে লেখা ... কিন্ত আপনি সেটা পারবেন না ,আপনার সে সৎসাহস নেই ।

আরেকটি বিষয় আলচনায় না এনে পারছিনা ,তা হল কোটা আন্দোলনে জাফর স্যার এর ভূমিকা কি ছিল । যেখানে বাংলাদেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছে,,যেখানে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) ফটক ঘেরাও করে ছাত্ররা টানা আন্দোলন করছে , সেখানে তিনি আন্দোলনের বিষয়ে নাকি সহকর্মীর কাছ থেকে খবর পান ।এটা কতটা হাস্যকর হতে পারে ! যেখানে ঢাবি ,জবি ,জাবি ,রাবি শিক্ষকেরা সহমত জানাচ্ছে ,সেখানে উনি সাংবাদিক দের শুধু বললেন এটা সংস্কার করা দরকার । কিন্ত কেন দরকার ? সে বিষয়ে একটা কলাম বা লেখা ছাত্ররা যদি আশা করে সেটা ভুল ছিল না ।
আন্দোলন চলা অবস্থায় ঢাবি শিক্ষকেরা রাত জেগে ছাত্রদের পাহারা দিয়েছে যাতে ছাত্রদের কোন ক্ষতি হতে না পারে ,সেখানে উনি বলেন ঢাকা শহর কে জিম্মি করে আন্দোলন করতেছে ছাত্ররা । এর মাধ্যমে উনি কি বুঝালেন ,উনি এই আন্দোলনের পক্ষে ???

আশা করি কোটা নিয়ে একটা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ,কিন্ত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি জিজ্ঞেস করে কোটা আন্দোলনে আপনার ভূমিকা কি ছিল ,একজন বাবা হিসেবে সন্তানের প্রতি আপনি কতটা আন্তরিক ছিলেন ? তখন কি উত্তর দিবেন ,স্যার । জানি আপনার কাছে কোন উত্তর থাকবে না ,হয়তো কিছু গল্প শুনাবেন তাদের কিভাবে অনুপ্রবেশকারী ভিসির বাড়ি ভেঙ্গেছে ,কিভাবে ছাত্রলীগ বা পুলিশ আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করেছে ,কিভাবে আপনি ছাত্রদের ব্যঙ্গকে পুজি করে ,অভিমান কে পাত্তা না দিয়ে বিস্ময়সূচক বাক্যকে দাঁড়ি দেওয়া বাক্য বানিয়েছেন । এখন যেমন আপনার কাছে ৭১ সম্পর্কে জানতে চাইলে গল্প শুনান ,অন্যের আত্মত্যাগের গল্প ,হয়তো তেমনি গল্প শুনাবেন । বর্তমান প্রজন্ম যখন আপনার কাছে জানতে চায় ,স্যার আপনি যুদ্ধে যাননি কেন ? আপনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন না । কোটা আন্দোলনে কেন সমর্থন দেন নি এমন প্রশ্নের উত্তর তখনও দিতে পারবেন না ।
স্যার ,এখন যেমন দুয়েকটা মুক্তিযুদ্ধের বই লিখে ,আমাদের গল্প শুনিয়ে আমাদের মন থেকে যুদ্ধ কেন যাননি সেই প্রশ্ন কে আড়াল করতে পারেন নি ,ভবিষ্যতেও পারবেন না ।

স্যার আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি ,ভালোবাসি,দেশপ্রেমিক ভাবি কিন্ত তা কখনোই কিশোর রুমির চেয়ে বেশি না ,গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা চাষার চেয়ে বেশি না বরং অনেক কম । আপনি যতই গল্প বলেন ,ইতিহাস লিখেন ,আপনি যতই মুকিজুদ্ধের চেতনা ধারি হন ,কোনভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সৃষ্টি কারীদের চেয়ে বড় না । আপনি দেখেছেন কিভাবে রাজাকাররা মেয়েদের ধর্ষণ করেছে ,তা এখন আমাদের শুনান ।কিন্ত সামর্থ্য থাকা সত্তেও যখন প্রতিবাদ করেন নি তখন ভেবেই কষ্ট হয় আপনি এতটা কাপুরুষ ছিলেন । তাই ,বলছি মুক্তিযুদ্ধ চেতনার কথা বলুন ,তবে ৭১এ নিজের অবস্থান এর কথা মাথায় রেখেই বলুন ।

পরিশেষে বলব ,৭১ এ ভারত আমাদের অনেক টা সহয়তা করার পরও কিছু কিছু বাঙ্গালী ভারত কে দোষেন । সহায়তার কথা বাদ দিয়ে তারা বলেন , কেন তারা আমাদের যুদ্ধে জড়ালো ,কেন তারা শরণার্থীদেরকে সঠিক পরিষেবা দেয়নি এমন অনেক কিছুই। আপনিও তেমন ক্যাটাগরির মানুষ ,কোটা আন্দোলনে ছাত্রদের ত্যাগ - তিতিক্ষা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিজেদের মৃত্যুর সামনে দাঁড় করানো এমন অসংখ্য উদাহরন না দেখে ছাত্ররা কেন অভিমান করে "আমি রাজাকার!!!" বলছে তা খুচিয়ে বের করতেছেন । আসলে আপনার দ্বারা এর বাইরে কিছু সম্ভব না ,কারন যারা ছাত্র অবস্থায় কোন আন্দোলন করে নাই তারা বুঝবে না কেন ছাত্ররা "আমি রাজাকার!!!" বলেছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:১৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×