অফিস থেকে বাসায় ফিরে সোফায় বসে বসে টিভি দেখি।ডানপন্থী বাম পন্থী চ্যানেল সবটাই সমানভাবে দেখার চেষ্টা করি। চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতে টক শো এর স্টার গোলাম মওলা রণি, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আসিফ নজরুল,নুরুল কবির, মিজানুর রহমন খান,মাহমুদুর রহমান মান্না, আকবর আলী খানের মানসের সাথে পরিচয় হয়। আসিফ নজরুলের লিখা লিখির সাথে আগেই পরিচয় হয় যখন টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে লিখেন তখন । আমার কাছে বেশ ভালো লাগতো আসিফ নজরুল, মিজানুর রহমান খান এবং আকবর আলী খানের কথা গুলা। তখন ভাবতে পারিনি অনেক কিছু, ভাবতাম তারা নিজের থেকে, নিজের তাড়না থেকে বলছেন। আমার এখনো মিজানুর রহমান খান এবং আকবর আলী খানের কথা বেশ ভালো লাগে। শুধু বিশ্বাসে ছেদ ঘটিয়েছেন আসিফ নজরুল।
আজকের প্রথম আলোতে তার একটা কলাম পড়লাম। শিরোণামটা এ রকম--টক শো: বড়ুয়া-তত্ত্ব । একজন দক্ষ লিখকের কাছে শিরোণামটাও অনেক কিছুর দাবী রাখে বিশেষ করে যিনি অসম্প্রাদায়িকতার কথা বলে থাকেন। আমার কাছে পরিস্কার নয় উনি কেন "দিলীপ তত্ব" বা "দিলীপ বড়ুয়া" তত্ব না লিখে শুধু নামের ধর্ম পরিচয়ের অংশটাকে বেঁচে নিলেন। লিখার কন্টেন্ট আমার কাছে খুব খারাপ মনে হয়নি দু-একটা জায়গা ছাড়া। সে বিষয় গুলা নিয়ে একটু পরে আসছি। এর আগে তার সম্পর্কে যে সব কথা /গুনজন ইদানিং আলোচিত হচ্ছে সে গুলা নিয়ে বলছি। "আসিফ নজরুল" নামে সার্চ দিয়ে অনেক পোস্ট, ভিড়িও দেখলাম ,পড়লাম। তার পক্ষে বিপক্ষে অনেক কিছুই জানলাম বিশেষ করে এই পোস্ট থেকে । তার সম্পর্কে যে সব অভিযোগ গুলা বেশী আলোচিত তার কয়েকটা সংক্ষেপে এই রকম:
1, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি-
তিনি বর্তমানে অধ্যাপক এবং টকশো এর স্টার । এর চেয়েও বড় পরিচয় উনার ছিল সেটা হলো ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির একজন উল্লেখযোগ্য সদস্য। বিএনপি সরকার গণআদালত গঠনের কারণে 24 জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেয় । জাহানারা ইমাম, আহমদ শরীফ, শামসুর রহমানদের বিরুদ্ধে যে মামলা দেয়, আসিফ নজরুলও সেই মামলার আসামী ছিল।" অন্য সব আসামী রাষ্ট্র কতৃক নিগৃহীত হলেও আসিফ নজরুল দিব্যি ঢাবির শিক্ষক হয় এবং কমনওয়েলথ স্কলারশীপ নিয়ে লন্ডন চলে যায়। শাহরিয়ার কবিরের "জাহানারা ইমামের শেষ দিনগুলি" (১৯৯৫) অংশ বিশেষ পড়লে জানা যায় কিভাবে জাহানারা ইমাম এবং ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল আসিফ নজরুল এবং কিভাবে সেই কারণে ডাক্তারের কঠিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তিনি চিকিৎসার মাঝ পথে দেশে ফিরে আসেন মৃত্যুকে বরণ করে নিতে। কিভাবে তাঁকে ভেঙ্গে দিয়েছিল এই আসিফ নজরুল।আসিফ নজরুল জাহানারা ইমামকে যে চিঠিটি লিখেছেন তাতে দেখা যায় :
" ওর মা ওর ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের কথা ভেবে ওকে এসব কাজে( গাদানি) জড়াতে নিষেধ করেছেন। গণ আদালতের পর ও না কি বাবা মাকে বলেছিল, এসব কাজ আর করবে না। জাহানারা ইমামের চিঠি ওর মার হাতে পড়েছে। মা ওকে কসম খাইয়েছেন এ কাজ না করতে। মা'র কাছে দেয়া কসমের জন্য ও এ কাজ করতে পারবে না।" তার ঢাবিতে নিয়োগ হয়েছিল জামাতী ভিসি এরশাদুল বারীর হাতে।
2,সাঈদীর পক্ষে ও জামাতের পক্ষে সাফাই
যে পরিচয়ে উনি পরিচিত হয়েছিলেন "যুদ্ধাপরাধীর বিচারের একনিষ্ট এক্টিভিষ্ট সেখানেই উনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীর ভুমিকার অভিযোগ এবং তারপরবর্তীতে বিবর্তিত ভুমিকা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী নয় এমন ধরনের মন্তব্যও অনেককে আহত করে। তাই অনেকেই এখন সন্দেহের চোখে দেখেন এবং মীর কাশেম আলীর বুদ্ধিজীবি কেনার মিশনে আসিফ নজরুলও আছেন কিনা সন্দেহ ঘনিভুত হয়। সন্দেহের সপক্ষে যে নিউজটি প্রণিধানযোগ্য-কালের কন্ঠ ২৭ আগস্ট ২০১০ তারিখে জামাতের ঢাকা মহানগরী আমির রফিকুল ইসলামের গ্রেফতারের একটি খবর দেয়। তাকে ধরার সময় তার কাছ থেকে নানা কাগজপত্র জব্দ করে পুলিশ।
উদ্ধার করা নথি অনুসারে যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যু নিয়ে ঘন ঘন সেমিনার করা হবে।
যারা সরাসরি জামায়াতের রাজনীতি করেন না এরকম বিশিষ্টজনদের এসব সেমিনার বা আলোচনায় হাজির করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিলেও কোনো কারণে এখন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহজোট সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো নয়_এরকম ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে সেমিনারে টানতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের লক্ষ্য হচ্ছে_বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও শাহাজাহান সিরাজ। উদ্ধার করা নথি অনুসারে জামায়াতের 'নিজস্ব' বিশিষ্টজনদের তালিকায় আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল,কমরেড সাইফুল হক ও ফরহাদ মজহার। বাংলা ভিশনে দেয়া ভিড়িও লিংক যেখানে তিনি আড়াল করতে পারেননি যুদ্ধাপরাধীর বিচারে উনার নাখোশের ব্যাপারটি।
4,তিনি বিএনপি জামাতের সমালোচনা করলেও করেন পরিশীলীত ভাষায়, ছোট ছোট করে । বিএনপি আমলে ২১ আগস্ট হামলার আলোচনায় একটি টকশোতে আপনি উল্টো তত্কালীন বিরোধীদল আওয়ামি লীগের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন যে হামলার পরপর কেন মিছিল করা হলো, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সাজানো ঘটনা কিনা। শুধু তাই না হামলার পর মিছিল ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জ করে, এ অমানবিক কাজের ইন্ধনদাতা তত্কালীন বিএনপিজামাত সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেছেন "সরকার আর কি করতে পারে"।
(আজকের কলামের মন্তব্যকারী-আসমিন দৌরী নিশাত এর মন্তব্য থেকে)
------ আজকের প্রথম আলোতে লিখা তার কলামটিতে আমার মন্তব্য ছিল --আসিফ সাহেব আপনার আর্টিকেল ভালো হয়েছে তবে ভালো ভালো কথা বলার লোকের অভাব নেই এই দেশে। আপনারা শুধু বলতেই পারেন করতে পারেন না। যেমন আপনার পেশা হিসাবে লিখা আছে অধ্যাপক আইন বিভাগ- তাই আপনার কাছে ও কিছু প্রশ্ন:
1,রাত 12 টা 1 টায় সরাসরি লাইভ টক-শো করেন বাসায় ফিরেন রাত কমে 2 টা , তারপরদিন সকালে ক্লাস থাকলে কি করেন? একজন ছাত্রতো আপনাদেরকে ফলো করবে-তারাও কি 2 টায় ঘুমানোর অভ্যাস করবে? দেরীতে ঘুমিয়ে সকালে ক্লাসে মনোযোগ দেয়া যায় কি?
2,আপনাদের লিখনিতে টক-শোতে কখনো আপনাদের পেশাগত কাজের বিষয় নিয়ে লিখা থাকে না কেবল বলেন অমুক কি করেছে অমুক কি বলেছে?
3, আইন বিভাগে আপনি কি কি সংস্কার করেছেন, আপনার ছাত্রদের কি ভাবে পাঠদান করেন, দিনে বা মাসে কয়টা ক্লাস করেন, সব স্টুডেন্টকে ক্লাসমুখী করার জন্য আপনি কি করেছেন সেটা খুব জানতে মন চায়।একদিন লিখেন না এ সব নিয়ে।
4,দুই দলের কিছু সমালোচনা করে এখন অনেকেই হিরু বনে যেতে চান। যেমন নিজের ঢোলটা আগেই পিঠালেন-পথে ঘাটে আপনার "সেলিভ্রেটি বিব্রত" হবার জন্য।
জনাব আপনি সেলিভ্রেটি হলেন আপনার পেশা বহির্ভুত কাজে । কেন আপনি আপনার পেশা নিয়ে বিখ্যাত হতে পারলেন না?
সেখান থেকে আরো কয়েকটা মন্তব্য তুলে ধরছি। হ্যাঁ সেখানে বেশীর ভাগ মন্তব্যই ছিল তার পক্ষে এবং প্রশংসা করে। আমি কেবল কোড করছি যে মন্তব্য গুলাতে ভিন্নমত ছিল সে গুলা-
"টক শো নিয়ে আসল বিড়ম্বনা ঘটে স্টুডিওতে। কখনো দেখি টক শোর হোস্টের মুখ চুপসে আছে। কী ব্যাপার? তিনি জানান, সরকার খুব খেপে আছে, একটু যেন সাবধানে বলি.
- কি সুকৌশলে বর্তমান সরকারের উপর দোষ চাপালেন কোন "authentic reference" ছাড়া । বলতে পারবেন কোন টক-শো তে কোন হোস্ট-এর কাছে এমন মন্তব্য শুনেছেন ??? বাজি ধরে বলতে পারি বলতে পারবেন না । আপনার মতো জিয়া প্রেমী বুদ্ধিজীবির এরকম নৈতীকতা বিসর্জন দেওয়াটাই স্বাভাবিক ।
গত বিএনপি পিরিয়ড, তত্বাবধায়ক পিরিয়ড আর বর্তমান সরকারের পিরিয়ড - সকল টকশোতে আপনাদের উপস্থাপিত মতামত যাচাই বাছাই , বিশ্লেষন করলেই আপনাদের স্বরুপ উদঘাটিত হবে. (abeer) আমার ও জিজ্ঞাসা তারা সরকারের ভয়ে কি এমন কথা আছে যে বলেননি? সব গুলা সমালোচনাইতো তারা টক-শোতে করছে।
বেশ একটা মজার মন্তব্য ছিল এটা:
Asif Nazrul, this my affirmation that ,our intellectuals are maximum honey sucker,in their life time, some how they had a chance to take the taste of honey, and they repay in their next duration of life,they self create their own justification with their superb logic.if anyone did not get that chance -they start trying to reach up to that. Moral stand is a fun...
তার মন্তব্যের সুত্রেই মনে পড়ে গেল হুমায়ুন আজাদের আরেকটি উক্তি-
বাংলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খগুলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি।
--হুমায়ুন আজাদ, প্রবচনগুচ্ছ-৫৩।
যদিও হুমায়ুন আজাদের উক্তিটি অনেক চরমের এবং পুরাটা সত্যও নয়। আমাদের জানার জন্য টক-শোরও দরকার আছে। কেউ কেউ হয়ত বিক্রি হয়। তাই বলে গোটা বুদ্ধিজীবি সমাজই "হানি সাকার" সেটা মানতে পারছিনা। মাঝে মাঝে অবশ্য বিশ্বাসও জন্মে যখন দেখি উপরের অসংগতি গুলি। আমার বিশ্বাস করতে মন চায় না তাই বলি মিথ্যা হোক সব অভিযোগ,সম্মানীত হোক আমাদের বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষক সমাজ।
সুত্র-1 স্বপ্নমগ্ন
সুত্র-2 প্রথম" target="_blank" >Click This Link আলো অল্পবিদ্যা।
সুত্র-3-httpv://www.youtube.com/watch?v=Aj6aJSh8vmE ইউটিউব ভিড়িও lটক শো।
শেষ কথা: যারা প্রকাশ্য রাজনীতি করে তারা অনেক ভালো যারা অপ্রকাশ্যে নিরপেক্ষতার ভান ধরে রাজনীতিতে বিষ ছড়ায় ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




