somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীতমুখী

২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাগামছাড়া স্বাধীনতার জন্য কলেজ লাইফে অদ্ভূত একটা অসুখ বেঁধেছিল আমার।রাত বিরাতে বাসার কাউকে না জানিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তাম হাঁটার জন্য।এটাকে `জ্যোত্‍স্না স্নান` কিংবা `মুন বাথ` কোনটাই বলা যায় না।জ্যোত্‍স্না স্নান করার জন্য জ্যোত্‍স্না ধোয়া রাত লাগে।আমি অমাবশ্যার ঘোর অন্ধকার রাতেও বের হতাম।

আজ হঠাত্‍ রাতের রাজপথ-ফুটপাতে হাঁটতে ইচ্ছে করলো বলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লাম।আজ আর জুতা জোড়া হাতে নিয়ে খালি পায়ে কাউকে ফাঁকি দিয়ে বাসা থেকে বের হতে হলো না।মেস বাসায় জবাবদিহীতা করার মতো কেউ থাকে না।

`রন্ঞ্জনা আমি আর আসব না`সিনেমার একটা গানের লাইন এরকম-
চারটি দেয়াল মানেই নয়তো ঘর...

সত্যিই মেস বাসাকে ঘর বলা যায়না।ঘর বলতে হয় দেয়ালে আবদ্ধ এমন এক জায়গাকে যে দেয়ালের প্রতিটি ইট-বালুকণায়ও ভালবাসা মেশানো থাকে,অসীম মমতা মাখা থাকে।যে ভালবাসা-মমতা-মায়া'র কাছে ইচ্ছাকৃতভাবেই জবাবদিহীতা করতে ইচ্ছে হয়।

রাত তেমন একটা হয়নি এখনো।ঢাকা শহরের জন্য রাত ১১টা সবেমাত্র সন্ধ্যা।সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ঘরে বাতি জ্বালাতে হয়।রাস্তায় জ্বালাতে হয় সোডিয়াম বাল্ব।রাস্তাগুলোর চেহারা একদম বদলে যায় আলো পেয়ে।অবশ্য রাতের রাস্তাগুলো এমনিতেই দিনের রাস্তা থেকে ভিন্ন।দিনের রাস্তাগুলো ভয়ানক হিংস্র আর রাতের রাস্তা গাজর খেকো নিরীহ প্রজাতির।

রাতের রাস্তায় অবাধে চলাফেরার মধ্যে আরেকটা মজা আছে।হুট করে পরিচিত কারও সাথে দেখা হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না।হঠাত্‍ পিছন থেকে কেউ নাম ধরে ডাক দেয় না।নিজের নাম ব্যাপারটা খুব সেনসেটিভ একটা বিষয়।যদি কেউ নাম ধরে পিছু ডাকে তবে ফিরে তাকাতে বাধ্য মানুষ।মানুষ একজীবনে যে শব্দটা সবচেয়ে বেশি বার শোনে তা হলো নিজের নাম।যতবার শোনে ততোবারই সে ভালো লাগায় অভিভূত হয় চেতনে কিংবা অবচেতনে।পৃথিবীর সবচেয়ে শ্রুতিমধুর শব্দ নিজের নাম।দ্বিতীয় শ্রুতিমধুর শব্দ খুব সম্ভবত-ভালবাসি।

খিলক্ষেত থেকে হেঁটে হেঁটে উত্তরা গেলে মন্দ হয়না।নর্থ টাওয়ার ফ্লাইওভারের নিচে একটা চায়ের দোকানদারের সাথে আমার খুব খাতির।লোকটা কোন কারণ ছাড়াই আমাকে পছন্দ করে।এই পছন্দ করার সুবাদে আমার চা খরচ কিছুটা বেঁচে গেছে।উনি চা খুব ভালো বানায়।আমাদের এয়ারপোর্টে স্বর্ণের অভাব নেই।ওখান থেকে কিছুটা পেলে উনার হাত বাঁধিয়ে দিতাম স্বর্ণে।

আজমপুর আসার পর পা থেমে গেল।রাস্তার ওপাশে একুশে রেস্তোরার সামনে আলো জ্বলছে।এক সময় হেমলি-কে নিয়ে এখানে ভর্তাভাত খেতে আসতাম।ওরা অনেক পদের ভর্তার আয়োজন করে।

-কাউকে খুঁজছেন?

ভাবলেশহীনভাবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললাম-হুম খুঁজছি তো।

-কাকে?

:বললে আপনি চিনবেন তাকে?

-তা অবশ্য না।আপনাকে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কৌতুহল জাগলো তাই...

:এখানে ঐ রেস্তোরার সামনে একটা ছেলে প্রায়ই একটা কলেজপড়ুয়া মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতো কয়েক বছর আগে।আপনি কখনো দেখেছেন তাকে?

-আমি তো দিনের আলোতে কাউকে চিনতে পারি না।চেনার চেষ্টাও করিনা।

:কেন?

-দিনের আলোয় মানুষ চেনা যায় না।সবাই একটা ভদ্রমতো খোলস পরে থাকে।রাতে সে খোলস খুলে যায়।তখন চিনে নেই।

:ও আচ্ছা।

-আপনি কোথায় যাচ্ছেন?

:জানিনা।যেতে যেতে পথ খুঁজে নেব।

-আমি কি আপনার সাথে কিছুক্ষণ হাঁটতে পারি?

:তাতে আপনার লস হয়ে যাবে না আবার?

মেয়েটি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কি মনে করে যেন মুচকি একটা হাসি দিল।এ হাসিতে সুখ নেই।গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস লুকানোর হাসি।

-আপনি কি প্রতিরাতেই হাঁটতে বের হন?

:না।যে রাতে রেষ্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটার কথা মনে পড়ে ঐসব রাতে বের হই।

-মেয়েটা এখন কোথায়?

:আছে,আশে পাশেই আছে।তবে সাথে নেই।

-সেটা বুঝতে পারছি।

:কিভাবে?

-সাথে থাকলে অবশ্যই এতরাতে আপনাকে একা একা রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে হতো না।

:ওওও...আচ্ছা!ঘুরে বেড়ানো আর হেঁটে বেড়ানো কি এক কথা?

-না বোধহয়।সুখ দুঃখের একটা ভাগাভাগি আছে হয়তো।

:আপনি কি সব ব্যাপারেই এমন কনফিউজড?

-জীবন সম্পর্কে কনফিউজড বলেইতো রাতে রাস্তায় নামি।

আমি কি বলবো ভেবে পেলাম না।তারপর থেকে মেয়েটার সাথে কোন কথা হয়নি আর।হয়তো কি বলবে সে ও ভেবে পায়নি।কথাহীন অনেকটা পথ সামনে এগিয়ে আবার পিছু হাঁটতে হলো।যে জায়গা থেকে মেয়েটা আমার সাথে পথচলা শুরু করেছিল ঠিক সে জায়গা থেকেই বিদায় নিলো।বিদায়ের আগে বলে গেল-``আবার ফিরে পাবার মতো ভালবাসা এ জগতে নেই।বাসায় ফিরে যান।``

আমি নির্লিপ্ত চোখে মেয়েটার দিকে তাকালাম।যে দৃষ্টি বলে দেয়-``যার ঘরে ফেরা পথ চেয়ে কেউ অপেক্ষা করে না,তার ঘরে ফেরার এতো তাগাদা নেই।``

মেয়েটা চলে যাচ্ছে।ধীরে ধীরে পথে মিলিয়ে পথ হয়ে যাচ্ছে পথিক বেশে।হয়তো সামনে থেকে কাউকে খুঁজে নেবে আজ রাতের সঙ্গী হিসেবে।রাতভর চলবে ভালবাসার বিকিকিনি।

দাঁড়িয়ে থাকা ঐ ছেলেটার মতো অপেক্ষায় না থাকলে এখন নিশিকন্যার পথরোধ করে বলতাম-``আজ এই রাতে কিছু ভালবাসা কিনবো অল্প দামে।তোমার লস হবে না তো?``
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×