আমরা আমাদের দিকের কথা বলতে পারি। হিন্দুদের বাড়ি ঘর জ্বালালে প্রতিবাদ করতে পারি। মহানবীর অবমাননায় বিচারের কথা বলতে পারি। অপরাধী ব্যতীত অন্য কারো বাড়ি ঘরে আগুন ধরানোর প্রতিবাদ করতে পারি। হুজুগেপনা, যে মসজিদ থেকে আজানের ডাক এলে নামাজ পড়তে যায় না, কিন্তু মসজিদ থেকে হিন্দু হত্যার আওয়াজ এলে ছুটে যায়, খ্রিষ্টানদের গির্জা ধ্বংস করার জন্য চলন্ত ট্রাক থামিয়ে হাত পাথর নিয়ে খ্রিষ্টান হত্যার মত পূণ্যের কাজ করতে উৎসাহী হয় তাদের সমালোচনা করতে পারি, তাদের মনে থাকা সাম্প্রদায়িক মনোভাবের সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু যারা অনবরত মুসলিমদের নবীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, কার্টুন আকেঁ, উস্কানী সৃষ্টি করে তাদের ব্যাপারে কথা বলবে কে? হিন্দু ভাইয়েরা এ ব্যাপারে কথা বলেন কতটুকু?
ভারতে যখন গরু বহন করার দায়ে, গরুর গোস্ত ফ্রিজে রাখার দায়ে যে মানব সন্তানেরা নিজেদেরকে গো সন্তান পরিচয় দিয়ে মুসলমানকে হত্যা করে, মব সৃষ্টি করে অমানুষিক নির্যাতন করে তাদের ব্যাপারে আমাদের অহিংস হিন্দু বন্ধুরা আওয়াজ তোলেন না কেন? বা তুললেও সেটার আওয়াজ এত মিনমিনে কেন?
আমাদের দেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হলে খবরের কাগজওয়ালারা, বুদ্ধিজীবীরা, হিউম্যানিস্টরা যে হারে সোচ্চার হন, দু'দিন না যেতেই রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে তাদের ঘর-বাড়ি নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয় সে হারে তো ঐসব অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হয় না। বরং তাদেরকে নির্দোষ প্রমাণে সবাই উঠে পড়ে লাগেন। অন্যদিকে ভারতে আখলাকদের হত্যায় তো বিচারও হয় না। সব ধৃত অভিযুক্ত একে একে ছাড়া পেয়ে যায়।
সবকিছুর একটা সীমা আছে। আমরা যখন উন্মত্ত মুসলমানদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করি তখন কিন্তু তারা আমাদেরকে প্রশ্ন করে আপনারা আমাদের স্বজাতি হয়ে আমাদেরকেই দোষারোপ করেন। কিন্তু হিন্দুরা নিজেদের স্বজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কি করে? এ প্রশ্নের উত্তর কিন্তু আমাদের দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। তাই বলি, শান্তি একতরফা রক্ষা করা যায় না। দুই দিক থেকেই শান্তির জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমরা আমাদের লোককে শাসন করব, আর আপনারা কিছুই করবেন না, তারা সাহস পেয়ে বার বার উস্কানী দিয়েই যাবে- এটা হলে শান্তিতে সহাবস্থান অসম্ভব।
যারা হিন্দুদের প্রতি ক্ষিপ্ত তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, ওদের উপর আপনি যে রাগান্বিত হচ্ছেন, রেগে উল্টাপাল্টা কাজ করছেন তাতে কিন্তু আপনারই ক্ষতি হচ্ছে বেশি। আপনার বদনাম হচ্ছে, জানমানের ক্ষতি হচ্ছে, ঘরে থাকতে পারছেন না। পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। তাই বরং ভালোভাবে ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করুন এভাবেই প্রতিবাদ করবেন, এভাবেই অন্যের ইশারায় ব্যবহৃত হবেন- নাকি ভেবে চিন্তে এগোবেন। স্বার্থান্বেষীদের পাতা ফাদেঁ পড়ে এভাবে ধরাশায়ী হতে হতে একদিন কিন্তু আপনার ন্যায় কাজও অন্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। আপনারা হয়ে যাবেন দাগী আসামী। দেখছেন না আইএসকে, দেখছেন না আল কায়েদাকে? ওরা মুসলিম পরিচয় দিয়ে অকাম-কুকাম করেছে। এখন আপনি নির্দোষ মুসলিম হয়েও বহির্বিশ্বে সন্ত্রাসের ধর্মের অনুসারী হিসেবে ট্যাগ পাচ্ছেন। আপনার জন্য বিচার নেই, আপনি একতরফাভাবে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন। সুতরাং ভাবুন, আরো ভাবুন। ভালো করে ভাবুন। মাথা ঠাণ্ডা করুন। মাথা গরম করে লাফ দিবেন না। পৃথিবীর হিসেব নিকেশ এখন অনেক জটিল।