somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বিড়ি বেলা (একটি বিড়িময় পোষ্ট)

২৬ শে জুন, ২০১১ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথমেই একখান গল্প দিয়া শুরু করি......

এক বৃদ্ধ শিক্ষক ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে দেখলেন মধ্যবয়সী এক লোক নির্মীয়মান এক বিল্ডিংয়ের সামনে দাড়িয়ে মহাসুখে সিগারেট টেনে যাচ্ছেন। শিক্ষকের আর সহ্য হল না। ভাবলেন, সরাসরি মানা না করে একটু অন্যভাবে বুঝিয়ে বলবেন, সেজন্য সরাসরি তার সামনে গিয়ে দাড়িয়ে বললেন,
> বাবা কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি।
>> আপনি কে?
> আমি অমুক স্কুলের গণিত শিক্ষক
>> আচ্ছা বলেন, কি বলবেন
> আপনি দিনে কয়টা সিগারেট খান?
>> ২৫/৩০ টা। কোন কোন সময় আরো বেশি
> দাম কত একেকটার?
>> ৭ টাকা
> এবার শিক্ষক মনে মনে হিসেব করে বললেন, আপনি যদি এই টাকাগুলো অপচয় না করে ৫ বছর জমিয়ে রাখতেন তাহলে অন্তত একতালা একটি বাড়ির মালিক হতেন?
লোকটি এবার স্যারের উদ্দেশ্য বুঝতে পারল। মুচকি হেসে বলল, স্যার , সামনের যেই বাড়িটি দেখতে পাচ্ছেন এটি আমার, আর ওই পাশের চারতালা বাড়িটাও আমার !! :D:D তবে স্যার, আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু কি করব বলেন, ছাড়তে তো পারি না........!! (সিগারেটের ট্যাকা নাকি ভূতে যোগায় !)

এই "কি করব বলেন" নিয়াই যত ঝামেলা। চেইন স্মোকার, ভাবের স্মোকার , সখের স্মোকার, টেনশন স্মোকার, বাচ্চা স্মোকারসহ দুনিয়ায় হাজারো কিসিমের স্মোকার আছে। এমনকি রাইতের বেলা ভাত খাওনের পরে বিড়িতে কইসা দুইটান দিতে না পারলে বলে অনেকের টয়লেটও নাকি হয় না !! :D

বিড়ি জিনিসটা আমার দুই চোখের বিষ আছিল ছোটবেলা থেইকাই। বাসে কইরা যখন কোথাও যাইতাম, বিড়ির গন্ধে আমার মাথা ঘুরাইত। কিন্তু তখনতো আর এখনকার মত বাসে বিড়ি টানা নিষিদ্ধ আছিল না। ক্লাস সেভেনের কথা, তখন রংপুর থাকতাম। ঈদের দিন কয়েক বন্ধু মিল্যা ঘুরতে বাহির হইলাম। এক টং দোকানে দেখি লটারি ছাড়ছে এক টাকা কইরা। লটারিতে পুরস্কার হিসেবে পাইলাম "নাসির গোল্ড" B-)B-) মেজাজটাই বিলা হইয়া গেল। কতদূর যাইয়া আবার ফিরা আসলাম। দোকানদাররে কইলাম, বিড়ি টা দেন। তার সামনেই পায়ের তলায় বিড়িটা পিষলাম। তবে তারও বছর দুয়েক আগে মামতো ভাইর লগে পাট কাঠিতে দুইটান দিয়া যে কাশি শুরু হইছিল, সেইটা থামতে পাক্কা দুইদিন লাগছিল। এই হইল আমার জীবনে প্রথম বিড়ি ধরা। সেই বিড়িই (আমরা সিগারেটরে বিড়ি কই !) আমার জীবনে ল্যাঞ্জার মত লাইগা যাইব তা কি আর সেদিন বুঝছিলাম।

তার একবছর পরে একবার গ্রামের বাড়িতে গেলাম বেড়াইতে। যাইয়া দেখি কাজিন বেশ কয়েকটা খুব আয়েশ কইরা বিড়ি টানে। আমার কাছে মনে হইতে লাগল, ওগোর মতন কইরা বিড়িই যদি নাটানতে পারলাম , তাইলে কিসের আর শহরের পোলা হইলাম /:) যদিও সবগুলাই আমার থেকে দুই-তিন বছরের সিনিয়র ছিল। একদিন আমার থেইকা ৫ টাকা নিয়া একজনে বিড়ি নিয়া আসল। ধরাইয়া কেমনে টানতে হয় দেখাইয়া দিল। আমি ছোট কইরা দুইটান দিয়া ফু ফু কইরা উড়াইলাম। সেই ছিল জীবনের প্রথম বিড়ি টানা। এমন করিয়া বহুদিন চইলা গেল, বিড়ি আর টানা হয় না। ক্লাস নাইনে উইঠা পুরাই লাইনে উইঠা গেলাম। প্রেম করা শুরু করলাম, আড্ডা দেয়া শুরু করলাম, বিড়িও ধরলাম। তখন দুনিয়া পুরা রঙ্গিন মনে হইত। "মাসুদ রানা" র মত খালি উইড়া বেড়াইতাম কল্পনায়।

এসএসসি দেয়ার পরে বাবার বদলির কারণে টাঙ্গাইল চলে আসলাম। প্রথম প্রথম খুব একা একা থাকতাম বলে, আর নতুন এলাকা বইলা টানারও সাহস পাইতাম না। কেননা, তখনও আমি পুরাপুরি আঞ্চলিক বাংলায় যারে কয় "খোর" হইয়া উঠি নাই। তারপরেও দুই -এক টান দিতাম, আর কলেজে গেলে দেখতাম সব হেডস্যার ( পাশাপাশি একটা স্কুলও ছিল) এর বাড়ির পিছনে যাইয়া সুখটান দেয়। আমিও ধীরে ধীরে খোর হইয়া উঠিতে লাগিলাম।

আমার বাপজানে একসময় বুঝল যে তার পোলাতো লায়েক হইছে। এই কারণে ইন্টার শেষ হওয়ার পর শত চিল্লাচিল্লি কানে না তুইলাই আমারে ঢাকার বদলে চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট কইরা দিল ভার্সিটির ভর্তি কোচিংয়ের লাইগা। সেখানে আমার এক কাজিন তখন চট্টগ্রাম ভার্সিটিতে পড়ত। মনের দু:খে এদিক ওদিক ঘুইরা বেড়াই, একলা একলা বিড়ি টানি। পরে আরও দুই কাজিন আসল গ্রাম থেকে কোচিংয়ের জন্য। তাগোরে নিয়া উঠলাম চকবাজারে মেসে। এইবার কিছু স্থানীয় পোলাপাইন জুইটা গেল। যেই ভয়ে বাপে আমারে ঢাকার বদলে চিটাগাং পাঠাইল, সেইটা আরও তীব্র বেগে বাড়িয়া চলিল। সুখ বেশিদিন স্থায়ী হইল না। এইবার বাপে নতুন স্ট্রাট্যেজি নিল কৃচ্ছতাসাধনের। টাকার পরিমাণ দিল কমাইয়া। আমারও ব্রান্ড বদল হইল। মাগার বিড়ি খাওন কমল না। এমনি করিয়াই ৬ মাস চট্টগ্রামে কাটাইয়া দিলাম। কোচিংয়ে টুক টাক যাও যেতাম, পড়া-লেখা করছি বইলা মনে হয় না। উচ্ছন্নে যাওয়া বোধহয় ইহাকেই বলে। মাঝখানে আবার বিশাল আকারের এক অসুখ বাধাইয়া ১৭দিন হাসপাতালেও পইড়া ছিলাম।

পুর্ণাঙ্গতে (ঢাকা-চিটাগাং) চান্স না পাইয়া ভর্তি হইলাম জাতীয়তে। প্রাইভেটের কথা আর জোর গলায় মুখ দিয়া বাহির হইল না। যদিও বিড়ালের মত কয়েকবার মিউ মিউ করিয়া চাহিদা জানান দিচ্ছিলাম।

গুল্ড লিফের উপরে কুন বিড়ি এই দুনিয়ায় আছে বইলা জানা নাই।
বন্ধু বান্ধব যেইডি এই ব্রান্ডের ছিল, ব্যবাক্তে আমারে ছাইড়া বেনসনে উইঠ্যা গেল তাও মেলা দিন। কেউ কয় বুকে ব্যথা , কেউ কয় কুলায় না, আবার কেউ কেউ কয় গুল্ড লিফ খাইলে বলে কি জানি কইমা যায় !! :-B :-B ব্যথা আমারও যে করে না, তা না। মাঝে মধ্যে চিকন ব্যথা টের পাই।
অনার্স প্রথম বর্ষে একবার ব্যথার চোটে মনে হইল যে আজই বুঝি শেষ দিন। ছিলাম বন্ধুর মেসে, ব্যথা বুকে নিয়াই বাপ-মা , ভাই- বোন সবার কাছে মাপ-টাপ চাইয়া নিজের ডায়েরীর মধ্যে বিশাল এক পত্র লিখিয়া ফেললাম। B-) সেই পত্রখানা এখনও মাঝে মধ্যে পইড়া হাসি!

ইহার অনেকদিন পরেই একদিন বজ্রপাতের মত ৬ বছরের প্রেমকে একবাক্যে না বলিয়া, কোন কারণ না দেখাইয়া সে চলিয়া গেল জীবন থেকে। বিড়ি টানার মাত্রা এবার সকল বাধা অতিক্রম করিয়া আকাশের কাছাকাছি গিয়া ঠেকিল। এমনিভাবেই বছর দুয়েক যাওয়ার পরে ধীরে ধীরে আবারও কমাইয়া দিলাম। এখন অবধি সেই অবস্থানেই বিরাজ করিতেছে। একটা সময় হয়ত ছেড়েও দিতে পারব।


পরিশেষে, এত কথা হয়ত বলা হত না। আজ আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। এই কয়েক বছরে একটা জিনিস দেখেছি, যারা মাদকাসক্ত তাদের সবারই প্রথমে সিগারেট দিয়ে শুরু। যদিও মাদককে আমি খুবই ঘৃণা করি। আমি যেহেতু নিজেই স্মোকার, এবং জানি যে এটা খুবই খারাপ একটা অভ্যাস, তাই সিগারেটকে না বলার যোগ্যতা আমার নেই। সেই সুবাদে মাদককেও না বলা মানায় না। তবুও তাদেরকে উৎসাহিত করতে চাই যারা এই পথে আসেননি। আর অবশ্যই মাদককে এড়িয়ে চলব। স্মোকারদের প্রতি একটা অনুরোধ যতটা সম্ভব চেষ্টা করব, অন্যের ক্ষতি না করতে। এমন অনেক সময় দেখা যায়, প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে দিয়ে আমরা হাঁটছি সিগারেট নিয়ে। আমার পিছনেই হয়তোবা কোন শিশু তার মায়ের কোলে। যার শরীরের মধ্যে আমরা নিকোটিন প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছি একটু সচেতনতার অভাবেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৩৯
২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×