somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হল, নৈরাজ্য থামানোর কোন ব্যবস্থা কি নেয়া হয়েছে?

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাড়ে তিন মাসের মাথায় সরকার আরেক দফা জ্বালানি তেলের দাম বাড়াল। অকটেন, পেট্রল, ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে এক লাফে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস তেলের দাম প্রতি লিটারে আট টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। ফার্নেস তেলের দাম গত মে মাসের আগে ৬ এপ্রিলও প্রতি লিটার দুই টাকা করে বাড়ানো হয়েছিল।

জ্বালানি তেলের দাম সরকার কেন বাড়ায় সেইদিকে যাব না। আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য এবং ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্যই সাধারণত এটি করা হয়ে থাকে। কিন্তু কথা হল শুধু দাম বাড়িয়েই সরকার পার পেয়ে যাবে কিনা? এর সাথে সরকারের আর কোন কাজ করতে হবে কিনা?

বর্তমানে আমাদের জীবনযাত্রার ব্যয় কি পরিমাণ বেড়েছে তা সকলেরই জানা আছে। সরকার হয়ত এই কথা বলে আত্নতৃপ্তি পেতে পারেন যে, কেউ তো না খেয়ে নেই। আমার ধারণা, তারা আত্মতুষ্টিতে ভোগেনও। কিন্তু এটি কোন সমাধান হতে পারে না। না খেয়ে হয়তো কেউ মরছে না, কিন্তু প্রতিবছর পুষ্টিহীনভাবে কি পরিমাণ শিশু বেড়ে উঠছে তার হিসাব সরকারের ভালভাবেই জানা আছে।

জ্বালানি তেলের সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই মূল্যবৃদ্ধির সাথে সব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া হয় অনেক বেশি। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে হারে তেলের দাম বাড়ে তার চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হারে দ্রব্যমূল্য ও পরিবহন ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরিহবন সেক্টরের কথাই ধরা যাক। এই যে এখন তেলের দাম বাড়ানো হল, স্বাভাবিকভাবে গাড়ির মালিকরা গাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিবে। তারা তাদের ইচ্ছেমত ভাড়া আদায় করবে। শুরু হবে যাত্রীদের হয়রানি ও লাঞ্ছণা। বাকবিতন্ডা হবে, অনেক মারামারিও হবে। যেগুলো হয়তো পতিকায় আসবে না। কিন্তু আমি-আপনি সেগুলোর সাক্ষী। প্রতিবারই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর নানা হাঙ্গামা হয়, তারপর সরকার একটি ভাড়ার চার্ট সরবরাহ করে। কেন? এই কাজটি যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় তখন প্রকাশ করতে পারে না। তাহলেতো আর এত হাঙ্গামা সৃষ্টি হয় না।

তেলের দাম বাড়ানো হল কয়েক ঘন্টার নোটিশে। প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী দুজনই দেশের বাহিরে। গত সপ্তাহে সম্ভবত সরকার তরফ থেকে বলা হয়েছিল খুব শীঘ্রই তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে না। কিন্তু সেটি যে মিথ্যা ছিল তার প্রমাণতো এক সপ্তাহের মধ্যেই মিলল। তেলের দাম যে বাড়াবের সেটাতো আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা, হুট করেতো আর বাড়ানো হয়নি। তবে কেন মানুষের সাথে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া? আমরা জানি , এই খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দেয়। তাই কিছুদিন পরপরই এটার সমন্বয় করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এর ফলে অপরদিকে জনগণের জীবনযাত্রার উপরও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এমন কোন ক্ষেত্র নেই যার উপর এর প্রভাব পড়ে না। সব ধরনের শিল্পোৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে।

গ্যাসএর দাম যখন বাড়ানো হল তখন তেল দ্বারা চালিত গাড়িরও ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। আবার এখন যখন তেলের দাম বাড়ানো হল এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় গ্যাস দ্বারা চালিত গাড়ির ভাড়াও বাড়ানো হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। কিন্তু বলার কেউ নেই। সরকারতো দাম বাড়িয়েই খালাস। জনগণের দু:খ-দুর্দশা যদি তারা বুঝত সবকিছুর ভিতরে একটা সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করত। আগেরবার যখন দাম বাড়ানো হল, সেই সশয় পরিবহনখাতে যে নৈরাজ্য দেখা দিয়েছিল তার রেশ এখনো মিলে যায়নি। তার উপরে আবার দাম বাড়ানো হল। কিন্তু ভাড়ার হিসাব কই? আমরা মগের মুল্লুকে বাস করছি। যে যেভাবে যেখান দিয়ে পারছে কেটে-কুটে, খাবলে-খুবলে নিয়ে যাচ্ছে। আর অসহায় জনগণ আমরা চেয়ে চেয়ে দেখি। কিছু বলতেও পারবেন না। পিছনে রেব-পুলিশ, ডিজিএফআই কুত্তার মত লেলিয়ে দিবে। জীবন আপনার অতিষ্ঠ করে ফেলবে। বিচার চাইবেন কার কাছে, কার কাছে চাইবেন সমাধান?

জ্বালানি তেলের (ফার্নেস অয়েল) সাথে বিদ্যুতকের সম্পর্ক রয়েছে। খুব শিঘ্রই দেখবেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে আবার সব কিছুর উৎপাদন ব্যয় বাড়বে। স্বাভাবিকভাবেই দ্রব্য-মূল্যের দামও বাড়বে। তবে এই বাড়ার পরিমানটা আর নির্ধারিত হবে না। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রাকে অসহনীয় করতে সব পদক্ষেপই নেয়া হয়, সহীয় করতে নয়।

যেই কথাটা বলতে চেয়েছি সেটি হল, শুধু জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েই সরকার তার দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। এর সাথে আনুষঙ্গিক কাজগুলোও সরকারের আগে থেকেই নির্ধারণ করে দেয়া উচিত। যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি না হয়। যে হারে জ্বালানি তেল কিংবা বিদ্যুদের দাম বাড়ে সেই হারেই যাতে জিনিসপত্রের দাম কিংবা পরিবহন ব্যায় নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে শক্ত মনিটরিং ও পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী এর সমাধান হতে পারে।

গণপরিবহন ব্যয়: দেশের জ্বালানি তেলনির্ভর যাতায়াত ও গণপরিবহনব্যবস্থায়ও এই দাম বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়বে। এই খাতে বর্তমানে এমনিতেই বেশ বিশৃঙ্খলা চলছে। বিশেষ করে, নগর পরিবহনের কোনো যানবাহনই ভাড়ার ক্ষেত্রে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করে না। এই অবস্থায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি তাদের আরও উৎসাহিত করবে। সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে। সরকার আগের মতোই এ ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হবে। (প্রথম আলো)

সরকার দাম বাড়িয়েই কাজ শেষ। পত্রিকাআলারা লিখেই শেষ। টকশোআলারা টক করেই শেষ। আর জনগণ ধুকে ধুকে শেষ !!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:১৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×