somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্কসবাদ

২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
মার্কসবাদ
আসিফ আযহার


মার্কসবাদ মানুষকে আবিস্কার করে জীবনের জন্য বৈষয়িক প্রাপ্তি ও বেঁচে থাকার এক নিরন্তর সংগ্রামে যার মধ্য দিয়ে সে সমাজবদ্ধ উৎপাদন প্রণালী ও বণ্টন ব্যবস্থা গড়ে তোলে যা বার বার বিকশিত হয়ে এমন এক অবস্থার মুখোমুখী হয় যে নবতর উৎপাদন সম্পর্ক ও সামাজিক ব্যবস্থার নতুন বিন্যাস অনিবার্য হয়ে পড়ে। পুরনো ব্যবস্থা ভেঙ্গে নুতন ব্যবস্থায় উন্নীত হওয়ার এ পবর্টাই বিপ্লব। এ বিপ্লব ঐতিহাসিক কাল থেকেই চলে আসছে স্বত:স্ফূর্ত প্রক্রিয়ায়। দাস বিদ্রোহের দিন শেষে এসেছে সামন্ততন্ত্রের যুগ। ভূমিদাস প্রজারা অত্যাচারী রাজা ও সামন্তদের বিলাসিতার জন্য পশুর মত খেটে চলে সারাদিন। খাটুনির ফসল ভাগ হয়ে চলে যায় রাজার ভাঁড়ারে এবং চার্চ কিংবা ব্রা‏হ্মণের মন্দিরে। নিজের জন্য অবশিষ্ট থাকে সামান্যই। ফলে বেজে ওঠে বিদ্রোহের নাকাড়া। এ বিদ্রোহ রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রজাসাধারণ এবং কারিগর-বনিক শ্রেণী উভয়ের। উদাহরণ- ১৬৮৮ সালের ইংল্যান্ডের বুর্জোয়া বিপ্লব, ফারাসী বিপ্লব, কৈবর্ত বিদ্রোহ। আবার এ বিদ্রোহ গির্জার ধর্মীয় শোষণের বিরুদ্ধে। এ বিদ্রোহ রূপ নেয় শোষণের কৌশল হিসেবে ধর্মের ব্যবহারের বিরুদ্ধে দর্শন ও বিজ্ঞানকে প্রতিষ্ঠিত করার বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে। এর নাম রেনেসাঁ। এ বিদ্রোহের গর্ভে জন্ম নেয় পুঁজিবাদী সমাজ। এ পুঁজিবাদ দেশের গন্ডি পেরিয়ে বেরিয়ে পড়ে সাম্রাজ্যবাদের চেহারা নিয়ে পশ্চাৎপদ সামন্ততান্ত্রিক কিংবা আদিম সমাজ শাসিত ভূখন্ডগুলোর উদ্দেশ্যে উপনিবেশ কায়েমের লক্ষ্যে। সারা পৃথিবীতে উপনিবেশ কায়েমের পর যখন আর কোন ভূখন্ড বাকী রইল না তখন হঠাৎ করে উঠতি সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো উপনিবেশের ভাগ চেয়ে দাবী করে বসে। ফলে বেধে যায় লড়াই। এর নাম বিশ্বযুদ্ধ। এটা ঘটে যায় একবার নয় দুবার। দ্বিতীয়বারে এ যুদ্ধে হেরে গিয়ে উঠতি মাস্তান নব্য সাম্রাজ্যবাদী জার্মানির চ্যান্সেলর এডলফ হিটলার পরিস্কার বলেছিলেন, এ যুদ্ধ আমি চাইনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম ‘লেবেন সরাউম’ অর্থাৎ জার্মানির বেচে থাকার মত দু বিঘা জমি তথা উপনিবেশ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েই পৃথিবীতে নতুন আরেক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার ধারণা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এর নাম সমাজতন্ত্র। এর ভিত্তি মার্কসবাদ, লেনিনবাদ। তবে এ সমাজ ব্যবস্থাটি সমাজ ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সংযোজন যা সচেতন মানব প্রজ্ঞা দ্বারা নির্মিত। পূর্বেকার ব্যবস্থাগুলো এসেছে সমাজের উৎপাদিকা শক্তির ক্রমবিকাশের স্মতঃফূর্ত ধারায়, কোন গবেষণা বা আবিষ্কারের ফসল হিসেবে নয়। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজ থেকে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়াটি জার্মান দার্শনিক হেগেলের ছাত্র কার্ল মার্কসের আবিস্কার। মার্কস পুঁজিবাদী শোষণের হাত থেকে মানুষের মুক্তির কথা ভাবতে গিয়ে শোষনের মূলে একটি আর্থ সামাজিক ব্যবস্থাকে দেখতে পান এবং এর উদ্ভব যে ঐতিহাসিক বিকাশের ধারায় ঘটেছে সে ধারাটিকে তিনি আবিস্কার করেন দ্বান্ধিক ও ঐতিহাসিক বস্তুবাদী দৃষ্টিকোণের আলোকে। সেই সাথে তিনি আবিস্কার করেন সমাজ বিকাশের ধারায় পুঁজিবাদী সংকটের পরিণতি হচ্ছে এমন এক সমাজ ব্যবস্থা যেখানে উৎপাদন শক্তির সাথে উৎপাদন সম্পর্কের বিরোধের বৈষয়িক উপাদানগুলোরই বিলুপ্তি ঘটবে। ফলে সমাজে শ্রেণি থাকলেও তা হবে শোষণমুক্ত। এর নাম সমাজতন্ত্র।

সহজ বুদ্ধিতে এটাকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির সূত্রগুলোকে অধ্যয়ন করেই সমাজতন্ত্রকে বুঝতে হয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে সমাজ বিকাশের এ পর্বটি মানুষের প্রজ্ঞা ও গবেষণার ফসল। অতীতের আদিম সমাজ, দাস সমাজ ও সামন্ততান্ত্রিক সমাজ হয়ে পুঁজিবাদে এসেছে সমাজ বিকাশের সূত্র অনুশীলন না করেই। কিন্তু পুঁজিবাদী সমাজে এসে মানুষের জ্ঞান, শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সীমা ছাড়িয়ে সমাজ সংগঠনের স্বরূপ অনুসন্ধানেও প্রবৃত্ত হয়। দর্শন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চর্চা দাস সমাজ থেকে চলে আসলেও অর্থনীতি ও সমাজ বিজ্ঞানের ধারণা পুঁজিবাদী যুগে এসেই প্রতিষ্ঠিত হয়। দর্শন, রাষ্ট্রবিদ্যা, সমাজবিদ্যা ও অর্থনীতিবিদ্যা এ চারটি বিদ্যার যুগপৎ সমন্বয় ঘটে মার্কসের চিন্তায়। চারটি শাস্ত্রেই সে সময়ে মার্কসের প্রজ্ঞা ছিল সর্বোচ্চ। মার্কস জ্ঞানের জগৎকে বাস্তব জীবনের অনুশীলনের পর্যায়ে নামিয়ে আনেন। তার বক্তব্য- এ পর্যন্ত দার্শনিকরা পৃথিবীকে শুধু ব্যাখ্যা করেছেন কিন্তু দরকার হলো একে পরিবর্তনের চেষ্টা করা। মার্কস এ চেষ্টায় ত্রুটি করেননি। মার্কস সমাজের স্বরূপ একদিকে আবিস্কার করেছেন আবার এ জ্ঞানকে কাজে লাগনোর জন্য অন্যদিকে কর্মক্ষেত্রও প্রস্তুত করেছেন।

জ্ঞানকে অনুশীলনে পরিণত করার জীবন্ত দর্শন হলো মার্কসবাদ। মার্কসবাদ বর্তমান প্রেক্ষাপটে অতীতকে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের দিকে নিদের্শ করে। ফলে সমাজ বিপ্লবের ধারার ইতিহাসের সাথে মার্কসবাদের ইতিহাসও একাকার হয়ে যায়। বিংশ শতকের আন্দোলন সংগ্রাম ও যুদ্ধের ইতিহাসে মার্কসবাদ এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে এটাকে ছাড়া ইতিহাস বর্ণনা করাই সম্ভব নয়। বিশ্ব রাজনীতির ঘটনা প্রবাহের সাথে মানুষের সচেতন প্রজ্ঞার এ সংমিশ্রন অভূতপূর্ব। সভ্যতার হাজার হাজার বছরের ইতিহাসে অসংখ্য যুদ্ধ বিপ্লবের ঘটনাগুলো ছিল পরস্পর থেকে আলাদা সময়ে কোন একটি বিশেষ পর্বে সংঘটিত। কোন অভিন্ন সচেতন মতাদর্শের ও সংগঠনের আওতায় পরিচালিত ছিল না। কিন্তু বিংশ শতকে সারা পৃথিবী জুড়ে সংঘটিত হওয়া অজস্র রাজনৈতিক ঘটনার মূলে ছিল মার্কসবাদ। এভাবেই সমাজ বিকাশের ধারা ঊনবিংশ ও বিংশ শতকে এসে মানব প্রজ্ঞার সাথে জড়িয়ে যায়।

সমাজতন্ত্র হচ্ছে আবিস্কারের ফসল। এটাকে সমাজের পরবর্তী স্তর হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছে। ইতিহাস থেকে বিভিন্ন সমাজ ব্যবস্থার ধারণা পাওয়া গেলেও সমাজতন্ত্রের ধারণা বাস্তবে অস্তিত্বশীল কোন সমাজতান্ত্রিক সমাজ থেকে আসেনি। আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজের গল্পের সেই গণিতবিদ হ্যারি সেলডনের মত মার্কস সমাজ বিকাশের সূত্র দ্বারা ভবিষ্যতের বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করেন। আর এটাও বলেন যে বিষয়গত পরিস্থিতি থাকলেও বিষয়ীগত পরিস্থিতির অভাবে বিপ্লব সফল হবে না। অর্থাৎ সমাজতন্ত্রের কথা আমরা জানলেও এটা এমনি এমনি আসবে না। এর জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে। অর্থাৎ বিষয়ীগত উপাদান যুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ীগত উপাদান হল মার্কস ভাষায় শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবী পার্টি অর্থাৎ কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্ব। অতীতের মতই শোষিত শ্রেণি পুঁজিবাদী সমাজেও শোষক শ্রেণির বিরুদ্ধে সংঘাতে লিপ্ত হয়। এ লড়াইকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। এ নেতৃত্ব দেবে কমিউনিস্ট পার্টি। এ পার্টি প্রলেতারিয়েতের অগ্রবর্তী বাহিনী। এ পার্টি গঠনের কাজে মার্কসই প্রথম হাত লাগান।

মার্কস তার বন্ধু এঙ্গেঁলসকে নিয়ে ১৮৪৮ সালে রচনা করেন কমিউনিস্ট পার্টির ইশতিহার। ১৮৬০ ও ৭০ এর দশকে রচিত হয় মার্কসের ঐতিহাসিক গ্রন্থ ডাস ক্যাপিটাল। এসবের মাঝে ১৮৭১ সালে প্রথম শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটে প্যারিসের প্যারি কমিউন বিপ্লবের মাধ্যমে। এটা মাত্র দু দিন টিকেছিল। মার্কসের পরে পুঁজিবাদ পৌছে যায় সাম্রাজ্যবাদের সর্বোচ্চ স্তরে। ১৯১৪ সালে শুরু হয় সাম্রাজ্যবাদী সংকটের চুড়ান্ত রূপ বিশ্বযুদ্ধ। রাশিয়ার মার্কসবাদী নেতা লেনিন সে প্রেক্ষাপটে মার্কসবাদীদের করণীয় কর্তব্য তুলে ধরেন। তার চিন্তাধারা অনুযায়ী রাশিয়ায় সংঘটিত হয় ঐতিহাসিক রুশ বিপ্লব। এটা ১৯১৭ সালের ঘটনা। লেনিনের চিন্তাধারা ছিল সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর শ্রমিক শ্রেণি যদি যার যার দেশের ক্ষমতা দখল করতে পারে তাহলে বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী শাসকশ্রেণীর স্বার্থে তৈরী বিশ্বযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না এবং উপনিবেশিক দেশের জনগণসহ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর শ্রমিক শ্রেণীও শোষণ ও পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্টা করবে। তার এ মতবাদের ভিত্তিতে রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়। তার মতবাদের নাম হল লেনিনবাদ যা সাম্রাজ্যবাদী সংকটের যুগের মার্কসবাদ।

মার্কসই প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন। সমাজ বিপ্লবের ক্ষেত্রে বিষয়গত উপাদানের সাথে বিষয়ীগত উপাদান যুক্ত করার প্রশ্নে মার্কস কমিউনিস্ট পার্টির ধারণা দেন। কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে উঠবে শ্রমিক শ্রেণির সবচেয়ে অগ্রসর ও সচেতন লড়াকু অংশকে নিয়ে। মার্কসীয় তাত্ত্বিকতা এ পর্যন্ত সাবলীল গতিতে অগ্রসর হলেও তাত্ত্বিকতার এ অংশটিতে এসেই ঘটে ছন্দপতন। মার্কস যে কমিউনিস্ট পার্টি্র যে ধারণা দিয়েছেন তা একান্তই শ্রমিক শ্রেণির মানুষের সংগ্রামী নেতৃত্ব দ্বারা পরিচালিত দল। কিন্তু পৃথিবীতে এর কোন নজীর নেই। অতীতের রোমান প্লেবিয়ানদের যেভাবে অবৈতনিক ট্রিবিউন হয়ে সিনেটে যোগ দেওয়ার সুযোগ হত না সেভাবেই শ্রমিক শ্রেণির অগ্রবর্তী বাহিনী কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর নেতৃত্বের ইতিহাসে শ্রমিকদের দেখা যায় নি। যাদেরকে দেখা যায় তারা শ্রমিকও ছিলেন না কিংবা কোন ধরণের শ্রেণিগত দায়বদ্ধতায় বাঁধাও ছিলেন না কমিউনিস্ট হওয়ার ব্যাপারে। এসব অ-শ্রমিক মানুষদের কমিউনিস্ট হওয়ার ব্যাপারটি এক ধরণের অনিশ্চয়তায় ঢাকা। মার্কসও এর বাইরে নন। শ্রেণি স্বার্থের তত্ত্বে মার্কসেরও শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে দাঁড়ানোর ব্যাখ্যা মেলে না। কমিউনিস্ট হওয়ার ব্যাপারটিই যেখানে অনিশ্চয়তায় ঢাকা সেখানে তাদের বিপথগামী না হওয়ার নিশ্চয়তা কি? শ্রমিক শ্রেণিকেই বিপ্লবের মূল নায়ক বলে ধরা হয়। অথচ এদেরকে নেতৃত্ব দিতে হয় সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে আসা মানুষকে। মার্কসবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকে এমন মানুষ যারা অস্তিত্বের সংকটে বিপ্লবে এগিয়ে আসেননি। এটাই মার্কসবাদের বিপদ। মার্কসবাদের মূল দুই নায়ক মার্কস ও এঙ্গেলস ছিলেন সমাজের সবচেয়ে উপরের শ্রেণির মানুষ। লেনিনও শ্রমিক শ্রেণীর লোক ছিলেন না; ছিলেন আইন পড়ুয়া প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। শ্রেণিগত দায়বদ্ধতায় নয় বরং এক ধরণের ভাব-প্রবনতা থেকে এরা এই দর্শন গ্রহণ করেছিলেন, যা এই দর্শনেরই সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় !

মার্কসবাদ শ্রেণিচেতনার উর্ধে মানুষের স্বাধীন সত্ত্বা বা ইচ্ছাশক্তিকে স্বীকার করে না। মার্কসবাদ বলে শ্রেণি স্বার্থের বাইরে কিছুই নেই। স্বার্থের সংঘাতের ভিত্তিতেই অতীতের মত ভবিষ্যতের বিপ্লবকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। মার্কসের বস্তুবাদী দর্শন মানুষকে দেখে বৈষয়িক প্রাপ্তির নিরন্তর সাধনায় লিপ্ত এক স্বার্থপর জীব হিসেবে। তার ত্যাগ, সংগ্রাম কিংবা বিপ্লব সবই স্বার্থের জন্যই। শোষক শ্রেণি তাদের শ্রেণি স্বার্থে একতাবদ্ধ। তেমনি শোষিত শ্রেণি তাদের শ্রেণি স্বার্থেই শ্রেণি সংগ্রামে প্রবৃত্ত হবে। এখানে আবেগ-অনুভূতির কোন কার্যকারিতা নেই। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী পুঁজিবাদী সমাজের সংকট কিংবা বিশ্বযুদ্ধের সংকট হলো শ্রেণি স্বার্থের সংকট। পুঁজিবাদের অবসান হবে শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে সংঘটিত শ্রেণি সংগ্রামের দ্বারা বুর্জোয়া শ্রেণির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এ পরিস্থিতিতে কোন মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা শক্তির কার্যকারিতা থাকতে পারে না। কারণ বৈষয়িক জীবনের উৎপাদন পদ্ধতি নিরূপণ করে সাধারনভাবে জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক প্রক্রিয়া। মানুষের চেতনা থেকে তার সত্ত্বা নির্ধারিত হয় না। বরং মানুষের সামাজিক সত্ত্বা থেকেই নির্ধারিত হচ্ছে তাদের চেতনা।

মানুষের চেতনা ও ইচ্ছাশক্তিকে সামাজিক শ্রেণিগত অবস্থান দ্বারা নির্ধারিত ব্যাখ্যা দিয়ে মার্কসবাদ যখন নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এমন মানুষদের ওপর যারা সামাজিক বাস্তবতায় শোষিত শ্রেণির কেউ নয় এবং ইচ্ছা ও আবেগ অনুভূতির জোরেই তাদের এগিয়ে আসা ছাড়া কোন উপায় নেই তখনই মার্কসীয় আন্দোলনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। মার্কসবাদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তাটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। কারণ মার্কসবাদের নেতৃত্ব সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে আসা মানুষদের ওপর নির্ভরশীল।এদের সম্পর্কে মার্কসীয় ব্যাখ্যা হল সমাজ বিকাশের একটা নির্দিষ্ট স্তরে অর্থনৈতিক বুনিয়াদের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিপুল উপরিকাঠামোর সবখানিও ন্যূনদিক রূপান্তরিত হয়ে থাকে। এই রূপান্তরের পর্যালোচনা করতে হলে সুবিধাভোগী মানুষও রাজনৈতিক, ধর্মীয়, নান্দনিক বা দার্শনিক অর্থাৎ সকল ভাবাদর্শীয় রূপের মধ্য দিয়ে সমাজের অন্তর্নিহিত বিরোধ সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে ও সংগ্রাম করে তার নিষ্পত্তির জন্য। কিন্তু এরা যদি ভাবদর্শীয় রূপের মধ্যদিয়ে সমাজের অন্তর্নিহিত বিরোধ সম্পর্কে সচেতন হয়েও এর নিষ্পত্তির জন্য সংগ্রাম করতে না চায় অথবা মার্কসবাদী নেতা হয়ে সংগ্রামের ভান করে বিপ্লবের সর্বনাশ করে তাহলে কিছুই করার নেই। ইতিহাস এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। মানুষের ওপর সামাজিক প্রজ্ঞার নিয়ন্ত্রণ এমনভাবে নেই যে শ্রেণি সচেতনতা তাকে সুবিধাভোগী শ্রেণি থেকে সর্বহারার কাতারে নামিয়ে এনে তাত্ত্বিক নেতৃত্বে বসিয়ে দিলে সেখানে কোন প্রতারণার আবকাশ থাকবে না।

কার্ল মার্কস, এঙ্গেঁলস কিংবা লেনিন তাদের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও আবেগ অনুভূতির জোরেই নিজেদের শ্রেণিস্বার্থের বিপরীতে শ্রমিক শ্রেণির পক্ষে নেমে এসেছিলেন। যে ইচ্ছাশক্তি থেকে তারা সর্বহারাদের কাতারে নেমে আসেন তার স্বরূপ তারা তাদের তত্ত্বে পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করেননি। তাদের তত্ত্বে তারা ব্যক্তিগত ভাবপ্রবণতার কোন স্থানই দেননি। ব্যাপারটা বোধ হয় এই রকম- মার্কস হয়ত ভেবেছিলেন তার আত্মত্যাগটা প্রয়োজন ছিল একারণেই যে তার আগে কেউ সামাজিক বিকাশের সূত্রগুলো আবিস্কার করেনি। সুতরাং শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লবের তাত্ত্বিক ভিত্তি সম্পূর্ণ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে প্রচলিত নিয়মের দর্শনের মধ্যেই বেচে থাকতে হবে। আর এ বেচে থাকাটা যেহেতু আরেকটি জীবনাদর্শ নির্মাণের দিকে ধাবিত সেহেতু আগের নিয়মানুবর্তী জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবেনা। তাই বিপর্যয়টা খুবই স্বাভাবিক। তার দর্শন পূর্ণাঙ্গতায় রূপ নিলে এটি সামাজিক বিকাশের একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠবে এবং তার মত মানুষের স্বতঃপ্রাণোদিত আত্মত্যাগের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে থাকবেনা। তাই যারা শোষিত নয় তাদের জন্য মার্কসীয় প্রজ্ঞাই শোষিতের পক্ষে আসার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু এটাও অনিশ্চিত।

শ্রেণি সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করার জন্য যে মার্কসীয় দর্শনের জন্ম তার উন্নয়ন ঘটিয়েছে এমন শ্রেণি থেকে আসা মানুষেরা যে শ্রেণির বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করাই মার্কসবাদের কাজ।মার্কসবাদ মানুষকে তার সামাজিক অবস্থানের চরিত্র অনুযায়ীই জানতে চায়। কিন্তু সুবিধাভোগী শ্রেণিতে বেড়ে ওঠা মানুষ সামাজিক অবস্থানকে ডিঙ্গিয়ে যখন মার্কসবাদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন তখন এর মার্কসীয় ব্যাখ্যা খুজে পাওয়া যায়না। চে এবং নরম্যান বেথুনের মত সুবিধাভোগী শ্রেণিতে বেড়ে ওঠা মানুষ যখন আন্তর্জাতিক বিপ্লবী হয়ে উঠেন তখন তারা অনেকের প্রেরণার উৎস হয়ে উঠেন। এ প্রেরণা ও রোমান্টিকতা মার্কসীয় দর্শনে মূলবান কিছু নয়। বরং মূল্যবান হলো সমাজ বিপ্লবের প্রচলিত তত্ত্ব ও পদ্ধতির সাথে নিজের অবস্থানকে খাপ খাওয়ানোর জন্য যেভাবেই হোক একটি নিরাবেগ তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে নেয়া। কিন্তু এসব তত্ত্ব পৃথিবীতে বিপুল পরিমাণে বিকৃত হয়েছে। এসেছে প্রচলিত পদ্ধতিতেই ক্ষমতায় গিয়ে বিপ্লব করার নষ্ট চিন্তা কিংবা আপোষ, সমঝোতা ও নির্বাচনের মাধ্যমে শ্রেণিশত্রুদের সাথে ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার সংশোধনবাদী চিন্তা ও দর্শন। আবার অন্যদিকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পরে কমিউনিস্ট পার্টিগুলোতে দেখা যায় কুচক্রীদের ভীড়। এরা রাষ্ট্রকে কুক্ষিগত করে বিপ্লবকে বলী দিয়েছে। অন্তর্ঘাতের হাত থেকে মার্কসবাদের রক্ষা হয়নি। অসংখ্য জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বিপ্লবের শোচনীয় পরিসমাপ্তি ঘটেছে কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলোর পতনের মধ্য দিয়ে।

ইতিহাসে দেখা যায় মার্কসবাদের সম্মানকে প্রতিষ্টিত করেছেন সেই সকল বিপ্লবী নেতারা যারা জীবনের ঝুকি নিয়ে বিলাসী জীবনকে পেছনে ফেলে নেমে এসেছিলেন সাধান মানুষের কাতারে। মাও, হো চি মিন, চে প্রমূখ দীর্ঘদিন গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে গেছেন পাহাড়ে জঙ্গলে। এই আত্ম বিসর্জনের বিষয়টি মার্কসবাদের ধ্রুপদী তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। যেহেতু মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত স্বাধীন প্রেরণাই তাকে আত্মবিসর্জনের দিকে ধাবিত করে সেহেতু সামাজিক অনিবার্যতার পটভূমিতে এর মার্কসীয় ব্যাখ্যা দেওয়া মুশকিল। মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও আত্মপ্রেরণা নিয়ে মার্কসবাদের কোন কিছু করার নেই। পৃথিবীর সকল শিল্প-কাব্য-সাহিত্য এসেছে নির্মাতাদের মনের গভীর আকাঙ্খা ও আত্মপ্রেরণা থেকে, যা সমাজের আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থাকে ধারণ করে কিন্তু অবস্থার সরাসরি হুকুমে নয় বরং স্বাধীন হৃদয়ের তাড়নাই এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

আত্মত্যাগ, জনগণের সেবা প্রভৃতি ধারণাগুলোকে মাও সে তুঙ কিছুটা সংযোজন করেছিলেন চীনের বিপ্লবের ক্ষেত্রে। তার জনগণের সেবা করুন শীর্ষক প্রবন্ধে গণমানুষের কল্যাণে আত্মবিসর্জনের আত্মাকাঙ্খা নির্মাণের প্রচেষ্ঠার কথা উঠে এসেছে। রূপকথার বোকা বুড়োর গল্প বলে তিনি জনগণকে উজ্জীবিত করেছিলেন। ঐ গল্পে দেবদূতের আগমন একটি পৌরনিক বিশ্বাস ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু মাও এর মতো বস্তুবাদী নেতা মার্কসীয় প্রবণতার উর্ধ্বে গিয়ে এই গল্প বারবার প্রচার করেছেন। এর কারণ দীর্ঘস্থায়ী গণযুদ্ধে গেরিলাদেরকে যে কষ্টকর পথে চলতে হয়েছে সেখানে জটিল তত্ত্বের চেয়ে আত্মিক প্রেরণা সৃষ্টি করা জরুরী ছিল। এক্ষেত্রে মাও আত্মদানের মধ্য দিয়ে পরিতৃপ্ত হওয়ার বা আত্মবির্সজনের মধ্যেই জীবনকে খুজে পাওয়ার প্রাচীন ধর্মবোধক অকাঙ্খাকে ব্যবহার করেছেন। এজন্য মাও প্রসংশিত হননি বরং অনেকের কাছে তার কমিউনিস্ট চরিত্র প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে।

ভারতবর্ষে বিপ্লবী মার্কসবাদের প্রাণপুরুষ কমরেড চারু মজুমদার ৬৭ সালে যখন ‘চীনের পথই আমাদের পথ’ ঘোষণা দিয়ে নকশাল অভ্যুত্থানকে সারা ভারতে ছড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিলেন তখনও তাদের কাছে মাওয়ের আত্মিক দর্শনই অনুসরণীয় ছিলো। অতীতে এদেশের ক্ষুদিরাম-সূর্যসেনরা দেবীর আর্শীবাদ নিয়ে বিপ্লবে নেমেছিলেন। চারু মজুমদার মাও এর অনুকরণে বৈজ্ঞানিক মার্কসীয় দর্শনের সাথে বিপ্লবী আত্মশুদ্ধিবাদকে যুক্ত করে যে সশস্ত্র সংগ্রামের সূচনা করেন সেটাই ভারতবর্ষে মার্কসবাদের একমাত্র বিপ্লবী পরিচয়। এরাই সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে বিশ্ববিপ্লবের ডাক দেন। এখনও ভারতবর্ষের সমস্ত মাওবাদী আন্দোলনের ভিত্তি হচ্ছে চারু মজুমদারের খতমের দর্শন। এ খতম হল একদিকে শ্রেণিশত্রু খতম, অন্যদিকে নিজের ভেতরে লুকিয়ে থাকা সুবিধাবাদকে খতম করা। সেই সাথে ভন্ডামীর প্রতীকগুলোকেও খতম করা। ভন্ডামী ও সুবিধাবাদ বর্জনের যে বিপ্লবী প্রেরণা চারু মজুমদার সৃষ্টি করেছিলেন তা সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল বিপ্লবী তরুণ মেধাবী ছাত্রদের মধ্যে। এরাই নকশাল আন্দোলনের কুশীলব। এরা গ্রহণ করেছিল চেয়ারম্যান মাও এর শিক্ষা- “বৈষয়িক লাভ হিসেব করে বিপ্লবের লাভ বিচার করাটা সঠিক নয়। বিপ্লব মানে চেতানার আমূল রূপান্তর। কি সেই চেতনা? জনগণের সেবা করার চেতনা।”

আত্ম প্রেরণা কিংবা গভীর বিশ্বাসকে মার্কসবাদে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। যদিও মাওসহ অনেকে মার্কসীয় মডেলে আত্মপ্রানোদনা ও বিপ্লবী আত্মনিষ্টতাকে কাজে লাগিয়েছেন। দান এবং আত্মদানের মধ্য দিয়ে জীবনকে সার্থক করে তোলার ব্যাপারটি শ্রেণিসংগ্রাম ও বিপ্লবের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় না। আত্মদান মার্কসবাদে সংজ্ঞায়িত হয় নি অথচ মার্কসবাদের সকল অবদানের উৎস হল কিছু মানুষের আত্মদানের সিদ্ধান্ত যার কারণ মার্কসবাদে অজানা। এই অজ্ঞতা শুধু আত্মদানের ক্ষেত্রেই নয়, এর উল্টোদিকের আত্মসর্বস্বতার স্বরুপ বুঝতেও মার্কসবাদ সমানে নিরুৎসাহী। জীবনের সমস্ত ঘটনার পেছনে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে মার্কসবাদে যেভাবে দায়ী করা হয় তাতে আত্মদান কিংবা আত্মসর্বস্বতা - কোন কিছুরই কার্যকারিতার আর কোন অবকাশ থাকে না। তাই মার্কসবাদ যেভাবে সামাজিক জীবনের ক্ষেত্রে আত্মদানের কার্যকারিতার ব্যাপারে নীরব তেমনি আত্মসর্বস্বতার সমস্যা নিয়েও চিন্তিত নয়। আত্মদান কিংবা আত্মসর্বস্বতা - কোন কিছুরই বিশেষ কার্যকারিতা আছে বলে মার্কসবাদ মনে করে না। তাই অজানা কারণসৃষ্ট আত্মদানের ঘটনায় মার্কসবাদ যেভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনি ভন্ডামী ও সংশোধনবাদের সদর রাস্তায় পরিণত হয়েছে এটি। যেখানে বিপ্লবের আশু সম্ভাবনা নেই সেখানে ভন্ড মার্কসবাদীরা যেমন বিপ্লবকে সংজ্ঞায়িত করেছে সমঝোতা, আপোষ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়া হিসেবে তেমনি যেখানে বিপ্লব বিজয়ী হয়েছে সেখানে ভন্ড ও সংশোধনবাদীরা বিপ্লবোত্তর রাষ্ট্রক্ষমতাকে ব্যবহার করেছে নিজেদের স্বার্থে। মানব মননের এই অশুভ প্রবণতা মার্কসীয় মূল্যায়নে শ্রেণি চরিত্র ও শ্রেণিস্বার্থের ব্যাখ্যার উর্ধ্বে গুরুত্ব পায় না। কিন্তু ইতিহাসে মানব মননের অশুভ প্রবনতাকে আমরা যেভাবে দেখি সংশোধনবাদের দানবীয় উত্থানের মধ্য দিয়ে মার্কসীয় দর্শনকে উল্টো পথে নিয়ে যেতে তাতে মানুষের ভাবমানসিক সত্ত্বা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হয়। প্রতিবিপ্লবীরা বুর্জোয়াদের চর ছিল একথা বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

পূর্ব ইউরোপের প্রথম প্রতিবিপ্লবী অভিযান সমাপ্ত হয় পোল্যান্ডে। এই অভিযানের নেতা সলিডারিটি পার্টির প্রধান লেস ওয়ালেসা ছিলেন এক সময়কার শ্রমিক শ্রেণির মানুষ ও কমিউনিস্ট। নিকিতা কুশ্চেভ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতিবিপ্লবী। তিনিও ছিলেন একজন শ্রমিকের ঘরের সন্তান শ্রমিক। শ্রমিক শ্রেণির রাজ্যে কেন তার মধ্যে প্রতিবিপ্লবী দর্শন কাজ করবে? তাহলে বুঝতে হয় সর্বহারার একনায়কত্বের দর্শন মানুষকে বদলে দিতে পারেনা তার আত্মকেন্দ্রিক প্রবণতা থেকে। আত্মসংশোধন ও আত্মবিসর্জনের প্রেরণা বিপ্লবের আগে যেভাবে কাজ করে বিপ্লবের পরেও সেভাবে যে কাজ করবে তার নিশ্চয়তা থাকে না। তাই বিপ্লবী আন্দোলনে ত্যাগের ঘটনা স্বাভাবিক হলেও ক্ষমতায় যাওয়ার পরেও তা খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। সোভিয়েত বিপ্লব পরাজিত হয়েছে মানব মননের কাছে। প্রথমত সংশোধনবাদী চিন্তার বিজয়ের মধ্য দিয়ে। দ্বিতীয়ত আফগান আগ্রাসনে ধর্মীয় বিশ্বাসের কাছে পরাজয়ের পরে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। এখানে আর্থ-সামাজিক বাস্তবতাকে মানুষের মনের বিশ্বাস ও আকাঙ্খার কাছে অবিশ্বাস্য রকমভাবে প্রভাবিত হতে দেখা যায়।

যে সব দেশে মার্কসবাদ রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল তার সবগুলোতেই একসময় অবক্ষয় দেখা দেয়। ৫৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে সম্পূর্ণ সাম্রাজ্যবাদী মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। মাও এর পরে চীন ও বিচ্যুত হয় তার দর্শন থেকে। অন্য দেশগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করে। অবশেষে ৯১ সালে সোভিয়েতের নষ্টতন্ত্রের পতনের আগে পরে পূর্বে ইউরোপের সবগুলো দেশেই রাষ্ট্রীয় মার্কসবাদের পতন ঘটে। এসব দেশে বিপ্লবের আগে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে মার্কসবাদী বিপ্লবী রাজনীতি আত্মত্যাগের বিনিময়ে মহত্ত্বের জায়গায় থাকলেও ক্ষমতা দখলের পরেই অনেক ধরনের সুবিধাবাদ ও বিচ্যুতির সমস্যা দেখা দেয়। কারণ রাষ্ট্রক্ষমতা মানুষকে বিপ্লবের কঠিন ও কষ্টকর জীবন থেকে ভোগ ও প্রত্যাশার জীবনে নিয়ে যায়। তাই মাও বলেন কিছু দিন বিপ্লবী থাকা যায় কিন্তু কঠিন হচ্ছে সারা জীবন বিপ্লবী থাকা। মাও এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবও রাষ্ট্রীয় বিচ্যুতি থেকে চীনকে রক্ষা করতে পারে নি।

মার্কস ও এঙ্গেঁলসের গভীরতম চিন্তার বিষয় ছিল যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যখন শ্রমজীবীদের হাতে থাকবে তখন রাষ্ট্রযন্ত্রে কেবলমাত্র পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্ক সমাজতান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্কে পরিণত হবে না বরং পুঁজিবাদী সমাজের মেকি গণতন্ত্র সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রকৃত গণতন্ত্রে পরিণত হবে। এ কারনেই তারা যুক্তি দেখাতে পেরেছিলেন যে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্টার সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্র শুকিয়ে মরবে। তাঁরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে এ ব্যবস্থায় উৎপাদনের উপায়গুলোর ওপর থেকে সব রকমের কর্তৃত্বের অবসানের সঙ্গে শক্তি প্রয়োগকারি যন্ত্রের খুব কমই দরকার হবে। তাদের মতে উৎপাদনের উপায়গুলোর ওপর ব্যক্তিগত মালিকানাই সব অন্যায়ের জন্য দায়ী। কারণ রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব এ সমস্ত ব্যক্তিগত মালিকানাকে নিরাপদ রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ এডাম স্মিথও এরূপ মত পোষণ করতেন। মার্কস ও এঙ্গেলস বলেছেন সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্টার পর সরকারের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে। এরপর সমাজতান্ত্রিক সমাজের রূপ কী হবে তারা খুব কমই এ সম্পর্কে বলেছেন।

ইতিহাসে দেখা যায় মার্কসবাদ উন্নত পুঁজিবাদী দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় না গিয়ে পাশ্চাৎপদ রাশিয়ার রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিল সর্ব প্রথম। এই ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে মার্কসবাদ জাঁতে উঠল। এই বিপ্লবের নেতা লেনিন উৎপাদনের উপায়গুলোর ওপর থেকে ব্যক্তিগত মালিকানা বিলোপ করার অনুকূল অর্থনীতি বিরাজ না করায় NEP নামে এক সংস্কার কর্মসূচি হাতে নেন। যাতে ব্যক্তিগত মালিকানা বাজায় রেখেই শিল্পোন্নয়নের পরিকল্পনা ছিল। সোভিয়েত রাষ্ট্রক্ষমতা শুকিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা অন্তর্ঘাত ও বহিঃশত্র“র আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এটাকে আরও শক্তিশালী করা হয়। ষ্টালিনের সময়ে রাষ্ট্রের বিপুল পরাক্রমে উত্থান ঘটে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে এই রাষ্ট্র সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়। সোভিয়েত আমলাতন্ত্র ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান আমলাতন্ত্র এবং সেনাবাহিনী ছিল শক্তিতে বিশ্বের অন্যতম।

রাষ্টের বিলুপ্তির বদলে এই উল্টোচিত্র মার্কস দেখেননি। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভ এই রাষ্ট্রকে যখন সাম্রাজ্যবাদে পরিণত করে তখন তারা মার্কসের মতবাদকেই ব্যবহার করেছে। আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়ে তারা মারাত্মক ভুল করেছিল। তারা পরাজিত হয় বহু আগের সামরিক পদ্ধতি ইসলামিক জিহাদের হাতে এবং এর ধকল সইতে না পেরে সোভিয়েত রাষ্ট্র ভেঙে যায়। বর্তমান পরাশক্তি আমেরিকাও ইসলামিক জিহাদের কাছে পর্যুদস্ত হয়ে পতনের দিকে এগিয়ে চলেছে। অথচ মার্কসবাদ ধর্মকে সমাজের গৌন উপরিকাঠামো হিসেবে দেখে। ইতিহাসের বিশাল পরিসর জুড়ে শাসকপূজারী ধর্মের বিপরীতে একত্ববাদী ধর্মকে দেখা যায় শোষিত মানুষের সংগ্রামের হাতিয়ার হয়ে উঠতে। মার্কসবাদ এ বিষয়ে নীরব। একত্ববাদের বিপ্লবী চরিত্রের ব্যাপারে মার্কসবাদের কোন ব্যাখ্যা নেই।

সভ্যতার কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সাথে শাসকপূজা ও
একত্ববাদের সংঘর্ষের কথা অনিবার্যভাবে জড়িয়ে আছে। বিশেষত প্রাচীন মিসর ও মেসোপটেমিয়াসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে থাকা সভ্যতাগুলোর জীবনধারায় শাসকপূজা ও একত্ববাদের সংঘাত হয়ে উঠেছিল শোষক ও শোষিতের সংঘাত। এ ইতিহাস বাদ দিয়ে মার্কসবাদ রোমান শ্রেণি সংগ্রামকে অবলম্বন ধরে নেয় বোধহয় এ কারণেই যে শাসকপূজারী রোমান ধর্মের বিপরীতে সেখানে একত্ববাদ বিকশিত হয় নি। গ্রিকো - রোমান শ্রেণি সংগ্রাম একত্ববাদী চেতনামুক্ত ছিল বলেই কি তা মার্কসবাদে এত প্রিয়? কিন্তু এই অর্ধেক ইতিহাস দিয়ে সভ্যতার বাকি অর্ধেককে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? আবার মধ্যযুগ তো কেবল অর্ধেক নয়, প্রায় পুরোটাই বাদ দিয়ে আলচিত হয় মার্কসবাদে। মধ্যযুগের মূল ইতিহাসই যেখানে আরব জাগরণ ও আরব সভ্যতার ইতিহাস সেখানেও মার্কসবাদ অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগের ইউরোপকে মধ্যযুগের ইতিহাস ও সমাজ বিকাশের মানদন্ড হিসেবে ব্যাখ্যা করে। অথচ সে সময়ের সভ্যতার মূল কেন্দ্র আরবের সমাজ বিকাশের কোন চিত্র কিংবা শ্রেণি সংগ্রামের স্বরুপের ব্যাখ্যা মার্কসবাদে নেই। আরবের সমাজ কি শ্রেণি সংগ্রাম মুক্ত ছিল? যদি না থাকে তাহলে শ্রেণি সংগ্রাম সেখানে কীভাবে কার্যকরী ছিল? এই ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা মার্কস কেন আনূভব করেন নি? মার্কস প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাসকে চুলচেরাভাবে বিশ্লেষণ করেছেন অথচ নিকটবর্তী হাজার বছরের ইতিহাস জুড়ে থাকা ইসলামী খিলাফতের ব্যাপারটি এড়িয়ে গেছেন। সমাজের একেবারে সাধারণ মানুষের স্তর থেকে উঠে এসে কোন যাদুবলে ইসলাম এক অভূতপূর্ব ও অবিশ্বাস্য সাম্রাজ্যের জন্ম দিল তার স্বরূপকে আলাদা ব্যাখ্যার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেটা দেওয়া হয় নি। এর কারণ সভ্যতায় মানব মননের এই বিস্ময়কর ভূমিকার কারণ মার্কসবাদের অজানা।

মার্কসবাদ মানব মননের ভূমিকাকে সংস্কৃতির পরিমন্ডলেই সীমাবদ্ধ দেখে। এ ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে তা হচ্ছে- সংস্কৃতি কি রাজনীতি/অর্থনীতির প্রভাব অতিক্রম করে সর্বনিয়ামক হতে পারে? মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গী অনুসরণ করলে আমরা লক্ষ্য করি যে আন্তনিও গ্রামসির আগে মার্কসবাদীরা সংস্কৃতির চরিত্রকে একভাবে বিচার করতেন। এই সময়কার মার্কসবাদীরা বিপ্লবপূর্ব অবস্থায় সংস্কৃতির স্বতন্ত্র ভূমিকার ওপর গুরুত্ব দেননি। কিন্তু বিপ্লব সংঘটিত করার জন্য নতুন রাজনৈতিক চেতনার উন্বেষের ওপর নির্ভর করেন। গ্রামসি হচ্ছেন প্রথম মার্কসবাদী যিনি বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ে সংস্কৃতিকে একটি স্বতন্ত্র ভূমিকায় চি‎হ্নিত করেন। তিনি বলেন শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক চেতনা এলেই বিপ্লব হবে না একই সাথে সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও চেতনা অর্জন করতে হবে। নতুন রাজনৈতিক চেতনা অর্জনের সাথে সাথে নতুন সাংস্কৃতিক চেতনাও অর্জন করতে হবে। বর্তমানে বিপ্লবের আগে বিপ্লবের সময় এবং বিপ্লবের পরেও সাংস্কৃতিক বিপ্লব সমানভাবে চালিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু এই সাংস্কৃতিক বিপ্লবের চেতনার স্বরূপ কি হবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। বিকৃত মার্কসবাদ ও নষ্ট বামদের অবাধ ছড়াছড়ির এই যুগে বিপ্লবী মার্কসবাদীদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে মার্কসীয় মনন ও বিশ্বভীক্ষাকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের মন-জাগতিক ভাবপ্রবণতাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা ও অনুধাবনের ব্যাপারে। এটা ছাড়া মার্কসবাদকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচানোর সম্ভবত আর কোন উপায় নেই।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থি, ইংরেজি বিভাগ, শা.বি.প্র.বি.
ঠিকানা: ৫৬, ঝরনা আ/এ, ঝরনারপার, কুমারপাড়া, সিলেট-৩১০০।
যোগাযোগ: ০১৮১৬ ৯৪৭৩২৩
E-mail: [email protected]
FB: Asif Ajhar
http://www.asifajhar.blogspot.com
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×