somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আষ্টে-পৃষ্ঠে গুগল

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গুগল নামের মানে কি, আপনি জানতে চাইতে পারেন। আসলে এর কোন মানেই নেই। আমরা যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করি তারা সবাই (Google)গুগল শব্দটির সাথে বেশি পরিচিত। সারা বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আদর্শ সার্চ ইঞ্জিন হলো(Google) গুগল। গাণিতিক Googol থেকে নেওয়া হয়েছে Google শব্দটি। যার অর্থ ১-এর পর ১০০ টি শূণ্য দিলে যা হয় তাই। Google কর্তৃপক্ষ ইন্টারনেটের বিশাল তথ্য ভান্ডারের বিশালতাকে উপলব্ধি করানোর জন্য Google নামটি ব্যবহার করেছ। কথিত আছে একজন প্রকৌশলী বা ছাত্র আসল নামের বদলে এই ভুল বানানটি লিখেছিলেন।

ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী গুগল প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ৪০ হাজার অনুসন্ধানের জবাব বের করে- প্রতিদিন যার মানে সাড়ে তিন বিলিয়ন অনুসন্ধান । জিমেইল, গুগল ম্যাপস, গুগল ড্রাইভ, গুগল ক্রোম এসবের বাইরে ২০১০ সাল থেকে গুগল প্রায় প্রতি সপ্তাহেই একটি করে কোম্পানির মালিক হচ্ছে। অ্যান্ড্রুয়েড,ইউটিউব, ওয়ায, অ্যাডসেন্স-এসব প্রতিষ্ঠানের মালিক গুগলের এরকম আরো সত্তুরটি কোম্পানি রয়েছে।

নিউইয়র্কের গুগলের অফিসে লেগোর জন্য আলাদা একটি বিভাগ রয়েছে। প্লাস্টিক নির্মাণ খেলনা লেগোর ভীষণ ভক্ত গুগল । আর এ কারণে প্রথম গুগল কম্পিউটারের স্টোরেজ ইউনিট লেগো কেন যে ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তা কোন পাগলে জানে !

ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগল সদর দপ্তরের লনের ঘাসগুলো নিয়মিতভাবে কেটেছেটে ঠিকঠাক রাখা হয়। সেখানে যদি কখনো আপনি বেড়াতে যান, দেখতে পাবেন প্রায় ২০০ ছাগল সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে আর ঘাস খেয়ে লনের ঘাস ঠিকঠাক রাখছে। গুগল নাকি সবসময়েই সবুজ উদ্যোগ সমর্থন করে। তারই একটি উদাহরণ হোল ছাগলের মাধ্যমে লনের ঘাসকাটা।

১৯৯৯ সালে ল্যারি এবং সের্গেই গুগলকে ১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন,কিন্তু সেটা অত দামে কেনার মতো কোন গ্রাহক ছিল না। এমনকি দাম কমিয়ে দেয়ার পরেও কোন গ্রাহক মেলেনি।এখন গুগলের মোট সম্পদের পরিমাণ ৩০০ বিলিয়ন ডলার। গুগল তাদের প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মাসিক বেতন দেওয়ার জন্য একটা লিস্ট আপডেট করে থাকে। সেই অনুযায়ী একজন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টরের বেতন- ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা মাত্র । ডিরেক্টর বা পরিচালকের বেতন ২ কোটি ৯ লাখ টাকা মাত্র !

গুগলে যারা চাকরি করেন, তারা শুয়ে বসে অফিস করতে পারেন । গান শুনতে শুনতে কাজ করতে পারেন, হাতের নাগালে থাকা খাবার ইচ্ছে হলেই খেতে পারেন, শরীর চর্চা করতে করতেও কাজ করতে পারেন । নিজের বাচ্চা নিজের কাছে রাখতে পারেন । এমনকি, পোষা কুকুরটিকেও সাথে নিয়ে যেতে পারবেন । কিন্তু শর্ত হোল, অফিসের ধরণের ক্ষেত্রে যেন তা প্রশিক্ষিত হয় । অর্থাৎ, অফিসের যেখানে সেখানে তাদের হাগু – মুতু করা চলবে না ।

গুগল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কতটা প্রভাব ফেলছে, তার প্রমাণ মিলবে পরিসংখ্যানে। প্রতি মাসে ১০০ কোটির বেশি মানুষ গুগলে কিছু না কিছু সার্চ করছেন, মাসে প্রায় ২০০ কোটি মানুষ ইউটিউব ব্যবহার করছেন, একই সময়ে প্রায় ১২০ কোটি লোক জিমেইল ব্যবহার করছেন। বিশাল এই ব্যবহারকারীর সংখ্যাই জানান দিচ্ছে, মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা দিন দিন সহজ থেকে সহজতর হয়ে পড়ছে গুগলের জন্য। কিন্তু যাঁরা গুগল বা গুগলের পণ্য ব্যবহার করছেন, গুগল কি শুধু তাঁদের তথ্যই সংগ্রহ করছে? নাকি যাঁরা গুগল ব্যবহারকারী নন, তাঁদের তথ্যও জমা হয়ে যাচ্ছে গুগলের তথ্যভান্ডারে?
গবেষক ডগলাস সি স্মিডট বলেন, ‘গুগলের তথ্য সংগ্রহের বেশির ভাগটাই ঘটে যখন একজন ব্যবহারকারী সরাসরি গুগলের কোনো পণ্যের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন।’ অর্থাৎ, যখন একজন ব্যবহারকারী জিমেইল, ইউটিউব কিংবা গুগলের অন্য যেকোনো সেবায় তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলছেন বা লগ ইন করছেন, তখনই গুগলের তথ্যভান্ডারে তাঁর ব্যক্তিগত সব তথ্য জমা হয়ে যাচ্ছে। এটি হলো গুগলের তথ্য সংগ্রহের সক্রিয় পদ্ধতি।

তবে গুগলের তথ্য সংগ্রহ করার আরও একটি ‘পরোক্ষ’ পদ্ধতি রয়েছে, যেটি কিনা অনেক ব্যবহারকারীই জানেন না। মোবাইলের ব্যাকগ্রাউন্ডে সচল থাকা অ্যাপস কিংবা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ব্যবহারকারীর তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে গুগল। এই দুই উপায়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে অনলাইনের তো বটেই, মানুষের বাস্তব জীবনের তথ্যও চলে যাচ্ছে গুগলের হাতে। আর জমা করা এসব তথ্য দিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা প্রোফাইলও বানিয়ে ফেলছে তারা।গুগলের মৌলিক আদর্শগুলোর একটি ''কখনো দুষ্টতে পরিণত হয়ো না'’ ! কিন্তু আপনার অজান্তেই গুগল দুষ্টমি করে হাতিয়ে নিচ্ছে আপনার আমার যাবতীয় তথ্য ।

ধরুন, আপনি অফিসে বসে ভাবছেন দুপুরে কী খাবার খাওয়া যায়। কষ্ট করে বাইরে না গিয়ে আপনি মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে কোনো একটি রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করলেন। ব্যস, গুগল আবারও আপনার সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করে ফেলল। কোন দোকান থেকে খাবার কিনলেন, কোন ধরনের খাবার কিনলেন—সবকিছুই রেকর্ড করে রাখবে গুগল। এরপর থেকে আপনি যখনই অনলাইনে খাবার অর্ডার করতে যাবেন, দেখবেন ওই একই ধরনের খাবারের সাজেশনই আসছে আপনার সামনে। আর যদি কোনো কারণে খাবারের দামটা গুগল পে সার্ভিস দিয়ে পরিশোধ করে থাকেন, তাহলে আপনার ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড–সংক্রান্ত তথ্যও জমা হয়ে থাকবে গুগলের কাছে। কার্যত, আপনি গুগল ব্যবহার করুন বা না করুন,গুগলের হাত থেকে আপনার নিস্তার নেই!

গেল বছরের মাঝামাঝি ব্যবহারকারীর তথ্য সংরক্ষণ নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে গুগল। এর আগে গুগল তার বিভিন্ন সেবার ব্যবহারকারীর সব তথ্যই অনায়াসেই পেয়ে যেত। তবে এখন থেকে নির্ধারণ করতে পারবেন যে, আপনি কোন তথ্য গুগলকে দিতে চান। আপনি চাইলেই মাই গুগল অ্যাক্টিভিটি পেজে গিয়ে,'ওয়েব অ্যান্ড অ্যাপ অ্যাক্টিভিটি' অপশনে ক্লিক করে গুগলকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জানতে বাধা দিতে পারেন। এতে খুব একটা উপকারে আসবে বলে আমার মনে হয় না । এটা নিতান্তই, শান্তনা পুরস্কারের মত !

ফুট নোটঃ
01)https://www.bbc.com/bengali/news
02) https://www.prothomalo.com
03) https://www.jagonews24.com/technology/news
04) https://www.bbcnews24.com.bd
05) https://bn.quora.com
ছবি প্রাপ্তিঃ
https://www.google.com/
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৪৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×