somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা: এক পরিহাস

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইসলাম অতি সহজ এবং সরল দীন। এটা বোঝার জন্য খুব বেশি পাণ্ডিত্য দরকার নেই। আল্লাহ যেহেতু মানুষের বিচার করবেন সেহেতু সেটা সাধারণ মানুষের বোধগম্য করেই পাঠিয়েছেন। অন্যথায় ইসলাম বুঝতে যদি জীবনের অধিকাংশ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাটাতে হয় তবে যারা সেই সময় ও সুযোগ পাবে না তাদেরকে আল্লাহ বিচার করতে পারবেন না। কারণ, তখন মানুষ প্রশ্ন করতে পারে যে- "হে আল্লাহ! তুমি যে ইসলাম দিয়েছিলে সেটা আমরা বুঝিনি।" যা মানুষ বুঝলই না তা কেন আল্লাহ মানুষকে পালন করতে দেবেন, আর যদি নাই বোঝে তবে বিচারই বা করবেন কী করে? আল্লাহ এ জন্যই দীনকে পাঠালেন অতি সহজ করে। প্রতিদিন পাঁচবেলা সালাতে, প্রতি রাকাতে বাধ্যতামূলক সুরা ফাতেহার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিলেন "ইহদিনাস-সেরাতাল মোস্তাকীম- হে আল্লাহ! আমাদেরকে সহজ-সরল পথে পরিচালিত কর।"
.
কিন্তু বাস্তবতা কী? বাস্তবতা হচ্ছে দিনের মধ্যে পাঁচবারে শুধু ফরদ সালাতেই এই দোয়া ১৭ বার পাঠ করেও জাতির কাছে আজ ইসলাম এক দুর্বোধ্য বিষয়। ইসলাম বোঝার জন্য তাকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসায়) পড়তে হচ্ছে, অন্যত্র তালিম নিতে হচ্ছে। এত পড়ালোখা, এত গবেষণা ও এত সময় দিয়েও তারা মুসলিম জাতির ঠিক কোন ভাগটি সহীহ সেটা নির্ধারণে তারা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। এ ব্যাপারে সবচাইতে বড় সমস্যায় পড়েন যারা ইসলামের মহিমা পাঠ করে অন্য ধর্ম থেকে ইসলামে কনভার্ট হন। তখন তাদের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় সে শিয়া মুসলিম হবে না, সুন্নী মুসলিম হবে। সুন্নী হলে এবার কোন মাযহাব মান্য করবে, হানাফী না মালেকী, হাম্বলী নাকি শাফেয়ী? নাকি কোন মাজহাবই মানবে না? মাযহাব না মানলেও আবার বিপদ। চারটা থেকে যে কোন একটা মানতেই হবে পূর্ববর্তী আলেমদের আদেশ রয়েছে। এসব ছাড়াও এরপরে আরো কত তরিকা আছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। এ যেন তারা কড়াই থেকে চুলোয় পড়ার দশা।
.
ইসলামের সবচেয়ে খুটিনাটি এবং চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে মূলত ফেকাহ শাস্ত্রের উপর (অন্যগুলোতেও কিন্তু পণ্ডিতরা কম যাননি)। এতে যে কত অভিমত আছে সেটা ফেকাহর কেতাবগুলো পড়লেই একমাত্র জানা সম্ভব। ফেকাহর যে অতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে তার পক্ষে একটি যুক্তি আছে। সেটা হচ্ছে ইসলামের আইন-কানুনের, বিচারালয়ে ব্যবহার। অর্থাৎ বিচারালয়ে এই আইনের সুক্ষ্ম প্রয়োগ যাতে কোন নিরপরাধ শাস্তি না পায়। অ-ইসলামিক যেসব আইন বর্তমানে পৃথিবীতে চালু আছে, অর্থাৎ মানুষ রচিত আইনগুলি, এগুলিও সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেই বিচরালয়গুলিতে বিচার করা হয়- উদ্দেশ্য সেই একই- সুবিচার।
.
কিন্তু সে জন্য কোন দেশেই জ্ঞানের অন্যান্য সমস্ত শাখাকে অপ্রয়োজনীয় ঘোষণা করে সেই দেশের সংবিধানের এবং আইনের সুক্ষ্ম বিশ্লেষণকে সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়নি। শুধু যারা আইনজ্ঞ হতে চান, আইনজীবি হতে চান তারা স্ব-ইচ্ছায় ঐ বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন, ডিগ্রী নেন এবং তারপর আদালতে যোগ দেন। অর্থাৎ চিকিৎসা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, শিক্ষা, সাংবাদিকতা ইত্যাদির মত আইনকেও একটি বিশেষ (Specialised) জ্ঞান হিসাবে শিক্ষা করেন। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় পণ্ডিতরা তা না করে জাতির মধ্যে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি করে দিলেন যে আইনজ্ঞ হওয়াই মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ, জ্ঞানের অন্যান্য শাখা শিক্ষা করার কোন প্রয়োজন এ জাতির নেই।
.
এই কাজের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি যা হবার তাই হলো, জাতি জ্ঞানের অন্যান্য শাখাসমূহে যে বিস্ময়কর জ্ঞান চর্চা করে পৃথিবীর শিক্ষকের আসন লাভ করেছিলো তা ছেড়ে দিয়ে একটি মুর্খ অশিক্ষিত জাতিতে পরিণত হলো। উদাহরণরূপে বলা যায় যে, আজকের কোন রাষ্ট্রে যদি শিক্ষা নীতি এই করা হয় যে, সেই রাষ্ট্রের সংবিধান ও ঐ সংবিধান নিসৃতঃ আইন-কানুন ও তার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনই একমাত্র শিক্ষার বিষয়বস্তু হবে, বর্তমানের মাদ্রাসা শিক্ষার মত, তবে কি হবে? নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, তাহলে বিদ্যালয়গুলিতে নিচু ও প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই ঐ বিষয় একমাত্র পাঠ্যবিষয় করা হবে। দু'এক প্রজন্মের মধ্যেই ঐ রাষ্ট্রের লোকজন শুধু তাদের দেশের সংবিধান ও আইন-কানুনের সুক্ষাতিসুক্ষ্ম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া আর কিছুই জানবে না, অন্যান্য সব বিষয়ে অজ্ঞ হয়ে যাবে (বর্তমানে যা হয়েছে)।
.
জাতির যা ভাগ্য হওয়া উচিত তাই হলো- অন্য জাতির কাছে পরাজিত হয়ে যে সংবিধান ও আইন-কানুন নিয়ে এত বিশ্লেষণ করা, সেই আইন-কানুন বাদ দিয়ে বিজয়ী জাতির আইন-কানুন গ্রহণ করা হলো। নিজেদের আইন-কানুন সংবিধান শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোন রকমে টিকে রইলো। যে আইন শিক্ষাকেই একমাত্র শিক্ষণীয় বলে ঘোষণা করা হলো, মুসলিম দুনিয়াতে আজ সেই আইনে বিচার হয় না, বিচার হয় পাশ্চাত্যের মানুষের তৈরি, গায়রুল্লাহর আইনে, দণ্ড হয় পাশ্চাত্যের দণ্ডবিধি মোতাবেক অর্থনীতি পরিচালিত হয় পাশ্চাত্যের সুদভিত্তিক অর্থনীতি মোতাবেক। অথচ এ সবই ফিকাহ শাস্ত্রের আওতাধীন। তবুও এদের মাদ্রাসগুলিতে অন্ধের মত এগুলো পড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে, শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। যে আইনের প্রয়োগই নেই সেই আইনই শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কী নিষ্ঠুর পরিহাস!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×