ইহান বসে আছে ডক্টরের চেম্বারের সামনে ওয়েটিং রুমে। তার সিরিয়াল আরো পরে, তাই অপেক্ষা করছে। আরো অনেক রোগী আছেন, তাদের সাথে বসে কী একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। তার মুখোমুখি এক ভদ্রমহিলা বসে, আর তার পাশে ঐ মহিলার মেয়ে। মেয়েটির বয়স ইহানের সামান্য কম। হঠাৎ ভদ্রমহিলা ইহানকে প্রশ্ন করলেন- 'বাবা, তুমি কীসে পড়?'
ইহানঃ জ্বি আন্টি, বুয়েটে।
ভদ্রমহিলাঃ কোন ডিপার্টমেন্ট?
ইহানঃ ইলেকট্রিক্যাল।
ভদ্রমহিলাঃ মাশাল্লাহ!!
(বুয়েটের সব ডিপার্টমেন্টই ভালো হওয়া সত্ত্বেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে টিউশনির বাজারে EEE এর চাহিদা বেশি)
মহিলা বলে চললেন-বাবা, আমার এই মেয়েটা এইবার এসএসসি দিয়েছে। গোল্ডেন পেয়েছে। হলিক্রসে পড়ে। একটা বুয়েটের ছেলে খুজছি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। তুমি কি ওকে একটু সময় দিতে পারবা?
ইহান-জ্বি আন্টি, মানে... আমি ছাত্রী পড়াই না।
ভদ্রমহিলাঃ কেন বাবা,সমস্যা কী?
ইহানঃ আন্টি, আসলে ফিতনার আশঙ্কা থাকে।
ভদ্রমহিলাঃ বাবা, তুমি তো ওকে ছোটবোনের মতই দেখবা। ওভাবেই ট্রিট করবা।
ইহানঃ তা তো অবশ্যই। কিন্তু তবু আন্টি, আমি পড়াব না। দুঃখিত।
(বলে ইহান ওই স্থান থেকে দূরে সরে বসল। জানে না হলে আন্টি তাকে আবার অনুরোধ করবে।)
আন্টি একটু সন্দেহের চোখে ইহানকে দেখছেন। আসলে ইহানের নিজের ওপর আস্থা আছে, হয়তো মেয়েটির উপরও আছে।
কিন্তু ১% ভরসা নেই শয়তানকে। সে জানে শয়তান যেভাবেই হোক তাকে ভুলপথে চালাতে চাইবে। ফিতনার আশঙ্কাটা সে কারণেই। তাছাড়া একজন নন মাহরাম মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানো কোনভাবেই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না।
মনোঃক্ষুন্ন আন্টি বাসায় ফিরে তাঁর স্বামীকে বলছেন- 'আজ এক বুয়েটের ছেলেকে পেয়েছিলাম। মালিহাকে পড়ানোর জন্য এত করে বললাম, রাজিই হয় না। কী দেমাগ! বুয়েটে পরে বলে নিজেকে কী মনে করে কে জানে! বলে, ছাত্রী পড়ায়না। বুয়েটের কত ছেলে ছাত্রী পড়ায়, আর উনি সাধু সাজতে চান!
নিশ্চয়ই কোন মেয়ে পড়াতে গিয়ে কেলেঙ্কারি করেছে, তাই এখন আর ছাত্রী পড়ায়না। যাক, কত ছেলে আছে বুয়েটে! ঠিক একজন পেয়ে যাব।'
উপরের ঘটনাটা সত্যাশ্রয়ী, তবে কাল্পনিক। একে কেউ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাববেন না। এখানে আমি কেবল বাস্তবতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
সমাজব্যবস্থা আসলে মানুষগুলোকে এভাবেই তুলে ধরছে। ইহান ইসলামপন্থী বলে ফিতনা থেকে বাঁচতে সে মালিহাকে পড়াতে রাজি হল না। অথচ ঐ মহিলার কাছে এজন্য তার চরিত্র সন্দেহজনক হিসেবে প্রতিপন্ন হল। তিনি ভাবলেন-নিশ্চয়ই আগে কাউকে পড়াতে গিয়ে কোন ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকাল মানুষের মানসিকতা এভাবেই তৈরি হয়েছে। যারা ইসলামের পথে চলতে চেষ্টা করেন,তারা খুব সহজেই এটা উপলব্ধি করতে পারেন।
একই কথা বিয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আজকাল বিয়ের কথা বললে মানুষ চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে। একটা ছেলে ৪-৫ টা মেয়েকে নিয়ে ঘুরবে,তাতে কোন আপত্তি নেই। অনেক মেয়ের সাথে তার রিলেশন, তাতেও সমস্যা নেই। আপত্তি কেবল বিয়ে করতে চাইলে। এটা আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারি না যে নারী-পুরুষ প্রত্যকেরই জৈবিক চাহিদা বলে একটা ব্যাপার আছে। এটা আল্লাহরই সৃষ্টি।
নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ এরই অংশ। একটা ছেলে মেয়েদের নিয়ে হাসাহাসি করছে, মেয়েটির গায়ের উপর ঢলে পড়ছে-এসব বিশ্ববিদ্যালয়েরকমন চিত্র। ছেলে ও মেয়েটি নিজেদের জাস্টিফাই করতে বলে-‘আমরা জাস্ট বন্ধু।
আমরা ফ্রেন্ডের মতই থাকি, এখানে একস্ট্রা কোন ফিলিংস নাই।‘
আমার মনে হয় যে ছেলে বলবে একটা ছেলে ফ্রেন্ড আর একটা মেয়ে ফ্রেন্ডের প্রতি তার ফিলিংস সমান তাকে নপুংসক ছাড়া কিছু মনে করা উচিত নয়। অথচ এসব আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক। এই ছেলেরাই আমাদের কাছে ‘চরিত্রবান’ বলে সাব্যস্ত হয়। কিন্তু গল্পের ইহানের মত যারা নন মাহরাম মেয়েদের সাথে মেশে না, তাদের চরিত্র নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। মনে হয় এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে।
এ সমাজ জৈবিক চাহিদা পূরণের হাজারটা হারাম পথ খোলা রেখেছে। আমি বহু ছেলে বা মেয়ের কথা বলতে পারি যারা আমারই বয়সী এবং কলেজে থাকতেই তারা বহু গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করেছে এবং এদের অনেকের সাথেই শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে।
আমাদের সাথেরই এক মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার ২০ দিন আগে গর্ভপাত করতে হয় অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে। এ ধরণের ঘটনা এখন খুবই কমন। সমাজ খুব আশ্চর্যজনকভাবে হারাম উপায়ে জৈবিক চাহিদা পূরণকে অনুমোদন দিয়েছে।
কিন্তু একমাত্র হালাল যে পথ-বিয়ে, তাকে অত্যন্ত কঠিন করে রেখেছে। একটা ছেলে অল্পবয়সে বিয়ের কথা বললেই তাকে নিয়ে তামাশা শুরু হয়ে যায়, তাকে নিয়ে নানা বাজে কথা বলে ঠাট্টা করে মানুষ। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে ছেলেটি বা মেয়েটি হারাম থেকে নিজেকে বিরত রেখে বহু সাধ্য সাধনা করে দিন কাটায় আর শেষে নিজেকে অপবিত্রতা থেকে বাঁচানোর জন্য বিয়ের কথা বলে-তাকেই এ সমাজ ‘খারাপ’ হিসেবে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।
তবু আমাদের প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"