somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায় (মধ্য যুগ) - ১. জেগে রয় বাইজানটিয়াম

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাইজানটিয়াম! সভ্যতার ইতিহাসের এক অনন্য বিস্ময় ।

রোমান সভ্যতার সূর্‍্য যখন অস্তমিত, বাইজানটিয়ামের আকাশে তখনও তা সগৌরবে বিদ্যমান। রোমের আকাশে যখন ঘোর অমানিশা, বাইজানটিয়ামের আকাশে তখনও মধ্যদুপুর। রোম যখন সমস্ত গৌরব হারিয়ে ডুবতে বসেছে, বাইজানটিয়াম তখনও বয়ে নিয়ে চলেছে রোমান সভ্যতার ঐশ্বর্য্যের উত্তরাধিকার। বাইজানটিয়ামের এ যাত্রা এগিয়ে চলেছে বহু শতাব্দী ধরে। রোমান সাম্রাজ্যের পতনেরও হাজার বছর পর অবধি এ যাত্রা এগিয়ে চলেছিল। অবশেষে ইতিহাসের চিরন্তন নিয়মের পথ ধরে একদিন বাইজানটিয়ামেরও পতন ঘটে। ১৪৫৩ সালে তুরস্কের ওসমানীয় সাম্রাজ্যের অধিপতি সুলতান ফাতেহ আল মাহমুদের বাইজানটিয়াম বিজয়ের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় পাশ্চাত্য সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাসের। আর এ সমাপ্তির পরেই সূচনা হয় সভ্যতার ইতিহাসের আধুনিক অধ্যায়ের।তাই বাইজানটিয়ামের উত্থান ও পতনের মধ্যবর্তী সময় সমগ্র সভ্যতার ইতিহাসেরই একটি পর্বের প্রতিনিধিত্ব করে। এ পর্বটি হল সভ্যতার ইতিহাসের মধ্যযুগ। রোমের পতনের মধ্য দিয়ে যে মধ্যযুগের সূচনা হয় তার সমাপ্তি ঘটে বাইজানটিয়ামের পতনের মধ্য দিয়ে।

বাইজানটিয়ামের অস্তিত্ব ধারণ করেছিল সমগ্র মধ্যযুগের অস্তিত্ব। ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সমস্ত সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য্য যখন বিলীন হয়ে গিয়েছে, বাইজানটিয়াম তখন ইউরোপের দূর সীমানায় একাকী নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে জানান দিচ্ছিল হারিয়ে যাওয়া সেই সমৃদ্ধির ইতিহাসের কথা। পাশ্চাত্যের দূর সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা বাইজানটিয়াম মনে করিয়ে দিত পাশ্চাত্য সভ্যতার সেই সব সোনালী দিনের কথা।বহু ঝড় ঝাপটা ঠেকিয়ে দিয়ে সুদীর্ঘ কাল পর্যন্ত টিকে গিয়েছিল এই সমৃদ্ধ নগরী। এমনকি সপ্তম শতকের ইসলামী খিলাফতের সেই উত্তাল ঢেউ যা ইতিহাসের সমস্ত দৃষ্টান্তকে ছাপিয়ে বিপুল তোড়ে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল এশিয়া-আফ্রিকার বিশাল জনপদ, তা-ও এসে থমকে গিয়েছিল বাইজানটিয়ামের সুউচ্চ দেওয়ালে। ইসলামের যে বিজয়ের ইতিহাস রুপকথাকেও হার মানায়, আশ্চর্যজনকভাবে তার হাত থেকেও বাইজানটিয়াম বেচে গিয়েছিল বহু দিন ধরে।

বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য অথবা বাইজানটিয়াম শব্দটি মধ্যযুগীয় গ্রিকভাষী রোমানদের দ্বারা পরিচালিত সাম্রাজ্যের সাধারণ নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সাম্রাজ্যের অপর নাম হচ্ছে পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্য যদিও পশ্চিমাঞ্চলীয় রোমান সম্রাজ্যের পতনের পরবর্তি যুগকে বিবেচনা করলেই কেবল এই নামটি কার্যকারিতা লাভ করে। খ্রিষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীর গোড়ার দিকে রোমান সম্রাট থিওডোসিয়াসের দুই পুত্রের মধ্যে বিশাল রোম সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিম- এ দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের আওতাধীন ছিল এশিয়ার মাইনর, মিসর, শাম, ফিলিস্তিন প্রভৃতি অঞ্চল। যখন এই সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল তখন অনেকেই একে গ্রিকদের সাম্রাজ্য নামে অভিহিত করতো, কারণ এ অঞ্চলে গ্রিক সংস্কৃতির আধিপত্যই সবচেয়ে প্রকট রূপ ধারণ করেছিল। একই সাথে সেখানে গ্রিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জনগোষ্ঠী এবং মধ্যযুগীয় গ্রিক প্রথার বিস্তার ঘটেছিল। এ সভ্যতার যা কিছু সাংস্কৃতিক অগ্রগতি হয়েছে তার সিংহভাগ এসেছে গ্রিস থেকে, রোম থেকে নয়। গ্রিক প্রভাবের পাশাপাশি প্রাচ্যদেশীয় সংস্কৃতির প্রভাবও গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বাইজানটিয়ামে। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক ও শিল্পচেতনার যা কিছু সংমিশ্রণ ঘটেছে তা হয়েছে এই বাইজানটিয়ামকে ঘিরেই। তবু শেষ বিচারে সাম্রাজ্যটিকে রোমান সম্রাজ্য নামেই অভিহিত করা যায় এবং এর সম্রাটদেরকে প্রাচীন রোমান সম্রাটদেরই অবিচ্ছিন্ন উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের মোহনায়, ইউরোপ আর এশিয়ার মিলনক্ষেত্রে অবস্থিত বসফরাস প্রণালির তীরে ‘গোল্ডেন হর্ন’ বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল প্রাচীন গ্রিক শহর, বাইজানটিয়াম। রোমান সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন (রাজত্বকাল: ৩০৬ - ৩৩৭ খ্রিস্টাব্দ) ৩৩০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ই মে রোম থেকে তাঁর রাজধানী সরিয়ে আনেন বাইজানটিয়ামে এবং এর নামকরণ করেন নোভা রোমা অর্থাৎ নতুন রোম। কিন্তু অচিরেই তাঁর নামে এর নামকরণ হয়ে যায় কনস্টানটিনোপল। বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য সম্পর্কে কিছু জানার আগে সম্রাট কনস্টানটাইন সম্বন্ধেও কিছু জানা দরকার। সম্রাট কনস্টানটাইন ছিলেন রোম সম্রাট প্রথম কনস্টানটিয়াসের পুত্র। ব্রিটেন সফরে গিয়ে কনস্টানটিয়াস মারা গেলে সৈন্যরা তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে কনস্টানটাইনকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করে। তিনি ৬ বছর ব্রিটেন ও গল শাসন করেন। অন্যদিকে সিংহাসনের আরেক দাবিদার ম্যাক্সেনটিয়াস শাসন করেন রোম।

৩১২ সালে মিলভিয়ান সেতুর যুদ্ধে ম্যাক্সেনটিয়াসকে পরাজিত ও নিহত করেন কনস্টানটাইন। গল্প আছে: যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে তিনি আকাশে মেঘের গায়ে ক্রুশ চিহ্ন দেখতে পান, তার তলায় লেখা আছে- ‘এই চিহ্ন অনুসরণ করে জয়লাভ করো’। এই ঘটনাটি তাকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হতে অনুপ্রাণিত করে।গৃহযুদ্ধে তিনি খ্রিস্টানদের সাহায্য ও সমর্থন পেয়েছিলেন। তিনি এর পরই ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি প্রবর্তন করেন এবং খ্রিস্ট ধর্মালম্বীদের উপর নির্যাতন বন্ধের ব্যবস্থা করেন। ৩২৪ সালে পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের সম্রাট লিসিনিয়াসকে পরাজিত করে পুরো সাম্রাজ্যের অধীশ্বর হন। এর এক বছর পর তিনিই প্রথম নাইসিয়ায় (বর্তমান তুরস্কের ইনজির) খ্রিস্টান গির্জাসমূহের সম্মেলন আহবান করেন। কনস্টানটাইন ৩৩০ সালে সাম্রাজ্যের রাজধানী পৌত্তলিক রোম থেকে সরিয়ে নতুন শহর কনস্টানটিনোপলে নিয়ে যান। তখন থেকে ১৪৫৩ সালে তুর্কিদের দ্বারা অধিকৃত না হওয়া পর্যন্ত কনস্টানটিনোপল গ্রিক ও রোমান সংস্কৃতি সংরক্ষণ করে আসছিল যখন ওই সংস্কৃতি পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য অংশে বর্বর আক্রমণে ধ্বংস হচ্ছিল। এভাবে এ শহর প্রাচীন ও আধুনিক সভ্যতার যোগসূত্রে পরিণত হয়েছিল। তুর্কিরা কনস্টানটিনোপলের নাম দিয়েছিলো ইসলামপোল, পরবর্তীতে সেটির উচ্চারণ বদলে হয় ইস্তাম্বুল। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইস্তাম্বুল ভূমিকম্পপ্রবণ। তবুও বহু শতাব্দী ধরে ভূমিকম্প সত্ত্বেও এ শহরের অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন এখনও অটুটভাবে সংরক্ষিত রয়েছে।

কনস্টানটাইন ছিলেন খুবই দূরদর্শী সম্রাট।তিনি বুঝতে পেরেছিলেন বর্বর আক্রমণের মুখে ক্ষয়িষ্ণু রোমান সাম্রাজ্যের পতনের আর বেশী দেরি নাই।তাই এ সভ্যতাকে বাঁচানোর উপায় তিনি খুজে পেলেন রাজধানী দূরে কোথাও সরিয়ে নেওয়ার মধ্যে যেখানে বর্বর আক্রমণের ঝুঁকি কম। এভাবে যখন তিনি রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী রোম থেকে কনস্টানটিনোপলে স্থানন্তর করেন তখন তিনি শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রেরই পরিবর্তন ঘটাননি, ৪৭৬ সালে রোমের পতনের পরও রোমান সাম্রাজ্য অব্যাহত বা টিকিয়ে রাখার পথ দেখান। কনস্টানটিনোপল নগরীটি সূদীর্ঘকাল ধরে অজেয় থেকে যাওয়ার কারণ এর প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষার সুবিধা। এশিয়া মাইনর থেকে কোন প্রাচ্যবাসী শত্রুপক্ষ যদি অগ্রসর হতে চায় কনস্টানটিনোপলের দিকে তবে তাদের অতিক্রম করতে হবে ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণসাগর। এ ক্ষেত্রে কনস্টানটিনোপলের পক্ষে শত্রুপক্ষের জাহাজ প্রতিহত করার জন্য ছিল সুবিধাজনক অবস্থান। এছাড়াও শহরটি ছিল দেয়াল ও দূর্গ দ্বারা সুরক্ষিত।

৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট থিওডোসিয়াস খ্রিস্টধর্মকে রাজধর্ম ঘোষণা করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার দুই পুত্র হনোরিয়াস ও আর্কাডিয়াসের মধ্যে সাম্রাজ্য ভাগ করে দেন। পশ্চিমাংশ পান হনোরিয়াস। তাঁর রাজধানী মিলান। পূর্বাংশ পান আর্কাডিয়াস। তাঁর রাজধানী কনস্টানটিনোপল। যেহেতু বাইজানটিয়াম দুর্গকে কেন্দ্র করে এই নগরী গড়ে উঠেছিল তাই সাম্রাজ্যের পুর্বাংশের নাম হয়ে যায় বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। ৫২৭ থেকে ৫৬৫ সালের মধ্যে প্রথম জাস্টিনিয়ানের শাসনকালে এই সাম্রাজ্য বহুদূর পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছিল। তাঁর শক্তিমান জেনারেল নার্সেস ও বেলিসারিয়াস এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান এশিয়া মাইনর, বলকান উপদ্বীপ, ফিলিস্তিন, মিশর, উত্তর আফ্রিকা, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চল এবং ইতালির অংশবিশেষ পর্যন্ত। জাস্টিনিয়ানের মৃত্যুর কয়েক বছর পর বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসে।

বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক ইতিহাস জটিল। এক হাজার বছরের শাসনের মধ্যে ৬৫ বার এখানে বিদ্রোহ হয়েছে আর ৬০ জনেরও বেশি সম্রাটকে রাজ্যত্যাগ করে পালাতে হয়ছে। সপ্তম শতাব্দীতে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য সব দিক দিয়ে এক গ্রিক রাজতন্ত্রে পরিণত হয়। সরকারি ভাষা হিসেবে লাতিনকে স্থানচ্যুত করে গ্রিক ভাষা। শিক্ষিত ও দক্ষ এক আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্র ও ধর্মের সর্বময় কর্তায় পরিণত হন সম্রাট। একই রাজার মধ্যে রাষ্ট্র ও ধর্মের সর্বোচ্চ কর্তৃত্বকে মেলাবার চেষ্টা ইতিহাসে দেখা গেছে বারবার। মিসরের ফারাওরা, চীনের সম্রাটগণ, রোমের সিজার, আমেরিকার ইনকা জাতির রাজারা, মুসলিম খলিফাগণ- এরা সবাই অনেকসময় একাধারে রাষ্ট্র ও ধর্মের সর্বোচ্চ কর্তারূপে দেখা দিয়েছেন অথবা দেবাত্মা (মুসলিমরা ছাড়া) বলে গৃহীত হয়েছেন। বাইজেনটাইন সম্রাটরাও এই ধারার অপর উদাহরণ। অদ্ভূত বিপরীত ভাবের লীলাভূমি ছিল বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। একদিকে জনসাধারণের মধ্যে ধর্মের প্রতি প্রগাঢ় নিষ্ঠা, দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের অনুশাসনের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ; অপরদিকে উচ্ছৃঙ্খল বিলাসিতা, বর্বরতা ও নিষ্ঠুরতা। সভ্যতার চিরায়ত চেহারাকে তেমন বদলাতে পারে নি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাপুষ্ট খ্রিস্টধর্ম!

বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যে খ্রিস্ট ধর্মের নিজস্ব ধারা ছিল, যার রক্ষণকর্তা ছিল খ্রিস্টার্ন অর্থডক্স চার্চ। প্রাচীনতর কনস্টানটাইন গির্জার স্থানে প্রথম জাস্টিনিয়ান কর্তৃক নির্মিত সেন্ট সোফিয়া গির্জা সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত বাইজেনটাইন অট্টালিকাগুলোর অন্যতম যা এখন হাজিয়া সোফিয়া নামে পরিচিত। ৫৩২ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সম্রাট জাস্টিনিয়ান কনস্টানটিনোপলের অধিবাসীদের জন্য এমন একটি গির্জা নির্মাণের নির্দেশ দেন, যেটি আগে কখনো নির্মাণ হয়নি, এমনকি ভবিষ্যতেও হবে না৷ গির্জাটি নির্মাণে কাজ করেছিল ১০ হাজার কর্মী৷ অন্তত এক হাজার বছর ধরে এটিই ছিল খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় চার্চ৷ এটি মূলত অর্থোডক্স গির্জা হিসেবেই মহাকালের বুকে যাত্রা শুরু করেছিল । দীর্ঘ কয়েক শতাব্দী সেই ভূমিকা পালনের পর ১২০৪ সালে এটিকে রূপান্তরিত করা হয় ক্যাথলিক গির্জাতে । মাত্র কয়েক দশক পরেই ১২৬১ সালে আবার উড়ল এখানে অর্থোডক্সদের নিশান। কিন্তু দুশ বছর পেরোবার আগেই এবার তুর্কিরা এসে দখল করে নিল রোমানদের রাজধানী, পতন ঘটল বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের, শুরু হল অটোমান শাসন। তুর্কিদের আক্রমণের পর এটি রাজকীয় মসজিদে পরিণত হয় যা চলল ১৯৩১ সাল পর্যন্ত । তখন এর নতুন নামকরণ হয় ‘ইম্পিরিয়াল মসজিদ’। পরবর্তীতে ১৯৩৫ সালের দিকে এটি মিউজিয়ামে পরিণত হয়। আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক ১৯৩৫ সালে হাজিয়া সোফিয়াকে জাদুঘরে পরিবর্তিত করেন৷ ১৯৮৫ সালে হাজিয়া সোফিয়া ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থাপনার তালিকায় স্থান পায়৷

বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের অর্থনীতি ছিল সামন্ততান্ত্রিক, তবে তা মিসরীয় সামন্ততন্ত্রের মত নয়। প্রজাদের অবস্থা ছিল ক্রীতদাস ও স্বাধীন কৃষকের মাঝামাঝি অবস্থা। সম্রাটের জমির ওপর করের হার এত বেশি ছিল যে চাষীদের জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার উপায় ছিল না। তাই তারা ভূস্বামীদের জমিতে ভূমিদাস হিসেবে কাজ করত। বিনিময়ে পেত নিজের পরিবার জন্য খাদ্যশস্য চাষের এক টুকরো জমি। এ জমির ফসলেরও একটি বড় অংশ ভূস্বামীকে দিতে হত। শোষণ মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে বারবার প্রজাবিদ্রোহ ঘটেছে। অর্থাৎ এ সাম্রাজ্যেরও সমৃদ্ধির মূলে ছিল শোষণের বিভীষিকা। শোষণের অপর নামই ছিল সমৃদ্ধি। কৃষি ছাড়াও সাম্রাজ্যের সম্পদের বড় উৎস ছিল শিল্প আর বাণিজ্য। এন্টিয়ক, দামেস্ক, সলোনিকা প্রভৃতি শহরগুলো সাম্রাজ্যের বড়ো শিল্পকেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত ছিলো।

ইউরোপ-এশিয়ার বাণিজ্যিক বিনিময়ের মূল কেন্দ্র ছিল কনস্টানটিনোপল।বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য শুধু তার নিজের উৎপন্ন দ্রব্যই বিক্রি করেনি, আরও বিক্রি করেছে এদেশের পণ্য ওদেশে।ফলে মুনাফার পয়সায় ফুলে ফেঁপে ওঠা বাণিজ্য নগরী কনস্টানটিনোপল যে সমৃদ্ধিতে সারা দুনিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। এতেও বিস্ময়ের কিছু ছিল না যে উন্মত্ত বিলাসীতায় গা ভাসাবে এ নগরীর ফুলে ফেঁপে ওঠা ধনী নাগরিকের দল। প্রবাদ প্রতীম বিলাসীতায় গা ভাসাবেন বাইজেনটাইন সম্রাট এটাও ছিল অনিবার্য সত্য। ফুলের পাপড়ি মাড়িয়ে সোনার থালায় খানা খেতে বসেন বাইজেনটাইন সম্রাট - এতে অবাক হওয়ার কি আছে?

রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে ইসলামী খিলাফতের আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত সময় জুড়ে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যই ছিল তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ সভ্যতা। এ সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করার শক্তি ছিল একমাত্র পারস্য সাম্রাজ্যের। এ সাম্রাজ্যকে সাসানিদ বা সসনিয়ন সাম্রাজ্যও বলা হয়। সসনিয়নরা তাদের সাম্রাজ্যকে ‘এরানশাহ্র’ অর্থাৎ ‘ইরানীয় সাম্রাজ্য’ বলেও ডাকত। খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে আরব উপদ্বীপের দুই দিকে ছিল এই দুটি বিরাট রাষ্ট্রশক্তি- একটি পারস্য সাম্রাজ্য এবং অপরটি বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য। এ দু’টি সাম্রাজ্যই ছিল তখনকার দুনিয়ার সেরা দু’টি শক্তি। আরব উপদ্বীপের পূর্ব দিকে পারস্য উপসাগরের দুই তীরে বিস্তৃত ছিল পারস্য সাম্রাজ্য। বর্তমান আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইয়ামান পর্যন্ত এই সাম্রাজ্যের সীমা বিস্তৃত ছিল। তখনকার এশিয়ার সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক শক্তিমান এবং প্রাচীন সভ্যতা-সংস্কৃতির ধারকরূপে পারস্য সাম্রাজ্যের অনন্য বৈশিষ্ট্যের কথা এখন পর্যন্ত ইতিহাসের একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে আছে। অপর দিকে আরব উপদ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থিত লোহিত সাগরের তীরবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে কৃষ্ণসাগরের উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল প্রাচীন বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য। আরবরা এটাকে রোম সাম্রাজ্যরূপে অভিহিত করত। এই দু’টি বিশাল সাম্রাজ্যের সীমান্ত বর্তমান ইরাকের দজলা-ফোরাত তীরে একত্রিত হয়েছিল। কনস্টানটিনোপলকেন্দ্রিক বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পূর্ব অংশকেই পবিত্র কুরআনে এবং ইসলামী ইতিহাসে রোম সাম্রাজ্য নামে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সাম্রাজ্যের সম্রাটের উপাধি ছিল কায়সার। ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গিবনের বর্ণনা অনুযায়ী এই সাম্রাজ্যটি ছিল তদানীন্তন পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা সুসভ্য এবং সম্রাট কায়সার সাম্রাজ্যের সর্বেসর্বা হওয়ার পাশাপাশি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় প্রধান রূপেও বিবেচিত হতেন।

ইতিহাসের চিরায়ত নিয়মের পথ ধরে অতীতের গ্রিক-পারস্য যুদ্ধের মতো বাইজেনটাইন ও পারস্য সাম্রাজ্যও পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে বারবার। পারস্য সম্রাট (শাহান শাহ) তৃতীয় খসরু ৬০২ সালে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের সাথে এক দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু করেন। ৬১০ সালে ফ্ল্যাভিয়াস হিরাক্লিয়াস অগাস্টাস বাইজানটিয়ামের সিংহাসনে বসেন। এই নতুন সম্রাট পারসিকদের হামলা প্রতিহত করতে পারলেন না। আগ্রাসী পারসিকেরা ইরাক ও সিরিয়া অধিকার করে এশিয়া-মাইনরে ঢুকে পড়ে। ৬১৯ সাল নাগাদ পারসিকেরা এশিয়া মাইনরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ এবং মিসর দখল করতে সক্ষম হয়। এর পরবর্তীতে নাটকীয়ভাবে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। শেষ পর্যন্ত বাইজেনটাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস পারসিকদের গতিরোধ করতে সমর্থ হন এবং ৬২২ থেকে ৬২৭ সালের মধ্যেই পারসিকেরা তাদের পুরানো সীমান্তে ফেরত যেতে বাধ্য হয়।

বাইজেনটাইন- পারস্যের এ যুদ্ধের ইতিহাসের সাথে অনিবার্যভাবে এসে যায় ঐতিহাসিক নগরী জেরুজালেমের কথাও। এসে যায় ইহুদি-খ্রিস্টান ইতিহাসের প্রাসঙ্গিকতাও। ৬১৪ সালে পারসিকদের হাতে পতন ঘটেছিল ঐতিহাসিক নগরী জেরুজালেমের। এ অভিযানে তারা বড় সহযোগী হিসেবে পেয়ে গিয়েছিল ইহুদিদেরকে। সেই যে ৭০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট টিটাসের দ্বারা ইহুদিরা বিতাড়িত হয় জেরুজালেম থেকে তার ৫৪৪ বছর পরে তারা এই প্রথম বিজয়ী পারসিকদের সাথে জেরুজালেমে প্রবেশের সুযোগ পায়। প্যাগান ধর্মবিশ্বাসী সম্রাট টিটাস তাদের জেরুজালেমে প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তা পরবর্তীতে বাইজেনটাইন খ্রিস্টান সম্রাটরাও কার্যকর রেখেছিলেন। ফলে এতদিন পরে তারা এই প্রথম জেরুজালেমে প্রবেশের সুযোগ পায়। পারসিকদের সহযোগিতায় ইহুদীরা সেখানে পাঁচ বছরের মতো নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু ইহুদী সেনারা জেরুজালেমের নিয়ন্ত্রন নিয়ে খ্রিষ্টানদের উপর বড় ধরণের হত্যাযজ্ঞ চালালে পারস্য সম্রাট খসরু ইহুদী সেনাদের জেরুজালেমের বাইরে থাকার নির্দেশ দেন। যে অল্প সময় ইহুদীরা জেরুজালেমে ছিল সেই সময়টিতে তারা রোমানদের হাতে ধ্বংসিত সোলায়মানের ধর্মগৃহের ধ্বংসস্তুপ পরিস্কারের কাজে হাত দেয় তৃতীয়বারের মতো সেটি নির্মানের আশায়। পারসিকরা চলে যাওয়ার পর বাইজেন্টাইন সেনাদের হামলায় জেরুজালেমের বাইরে অবস্থান নেয়া ইহুদী সেনাবাহিনী পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। জেরুজালেমে আবার বাইজেন্টাইন শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বৈধভাবে ইহুদীরা জেরুজালেমে বসবাস করার অধিকার পায় মুসলমানদের জেরুজালেম বিজয়ের পর। শান্তিপূর্ণভাবে জেরুজালেমের শাসন বুঝে নেয়ার সময় খলিফা ওমর খ্রিষ্টানদের সাথে যে কয়টি আপস রফা করেছিলেন তার মধ্যে একটি ছিল ‘জেরুজালেমে ইহুদীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা’। কিন্তু পরবর্তিতে ওমরের প্রচেষ্টায় ইহুদীদের ৭০টি পরিবার জেরুজালেমে বৈধভাবে বসবাস করার অধিকার পায়।

ইহুদিদের মত খ্রিস্টানদের একটি অংশও জেরুজালেমের পতনে খুশি হয়েছিল। এরা হল নেস্টোরিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায়। তারা আরিয়ানদের মতই খ্রিস্ট ধর্মের মূল ধারা বহির্ভূত মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে রোমান ক্যাথলিক ও বাইজেনটাইন অর্থডক্স উভয় ধারার চার্চের কাছে অবাঞ্ছিত ও অপাংতেয় ছিল। ক্যাথলিক ও অর্থডক্স উভয় প্রকার খ্রিস্টানদের কাছে তারা ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়। আরিয়ান বিতর্কের মূল বিষয় ছিল খ্রিস্ট ধর্মের Holy Trinity অর্থাৎ পবিত্র ত্রিত্ব-র প্রশ্নে। ত্রিত্ব হলো পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা হিসেবে যীসাসকে ইশ্বর বা প্রভু মনে করার বিষয়টি। একই সাথে ইশ্বরকে পিতা, পুত্র ও সত্ত্বা হিসেবে ব্যাখ্যা করার ঘোর বিরোধী ছিলেন খ্রিস্টধর্ম গুরু আরিয়াস (জন্ম: ২৫৬ সাল, মৃত্যু: ৩৩৬ সাল)। তিনি ছিলেন আলেকজান্দ্রিয়ার একজন প্রেসবাইটার। তাঁর মতবাদকে বলা হয় আরিয়ান মতবাদ। তাঁর মতে জাগতিক সত্ত্বার অধিকারী যিসাস ইশ্বর হতে পারেন না। এই মতবাদের মূল বিষয়বস্তু হল: Jesus Christ is the Son of God, but is entirely distinct from and subordinate to the God the Father. The Son of God did not always exist, but was created by—and is therefore distinct from—God the Father. এই বিতর্ক ক্রমে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়। অবশেষে এই সংকট মোচনের জন্য সম্রাট কনস্টানটাইন ৩২৫ সালে নিকাইয়া অঞ্চলে বিভিন্ন চার্চের ধর্মগুরুদের নিয়ে একটি সম্মেলন আহবান করেন। কনস্টানটাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে আরিয়াসের দাবী গৃহীত হয় নি। ঐতিহাসিক এই সভায় চার্চসমূহ যিসাসকে ইশ্বর ও ইশ্বরপুত্র এই দুই সত্ত্বায়ই প্রতিষ্ঠিত করে। নিকাইয়া সম্মেলনে খ্রিস্টধর্মের মূল ধারা চিরস্থায়ীভাবে একত্ববাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। এ বিচ্যুতি থেকে মুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা থেকে পরবর্তিতে আরও ধারা-উপধারার জন্ম হয়।

নেস্টোরিয়ানরা ছিল এমনই একটি উপধারা যারা যিসাসের দৈব ও মানবীয় উভয় প্রকার সত্ত্বায় বিশ্বাস করত কিন্তু সত্ত্বা দুটিকে আলাদাভাবে দেখত। তারা দুই সত্ত্বার বিচ্ছিন্নতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করত। নেস্টোরিয়াস (জন্ম: ৩৮৬ সাল, মৃত্যু: ৪৫১ সাল) ছিলেন কনস্টানটিনোপলের আর্চবিশপ ও প্যাট্রিয়ার্ক। ৪২৮ থেকে ৪৩১ সাল পর্যন্ত তিনি প্যাট্রিয়ার্ক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর মতবাদের মূল বিষয়বস্তু ছিল: The nature of Christ is divided equally between His divine nature and His human nature, but the two are distinct and separate. নেস্টোরিয়াসের এ মতবাদ অন্যান্য ধর্মনেতারা (মূলত ধর্মব্যবসায়ী) মেনে নেয়নি। আলেকজান্দ্রিয়ার প্যাট্রিয়ার্ক সিরিল (যে ইহুদি গণহত্যার জন্য কুখ্যাত) সবচেয়ে বেশী বিরোধিতা করল। অবশেষে ৪৩১ সালে ইফেসাসের প্রথম কাউন্সিলে নেস্টোরিয়াসের মতবাদকে ধর্মবিরোধী বলে আখ্যা দেয়া হয়। মূলত মানুষের দৈব সত্ত্বায় সন্দেহবাদী এ মতবাদ ছিল ধর্মব্যবসায়ী যাজকদের দৈবসত্ত্বার ওপরই একটি আঘাত। তাই সবাই মিলে আরিয়ান মতবাদের মত এটাকেও প্রতিহত করে। যাই হোক ,এ মতবাদ শেষ পর্যন্ত বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যে বিস্তৃতি না পেলেও পূর্বদিকের সাসানিদ সাম্রাজ্যে যথেষ্ট বিস্তৃতি পেয়েছিল। আরব উপদ্বীপেও এ মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে।

আরিয়ান, নেস্টোরিয়ান প্রভৃতি গোষ্ঠি কখোনোই বৃহৎ ধারার খ্রিস্টানদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় নি। এরা ক্যাথলিক ও অর্থডক্স চার্চের ঘোষিত বিধান মতে ছিল ধর্মবিরোধী। তাই প্রচলিত খ্রিস্টধর্ম থেকে তারা ছিল বহিস্কৃত। শুধু ভিন্ন ধারার খ্রিস্টান বলেই নয়, নেস্টোরিয়ানদের মুখের ভাষাও গ্রিক ছিল না। তদুপরি তারা ছিল প্রাচ্যবাসী। প্রতীচ্যের বিবেচনায় তাই তারা ছিল অনভিজাত ও নিকৃষ্ট। এসব কারনে পারস্যের নেস্টোরিয়ানরা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেছিল। এ প্রবনতা তাদেরকে পরিচালিত করে পারসিকদের বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য আক্রমণের সময় সহায়ক শক্তির ভূমিকায় নামতে। প্রচলিত ধারার খ্রিস্টানদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে জেরুজালেম দখল করে সেখানকার প্রচলিত গীর্জার অপমান করা ছিল তাদের সেই প্রতিশোধপরায়নতার অংশ।

এবার আসা যাক বিজিত অঞ্চলে পারসিকদের আচরণ কেমন ছিল সে প্রসঙ্গে। সে সময়ের প্রচলিত রাজনৈতিক নৈতিকতা অনুযায়ী এটা ছিল অনিবার্য ছিল যে বিজিত দেশের ওপর ধ্বংস ও মৃত্যুর বিভীষিকা নেমে আসবে। বিজয়ীরা বিজিত দেশের নির্দোষ বেসামরিক জনগনের ওপর অবলীলায় হত্যাযজ্ঞ চালাত, সেই সাথে যুক্ত হত বিজিতদের ধর্মবিশ্বাসকে অবমাননা করার এক বিকৃত উল্লাস! এ কাজে ইরানীরা খুবই দক্ষতার পরিচয় দেয়। বিজিত অঞ্চলে তারা খ্রিষ্টধর্মের সব নিদর্শন ধ্বংস করে ফেলে। ইসলামের নিকটতম ইতিহাসের এ ঘটনাটি সে সময়ের যুদ্ধনীতি ও রাজনৈতিক নৈতিকতার এক অন্যতম দৃষ্টান্ত। অভাবিত জয় লাভ করার পর ইরানীরা যথারীতি খ্রিষ্টান জনগণের ওপর নৃশংস অত্যাচার শুরু করে। জেরুজালেম দখলের পর ৬৫ হাজার খ্রিস্টানকে হত্যা করে, আর দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয় ৩৫ হাজারকে। যিসাসের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে যে গির্জা ছিল তা ভস্মীভূত করা হয় এবং সেখান থেকে খ্রিষ্টধর্মের সব কটি নিদর্শন ভূলুণ্ঠিত করা হয়। এমনকি তাদের সর্বপ্রধান ধর্মীয় নিদর্শন পবিত্র ট্রু ক্রস ছিনিয়ে এনে তদানীন্তন পারস্যের রাজধানী মাদায়েনে পৌঁছে দেয়া হয় যা সম্পর্কে খ্রিস্টানদের বিশ্বাস ছিল যে, এ কাষ্ঠখণ্ডটিতেই যিসাসকে কে ঝুলানো হয়েছিল! অবশ্য পরবর্তিতে সম্রাট হিরাক্লিয়াস পারসিকদের পরাস্ত করে যিসাসের অনেক স্মৃতিচিহ্ন পুনরুদ্ধার করেন।

বাইজেনটাইন-পারস্য যুদ্ধের এ ইতিহাসের সাথে আরেকটি ধর্মের প্রাসঙ্গিকতাও এসে যায়। এ ধর্ম হল ইতিহাস কাঁপানো ধর্ম ইসলাম ধর্ম। যে বছর সম্রাট হিরাক্লিয়াস বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন সে বছর অর্থাৎ ৬১০ সালে সুদূর আরব উপদ্বীপের অনুর্বর ও অখ্যাত অঞ্চলের এক মরুশহর মক্কায় আবির্ভাব হয় একজন নবির। তিনি ইসরাইলী নবি ছিলেন না, ছিলেন ইবরানী ধারায় আবির্ভূত আরব নবী। ইব্রাহিম যে আরব নারী সারীকে বিয়ে করেছিলেন সেই নারীর সন্তান ইসমাইলের বংশধর। যে বছর তিনি নবিত্ব প্রাপ্তির ঘোষনা দেন সে সময়ের প্রেক্ষাপটে তা স্থানীয় ঘটনার উর্দ্ধে কোন আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পায় নি। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যাবধানে তা অবিশ্বাস্যভাবে সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা হয়ে ওঠে। মহানবীর আবির্ভাবের সময়ে মক্কার পথে প্রান্তরে আলোচনা হত বাইজেন্টাইন-পারস্য যুদ্ধের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে, যদিও এ অঞ্চল কোন সাম্রাজ্যেরই অন্তর্ভূক্ত ছিল না। আরব উপদ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা এতই অনুর্বর ও অনুন্নত ছিল যে সেখানে প্রশাসন বসিয়ে শাসন করাটা কোন সম্রাটই লাভজনক মনে করেনি। অবশ্য ইয়েমেনকে পারসিকরা তাদের অনুগত একটি প্রদেশে পরিণত করতে পেরেছিল। যাই হোক, মক্কার লোকেরা তাদের রাজনৈতিক জীবনের সাথে সম্পর্কবিহীন বাইজেন্টাইন-পারস্য যুদ্ধের ব্যাপারে যে আগ্রহী ছিল এবং সে ব্যাপারে খোজখবর রাখত তা ইসলামের ইতিহাস থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। নতুন বাইজেনটাইন সম্রাট পারসিকদের সাথে যুদ্ধে সুবিধা করে উঠতে পারছিলেন না এবং বাইজেনটাইনদের বিজয়ের আর কোন সম্ভাবনা নেই সে খবরও তাদের কাছে এসে পৌছেছিল। এমতাবস্থায় সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা কথা তারা শুনল মক্কার নতুন নবির কাছ থেকে। মক্কার নতুন নবির প্রচারিত ধর্ম ছিল একত্ববাদী যার সাথে বাইজেনটাইন খ্রিস্টানদের ধর্মের মিল ছিল। অন্যদিকে মক্কার অধিকাংশ লোকের ধর্ম ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত পৌত্তলিক ধর্ম যার সাথে অগ্নিউপাসক পারসিকদের ধর্মের মিল ছিল। নতুন নবি ও তাঁর অনুসারিদেরকে তারা শত্রু জ্ঞান করত। রোমানদের (বাইজেনটাইনদেরকে আরবরা রোমানই বলত) শোচনীয় পরাজয় ও অগ্নিউপাসক পারসিকদের দীর্ঘ বিজয় সংবাদে মক্কার অংশীবাদী পৌত্তলিকরা ছিল দারুণ উল্লসিত। তারা নবি ও তাঁর অনুসারিদেরকে লক্ষ্য করে বলতে লাগল, দৈববাণী-নবী-রাসূল এবং আসমানি দীনের দাবিদার খ্রিস্টানরা যেভাবে পৌত্তলিক পারসিকদের হাতে পর্যুদস্ত হয়েছে, ঠিক সেভাবেই আসমানি প্রত্যাদেশপ্রাপ্তির দাবিদার মুসলমানরাও আমাদের হাতে উৎখাত হবে। মক্কার পৌত্তলিকদের সে উল্লাসের জবাবে অবতীর্ণ হয় পবিত্র কুরআনের সূরা রোমের প্রাথমিক কয়েকটি আয়াত:

আলিফ-লাম-মীম ।
রোমকরা পরাজিত হয়েছে,
এক নিম্নতমস্থানে এবং তারা তাদের এ পরাজয়ের পর
অতি সত্বর জয়লাভ করবে, তিন থেকে নয় বছরের মধ্যে।
পূর্বের ও পরের ফয়সালা আল্লাহরই।আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে।
(কোরআন, ৩০:১-৪)।

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ এডওয়ার্ড গিবন লিখেছেন, পবিত্র কুরআনে উপরোক্ত ভবিষ্যদ্বাণী যখন উচ্চারিত হয়েছিল তখন রোমানদের পক্ষে বিজয়ী পারস্য শক্তির ওপর পুনঃবিজয় লাভ তো দূরের কথা, তাদের পক্ষে মাথা তুলে দাঁড়ানোর কোনো দূরতম সম্ভাবনাও ছিল না। অপর দিকে মুসলমানগণও তখন যেরূপ অবর্ণনীয় দুরবস্থায় পতিত ছিল সেই পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষেও অদূর ভবিষ্যতে জাতীয় পর্যায়ে কোনো সুসংবাদের আশা করাটা ছিল সম্পূর্ণ দুরাশা মাত্র। ৬১৪ সালে জেরুজালেমের পতন ও পৌত্তলিক পারসিকদের হাতে বাইজেনটাইন খৃষ্টানদের গুরতর পরাজয় বরণ করার ৬ বছর পরে, ৬২০ সনে এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছিল। বাইজেনটাইনরা খুব অল্প সময়ের মাঝেই বিজয় ছিনিয়ে নেবে।আয়াতগুলোতে তাই বর্ণিত হয়েছিল। সত্যি বলতে কি, বাইজেনটাইনরা কেবল মারাত্মক পরাজয়ই বরণ করেনি, এমনকি এটির টিকে থাকাই যেখানে অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছিল সেখানে জেতার কথা বাদই দিতে হয়। কেবল পারসিকরাই নয়, মারাত্মক ভীতির কারণ হিসেবে আরও বিদ্যমান ছিল অ্যাভারস আর ল্যাম্বার্ডরা। অ্যাভারসরা কনস্টানটিনোপলের দেয়াল পর্যন্ত এসে গিয়েছিল। বাইজেনটাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াস গির্জাসমূহের স্বর্ণ, রৌপ্যগুলো গলিয়ে মুদ্রা বানিয়ে তার বাহিনীদের খরচ মেটানোর আদেশ দিলেন। এগুলোও যখন অপর্যাপ্ত মনে হলো তখন এমনকি ব্রোঞ্জের মূর্তিগুলো গলিয়ে মূদ্রা বানানো হলো। বহু গভর্ণর হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল আর তার সাম্রাজ্য ছিল পতনের মুখে। আগের বাইজেন্টাইনের অধীনস্ত রাষ্ট্র, যেমন, মেসোপটেমিয়া, সিলিসিয়া, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, মিসর, আর্মেনিয়া তখন পারসিকদের অধীনস্ত হয়ে গিয়েছিল। স্বল্প কথায় সকলেই মনে করছিল যে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ঠিক সেই মুহূর্তে সূরা রোমের প্রথম কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হয়, যাতে ঘোষিত হয়েছিল যে, কয়েক বছরের মাথায় বাইজেনটাইনরা বিজয় ছিনিয়ে নেবে। কিন্তু বিজয় তখন এমনি অসম্ভব ছিল যে, বহু- ঈশ্বরবাদী আরবরা আয়াত কয়টি নিয়ে উপহাস শুরু করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সূরা রোমের প্রথম আয়াত নাযিলের সাত বছর পরে ৬২৭ সনের ডিসেম্বরে বাইজেন্টাইন আর পারস্যদের মাঝে একটি চূড়ান্ত যুদ্ধ শুর হল নিনেভেহতে। এই সময় আশাতীতভাবে বাইজেন্টাইনরা পারসীয়দের পরাজিত করল। শেষ যুদ্ধে সম্রাট হেরাক্লিয়াসের নেতৃত্বাধীন বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য হারানো সকল অঞ্চল পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয় এবং ৬২৯ সালে জেরুজালেমে ট্রু ক্রস পুনরায় স্থাপন করা হয়। পারসীয়রা বাইজেন্টাইনদের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হল, যারই ফলে তাদেরকে নিজেদের দখল করা অংশগুলো হতে হটতে বাধ্য হয়েছিল।

দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা যুদ্ধের ধকল সইতে না পেরে এবং প্লেগ ছড়িয়ে পড়ার ফলে বাইজেনটাইন-পারস্য উভয় সাম্রাজ্য বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। এরই মধ্যে ঘটে ইতিহাস চমকে দেয়া আকস্মিক মুসলিম উত্থান। আরব উপদ্বীপের যে ভূখন্ডে এতদিন কোন উল্লেখযোগ্য সভ্যতার গন্ধই পাওয়া যায় নি এবং যে অঞ্চল এতটাই উপেক্ষিত ছিল যে কেউ দখলেরও প্রয়োজন মনে করত না সে অঞ্চল থেকেই মাথা তুলে দাঁড়ায় সমস্ত মানব ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া নতুন সভ্যতা- ইসলামী খিলাফত। এ সভ্যতা পৃথিবীর সকল বিজয়ের ইতিহাসকে পেছনে ফেলে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে একটি বিশাল সাম্রাজ্যের আকার ধারণ করে। যা অর্জনে অন্যান্য সভতাগুলোর লেগেছে কয়েক শতাব্দী তা এই সভ্যতা অর্জন করেছে মাত্র কয়েক বছরে। ৬২২ সালে মদীনা হতে যে খিলাফত সভ্যতার সূচনা হয় তা কয়েক বছরের মধ্যেই বাইজেনটাইন ও পারসিকদের কাছ থেকে তাদের বিভিন্ন এলাকা জয় করে নেয়। ৬২০ এর দশকের শেষনাগাদ মহানবী অধিকাংশ আরবকে খিলাফত শাসনের অধীনে একতাবদ্ধ করেন। তার সময় প্রথম মুসলিম-বাইজেনটাইন সংঘর্ষ হয়। হেরাক্লিয়াসের সাথে পারসিক সেনাপতি শাহরবারাজের চুক্তিতে শর্তারোপ করা হয় যে পারস্যের সেনারা ৬২৯ সালে অধিকৃত বাইজেন্টাইন পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলো থেকে তাদের অবস্থান প্রত্যাহার করবে। এর কয়েকমাস পর আরব ও বাইজেনটাইন সেনারা মুতার যুদ্ধে মুখোমুখি হয়। ৬৩২ সালে মহানবী মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আবু বকর তাঁর উত্তরসুরি হন। এসময় বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ দেখা দিলে রিদ্দার যুদ্ধে তা দমন করা হয়। ফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপে মুসলিম খিলাফতের অবস্থান সুসংহত হয়।

৬৩০ এর দশকে আরব উপদ্বীপ থেকে আরব মুসলিমদের অভিযানের ফলে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্য তার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সিরিয়া ও মিসর মুসলিমদের কাছে হারায়। উমাইয়া খিলাফতের অধীনে পরবর্তী পঞ্চাশ বছর মুসলিমরা বাইজেনটাইন অধীনস্ত এশিয়া মাইনরে অভিযান চালায়, দুইবার বাইজেনটাইন রাজধানী কনস্টানটিনোপল হুমকির সম্মুখীন হয় এবং বাইজেনটাইন অধিভুক্ত আফ্রিকা দখল করে নেয়। ৭১৮ সালে কনস্টানটিনোপল অবরোধ ব্যর্থ হওয়ার পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয়। এসময় এশিয়া মাইনরের পূর্বদিকে তোরোস পর্বতমালা একটি সীমানা হিসেবে পরিগণিত হয়। আব্বাসীয় খিলাফতের অধীনে দূত বিনিময় ও বিভিন্ন মেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক আরো স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু প্রায় বার্ষিক হামলা ও পাল্টা হামলার মাধ্যমে সংঘর্ষ লেগেই ছিল। দশম শতকে এসব হামলায় আব্বাসীয় সরকার বা স্থানীয় শাসক উভয়েই উৎসাহ দেয়।

মুসলিমরা সাগরপথেও চেষ্টা চালায়। ৬৫০ এর দশক থেকে বিভিন্ন দ্বীপ ও উপকূলীয় অঞ্চলে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের ফলে সমগ্র ভূমধ্যসাগর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হয়। নবম ও দশম শতাব্দীতে ক্রিট, মাল্টা ও সিসিলি মুসলিম অভিযান সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌছায়। একই সাথে মুসলিম নৌবহর ফ্রান্স, ডালমেশিয়া ও এমনকি কনস্টান্টিনোপলের শহরতলীতে পৌছে যায়।

হিজরী প্রথম শতাব্দীতে বাইজেনটাইনরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিত এবং খোলা মাঠে যুদ্ধ এড়িয়ে চলত। তারা সুরক্ষিত দুর্গে অবস্থান নিত। ৭৪০ এর পর থেকে তারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। কিন্তু এসময়ও আব্বাসীয়রা এশিয়া মাইনরে বড় আকারের ও বিধ্বংসী আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করতে সক্ষম ছিল। ৮৬১ এর পর থেকে আব্বাসীয়দের পতন ও বিভাজন এবং মেসিডোনীয় রাজবংশের অধীনে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের শক্তিবৃদ্ধির ফলে স্রোত উল্টো দিকে ঘুরে যায়। ৯২০ থেকে ৯৭৬ এর মোট পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বাইজেনটাইনরা মুসলিমদের প্রতিরোধ ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয় এবং উত্তর সিরিয়া ও বৃহত্তর আর্মেনিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়। বাইজেনটাইন-আরব যুদ্ধের শেষ শতক ফাতেমীয়দের সাথে সীমান্তবর্তী সংঘর্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু ১০৬০ সালের পর সেলজুক তুর্কিদের আগমনের আগ পর্যন্ত সীমানা একইরকম ছিল। ১২০৪ সালে ক্রুসেডারদের হাতে একবার ধ্বংসিত হয় কনস্টানটিনোপল। পরে অবশ্য ১২৬১ সালে আবার মুক্ত হয় কনস্টানটিনোপল।

১৩০০ সালের দিকে ওসমান নামের এক তুর্কি নেতা কৃষ্ণ সাগরের উপকূলে এশিয়া মাইনরে একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তার অনুসারী এবং উত্তরাধিকারীরা অটোমান বা ওসমানীয় হিসাবে পরিচিত। তারা ক্রমশ এশিয়া মাইনরে রাজ্য বিস্তার করতে থাকে এবং ১৩৪৫ সালে তারা বাইজেনটাইন সম্রাট জন ক্যানটাকুজেনকে সাহায্য করতে এশিয়া পেরিয়ে ইউরোপে যায়। সে সময় গৃহযুদ্ধ চলছিল। ইউরোপে পা রেখেই অটোমান বা ওসমানীয় তুর্কিরা দ্রুত তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে থাকে। ১৪০০ সাল নাগাদ কয়েকটা অভিযানের পর তারা ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া এবং বুলগেরিয়া জয় করে। তারা বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যকে সংকুচিত করতে করতে বাইজানটিয়ামের (কনস্টানটিনোপল) চৌহদ্দিতে নিয়ে আসে। তখন এর আয়তন ছিল আজকের তুরস্কের আয়তনের সমান।

বাইজানটিয়ামকে কিছুকালের জন্য রক্ষা করেন মোঙ্গল বীর তৈমুর লং। তিনি ছিলেন চেঙ্গিস খানের বংশধর। ১৪০২ সালে তিনি অধিকাংশ ওসমানীয় সাম্রাজ্য তছনছ করে দেন। এমনকি তার মৃত্যুর পরও ওসমানীয় সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে। কিন্তু শীঘ্রই দুর্দান্ত ও অদম্য সুলতান মাহমুদ ফাতেহ বিজয়ীর বেশে আবির্ভুত হন । মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি কনস্টানটিনোপল জয় করে সমগ্র সভ্যতার ইতিহাসকে ঘুরিয়ে দেন । ১৪৫১ সালে ওসমানীয় সাম্রাজের সিংহাসনে আরোহন করেন সুলতান মাহমুদ ফাতেহ । তিনি ছিলেন কথিত ওসমানীয় খিলাফতের সপ্তম খলীফা ।প্রথমবার সিংহাসনে আরোহন করেছিলেন মাত্র বারো বছর বয়সে, কিন্তু তার অল্প বয়স রাজ্য পরিচালনায় সমস্যা সৃষ্টি করবে আশংকায় তাকে অল্পদিন পরেই সরিয়ে দেয়া হয়। পরবর্তীতে একুশ বছর বয়সে পুনরায় সিংহাসনে আরোহন করেন।১৪৫৩ সালে দেড় লাখ সৈন্য নিয়ে তিনি কনস্টানটিনোপল অবরোধ করেন।


কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সীমানা প্রাচীর

ভৌগলিক দিক থেকে কনস্টানটিনোপল ছিল পৃথিবীর সবচয়ে সুরক্ষিত শহর। কনস্টানটিনোপল নগরীর তিন দিকে জল, একদিকে স্থল।পশ্চিমে বসফরাস প্রণালী, দক্ষিণে গোল্ডেন হর্ন ও উত্তরে মারমারা উপসাগর। গোটা নগরীর চারপাশে ছিল একাধিক দুর্ভেদ্য প্রাচীর ও সার্বক্ষণিক সশস্ত্র প্রহরা। এসব কারণে কনস্টানটিনোপল ছিল সে বিচারে এক অজেয় দুর্গ। এ শহর জয়ের জন্য সুলতান মাহমুদ ফাতেহ তৎকালীন বিশ্বের সর্বাধুনিক রণপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন। সে সময়ের সবচেয়ে দূর পাল্লার কামান তিনিই তৈরি করেছিলেন। তবুও তাঁর নৌবহর সবুধাজনক জায়গায় পৌছতে না পারায় যুদ্ধ জয়ের কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না। নৌপথে বিজয়ের জন্য ওসমানীয় নৌবহরের গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করা ছিল অপরিহার্য। কিন্তু গোল্ডেন হর্নের মুখ শিকল দ্বারা বন্ধ করা দেওয়া হয়েছিল এবং বাইজেনটাইন রণতরীগুলো সেখানে অবস্থান নিয়ে গোলা নিক্ষেপ করছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ অবিরত যুদ্ধের পরও নৌপথে বিজয়ের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। অবশেষে সুলতান মাহমুদ ফাতেহ এমন এক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, যা পৃথিবীর যুদ্ধের ইতিহাসে একমাত্র বিরল ও বিস্ময়কর হয়ে আছে। গিবনের মত ঐতিহাহিকও একে 'মিরাকল' বলে আখ্যায়িত করেছেন।

সুলতান ফাতেহ তাঁর সৈন্যদের আদেশ দিলেন ওসমানীয় রণতরীগুলো ডাঙ্গায় তুলে দশ মাইল পথ অতিক্রম করে গোল্ডেন হর্নে নামাতে হবে, এই দীর্ঘ পথ পুরোটাই ছিল পাহাড়ী উঁচুনিচু ভূমি। এর উপর দিয়ে সত্তরটি রণতরী টেনে নেয়া ছিল এককথায় অসম্ভব। কিন্তু সুলতান ফাতেহ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন। পুরো পথে কাঠের পাঠাতন বিছানো হল, তাতে চর্বি মাখিয়ে পিচ্ছিল করা হল এবং এর উপর দিয়ে রণতরীগুলো টেনে নিয়ে যাওয়া হল। এভাবে টিলা ও পাহাড়ের উপর দিয়ে রাতের অন্ধকারের মধ্যে সত্তরটি রণতরী তিনি গোল্ডেন হর্নে প্রবেশ করাতে সক্ষম হলেন। বাইজেনটাইন সৈন্যরা কনস্টানটিনোপলের প্রাচীর থেকে বসফরাসের পশ্চিম তীরে মশালের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করে।কিন্তু অন্ধকারের কারণে কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। অবশেষে ভোরের আলো যখন ফুটল তখন প্রহরারত বাইজেনটাইন নৌ সেনারা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে দেখল যে, ওসমানীয় রণতরীগুলো মৃত্যুদূতের মতো তাদের পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসছে। এই ঘটনা ত্থেকে একটি প্রবাদ তৈরি হল: যখন পানির জাহাজ ডাঙ্গায় চলবে তখন বুঝবে কনস্টানটিনোপলের পতন আসন্ন।

চূড়ান্ত আক্রমণের আগে সুলতান মাহমুদ ফাতেহ বাইজেনটাইন সম্রাটকে নগরী আত্মসমর্পনের বার্তা পাঠালেন এবং নগরবাসীর জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেন, কিন্তু সম্রাট তা গ্রহণ করলেন না। এবার সুলতান চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি নিলেন। ঐতিহাহিকগণ লেখেন,আক্রমণের আগে সুলতান ফাতেহ বাহিনীর অধিনায়কদের তলব করে সকল সৈন্যদের এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার আদেশ করলেন যে গীর্জা ও উপসানালয়গুলোর যেন অসম্মান না করা হয়, পাদ্রী, মহিলা, শিশু এবং অক্ষম লোকদের যেন কোন ধরনের কষ্ট না দেওয়া হয়।

দিনটি ছিল ২৯ মে ১৪৫৩ সাল। ভোরের আলো ঠিকমত ফোটার আগেই যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তুর্কি স্থলবাহিনী তিনদিক থেকে স্থলভাগে এবং তুর্কি নৌবাহিনী নৌপথে আক্রমণ চালায়। দ্বিপ্রহর পর্যন্ত উভয় পক্ষের মধ্যে ভীষণ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে থাকে। কিন্তু বাইজেনটাইন বাহিনীর অসাধারণ বীরত্বে একটি সৈন্যও শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। বাইজেনটাইন সম্রাট একাদশ কনস্টানটাইনের সৈন্যসংখ্যা ছিল ৮ হাজার। তা সত্ত্বেও তারা দুর্ভেদ্য প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তুর্কিরা নগর প্রাচীরের উপর আরোহণের আগ পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। অবশেষে সুলতান ফাতেহ তাঁর বিশেষ বাহিনী ইয়ানাচারী বাহিনীকে সাথে করে সেন্ট রোমান্স এর ফটক এর দিকে অগ্রসর হন। ইয়ানাচারী বাহিনীর প্রধান আগা হাসান তার ত্রিশ জন বীর সঙ্গীকে সাথে নিয়ে প্রাচীরের উপর আরোহণ করেন। হাসান ও তার আঠার সাথীকে প্রাচীর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। অবশিষ্ট বারোজন প্রাচীরের উপর দৃঢ় অবস্থান করতে সক্ষম হন। তারপর ওসমানীয় বাহিনীর অন্যান্য দলও একের পর এক প্রাচীরে আরোহণ করতে সক্ষম হয়। এরা কনস্টানটিনোপলের প্রাচীরে চন্দ্রখচিত লাল পতাকা উড়িয়ে দেয়।

বাইজেনটাইন সম্রাট একাদশ কনস্টানটাইন এতক্ষণ বীরত্বের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছিলেন। কিন্তু শেষ মূহুর্তে পরাজয়ের মুখোমুখি হয়ে তিনি জীবন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। খোলা তলোয়ার হাতে ওসমানী সেনাবাহিনীর উন্মত্ত তরঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করে সত্যিকার সৈনিকের মত বীরত্বের সাথে লড়তে লড়তে নিহত হলেন শেষ বাইজেনটাইন সম্রাট একাদশ কনস্টানটাইন ।তার মৃত্যতে ১১২৩ বছরের বাইজেনটাইন সম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটল।

কনস্টানটিনোপলের পতনের পর বিজয়ীরা শহরের অধিবাসীদের ওপর কোন গণহত্যা, ধ্বংসযজ্ঞ ও বা লুটতরাজ চালায়নি যা আজকের আধুনিক যুগেও বিজয়ীদের কাছে পাওয়া আশাতীত। এই বিজয় অনুসরণ করেছে মক্কা বিজয়, ৬৩৪ সালে খলিফা ওমরের জেরুজালেম বিজয় এবং ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর জেরুজালেম বিজয়ের ইতিহাসকে। যদিও সালাহউদ্দিন আইয়ুবী ও সুলতান মাহমুদ ফাতেহ কোন ইসলামী খিলাফতের নেতৃত্বে ছিলেন না বরং রাজতন্ত্রী সুলতান ছিলেন তবুও তাঁরা ইসলামের যুদ্ধনীতি অনুসরণ করার ফলেই কোন বিপর্যয় ঘটেনি।কনস্টানটিনোপল বিজয়ের পর নগরীর অধিকাংশ খৃস্টান সেন্ট সোফিয়ায় আশ্র্য় নিয়েছিল। সুলতান তাদেরকে অভয় দিলেন এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তা দান করলেন। সুলতান তাদের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন। এ ধরণের প্রতিহিংসামুক্ত বিজয়ের ইতিহাস অন্যান্য সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাসে নেই।মক্কা বিজয়ের পরে অপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়া হয়েছিল। ১১৮৭ সালে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর জেরুজালেম বিজয়ের পর ৬০০০০ অপরাধী ক্রুসেডারকে ক্ষমা করে দেন, শুধু তাই নয় তাদেরকে জমি-জমাও প্রদান করে ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এসব ইতিহাসের পাশাপাশি সুলতান মাহমুদ ফাতেহের এ প্রতিহিংসামুক্ত বিজয়ের ইতিহাসও আবশ্যই মনে রাখার মত। বিশেষত আজকের যুগেও, যখন আধুনিক দর্শন আর মানবতার নানান ব্যাখ্যা আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে পরাশক্তিগুলো নির্বিচারে
মেতে ওঠে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে।

কনস্টানটিনোপল বিজয়ের পর তুর্কিরা শহরটির নাম দেয়া হয় ইসলামপোল, যা উচ্চারণ বদলে হয়ে যায় ইস্তাম্বুল। ইস্তাম্বুলকে বানানো হয় ওসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী। সুলতান মাহমুদ ফাতেহের নামের সাথেই ফাতেহ শব্দটি জুড়ে দেয়া হয়েছে এ বিজয়ের পরে। তুর্কি শব্দ ‘ফাতিহ’ অর্থ বিজয়। ১৪৫৩ সালে টানা ৫৭ দিন অবরোধের পর তুর্কি এই বীরের কনস্টানটিনোপোল বিজয়ের কহিনী নিয়ে আজকের তুর্কিরা তৈরী করেছে তাদের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এপিক সিনেমা ‘ফাতিহ ১৪৫৩’।

কনস্টানটিনোপলের পতনকে গণনা করা হয় মধ্যযুগের অবসান হিসাবে। কনস্টানটিনোপলের অনেক পন্ডিত পশ্চিমে পালিয়ে যান, তারা শিক্ষা বিস্তারে উৎসাহ জোগান এবং উচ্চতর জ্ঞানচর্চা করেন, যা রেনেসাঁস বলে পরিচিত। বর্তমানে যে সমস্ত দেশ সমূহ সে সময়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ছিল সেগুলো হলো- আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, মিশর, ফ্রান্স, জর্জিয়া, গ্রিস, সিরিয়া, ইরান, লিবিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরাইল, ইটালি, জর্ডান, কসোভো, মেসিডোনিয়া, মাল্টা, মন্টেনিগ্রো, মরক্কো, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্যান মারিনো, সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, ইউক্রেন এবং ভ্যাটিকান সিটি।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×