somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রস যোগ আয়ন

০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তার আসল নাম হয়তো তার নিজেরই মনে নেই । কেউ ডাকে পণ্ডিত, কেউ রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, কেউ ডাকে অটো আবার কেউ ডাকে পাগলা বিজ্ঞানী বলে । যে যে নামে ডাকে ডাকুক, তাতে কুতুব আলীর কিচ্ছু যায় আসে না । সে এসবের ধার ধারে না । যার মাথায় বড় বড় চিন্তা প্রপেলারের মতন ঘুরপাক খায় তার কি এসব তুচ্ছ বিষয় ভাবার সময় আছে ? তার মতে অত পড়ালেখার কি দরকার বাপু ! লিখতে পড়তে আর দরকারি দৈনন্দিন হিসেব নিকেশ জানলেই হোল । বিশ্ববিদ্যালয়ে সে রাজনীতি নিয়ে পড়ালেখা করেছে । সে নিয়মিত ক্লাস করতো, শিক্ষকের লেকচার হা করে শুনত । কিন্তু বাড়ি ফিরে যে পড়া তা তার ধাতে সইতো না । তাই চূড়ান্ত ফলাফলে সে ৩য় শ্রেণী পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েও গর্ব করত । নাটক সিনেমাতেও তার নেশা ছিল । শহরে তিনটা সিনেমা হলে প্রতি সপ্তাহে মুক্তি প্রাপ্ত তিনটি সিনেমা একদিনেই দেখে সাবাড় করতো । তবে তা সপ্তাহে ওই একদিনই, বাকি ছয় দিন সে নিয়মিত ক্লাস করতো । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার সময় একেক জনের মাথায় একেক আইডিয়া ঢুকিয়ে দিতো । মাঝে মাঝে আল্লাহ রসুলের দর্শন নিয়েও সে আলোচনা করত ।

তার এক বন্ধু ছিল নাম আওয়াল । উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র । সে একদিন কইল, কুতুব তোর তো এরিস্টটলের মত বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আছে, আচ্ছা কুতুব ক তো দেখি, লোহার টুকরা পানিতে ফেললে ডুবে যায় কিন্তু লোহার তৈরি জাহাজ ডোবে না কেন ? কুতুবে কইল, সব আল্লাহ্র লিলাখেলা বন্ধু ! কুতুবের আরেক বন্ধু ছিল, নাম মানিক, সেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ! তারে একদিন কুতুব কইল, দোস্ত, সেদিন আওয়াল কইল যে, এরিস্টটল নাকি অনেক জ্ঞানী আছিল, মেলা কিছু জানতো, সত্যি নাকি ? আওয়াল কইল, হ সে যেমন তোর রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক আবার প্রাণী বিজ্ঞানের জনকও সে । তাছাড়া রসায়নশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, রাজনীতি, পদার্থবিদ্যাসহ সবক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন তিনি । কুতুব চমকে উঠে বলে, কস কি ? রসায়নও ?

তার পর থেকে যে কি হোল কুতুবের, সে রসায়ন বিদ্যা সহ নানা বিষয়ের উপর জ্ঞান নিতে লাগলো । তার কাছে রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে কোন সাবজেক্টই মনে হোল না । সে ভাবল এর চেয়ে রসায়ন শাস্ত্র অনেক ভালা ! একদিন তো রসায়ন ল্যাবে গিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছিল । ল্যাবে তখন দুএক জন রসায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র বসে গল্প করছিল । সে দেখল, একটা ফানেলের ভিতর পানি বুদবুদ করছে । পাশে একটা জারের গায়ে লেখা H2SO4 । গল্পেরত একজনকে জারটা দেখিয়ে বলল, ছোট ভাই, এইডা কি ? ছেলেডা জবাব দিল, ওটা সালফিউরিক এসিড । এই জারটার পাশেই আরেকটা পাত্রে সে দেখল, সাদা দানাদার গুড়ো গুড়ো একটা কিছু । হঠাৎ তার কি মনে হোল, ওই দানাদার জিনিসের পাত্র খুলে কিছুটা বুদবুদ ওঠা ফানেলের মধ্যে ঢেলে দিল । দেখল বুদবুদ ওঠা পানির রং পরিবর্তন হয়ে ধীরে ধীরে বেগুনী বর্ণ ধারণ করলো । এমন অভূতপূর্ব ঘটনা দেখে সে অভিভূত হোল । গবেষণায় তার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যেতেই সালফিউরিক এসিডের জারটা খুলে ফানেলের মধ্যে একটু ঢেলে দিতেই ধোঁয়া উঠতে শুরু করল, প্রথমে সাদা পরে কালো ! পুরো ল্যাব অন্ধকার ! আড্ডারত ছেলে দুটো ভয়ে দৌড়ে পালাল । কুতুব দাঁড়িয়ে রইল কুতুবের মত । হঠাৎ জোরেশোরে একটা আওয়াজ হোল । ছোট খাটো বিস্ফোরণের আওয়াজ । কুতুবের আর কিছু মনে নেই, জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিস্কার করল হস্পিটালের বিছানায় ।

যাই হোক বিশবিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছে সে কিন্তু হয়নি । গ্রামের কেজি স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে দেখল, র‍্যাট মানে যে ইঁদুর এটাই তার মনে নেই । অংকে তেমন সমস্যা নেই তার, ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত অঙ্কের সমাধান সে কিনে নিয়েছে শহরের পুরাতন বইয়ের দোকান থেকে । সে ভাবতো, এখানে একটা রসায়নের ল্যাব থাকলে মন্দ হত না । কিন্তু বিপত্তি হোল, পোলাপানের আবার রসায়ন কি ? এই কথা ভেবে প্রিন্সিপালকে আর বলার সাহস পেল না সে । ফোর ফাইভের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ে একটু ধারণা দেওয়া থাকলেও গবেষণার কিছু পেল না কুতুব ।

জীবনের রসায়ন নিয়ে যে বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয় তাই হল প্রাণরসায়ন বা জীবরসায়ন । এইডা সে রসায়ন শাস্ত্র পড়ে জেনেছে । সে ভাবল, জৈব ও অজৈব রসায়নের মত যৌন রসায়ন নামে একটি আলাদা শাখা থাকলে ভাল হতো । মানুষের জন্য তো এটি কম প্রয়োজনীয় নয় ! এই বিষয়ে সে গবেষণা শুরু করে দিল । নারী পুরুষের পারস্পারিক রসায়ন, সন্তান উৎপাদন, সন্তান ধারণ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করার পরে একদিন তার বাবা একজন অপরিচিত মেয়ের সাথে হুট করে তার বিয়ে দিয়ে দিলেন । প্রাণ রসায়নের সরঞ্জাম নাগালে পেয়ে বছর দেড়েকের মাথায় একটি সন্তান তার গবেষণা লব্ধ হোল । ভালই কাটছিল দিনকাল । করোনা কালে এসে সবকিছু কেমন যেন দ্রুত পাল্টে যেতে লাগলো । দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় প্রথমে গেল চাকরি, তার পর তিন বছরের সন্তান সহ পাশের বাড়ির অপরিপক্ষ যুবকের হাত ধরে পালাল তার প্রাণ রসায়ন !

নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ এখন কুতুব আলী । গবেষণাই এখন তার একমাত্র কাজ । স্কুল যে কবে খুলবে তার কোন ঠিক নেই । তাই কেজি স্কুলের চাকরিটাও ফিরে পাবার সম্ভাবনা কম । যে করোনা তার এত সর্বনাশ করলো, তার একটা বিহিত না করতে পারলে কুতুব আলীর শান্তি নেই । বলতে ভুলেই গেছি, তার বাড়িতে ছোট খাট একটা গবেষণাগার ইতিমধ্যেই সে বানিয়ে নিয়েছে । তার আরেক বন্ধুর নাম রঘুনাথ । বাজারে তার ঔষধের দোকান আছে । তার কাছে গিয়ে কুতুব করোনার ঔষধ চাইল । উদ্দেশ্য ঔষধ নিয়ে এসে বাড়িতে নিজ গবেষণাগারে বসে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা । রঘু কইল, তোর কি করোনা হইছে ? হইলে হাসপাতালে যা ! আমার কাছে করোনার ওষুধ নাই !

পাশেই হোমিয় প্যাথিক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও করোনার ঔষধ মিলল না । ভাবল, সরকার করোনার টিকা দিতাছে । এর এক ফাইল টিকা পাইলে নিয়ে এসে নিজ গবেষণাগারে গবেষণা করে দেখা যেত, কোন রসায়নের কোন কোন যৌগ যোগে উহা তৈরি ?


কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
বিষয় শ্রেণীঃ রম্য ও গদ্য কার্টুন
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গুগল
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৫৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×