somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কলিমুদ্দি দফাদার
“কলিমদ্দিকে আবার দেখা যায় ষোলই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বাজারের চা স্টলে। তার সঙ্গীরা সবাই মুক্তি, সে-ই শুধু তার পুরনো সরকারি পোশাকে সকলের পরিচিত কলিমদ্দি দফাদার।”

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে সাগরে নিমজ্জিত হন। ক্ষুধা, কষ্ট, সূর্যের তাপ, এবং ডিহাইড্রেশনের সঙ্গে লড়াই করে তারা টানা ৪৭ দিন সাগরের পানিতে ভেসে ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ভাসতে ভাসতে তারা জাপানিজ নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান আত্মসমর্পণ করার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যুদ্ধবন্দীর ক্যাম্পে তাদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার চালানো হয়, তা সাগরের ভাসমান কষ্টের চেয়েও ছিল ভয়াবহ।

​এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণ তথা দেশবাসীর এক অদম্য মিল রয়েছে। দীর্ঘ ষোলো বছরের আওয়ামী লীগ (শেখ হাসিনা সরকারের) দুর্নীতি, লুটপাট, গুম ও খুনের পর ড. ইউনূস যখন জাপানিজ নেভীর মতো দেশবাসীকে উদ্ধার করেন, এরপরেই তিনি যেন দেখালেন 'ভানুমতির আসল খেল'। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তিনি গত ১৫-১৬ বছরের সকল রেকর্ড মাত্রা আমাদের ভুলিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বিতর্কিত ও সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী দুই উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন, "এই অল্প সময়ে যা করেছো তা দেশবাসী প্রাণ ভরে মনে রাখবে।" সেই স্বর্গীয় বাণীই আবার মিডিয়ার সামনে পাঠ করেছেন একসময় যার দৃষ্টিতে শেখ হাসিনা ছিল 'সেরা বাঙালি' খেতাব পাওয়া প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব, 'কেরানি' সফি...

জুলাই আন্দোলনের সময় কোরিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন ভাই একটি ছবি পাঠিয়ে বলেছিলেন, "আন্দোলন তোমরা যেমনটা ভাবছো, এটা ঠিক তেমন নয়; এর পেছনে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা ও গোষ্ঠী আছে।" আসলে শেখ হাসিনার কথাবার্তা, বেপরোয়া ছাত্রলীগের অত্যাচার-নিষ্ঠুরতা, ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া আধিপত্য (মনোপলি), এবং দুর্নীতি এমন এক মাত্রায় পৌঁছেছিল যে তখন স্বয়ং দেবদূতও যদি হাসিনার পক্ষে কোনো ঐশ্বরিক বাণী নাজিল করতো, সাধারণ মানুষ ঘৃণাভরে সেটা প্রত্যাখ্যান করতো।

আন্দোলনের নেপথ্যের 'দূরভিসন্ধি'
​ও পাঠানো ছবিটি নিয়ে কিছু বলি। ২০০৭-০৮ সালে গঠিত ড. ইউনূসের গঠিত 'জনশক্তি' দলের একাংশের ছাত্রনেতা ছিলেন এনসিপি'র নাহিদ ও আক্তার। বাদবাকিরা অন্যান্য বিভিন্ন দলে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের সুযোগ বুঝে নাহিদ ইসলামকে প্রধান সমন্বয়ক ও পরবর্তীতে ইউনূসকে 'ইন্টারিম প্রধান' করা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি এই দূরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনারই একটি অংশ। শেখ হাসিনার পতনের পরে, এই আন্দোলনের আবেগের পুঁজিকে কেন্দ্র করে এনসিপি গঠনের ঘটনা ঘটানো হয়। মূল উদ্দেশ্য ছিল বড় দলগুলোকে মাইনাস করে ক্ষমতার কেন্দ্রে আসীন হওয়া। যখনই দুর্নীতি, আর্থিক কেলেঙ্কারি, নিয়োগ এবং ট্রান্সফার-বাণিজ্যের খবর বের হতে শুরু করে, তখনই সাধারণ জনগণ এই দূরভিসন্ধিগুলো বুঝতে পারে। ক্ষমতার এই হঠাৎ পালাবদল এবং ইউনূস ও এনসিপি'র অতি-দেশপ্রেমিক সাজার পাঁয়তারাগুলো আবদুর নূর তুষার, খালেদ মুহিউদ্দীন, জুলকারনাইন সায়ের-সহ আরো কিছু মানুষ প্রথম থেকেই জানতেন ও বুঝতেন। তাঁরা প্রথম থেকেই এনসিপি'র দুর্নীতি এবং ইউনূসের দেওয়া অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।কিংস পার্টির 'নাদান' রাজনীতি কৈশোর বয়সে নতুন বা* গজানোর মতোই কিংস পার্টির নাদান নেতৃবৃন্দ মেতে উঠে সেই পুরোনো 'ট্যাগিং সংস্কৃতিতে'।

বিএনপি: অন্তর্কোন্দল, চাঁদাবাজি, নেতৃত্বশূন্যতা এবং সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে এককভাবে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করলে তাদের ভোটব্যাংক কমবে।

জামায়াত: ইতিহাসের সেরা সময় কাটাচ্ছে, প্রশাসন-সহ অন্যান্য ক্ষেত্রগুলো দখল করে। তাদের মহিলারা বাসাবাড়িতে গিয়ে জান্নাতের টিকিট বিক্রি করে জামায়াতের জন্য ভোট চাইছে এবং টাকা দিয়ে আমান আজমীর 'সংগ্রামী জীবনের বই' কিনতে বলছে।

জাতীয় পার্টি (জাপা): একটি বিকলাঙ্গ দল।

আওয়ামী লীগ: রাজপথে গরম করার মতো একমাত্র দল, তারাও দেশের বাইরে।
​সাধারণ জনগণ এখন আরেকটি নতুন আন্দোলনের জন্য রক্ত দিতে প্রস্তুত নয়। ঠিক এই নির্মম বাস্তবতায় নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছেন ইউনূস এবং এনসিপি। তাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আমি এখনো কিছুটা সন্দিহান।


উপরের তথ্যগুলোকে কাল্পনিক গালগল্প বা গুজব ধরে নিলেও, এই দুই বছরের শাসনামলকে 'জনবান্ধব' সরকার বলার উপায় নেই। কিছু উদাহরণ দেওয়া যাক:
​পূর্বেকার দুর্নীতিগ্রস্ত ও কর্তৃত্ববাদী সকল সরকার টিআইবি'র (ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল) রিপোর্ট ও সমালোচনাগুলো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে প্রত্যাখ্যান করতো। আমাদের নোবেল লরিয়েট নিজে মুখে কিছু না বললেও, তাঁর প্রেস সচিব 'কেরানি' সফি ঠিক এই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের আর্থিক সম্পদের বিবরণী, দুর্নীতির অভিযোগ—সবকিছু ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। জবাবদিহিতা শুধুই কাগজে-কলমে। ভারত বিরোধিতা ও ভারতীয় দূতাবাসের সড়ক ফেলানী নামকরণ শুধু রাজনৈতিক আইওয়াশ। উনি নিজে ও ভারত তথা পশ্চিমা প্রভুদের সমর্থন নিয়ে হয়তো আরো কিছুদিন থেকে যেতে চাইছেন। ভারতে ইলিশ রপ্তানির টাইফুন ক্রয় প্রভুদের সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য ক্রয় করা। ​

পূর্বে শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি ও অসহিষ্ণুতা থাকা সত্ত্বেও দেশে একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও শিষ্টাচার ছিল। বয়োজ্যেষ্ঠ তথা জ্ঞানী-গুণী-শিক্ষিতরাই রাজনীতি ও সমাজে নেতৃত্ব দেবেন, এবং তরুণেরা দিকনির্দেশনা মোতাবেক কাজ করবে—এমনটাই ছিল প্রত্যাশা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ড. ইউনূস শিক্ষার্থীদের হাতে অবাধ ক্ষমতা দিয়ে রাজনীতি ও সমাজে নতুন একটি মেরুকরণ সৃষ্টি করেছেন। এই ধারাবাহিকতা যদি বহমান থাকে, এর ফলাফল হবে ভয়াবহ। ৫ আগস্টের পর থেকে দেখবেন এই সব শিক্ষার্থী তথা তরুণরা বড়দের বড় মানে না, ছোটদের ছোট না। ১০-১৫ জন একত্র হয়ে রাস্তা-ঘাট অবরোধ, আন্দোলন, দাবি-দাওয়া, বেয়াদবি, মবসন্ত্রাস এবং মিডিয়াতে বড়দের বাক-বিতণ্ডায় আঙ্গুল উঁচিয়ে নিজেদের সেরা প্রমাণ করার এক অদম্য চেষ্টা চলছে। আম তারেক, জাম নুরু, বেদানা মফিজ, রিকশাওয়ালা, টোকাইরা এখন রাজনৈতিক নেতা ! কি অদ্ভুত তাই না?

শুনতে খারাপ লাগলেও, ইউনূস তথা এনসিপি'র এই নতুন মনোপলি ভেঙে দেওয়ার একমাত্র উপায় এখন শুধু আওয়ামী লীগ সহ সকল দলের অংশগ্রহণের একটি নির্বাচন করা। যারা অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করুন, সমস্যা নেই; কিন্তু ফ্যাসিবাদীর জুজু ঝুলিয়ে নিজেরাই রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষক হবেন—এটা আর হয়তো হচ্ছে না। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ব্লগে আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা বলার কোনো উপায় নেই। তাই জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিষয়ক একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। বাহ! কিছু ব্লগার এখন আমাকে 'জাপা' বানিয়ে দিয়েছে।

সুত্র: আনোয়ার টিভি (মজা করে)
সাইফুর সাগরের
এতগুলো বছরের সরকারের বিপক্ষে বলা সাইফুর সাগরের এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:০৭
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশে এমপি হওয়ার মতো ১ জন মানুষও নেই

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৪



দলগুলোতে মানুষই নেই, আছে হনুমান।

আমেরিকায় যদি ট্রাম্প ক্ষমতায় না'আসতো, বাংলাদেশে হ্যাঁ/না ভোট দিয়ে ইউনুসকে দেশের প্রেসিডেন্ট করে, দেশ চালাতো প্রাক্তন মিলিটারী অফিসারেরা ও বর্তমান জামাতী অফিসারা মিলে। দুতাবাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মজনু নামাজ পড়ার পর মোনাজাত ধরল তো ধরলই, আর ছাড়তে চাইল না | পাক আর্মির বর্বরতা!!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৭



১৯৭১ সালে পাকিস্তানী আর্মি পুরো বাঙালী জাতির উপর যে নৃশংস হত্যাংজ্ঞ, বর্বরতা চালিয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। সত্যি বলতে ১৯৭১ সালে বাঙালী জাতির উপর পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সব দোষ শেখ হাসিনার !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৬


অনেকদিন পর zahid takes এর ডা. জাহেদুর রহমানের এনালাইসিস ভিডিও দেখলাম। জুলাই আন্দোলনের পূর্বে বিশেষত যখন র‍্যাব স্যাংশন খায় তখন থেকেই উনার ভিডিও দেখা আরম্ভ করি। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×