somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রত্যাখান ও সন্দেহ

০৩ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইহান বসে আছে ডক্টরের চেম্বারের সামনে ওয়েটিং রুমে। তার সিরিয়াল আরো পরে, তাই অপেক্ষা করছে। আরো অনেক রোগী আছেন, তাদের সাথে বসে কী একটা বিষয় নিয়ে ভাবছে। তার মুখোমুখি এক ভদ্রমহিলা বসে, আর তার পাশে ঐ মহিলার মেয়ে। মেয়েটির বয়স ইহানের সামান্য কম। হঠাৎ ভদ্রমহিলা ইহানকে প্রশ্ন করলেন- 'বাবা, তুমি কীসে পড়?'

ইহানঃ জ্বি আন্টি, বুয়েটে।

ভদ্রমহিলাঃ কোন ডিপার্টমেন্ট?
ইহানঃ ইলেকট্রিক্যাল।

ভদ্রমহিলাঃ মাশাল্লাহ!!

(বুয়েটের সব ডিপার্টমেন্টই ভালো হওয়া সত্ত্বেও কোন এক অজ্ঞাত কারণে টিউশনির বাজারে EEE এর চাহিদা বেশি)

মহিলা বলে চললেন-বাবা, আমার এই মেয়েটা এইবার এসএসসি দিয়েছে। গোল্ডেন পেয়েছে। হলিক্রসে পড়ে। একটা বুয়েটের ছেলে খুজছি প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। তুমি কি ওকে একটু সময় দিতে পারবা?

ইহান-জ্বি আন্টি, মানে... আমি ছাত্রী পড়াই না।

ভদ্রমহিলাঃ কেন বাবা,সমস্যা কী?
ইহানঃ আন্টি, আসলে ফিতনার আশঙ্কা থাকে।

ভদ্রমহিলাঃ বাবা, তুমি তো ওকে ছোটবোনের মতই দেখবা। ওভাবেই ট্রিট করবা।

ইহানঃ তা তো অবশ্যই। কিন্তু তবু আন্টি, আমি পড়াব না। দুঃখিত।

(বলে ইহান ওই স্থান থেকে দূরে সরে বসল। জানে না হলে আন্টি তাকে আবার অনুরোধ করবে।)

আন্টি একটু সন্দেহের চোখে ইহানকে দেখছেন। আসলে ইহানের নিজের ওপর আস্থা আছে, হয়তো মেয়েটির উপরও আছে।

কিন্তু ১% ভরসা নেই শয়তানকে। সে জানে শয়তান যেভাবেই হোক তাকে ভুলপথে চালাতে চাইবে। ফিতনার আশঙ্কাটা সে কারণেই। তাছাড়া একজন নন মাহরাম মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানো কোনভাবেই তার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে না।

মনোঃক্ষুন্ন আন্টি বাসায় ফিরে তাঁর স্বামীকে বলছেন- 'আজ এক বুয়েটের ছেলেকে পেয়েছিলাম। মালিহাকে পড়ানোর জন্য এত করে বললাম, রাজিই হয় না। কী দেমাগ! বুয়েটে পরে বলে নিজেকে কী মনে করে কে জানে! বলে, ছাত্রী পড়ায়না। বুয়েটের কত ছেলে ছাত্রী পড়ায়, আর উনি সাধু সাজতে চান!

নিশ্চয়ই কোন মেয়ে পড়াতে গিয়ে কেলেঙ্কারি করেছে, তাই এখন আর ছাত্রী পড়ায়না। যাক, কত ছেলে আছে বুয়েটে! ঠিক একজন পেয়ে যাব।'

উপরের ঘটনাটা সত্যাশ্রয়ী, তবে কাল্পনিক। একে কেউ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাববেন না। এখানে আমি কেবল বাস্তবতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

সমাজব্যবস্থা আসলে মানুষগুলোকে এভাবেই তুলে ধরছে। ইহান ইসলামপন্থী বলে ফিতনা থেকে বাঁচতে সে মালিহাকে পড়াতে রাজি হল না। অথচ ঐ মহিলার কাছে এজন্য তার চরিত্র সন্দেহজনক হিসেবে প্রতিপন্ন হল। তিনি ভাবলেন-নিশ্চয়ই আগে কাউকে পড়াতে গিয়ে কোন ঘটনা ঘটিয়েছে। আজকাল মানুষের মানসিকতা এভাবেই তৈরি হয়েছে। যারা ইসলামের পথে চলতে চেষ্টা করেন,তারা খুব সহজেই এটা উপলব্ধি করতে পারেন।

একই কথা বিয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। আজকাল বিয়ের কথা বললে মানুষ চরিত্র নিয়ে সন্দেহ করে। একটা ছেলে ৪-৫ টা মেয়েকে নিয়ে ঘুরবে,তাতে কোন আপত্তি নেই। অনেক মেয়ের সাথে তার রিলেশন, তাতেও সমস্যা নেই। আপত্তি কেবল বিয়ে করতে চাইলে। এটা আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করতে পারি না যে নারী-পুরুষ প্রত্যকেরই জৈবিক চাহিদা বলে একটা ব্যাপার আছে। এটা আল্লাহরই সৃষ্টি।

নারী-পুরুষের পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ এরই অংশ। একটা ছেলে মেয়েদের নিয়ে হাসাহাসি করছে, মেয়েটির গায়ের উপর ঢলে পড়ছে-এসব বিশ্ববিদ্যালয়েরকমন চিত্র। ছেলে ও মেয়েটি নিজেদের জাস্টিফাই করতে বলে-‘আমরা জাস্ট বন্ধু।

আমরা ফ্রেন্ডের মতই থাকি, এখানে একস্ট্রা কোন ফিলিংস নাই।‘

আমার মনে হয় যে ছেলে বলবে একটা ছেলে ফ্রেন্ড আর একটা মেয়ে ফ্রেন্ডের প্রতি তার ফিলিংস সমান তাকে নপুংসক ছাড়া কিছু মনে করা উচিত নয়। অথচ এসব আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক। এই ছেলেরাই আমাদের কাছে ‘চরিত্রবান’ বলে সাব্যস্ত হয়। কিন্তু গল্পের ইহানের মত যারা নন মাহরাম মেয়েদের সাথে মেশে না, তাদের চরিত্র নিয়ে আমাদের সন্দেহ হয়। মনে হয় এদের মধ্যে নিশ্চয়ই কোন ঝামেলা আছে।

এ সমাজ জৈবিক চাহিদা পূরণের হাজারটা হারাম পথ খোলা রেখেছে। আমি বহু ছেলে বা মেয়ের কথা বলতে পারি যারা আমারই বয়সী এবং কলেজে থাকতেই তারা বহু গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করেছে এবং এদের অনেকের সাথেই শারীরিক সম্পর্কও হয়েছে।

আমাদের সাথেরই এক মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষার ২০ দিন আগে গর্ভপাত করতে হয় অবৈধ সন্তান নষ্ট করতে। এ ধরণের ঘটনা এখন খুবই কমন। সমাজ খুব আশ্চর্যজনকভাবে হারাম উপায়ে জৈবিক চাহিদা পূরণকে অনুমোদন দিয়েছে।

কিন্তু একমাত্র হালাল যে পথ-বিয়ে, তাকে অত্যন্ত কঠিন করে রেখেছে। একটা ছেলে অল্পবয়সে বিয়ের কথা বললেই তাকে নিয়ে তামাশা শুরু হয়ে যায়, তাকে নিয়ে নানা বাজে কথা বলে ঠাট্টা করে মানুষ। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যে ছেলেটি বা মেয়েটি হারাম থেকে নিজেকে বিরত রেখে বহু সাধ্য সাধনা করে দিন কাটায় আর শেষে নিজেকে অপবিত্রতা থেকে বাঁচানোর জন্য বিয়ের কথা বলে-তাকেই এ সমাজ ‘খারাপ’ হিসেবে উপস্থাপনের ব্যবস্থা করে রেখেছে।

তবু আমাদের প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন।

"নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×