আমার শেষ পোস্টে অনেকেই বলেছেন নবীজী নিরক্ষর ছিলেন। ভালো কথা আমি মেনে নিলাম উনি পড়ালেখা জানতেন না । তাই উনি কোন রকমের তোরাহ, বাইবেল এগুলো জীবনে ও পড়েন নি।
সবাই তো স্বীকার করবেন, নবীজী আল্লাহ এর দেওয়া প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন, তাই নয় কি?
ইয়েস, উনি আল্লাহ এর দেওয়া প্রতিটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতেন। তো, আমরা আল-কোরআনের নাজিল হওয়া প্রথম পাঁচটা আয়াতের দিকে নজর দেই।
- পাঠ করুন আপনার পালনকর্তার নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন ৯৬-১
-সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে| ৯৬-২
-পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু, ৯৬-৩
-যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, ৯৬-৪
-শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না| ৯৬-৫
তার মানে আল-কোরাআনের প্রথম বানীটি ছিলো মুহম্মদের প্রতি আদেশ স্বরূপ। এই আয়াত থেকে আমরা পড়ার গুরুত্ব ঠের পাই, যা নবীজী কে আদেশ করার মাধ্যমে সমগ্র মানব জাতিকে পড়তে বলা হয়েছে।
এর পরের আয়াতেই কিন্তু উনি কলমের উল্লেখ করেছেন যা থেকে আমরা পড়ার সাথে সাথে লেখার গুরুত্ব পেয়ে যাই।
এখান থেকে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা আসে তা হলো নবীজী যদি লেখাপড়া না জানেন , তাহলে উনি আল্লাহ এর দেওয়া প্রথম নির্দেশই না মানার দু:সাহসিকতার কথা এসে যায়।
এই রিলেটেড আরো কয়েকটি আয়াত আপনাদের সামনে উপস্থিত করতে চাই; যেমন-
-নূন| শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ের যা তারা লিপিবদ্ধ করে, ৬৮-১
--আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহে আপনি উম্মাদ নন| ৬৮-২
-আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি| এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত| ২৯-৪৮।
তবে কোরআনের যে আয়াত থেকে মুসলমানরা নবীজীর নিরক্ষরতা প্রমান করতে চায় যে সেটা হলো:
বলে দাও, হে মানব মন্ডলী| তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ্ প্রেরিত রসূল, সমগ্র আসমান ও যমীনে তার রাজত্ব| একমাত্র তাঁকে ছাড়া আর কারো উপাসনা নয়| তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন| সুতরাং তোমরা সবাই বিশ্বাস স্খাপন করো আল্লাহ্র উপর তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর উপর, যিনি বিশ্বাস রাখেন আল্লাহ্র এবং তাঁর সমস্ত কালামের উপর| তাঁর অনুসরণ কর যাতে সরল পথপ্রাপ্ত হতে পার ।৭-১৫৮
এই আয়াতে উম্মী শব্দ দ্বারা অশিক্ষিত বুঝানো হলে ও উম্মী শব্দের আরো প্রয়োগ আরব সমাজে প্রচলিত আছে। যেগুলো দ্বারা কোনভাবেই অক্ষরজ্ঞানহীনতা বুঝায় না।
অন্যদিকে আমরা দেখতে পাই, নবীজীর বিরোধীরা বলছে,
কাফেররা বলে, এটা মিথ্যা বৈ নয়, যা তিনি উদ্ভাবন করেছেন এবং অন্য লোকেরা তাঁকে সাহায্য করেছে| অবশ্যই তারা অবিচার ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে| ২৫-৪
তারা বলে, এগুলো তো পুরাকালের রূপকথা, যা তিনি লিখে রেখেছেন| এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর কাছে শেখানো হয়| ২৫-৫
এখান থেকে আমরা যা দেখি , নবীজী যদি লেখাপড়াই না জানতেন তবে বিরোধীরা এরকম বলার কথাই না। তাতে তাদের কথা কোন মূল্য পেত না। নবীজী পড়ালেখা জানতেন বলেই বিরোধীরা এরকম বলতে পেরেছে।
আরো একটা বিষয় দেখা যায় যে একজন অশিক্ষিত মানুষ কিভাবে এতোগুলো বছর বিবি খাদিজা এর ব্যবসা সফলভাবে চালিয়েছেন? উনি কি তাহলে হিসাব রক্ষক সাথে নিয়ে ঘুরতেন? সেই সময়ে তো ঊনি নবুয়ত প্রাপ্ত ও হননাই, তাহলে একজন অশিক্ষিত মানুষের পক্ষে ব্যবসা চালানো টা হাস্যকর নয় কি?
এছাড়া অষ্টম শতকের ঐতিহাসিক ইবনে ইসকারের '' সিরাত আল রসুল'' বই থেকে আমরা দেখতে পাই যে একবার মুসাইলিমা আল হাবীব নিজেকে নবী দাবী করে চিঠি লিখে নবীজি কে:
From Musaylima the apostle of God to Muhammad the apostle of God. Peace upon you. I have been made partner with you in authority. To us belongs half the land and to Quraysh half, but Quraysh are a hostile people...
প্রতিত্তোরে নবীজী লিখেন:
From Muhammad the apostle of God to Musaylima the liar. Peace be upon him who follows the guidance. The earth is God’s. He lets whom He will of His creatures (to) inherit it and the result is to the pious...
শুধু তাই নয়, এরকম আরো প্রমান থেকে দেখা যায় নবীজী লেখাপড়া ভালোই জানতেন।
আমি কিন্তু ব্যাক্তিগত ভাবে কোন উপসংহারে আসতে পারছি না আসলে নবীজী পড়ালেখা জানতেন কিনা? কারনঃ
১- ধরলাম উনি পড়ালেখা জানতেন না। যদি তাই হয়, তাহলে উনি কি কোরআনের নাজিলকৃত প্রথম আয়াত না মেনে অবাধ্যতা করেছেন?
২- ধরলাম উনি পড়ালেখা জানতেন। যদি তাই হয়, তাহলে ধরে নেওয়া যেতে পারে উনি বাইবেল, তোরাহ ও পড়েছেন। তাই নয় কি?
প্রথম আপডেট:
মাহবুব লীলেন বলেছেন:
০১:তার লেখাপড়া জানার পক্ষে আরেকটা যুক্তি হচেছ; একই পরিবারের প্রায় সমবয়েসি আলীর লেখা পড়া করেছেন। কিন্তু তিনি আলী থেকে প্রিয় ছিলেন তার অভিভাবকদের কাছে। তাহলে প্রশ্ন হলো তাকে ছোট বেলা লেখা পড়া না করানোর কোনো যুক্তি কি ছিল আবু তালেব কিংবা আব্দুল মোত্তালিবের?
০২:সক্রেটিস নিজেকে মুর্খ বলতে ভালবাসতেন। সক্রেটিসের লেখা নামে কিছু আমরা কোথাও পাই না, সব পাই তার শিষ্যদের মাধ্যমে। আরবে সক্রেটিস এবং তার শিষ্যরা অসম্ভব জনপ্রিয় এবং পঠিত ছিলেন। (প্লেটো- প্রধানত যিনি আমাদের কাছে সক্রেটিসের পরিচয়দাতা, প্লেটোর পরে আরিস্টটল)। মোহাম্মদের নিজেকে মুর্খ/নিরক্ষর বলে পরিচয় দেবার ব্যাপারে সক্রেটিসের এই বিনয় এবং নিজে কিছু লিখে না রাখার প্রক্রিয়াটিই কাজ করেছে। তিনি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মক্কা-মদিনার রাজা/প্রশাসক হবার পরেও কোনোদিন নিজেকে প্রশাসক কিংবা বাদশা নামে জাহির করেননি।নিজেকে ক্ষুদ্র মানুষ- নিরক্ষর মানুষ বলা ছিল সাধারণ মানুষের সাথে মেশার তার কৌশলগত বিনয়। এর আক্ষরিক মূ্ল্য নেই ।
সুন্দর যুক্তি খন্ডন করেছেন ডানা:
১. রসুলুল্লাহর যুগে শিক্ষিত লোক কজন ছিলেন? ১৮-২০ জন।হযরত উমার ফারুক রা. সহ হাতে গোনা কয়েকজন। কিন্তু তাদের অসাধারণ স্মরণশক্তি সর্বজন বিদিত। ব্যবসা পরিচালনার জন্য অক্ষরজ্ঞান জরুরী ছিলনা। তখনকার আরবদের অধিকাংশই ব্যাবসায়ী ছিলেন।
২. স্বয়ং কুরআন সার্টিফিকেট দিচ্ছে- -'আপনি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করেননি এবং স্বীয় দক্ষিণ হস্ত দ্বারা কোন কিতাব লিখেননি| এরূপ হলে মিথ্যাবাদীরা অবশ্যই সন্দেহ পোষণ করত| ২৯-৪৮। " "এটি এমন একটি কিতাব যার মধ্যে কোন সন্দেহ নেই"। - কুরআন শুরুতেই এ কথা বলে দিয়েছে। আর কুরআন নির্ভুল এ বিশ্বাস না থাকলে তার জন্য কোরআন থেকে হিদায়াত লাভ সম্ভব নয়।
৩. "আমরা দেখতে পাই যে একবার মুসাইলিমা আল হাবীব নিজেকে নবী দাবী করে চিঠি লিখে নবীজি কে। এরকম আরো প্রমান থেকে দেখা যায় নবীজী লেখাপড়া ভালোই জানতেন।"--চিঠি লিখলে যে নিজহাতেই লিখতে হবে এটি একটি সংকীর্ণ ব্যাখ্যা।
৪. 'কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন' এর অর্থ এ নয় যে তোমাকে কলমের দ্বারা শিক্ষা নিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। তাই নির্দেশ অমান্যের প্রশ্নই আসেনা। বরং এটি বুঝায়- মানবজাতিকে কলম দ্বারা জ্ঞানের দুয়ার খুলে দেয়া হয়েছে।
৫."নবীজী যদি লেখাপড়াই না জানতেন তবে বিরোধীরা এরকম বলার কথাই না। তাতে তাদের কথা কোন মূল্য পেত না।"
- হ্যা, মূল্য তো পায়ই নি। প্রাথমিকভাবে কজন বিরোধী এ মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সাধারণ আরবদেরকে বিভ্রান্ত করার চেস্টা করেছিল। কিন্তু আদৌ তা ধোপে টেকেনি।
জ্বিনের বাদশা বলেছেন: আরো সোজা ব্যাখ্যা আছে .... মুহম্মদ আসলে ছিলেন যাদুকর ... আলী তাকে লেখাপড়া শিখাতেন ... কিন্তু যখন আলী তাকে লেখাপড়া শিখাতেন তখন মুহম্মদের যাদুবলে আলী এবং মুহম্মদ এদের কাউকেই দেখা যেতনা ... দুজনেই অদৃশ্য হয়ে যেতেন ... এজন্য মুহম্মদ যে লেখাপড়া জানতেন সেটার কোন ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট নাই
আসলে সবই ছিল মুহম্মদ এন্ড কোং এর সুদূরচিন্তিত ষড়যন্ত্র ... এবার খুশী?
সন্ধ্যাবাতি বলেছেন:
আপনি কি নবুয়াতের ঘটনার কথা জানেন যেখানে স্পষ্ট বর্ণনা আছে জিবরাইল (আ) রাসুল (সা) কে যখন পড়তে বলছিলেন, তখন তিনি জবাব দিচ্ছিলেন, 'আমি পড়তে পারি না'। যে যা পারে না, সেটা করতে না পারা কে 'অমান্য' বলে না।
লেখক বলেছেন:
তার মানে আপনি স্বীকার করে নিচ্ছেন , '' আল-কোরআনের প্রথম আয়াত ই উনি পালন করেন নি?''
তাছাড়া আপনি কি একটু দয়া করে আমাকে একটু আলোকিত করবেন এই বলে যে, আল-কোরআনের কোথায় নবীজী বলেছেন , '''আমি পড়তে পারি না''' । অবশ্যই আল-কোরআন থেকে বলবেন প্লীজ কারন ঐ কোরআন ই হলো আল্লাহর কাছ থেকে চুড়ান্ত শিক্ষা।
কোরআনে সর্বপ্রথম আয়াত থেকে ক্রোনলজিকেলী কয়েক অধ্যায়ের মধ্যে আমি এরকম কিছু পাইনি যেখানে নবীজী জিবরাইলকে বলেছেন, '''আমি পড়তে পারি না''' ।
উনি যে পড়তে জানেন না এটা তো জিবরাইল এর না জানার কথা না, তাই নয় কি?
বি-দ্র: এখানে যে ডায়াগ্রাম ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা থেকেই আমার পরবর্তী সিরিয়াস পোস্টের সূচনা হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৭ রাত ৩:৩০